স্টাফ রিপোর্টার :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের পানিশ্বর ইউনিয়নের দেওবাড়িয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ শতাধিক পরিবার দীর্ঘদিন থেকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে একই এলাকার হাবিবুর রহমান ও তার সঙ্গীরা। ২১৬ শতাংশ জয়গায় বন্টননামা একটি ভূয়া দলিল করে শতবর্ষ পুরনো একটি পুকুর জবরদখলের পায়তারা করছে স্থানীয় প্রভাবশালী হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমান এলাকায় বিভিন্ন লোকের নামে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ৮টি মামলা করেন, বর্তমানে ৭টি মামলা মিথ্যা বলে তদন্তকারি সংস্থা প্রতিবেদন প্রদান করেন। তারা আরও জানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এবং গত (০৩ ডিসেম্বর) শনিবার দুপুর ২টার সময় হাবিবুর রহমানের পক্ষে মহামান্য আদালতের রায় পেয়েছে তা গ্রামে ঘোষণা করা হবে বলে সহজ সরল মানুষের মাঝে মাইকিং এর মাধ্যমে অপপ্রচারণা চালান অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান ও তার সঙ্গীরা। এই নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগীরা জানান দীর্ঘদিন থেকে এই পুকুরে মাছ চাষ করে আসছেন এবং দখলে রয়েছেন তারা। তারা আরও বলেন বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি ও জীবননাশের হুমকি দিয়ে আসছে হাবিবুর রহমান ও তার সংঙ্গীরা, যেকোন সময় তাদের পরিবারের ক্ষতিসাধন করতে পারে বলেও অভিযোগে বলা হয়। এছাড়াও হাবিবুর রহমান বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে জবর দহলের পাঁয়তারা করে বেড়াচ্ছেন। এই নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তবে এই বিষয়ে ভুক্তভোগী মো. এলাই মিয়া বাদী হয়ে, হাবিবুর রহমানসহ ৪ চার জনকে আসামী করে সরাইল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এলাকার দুস্কৃতিকারীদের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের উদ্বর্তন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানিয় ভুক্তভোগীরা।
তবে এ বেপারে অভিযোগ তদন্ত কারি সরাইল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক পংকজ দাস জানান, এই পুকুর নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাদী বিবাদীগণকে বলা হয়েছে কোন অপপ্রচার বা দাঙ্গা সৃষ্টি করলে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলায় ছিনতাইকারী চক্রের হামলায় আহত অটোরিক্সশা চালক আব্বাস আলী (৫২) মারা গেছে। ঘটনার দুইদিন পর গত সোমবার দিবাগত গভীররাতে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
আব্বাস আলী সরাইল সদর ইউনিয়নের সৈয়দটুলা দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা।
ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ, হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, অটোরিক্সা চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করতো আব্বাস আলী। গত শনিবার রাতে সরাইল থেকে যাত্রী নিয়ে কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ এলাকায়। সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের ওই নির্জন স্থানে যাওয়ার পর যাত্রীবেশের একদল ছিনতাইকারী আব্বাস আলীর উপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে আব্বাস আলীকে কৌশলে অজ্ঞান করে সড়কের পাশে ফেলে দেয়। আর তার অটোরিক্সাটি নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। সড়কে যাতায়তকারী কালিকচ্ছ এলাকার কয়েকজন লোক আব্বাস আলীকে উদ্ধার করে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসকরা তাকে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেফার করেন। সেখানে দুইদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অবশেষে গত সোমবার গভীর রাতে মৃত্যুবরণ করেন আব্বাস আলী। ছিনতাই হওয়া রিকশা উদ্ধার হয়নি। গ্রেফতার হয়নি কোন ছিনতাকারীও।
সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় অটোরিক্সা চালক আব্বাস আলী মারা গেছেন। ময়না তদন্তের পক্রিয়া চলছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে হাফিজ উদ্দিন (৪৭) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আজ ৫ আগস্ট শনিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহত হাফিজ উদ্দিন উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের ছান্দাল আলীর ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সরাইল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, প্রায় দেড় মাস আগে স্থানীয় একটি দোকানে চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল আমিন মিয়ার পরিবারের সঙ্গে হাফিজ উদ্দিনের ঝগড়া হয়। এ ঘটনায় সালিশ হয়। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জেরে ৪ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে রায়হান নামের একজন হাফিজ উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করে। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় হাফিজ উদ্দিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে আজ ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ওসি আরো জানান, নিহতের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে আগুনে পুড়ে একটি বসতঘর ও একটি রান্না ঘর ছাই হয়ে গেছে। এতে আনুমানিক প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা কর হচ্ছে।
১১ অক্টোবর বুধবার বিকালে রাজাবাড়িয়া কান্দি গ্রামের মোঃ মজিবুর রহমানের বাড়িতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সরাইল ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে আগুনে বসতঘর ও রান্না ঘরে থাকা মালামাল ভস্মিভূত হয়ে যায়।
সরাইল ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার রিয়াজ বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেড় লাখ টাকার মত হবে বলে অনুমান করা যাচ্ছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে অবৈধভাবে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার সময় দুটি ভেকু ও তিনটি ট্রাক্টর জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেলে সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তি বিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভেকু ও ট্রাক্টর জব্দ করেছে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তি বিলে কয়েকটি চক্র ফসলি জমি খননযন্ত্র দিয়ে পুকুরের মতো কেটে মাটি উত্তোলন করছেন। সে সব মাটি ট্রাক্টরের মাধ্যমে নিয়ে পুকুর ও জলাশয় ভরাট করছেন। তারা ফসলি জমিগুলোতে নষ্ট করে ফেলছেন।
বিকেলে সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তি বিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা কালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে ভূমিখোরেরা পালিয়ে যাই। পরে অভিযানে দুটি ভেকু ও তিনটি ট্রাক্টর জব্দ করে স্থানীয় মেম্বারের জিম্মায় রাখা হয়।
তিনি আরো জানান, এর আগে ধরন্তি বিলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতানা এক জনকে আটক করে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। ধুরন্তি বিলে চলতি মাসে এটি পঞ্চম অভিযান। এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ সময় সরাইল থানা পুলিশ ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলো।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ১ মার্চ শুক্রবার বাড়িতে এসে মায়ের সাথে দেখা করার কথা ছিলো সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছারের। ছেলেকে দেখার অপেক্ষায় ছিলেন মা। ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য বাজার সদাই করে প্রস্তুত ছিলেন মা। কাউছার বাড়িতে ফিরেছেন। তবে জীবিত নয়। লাশ হয়ে। স্ত্রী, তিন সন্তানও কাউছারের নিথর দেহের সঙ্গী হয়ে ফিরেছেন। মায়ের সাথে ছেলের শেষ কথা না শোকে পাথর হয়ে আছেন কাউছারের মা। বাড়ির পাশের কবরস্থানে তখন চলছে এক সারিতে পাঁচটি কবর খোঁড়ার কাজ। আঙ্গিনায় রাখা আছে ৫টি খাটিয়া। আগত লোকজন বলছেন জীবনে কখনো এই গ্রামে এক সাথে পাঁচ কবর খোঁড়ার দৃশ্য দেখিনি। আল্লাহ তাও দেখাইলেন। শুক্রবার বিকেলে সাইরন বাজিয়ে লালবাতি জ্বালিয়ে ৫ লাশ নিয়ে ৪ এম্বোলেন্স প্রবেশ করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহবাজপুর গ্রামে। ওদিকে কাউছারসহ পরিবারের ৫ সদস্যের আকস্মিক নির্মম মৃত্যুর সংবাদে শোকে পাথর হয়েছিল গোটা শাহবাজপুর ইউনিয়নের নারী পুরূষ। তারা অশ্রুসিক্ত নয়নে ঘেরাও করে ফেলে লাশবাশী গাড়ি গুলোকে। অঝরে কান্না ও আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে ওই গ্রামের পরিবেশ। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নির্মম ভাবে মারা গেছেন, স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ ইতালি প্রবাসী কাউছার। বেইলি রোড ট্রেজেডির মধ্যে সবচেয়ে বড় ও আলোচিত মর্মান্তিক ঘটনা হচ্ছে কাউছানসহ এক পরিবারের ৫ জন নিহতের ঘটনাটি।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সরাইলের শাহবাজপুর খন্দকার পাড়ার প্রয়াত সৈয়দ আবুল কাশেমের ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন। এলাকায় তিনি সবার কাছে কাউছার নামেই পরিচিত ছিলেন। কাউছার দীর্ঘদিন ধরে ইতালিতে থাকেন। সেখানে তিনি ব্যবসা করতেন। তাঁর পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করতো ঢাকার মধুবাগে। কাউছারের স্বপ্ন ছিল পরিবারের সকলকে নিয়ে ইতালিতে সেটেলড হবেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলছিল। কিন্তু বাস্তবে রূপ নেয়ার মূহুর্তে সব তছনছ হয়ে গেল। গত প্রায় ২ সপ্তাহ আগে কাউছার দেশে এসেছিলেন। কারণ পরিবারের সবার ইতালির ভিসা হওয়ার কথা ছিল। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার পরিবারের ৫ সদস্যেরই ইতালির ভিসা হয়েছে। দীর্ঘ সময় প্রতিক্ষার পর কাউছারের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন তিনি। আনন্দে কাউছার পরিবারের সকলকে নিয়ে রাতে ওই হোটেলে গিয়েছিলেন ডিনার করতে। এই ডিনারই যে কাল হবে সেটা তো জানা ছিল না কাউছারের। খাবার শুরূ করার পরই ওই হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এ যেন আরেক কেয়ামত। লোকজনের চারিদিকে ছুটোছুটি, আর্তচিৎকার, আহাজারি আর বাঁচার আকুতিতে ভারী হয়ে ওঠে বেইলি রোডের পরিবেশ। অগিকান্ডের লেলিহান শিখা দেখে হোটেলে আটকে পড়াদের অনেকেরই পালস বন্ধ হয়ে যায়। শেষ রক্ষা হলো না ইতালি প্রবাসী কাউছার ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের। একে একে আগুনে পুঁড়ে মৃত্যুবরণ করলেন সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউছার, তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম, দুই মেয়ে সৈয়দা নূর, সৈয়দা কাশফিয়া ও একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন কেড়ে নিল কাউছারের পরিবারের সকল সদস্যের তাজা প্রাণ। ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন তাদের ধূঁলোয় মিশে গেল। কাউছারের স্বজন মো. ফয়সাল বলেন, ইতালিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছিল পরিবারটি। ভিসাও হয়েছিল। পরিবারের সকলকে খেতে যাওয়াটাই কাল হলো তাদের। ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন অপূরণীয় রয়ে গেল। ওই পরিবারে আর কেউ বেঁচে রইল না। গোটা পরিবারের এমন আকস্মিক নির্মম মৃত্যুর সংবাদে শোকে কাতর হয়ে পড়েছে স্বজন পাড়া প্রতিবেশী গ্রাম তথা গোটা শাহবাজপুর ইউনিয়ন। চারিদিকে চলছে আহাজারি। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই কাউছারদের খালি বাড়িতে ছুটে আসছেন শতশত নারী পুরূষ। সকলের চোখেই অশ্রু। শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রূল হুদা চৌধুরী বাদল বলেন, খুবই ভাল মানুষ ছিলেন কাউছার। এমন একটি পরিবারের সকল সদস্যের আকস্মিক নির্মম মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না আমরা। শোকে কাতর হয়ে পড়েছে গোটা ইউনিয়ন। শোকাহত হয়ে পড়েছে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ।
৪ এম্বোলেন্সে ৫ লাশ:
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে তাদের লাশ নিয়ে রওনা দেয় নিজ গ্রাম শাহবাজপুরের উদ্দেশ্যে। ঘড়ির কাটায় বিকাল ৩টা ৪০ মিনিট। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহবাজপুর প্রথম গেইট থেকে বাম দিকে প্রবেশ করছে এক সাথে ৪টি লাশবাহী এম্বুলেন্স। এক সাথে ৪টি গাড়ির হৃদয় বিদায়ক সাইরন আর লাল বাতির জ্বলকানিতে কেঁপে ওঠেছে গ্রামবাসী। কারণ এর আগে এমন বেদনাদায়ক দৃশ্য দেখে অভ্যস্থ নয় তারা। চারিদিক থেকে নারী পুরূষ ও শিশুরা আসছে গাড়ির দিকে। কেউ কেউ চলে যাচ্ছে কাউছারদের বাড়িতে। বুঝতে বাকি নেই কাউছারদের পরিবারের পাঁচ লাশ এসে গেছে। গ্রামীণ সড়কে মানুষের জটলা। একে একে গাড়ি ৪টি চলে আসল কাউছারের বসতবাড়িতে। বাদ আছন জানাযা। লাশ মসজিদের দিকে নেয়ারও একটা তাড়া। ৫ জনের লাশকে একনজর শেষ দেখা দেখতে শুধু শাহবাজপুর থেকে নয়। পাশের ইউনিয়ন শাহজাদাপুরের দেওড়া শহজাদাপুর ও মলাইশ থেকেও লোকজন এসেছে। এছাড়াও জেলা শহরসহ জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকেও স্বজন ও পরিচিত জন এসেছেন। বাদ আছর অর্থাৎ বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টায় হবে জানাযা। তাই চতুর্দিকে মানুষজন জানাযা করার প্রস্তুতি নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন।
প্রসঙ্গত: গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন, তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, দুই মেয়ে সৈয়দা আমেনা আক্তার নূর, সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া ও আট বছর বয়সের একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। তারা পাঁচ জনই ছিলেন ইতালির যাত্রী। রবিবার বাড়ি এসে উপজেলা নির্বাচন অফিসে ছেলে মেয়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য যাওয়ার কথা ছিল কাউছারের। আগামী ১৮ মার্চ তাদের ইতালি যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্নও করেছিলেন। তাদের বাড়ি সরাইলের শাহবাজপুর খন্দকার পাড়ায়। পারিবারিক কবরস্থানেই তাদের দাফন সম্পন্ন হবে বলে নিশ্চিত করেন স্বজনরা।
৫ কবর ৫ খাটিয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলের সৈয়দ মোবারক হোসেন। তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, দুই মেয়ে সৈয়দা আমেনা আক্তার নূর, সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা কাশফিয়া ও আট বছর বয়সের একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। তারা পাঁচ জনই ছিলেন ইতালির যাত্রী। আগামী ১৮ মার্চ তারা আকাশ পথে ইতালি যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্নও করেছিলেন। কিন্তু বেইলি রোড ট্রাজেডি তাদের সেই স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। এখন তাদের জন্য উপজেলার শাহবাজপুর নিজেদের কবরস্থানে এক সারিতে খোঁড়া হচ্ছে ৫ টি কবর। বাড়ির পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ৫ টি খাটিয়া। স্বজন আর গ্রামবাসীর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠছে ওই বাড়ির পরিবেশ। কি হৃদয়বিদায় দৃশ্য। শান্তনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে গেছে গ্রামবাসীর। স্থানীয়রা জানায়, কাউছারের বসত ঘর ফাঁকাই থাকতো। বলতে গেলে তাদের বাড়িতে লোকজন খুব একটা নেই। সব সময় ওই বাড়িতে বিরাজ করতো সুনসান নীরবতা। বাড়িতে নড়াচড়া করতো কাউছারের চাচাত ভাইয়েরা। আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন জড়ো হতে থাকে কাউছারদের বাড়িতে। কাউছার সহ পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসী। চারিদিকে হ্যাঁ হুতাশ আর চোখের জল। সকলেই জানতে চাচ্ছেন কখন আসবে তাদের মরদেহ। বিভিন্ন জায়গা থেকে সকলেই শুধু পথের দিকে নজর দিচ্ছেন বারবার। জানতে চাচ্ছেন তাদের লাশ বহনকারী গাড়ি কোথায় আছে? কখন আসবে? জানাযা কখন কোথায় হবে? ওদিকে বাড়ির ও গ্রামের লোকজন কাউছারদের পারিবারিক কবরস্থানে এক সারিতে এক সাথে ৫ টি কবর খোঁড়ার কাজ শুরূ করেছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কবর খোঁড়ার কাজ প্রায় শেষের দিকে। বাড়ির সামনে সারিবদ্ধ ভাবে রাখা হয়েছে পাঁচটি খাটিয়া। দেখলে গা শিউরে ওঠে। আর বাড়ির ভেতরে চলছে স্বজনদের আহাজারি। একই কবরস্থানে এক সাথে ৫ কবরের দৃষ্টান্ত খুব কমই আছে বলে জানিয়েছেন গ্রামের একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি। তারা বলেন, এই অগ্নিকান্ড শুধু কাউছারের পরিবারকে নয়, আমাদের গোটা ইউনিয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেল।
শোকাহত উপজেলা প্রশাসন:
কাউছারসহ পরিবারের ৫ সদস্যের নির্মম মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছেন সরাইল উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বিকেলে কাউছারদের বাড়িতে যান সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতান। তিনি শোকাহত পরিবারের অন্য সদস্যদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই সাথে সাথে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
জানাযায় সহস্রাধিক লোক:
বাদ আছর খন্দকার পাড়া জামে মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত হয় ওই ৫ লাশের জানাযা। জানাযায় সাবেক এমপি মৃধাসহ অংশ গ্রহন করেন সহস্রাধিক লোক। পরে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে পিতার কবরের পাশেই এক সারিতে তাদের ৫ জনকে সমাহিত করা হয়েছে।