চলারপথে রিপোর্ট :
চার দিন আগে হালকা বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতায় সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে চট্টগ্রাম নগরবাসীকে। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে নগরবাসী বারবার আকুতি জানিয়ে আসছে। কিন্তু বুধবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের ঘোষিত নতুন অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি এই সমস্যা।
এই খাতে এক দশক ধরে যেভাবে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, ঘোষিত বাজেটেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়েছে। খাল, ছড়া, নালা, নর্দমা রক্ষণাবেক্ষণসহ জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাজেটের মাত্র দেড় শতাংশ। যদিও নগর পরিকল্পনাবিদরা নিয়মিত খাল-নালা পরিষ্কারের পাশাপাশি নানা উদ্যোগের কথা বলে আসছেন। অপ্রতুল বরাদ্দে তা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন তাঁরা।
নগরের আন্দরকিল্লার পুরোনো নগর ভবন মিলনায়তনে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৮৮৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। এর মধ্যে খাল, ছড়া, নালা, নর্দমার রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) এই খাতে ২৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও খরচ হয়েছে মাত্র ৭ কোটি টাকা।
নগরে খাল রয়েছে ৫৭টি ও নালা ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রকল্পটির আওতায় ৩৬টি খাল ও ৩০০ কিলোমিটার নালা খনন ও সংস্কার করা হবে। নগরের বাকি ২১টি খাল ও ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার নালা নিয়মিত পরিষ্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এই অপ্রতুল বরাদ্দ দিয়ে তা রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। এটি তাঁর তৃতীয় বাজেট। তিন অর্থবছরের বাজেটে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে বিশেষ কোনো বরাদ্দ রাখতে দেখা যায়নি তাঁকে। তবে তিনি বলছেন, খাল-নালাগুলো সংস্কারে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
কমছে বাজেটের আকার
২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ১৬১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। এবার বরাদ্দ ২৭৩ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা কমেছে। এর আগের অর্থবছরেও ৩২০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা কমিয়ে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল।
সরকারের অনুদান কমছে
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বাজেটে সরকারের অনুদান ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে উন্নয়ন অনুদান প্রত্যাশা ৮৯৪ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে প্রত্যাশা ছিল ১ হাজার ২১২ কোটি টাকা। বিপরীতে মিলেছে ৬৪১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। নিজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে আয় ধরা হয়েছিল ৯০৪ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেট অনুসারে সিটি করপোরেশনের আয় হয়েছে ৫০৬ কোটি ৬০ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনে বাজেট বিবরণী উপস্থাপন করেন অর্থ ও সংস্থাপন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মো. ইসমাইল। উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা।
অনলাইন ডেস্ক :
বর্তমানে ব্যবসায়ীরা পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির চাপে আছেন। এই সময় উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কারণে পণ্য ও সেবা বিক্রি কমে যাওয়ায় বিপরীতমুখী চাপে আছেন তাঁরা। এ পরিস্থিতিতে তাঁদের নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ নেই। বরং এখন কঠিন বাস্তবতার মুখে রুগ্ণ ও সংকটে থাকা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে সরকারের কাছে নীতিমালা চান ব্যবসায়ীরা।
স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বিনিয়োগবান্ধব হতে পারেনি দেশ। এখনো একজন বিনিয়োগকারীকে দেশে বিনিয়োগ করতে হলে ২৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪১টি ছাড়পত্র নিতে হয়। এই জটিলতার পরও সরকারের দেওয়া সেবার মূল্য ও কর বৃদ্ধি অব্যাহত। গত তিন বছরে গ্যাসের দাম ২৫০ শতাংশ থেকে প্রায় ৪৫০ শতাংশ বেড়েছে।
যদিও আবার দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। এসবের সঙ্গে আছে উচ্চ সুদের হার, ঋণপত্রে জটিলতা, বেতন-বোনাস, উচ্চ উৎপাদন ব্যয় ও ডলার দর বৃদ্ধিতে এখন নাজেহাল অবস্থা।
রবিবার বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সংগঠনের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করে এমন দবি করেছে। এ বৈঠকেই তারা এখন বিনিয়োগ করতে আগ্রহ পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে।
একই সঙ্গে তারা সামনে আর যাতে লোকসানে না পড়তে হয়, সে জন্য কিছু কিছু ব্যবসাও গুটিয়ে নিতে চায়।
জানা যায়, ২০২১ সালের পর থেকেই দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসায় ভাটা পড়েছে। এমনকি সরকার পরিবর্তনের পরও বিনিয়োগে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে এক হাজার ৮৩টি ব্যবসা প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৩৩৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধন হয়েছে। পরের বছর এক হাজার ৮১টি ব্যবসা প্রকল্প নিবন্ধনের মাধ্যমে এক হাজার ২৮৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল।
২০২৩ সালে আরো কমে ব্যবসার ৯৯৮টি প্রকল্পে ৮৯৭ কোটি ৮৫ লাখ ডলার হয়। আর চলতি বছরে ব্যবসার ৭৪২টি প্রকল্পে এক হাজার ১৬৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ নিবন্ধন হলেও এপ্রিল-জুন প্রান্তিকেই ২৫৪টি প্রকল্পে ৬৬৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পরিবর্তনকালীন জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা কমে ১৮৬টি প্রকল্পে মাত্র ১৮৬ কোটি ৭১ লাখ ডলার হয়েছে।
রিজার্ভের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বিদেশি বিনিয়োগ। রিজার্ভ যেমন কমছে, বিদেশি বিনিয়োগও কমছে। আগের বছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে নিট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৮.৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে নিট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ১৪৭ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে যা ছিল ১৬১ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৪ কোটি ২০ লাখ ডলার।
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পাঁচ মাস পার হতে চললেও দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক পরিবেশ এখনো ফেরেনি। বরং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি এবং সংস্কার ও নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতায় নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন। অর্থনৈতিক মন্দায় ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।
গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, ‘দেশে বর্তমানে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে, ঋণের উচ্চ সুদহার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি—সব কিছু মিলিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। চাহিদা মতো ঋণপত্র (এলসি) খোলা যাচ্ছে না, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭.৬৬ শতাংশ। নতুন গ্যাস সংযোগে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আবার আইএমএফের সুপারিশে বিভিন্ন পণ্যের ওপর কর-মূসক বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, আমাদের বর্তমান শিল্পগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে। আর শিল্প টিকে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার কোনো সমস্যা হবে না।’
বিসিআই সভাপতি বলেন, ‘আমাদের কোনো এক্সিট বা ব্যবসা গোটানোর পলিসি নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের এক্সিট পলিসি থাকা দরকার। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, আমরাও মনে করি এক্সিট পলিসি থাকা দরকার। আর এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি এটা দ্রুত সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হবে।’
আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির দায় অন্য ব্যবসায়ীদের না। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলোরও এই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। ক্যাশ ইনসেনটিভ না পেলে ইন্ডাস্ট্রিগুলো মরে যাবে।
বিসিআই সভাপতি বলেন, ‘রপ্তানিমুখী শিল্পের নগদ সহায়তা পেতে আবেদনের পর ৯ মাস থেকে এক বছর সময় লাগছে। যার ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের সময় মতো তাদের অপারেশন কস্ট মেটানো, তাদের কর্মীদের বেতনাদি পরিশোধ করতে পারছে না। আমরা মনে করি, নগদ সহায়তা প্রদানের সময়সীমা দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে নামিয়ে আনা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আমার মনে হয়, এটা আগের মতো ৩৫ শতাংশে উন্নীত করা উচিত। আমরা ঋণখেলাপির ক্ষেত্রে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়ার প্রস্তাব করেছি। কারণ মার্চ থেকে কোনো গ্রাহক তিন মাস কিস্তি না দিলে খেলাপি হয়ে যাবে। তাই এটাকে তিন মাসে না এনে ছয় মাস রাখার প্রস্তাব করেছি।’
বিসিআই সভাপতি বলেন, ‘বিদ্যমান বড় শিল্প খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো এখন রুগ্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে এক বছরের মনিটরিয়াম সুবিধাসহ আগামী ১২ বছরে পরিশোধের সুবিধা চেয়েছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানের এক্সিট পলিসির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যাংক দায়ের ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট, ১ বছরের মনিটরিয়ামসহ ১৫ বছর মেয়াদে পরিশোধের সুবিধা চেয়েছি।’
একটি প্রতিষ্ঠান এক্সিট সুবিধা নিয়ে পরে কিভাবে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার-উল আলম সাংবাদিকদের বলেন, একজন ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকে। সব প্রতিষ্ঠানই একসঙ্গে খারাপ হয়ে যায় না। যে প্রতিষ্ঠান রুগ্ণ হয়েছে তার দায় পরিশোধের জন্য তাঁর অন্য ভালো প্রতিষ্ঠানের আয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করবেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএপিএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর নতুন সূর্য সবার গায়ে লেগেছে। আমরা চাই সবাই দেশের জন্য কাজ করব। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময় আমরা যেটা দেখছি তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করে ৭৫ টাকা করা হবে। অথচ আমরা অনেক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা তৈরির কথা বলছি। কিন্তু ঢাল-তলোয়ার ছাড়া নিধিরাম সর্দারের মতো কিভাবে দেশের জন্য করবে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিশ্ববাজারে টিকতে পারব না।’
গভর্নরকে অবহিত করেছেন এমন তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প খাতের প্রণোদনা কেটে দেবেন। অথচ হোগলা পাতা রপ্তানি করলেও তারা প্রণোদনা পায়। দেশের শিল্প এখন ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ ঋণের সুদ দেয়। এর পরও শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি। অথচ শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নেই। ডলারের সংকট চলছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগে যাবেন না। পরীক্ষিত ব্যবসায়ীরা এখন ঝুঁকি নেবেন না।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের শর্ত অনুযায়ী ঋণ শ্রেণিকরণে নতুন নিয়ম চালু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নিয়ম অনুসারে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে তিন মাস মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার পর সব ধরনের ঋণকে খেলাপি ঋণ হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হবে। বর্তমানে এ সময়সীমা ছয় মাস।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সিএমএসই খাত সব থেকে ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমাদের সিএমএসই খাতকে টিকিয়ে রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা মনে করি, সিএমএসই খাতের বিশেষ তহবিল এবং নিম্ন সুদের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ খাতে একটি জেলা বা একটি ক্লাস্টারকে পাইলট ধরে ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে অর্থায়ন করা যেতে পারে।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এপ্রিলে খেলাপি ঋণের নতুন নিয়ম চালু হলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। তার ওপর নতুন করে ভ্যাট আরোপ, শ্রমিকের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিকে ব্যবসার অন্তরায় হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
বিজিএমইএ প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, এলসি জটিলতা দূর করতে হবে। পাশাপাশি কমাতে হবে সুদের হারও।
ব্যাংক রিফর্ম কমিটিতে ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্তি এবং অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিকে গুরুত্ব দিয়ে সরবরাহব্যবস্থা ঠিক করার দাবিও জানান ব্যবসায়ী নেতারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিসিআইয়ের প্রতিনিধিদলের বক্তব্য শোনেন এবং বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য এখন মুদ্রাস্ফীতি কমানো। আমরা আশা করি আগামী জুন নাগাদ মুদ্রাস্ফীতি ৭-৮-এর মধ্যে নেমে আসবে। আমাদের বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। আমরা সরকারি ব্যয় কমানোর জন্য সুপারিশ করছি। যাতে বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ বাড়াতে পারি। কিন্তু ডিপোজিট বাড়ছে না। ডিপোজিট গ্রোথ ৭ শতাংশ। অর্থ প্রবাহ বাড়াতে হলে ডিপোজিট বাড়াতে হবে। বর্তমানে ডলারের ক্রাইসিস নেই। অর্থনীতি স্বাভাবিক হচ্ছে, কিন্তু একটু সময় লাগবে। আগামী রমজানে যাতে নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ আছে এবং আমরা সে লক্ষে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমি মনে করি, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য বন্ড মার্কেটে যেতে হবে। আমাদের করপোরেট বন্ডের জন্য কাজ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করবে।’
সভায় উপস্থিত থেকে নিজ নিজ সেক্টরের সমস্যাসমূহ তুলে ধরে বক্তব্য দেন সিনিয়র সহসভাপতি, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি নাজমুল হাসান সোহেল, সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান, উত্তরা মোটর করপোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, বারভিডা সভাপতি আব্দুল হক, পরিচালক বিসিআই ও চেয়ারম্যান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ আহসান খান চৌধুরী, কোকা-কোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাদাব আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিসিএমইএ ও ভাইস চেয়ারম্যান মন্নু গ্রুপ মঈনুল ইসলাম স্বপন, বিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী, বিসিআই সহসভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস, সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
চলারপথে রিপোর্ট :
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল উমারপুর ইউনিয়ননের হাপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা হামিদ মোল্লা (৮৬) ও তার স্ত্রী ফজিলা খাতুন (৭৭) দম্পতি। সংসারে ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের রয়েছে তাদের। যমুনা নদীর ভাঙনে বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলেরা যার যার মত সুবিধা মত জায়গায় চলে গেছেন। কিন্ত ৫ ছেলের সংসারে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ঠাঁই হয়নি। কয়েকদিন আগে তাদের উপজেলার সম্ভুদিয়া জান্নাতুল বাকি কবরস্থান এলাকায় নির্জন স্থানে ফেলে রেখে গেছেন স্বজনরা। এ ঘটনার পর তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন। চলছে মামলার প্রস্তুতি।
জানা যায়, প্রায় ২ মাস আগে সেজ ছেলের মানিকগঞ্জের বাড়ি থেকে বৃদ্ধ দম্পতিকে চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নের হাঁপানিয়া চরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে বৃদ্ধের ভাগ্নের বাড়িতে আশ্রয় হয়েছিল তাদের। সেখানেও অবহেলার শিকার হন তারা। এ অবস্থায় কয়েকদিন আগে পাশের বাঘুটিয়া ইউনিয়নে এ দম্পতির বড় মেয়ের বাড়ি সংলগ্ন সম্ভুদিয়া কবরস্থানের পাশে কাউকে না জানিয়ে ফেলে রেখে যায় স্বজনরা। সংবাদ পেয়ে এ দম্পতির বড় মেয়ে মনোয়ারা খাতুন বাবা-মাকে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে মেয়ে মনোয়ারা খাতুন বলেন, আমি নিজেই স্বামী হারা। দরিদ্র সন্তানদের সংসারে থাকি। আমার পাঁচ ভাইয়ের কেউ বাবা মাকে ভরনপোষণ করে না। এই বৃদ্ধ বয়সে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। কয়েক দিন আগে আমাকে না জানিয়ে আমার বাড়ির পাশে বাবা- মাকে ফেলে রেখে চলে গেছে। অভাব অনটনের সংসারে অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা মাকে ভরণপোষণ আমার জন্য কষ্টসাধ্য। বিষয়টি জানতে পেরে অসহায় বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব হোসেন জানান, শুক্রবার সকালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ও বাগুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোল্লা এবং চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি টিমকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অসহায় দম্পতিকে নগদ ১০ হাজার টাকা ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সহায়তা করা হয়েছে। ওই দম্পতিকে সাময়িকভাবে তাদের মেয়ের বাড়িতেই থাকতে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।
ইউএনও মাহবুব হোসেন আরো বলেন, এই অসহায়তা দম্পতিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি ঘর তুলে দেওয়ার সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বৃদ্ধ বাবা-মাকে ভরনপোষণ না করার অপরাধে ছেলেদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
কক্সবাজারের টেকনাফ সদরের উপকূলীয় এলাকা থেকে কোস্টগার্ড সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ৭ লক্ষ পিস ইয়াবা জব্দ করেছে। এ সময় জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। আজ ৯ আগস্ট বুধবার দুপুরে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুর রহমান (বিএন) গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বুধবার ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফ থানাধীন মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন মিঠা পানির ছড়া ঘাট হয়ে ইয়াবার একটি বড় চালান মায়ানমার থেকে টেকনাফ এলাকায় প্রবেশ করবে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে বিসিজি স্টেশন টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এইচ এম লুৎফুল লাহিল মাজিদ এর নেতৃত্বে উক্ত এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালীন সময়ে একটি ফিশিং বোট সমুদ্র থেকে মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মিঠাপানির ছড়া ঘাটে ভিড়ে এবং ৪টি বস্তাসহ ৪ জন ব্যক্তিকে ঘাটে নামিয়ে দিয়ে ফিশিং বোটটি পুনরায় সমুদ্রে চলে যায়। বোট থেকে নামা ব্যক্তিদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে কোস্টগার্ড সদস্যরা তাদেরকে থামার সংকেত দিলে তারা বস্তাগুলো ফেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে।
এ সময় কোস্ট গার্ড সদস্যরা উক্ত ব্যক্তিদের ধাওয়া করলে তারা দ্রুত ঝাউবনের গহীনে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ফেলে যাওয়া বস্তাগুলো উদ্ধার করে তল্লাশি চালিয়ে ৭ লক্ষ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। পাঁচারকারীরা গভীর অন্ধকারের সুযোগে ঝাউবনের গহীনে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।