অনলাইন ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন নিজে আদেশ দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ ১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ তুলেন।
ড. ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু করতে গিয়ে আমাদের ওপর বদনাম দিয়েছিল, একটা ব্যাংকের এমডি পদের জন্য সেটাও সরকারি বেতনধারী। সরকারি আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত এমডি থাকতে পারবে। এর বেশি হলে থাকতে পারবে না। তারপরও বেআইনিভাবে ১০ বছর চালিয়ে আবারও সেখানে থাকতে হবে, সেই লোভে বারবার আমাদের ওপর চাপ।’
‘একটি বড় দেশও বারবার চাপ দিত’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমডি পদে না রাখলে নাকি পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেবে। আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে সেই ভদ্রলোক মামলাও করেছিল। কিন্তু আদালত তো তার বয়স কমাতে পারে না। সে মামলায় হেরে যায়। তারপর তার বিদেশি বন্ধু দ্বারা…এটা কিন্তু ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বোর্ডে হয়নি। হিলারি ক্লিনটন নিজে অর্ডার দিয়ে তখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘তখন বলেছিলাম নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব, কারও কাছে হাত পেতে না। আমরা সেটা করেছি। সেটা করে বিশ্বকে দেখিয়েছি। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা ভাষণ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা কিন্তু সেই জাতি। আমাদের দাবায়ে রাখতে পারে নাই।’
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় এতে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতারা অংশ নেন।
অনলাইন ডেস্ক :
শিক্ষার্থীদের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে ফের আগামীকাল সোমবার (৫ আগস্ট) থেকে তিনদিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ ৪ আগস্ট রোববার সরকারের নির্বাহী আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে, ৪ আগস্ট রোববার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে কারফিউ ঘোষণা করেছে সরকার। ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহর, জেলা সদর ও সিটি করপোরেশনে কারফিউ বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার শরীফ মাহমুদ অপু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা মহানগরসহ সব বিভাগীয় সদর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা সদর ও উপজেলা সদরে সান্ধ্য আইন (কারফিউ) বলবৎ করা হলো।
একইসঙ্গে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস ১৭ এপ্রিল। হিমোফিলিয়া রক্তক্ষরণজনিত জন্মগত রোগ, যা বংশানুক্রমে ছেলেদের হয়ে থাকে। শরীরের কোনো জায়গায় আঘাত পেলে বা সামান্য কেটে গেলে স্বাভাবিকভাবে ওই স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে, যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হিমোফিলিয়া রোগীর ক্ষেত্রে সহজে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না অথবা বিলম্বিত হয়।
১৯৮৯ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হলো রক্ত সংক্রান্ত রোগ হিমোফিলিয়া সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা। এছাড়াও ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ হিমোফিলিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাঙ্ক শ্নাবেলকে স্মরণ করার জন্য তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে এই দিনটি পালিত হয়। তাই হিমোফিলিয়া কী ও কেন এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
হিমোফিলিয়া কী?
দুটি গ্রিক শব্দ হাইমা এবং ফিলিয়া থেকে হিমোফিলিয়া শব্দটি এসেছে। হাইমা অর্থ রক্ত ও ফিলিয়া অর্থ আকর্ষণ। দেহের কোনো অংশে রক্তপাত শুরু হলে সাধারণত সেখানে রক্ত জমাট বাঁধতে থাকে। মেডিকেলের ভাষায় এই প্রক্রিয়াকে ক্লটিং বলে।
ক্লটিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্ত জমাট বেঁধে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের দেহে কোথাও কোনো ক্ষত তৈরি হলে সেই ক্ষতস্থান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে যাওয়াকেই ক্লটিং বলে। যে পদার্থ রক্তক্ষরণে বাঁধা দেয় তাকে ক্লট বলে। কিন্তু কোনো কারণে ক্ষতস্থানে এই ক্লট তৈরি না হলে সেখান থেকে একাধারে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। একজন হিমোফিলিয়া আক্রান্ত রোগীর দেহে এই ক্লট সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিক নয়।
ব্যাপারটি আসলে এমন নয় যে, রোগীর দেহ থেকে অঝোরে এবং খুব দ্রুত রক্তক্ষরণ হতে থাকবে। মূলত একজন হিমোফিলিয়াক (যারা হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত) ব্যক্তির দেহ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
অনেকে হয়তো এখন মনে করছেন যে, এই রোগ হলে হাত, পা, হাঁটু ইত্যাদির কোথাও কেটে গেলেই তা থেকে অনবরত রক্ত ঝরতে থাকবে। ব্যাপারটি তা নয়। দেহের বাইরের কোনো ছোটখাটো আঘাত এখানে খুব একটা চিন্তার বিষয় নয়। আসল চিন্তার বিষয় হলো ইন্টারনাল ব্লিডিং বা দেহের অভ্যন্তরীণ কোনো অংশে রক্তক্ষরণ। এই ধরণের রক্তক্ষরণকে হ্যামোরেজ বলে। এটি মূলত দেখা যায় দেহের ভেতরে কোনো সন্ধি যেমন হাঁটু ও গোড়ালিতে। এছাড়া দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন টিস্যু ও পেশীর মিলনস্থলেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। দেহের ভেতরে এমন রক্তক্ষরণ অনেক যন্ত্রণাদায়ক হয় এবং আক্রান্ত অংশ বেশ ফুলতে শুরু করে।
হিমোফিলিয়া কেন হয়
মানবদেহে একটি X ও অন্যটি Y ক্রোমোজম থাকলে সে হয় ছেলে (46,XY) আর যদি দুটিই X ক্রোমোজম থাকে তাহলে সে হয় মেয়ে (46,XX)। X ক্রোমোজমে F8 ও F9 নামক জিন থাকে, যা F-VIII ও F-IX নামক ক্লোটিং প্রোটিন তৈরি করে। এই ক্লোটিং প্রোটিন রক্তের সাদা অংশে পরিমাণমতো থাকে। ফলে আপনাআপনি রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। যাদের রক্তে এই ক্লোটিং প্রোটিন কম থাকে, তাদের রক্ত পড়া বন্ধ হয় না অথবা বিলম্বিত হয়। তারাই হিমোফিলিয়ার রোগী।
ছেলেদের দেহে যেহেতু একটামাত্র X ক্রোমোজম থাকে এবং এই একমাত্র X ক্রোমোজম যদি অসুস্থ/defect থাকে, তাহলে F-VIII/F-IX তৈরি হয় না। ফলে ছেলেরাই হিমোফিলিয়ার রোগী হয়। আর মেয়েদের দেহে যেহেতু দুটি X ক্রোমোজম থাকে, তাই একটি X অসুস্থ/defect হলেও অন্য X সুস্থ থাকায় পর্যাপ্ত F-VIII/F-IX তৈরি হয়। তাই সাধারণত মেয়েরা হিমোফিলিয়ার রোগী হয় না, রোগের বাহক হয়।
তবে ১. Lyonisation/inactivation of healthy X chromosome হলে, ২. বাবা রোগী ও মা বাহক হলে অথবা ৩. Turner syndrome (45,XO) হলে মেয়েরাও রোগী হতে পারে। তাই হিমোফিলিয়ার রোগীর সঙ্গে মামাতো, খালাতো প্রভৃতি বোনের বিয়ে হলে ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই রোগী হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি তিনজন হিমোফিলিয়ার রোগীর মধ্যে অন্তত একজন বংশানুক্রমে সঞ্চারিত না হয়ে নতুনভাবে আক্রান্ত হয়।
হিমোফিলিয়া কত প্রকার?
হিমোফিলিয়া এ এবং বি দুই ধরনের। হিমোফিলিয়া-এ-তে, ফ্যাকফোর-৮ মাত্রা কম বা অনুপস্থিত। হিমোফিলিয়া-বি ফ্যাকফোর-৯ এর ঘাটতি রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষেরই হিমোফিলিয়া-এ আছে। এটি শরীরের ক্রোমোজোম সিস্টেমের অবনতির কারণেও হয়। আর চিকিৎসকদের ধারণা, বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। আর বিশ্বব্যাপী প্রায় চার লাখ মানুষ হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত।
হিমোফিলিয়ার লক্ষণ :
যদি কোনো সাধারণ আঘাত বা ক্ষত থেকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ বন্ধ না হয় তাহলে বুঝবেন এটি হিমোফিলিয়ার কারণে হয়েছে। এই রোগের ক্ষেত্রে রক্তে প্লেটলেট কাউন্ট, প্রোথ্রোমবিন, প্লেটলেটের অসুস্থতা ইত্যাদি কমে যেতে পারে। এছাড়াও ক্ষতস্থানে বিলম্বিত রক্তপাত হয়। আর অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ বা কেটে গেলে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়াটাই হিমোফিলিয়ার মূল লক্ষণ। শিশু বয়সেই এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে রক্তক্ষরণ, শরীরের আঘাত লাগলে সেই জায়গাটি নীলচে হয়ে ফুলে যায় অর্থাৎ চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ; মাংসপেশিতে এবং অস্থিসন্ধিতে রক্তক্ষরণ; হাঁটু, কনুই ও অন্যান্য অস্থি সন্ধি ফুলে যাওয়া; শরীরের কোথাও কেটে গেলে দীর্ঘক্ষণ রক্ত ঝরা; দাঁত তোলার পর বা সুন্নতে খাতনা করার পর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া, শিশু হামাগুড়ি দেওয়ার সময় হাঁটুতে কালচে দাগ হওয়া, নবজাতকের নাভি কাটার সময় দীর্ঘক্ষণ রক্তক্ষরণ হওয়া ইত্যাদি।
হিমোফিলিয়ার বংশগতি :
বাবা সুস্থ ও মা বাহক হয় তবে ছেলে সন্তানের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% আর মেয়ে সন্তানের বাহক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%। বাবা রোগী এবং মা সুস্থ হয় তবে সব ছেলে সন্তানই সুস্থ হবে এবং সব মেয়ে সন্তানই বাহক হবে। বাবা রোগী এবং মা বাহক হয় তবে ছেলে সন্তানের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%। আর মেয়ে সন্তানের রোগী হওয়ার সম্ভাবনা ২৫% ও বাহক হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%। সুতরাং প্রত্যেক হিমোফিলিয়া পুরুষ রোগী বিয়ে করতে পারবে, তবে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাধারণত শুধু পুরুষরাই এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং নারীরা এই রোগের বাহক। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নারীরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বাবা রোগী ও মা বাহক হলে মেয়েরাও রোগী হতে পারে। হিমোফিলিয়া রোগীর সঙ্গে আত্মীয় যেমন খালাতো, মামাতো বা ফুপাতো বোনের বিয়ে হলে দুজনেই রোগী হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ-গুরুতর হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত কিছু লোকের মাথায় সামান্য আঘাতের পরে মস্তিষ্কে রক্তপাত হতে পারে। যদিও এটি প্রায়শই ঘটে না, এটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলির মধ্যে একটি যা উঠতে পারে।
কিছু সতর্কতা চিহ্ন এবং উপসর্গ হলো :
* একটি গুরুতর
* চলমান মাথা ব্যাথা
* বারবার বমি হওয়া
* অলসতা বা তন্দ্রা
* দ্বৈত উপলব্ধি
* হঠাৎ আনাড়ি বা দুর্বলতা
* হৃদরোগের আক্রমণ বা কম্পন
পরীক্ষা ও প্রতিরোধ
রক্তের ফ্যাক্টর দুটির পরীক্ষা। রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা পরীক্ষা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের genetic testing, genetic counseling I prenatal test (amniocentesis) করে অনাগত সন্তান রোগী না বাহক তা নিশ্চিত হয়ে হিমোফিলিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা কমানো যায়। দেশেই এসব পরীক্ষা করা হচ্ছে।
হিমোফিলিয়া রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করানোর কোনো চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভব। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে যেমন নিয়মমাফিক, সঠিক ব্যায়াম করে মোটামুটিভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা গেলেও চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। তাই সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করাই উত্তম।
অনলাইন ডেস্ক :
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে ১৯৫২ সালের এই দিনে বুকের রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন ঢাকার রাজপথ। পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছিল মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের অভূতপূর্ব নজির। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রচিত হয়েছিল স্বাধীনতার সোপান। পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালি জাতি ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছে। কিন্তু ৭৩ বছর পরে এসে প্রশ্ন উঠছে-গৌরবমময় সেই ইতিহাস আমরা কতটা সংরক্ষণ করতে পেরেছি। কিংবা এখনো করতে পারছি।
সাত দশকেরও বেশি সময় পার হলেও ভাষাসংগ্রামী বা ভাষাসৈনিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি। একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত ভাষাশহিদদের চূড়ান্ত তালিকা দেখতে পায়নি জাতি। কারা আমাদের গৌরবের এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন-‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। সেইসব বীরদের পরিচয় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি দীর্ঘদিনেও। শুধু তাই নয়, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও স্থাপনাগুলোও হারাতে বসেছে। চিহ্নিত বা সংরক্ষণ করা যায়নি সব ভাষাশহিদের কবর। রাজধানীসহ সারা দেশে এ ধরনের স্মৃতি নিদর্শনগুলোর সংখ্যাও সীমিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতিহাস ও চেতনার অভাব এবং সংরক্ষণে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে চোখের সামনে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিত পারি’-ভাষা আন্দোলন নিয়ে কালজয়ী এ গানের কথায় রয়েছে একুশ এবং একুশের ইতিহাসকে না ভোলার আকুলতা। সেই আকুলতা আজও জাগ্রত প্রতিটি বাঙালির মনে। আজ প্রভাতফেরি নামবে সারা দেশের পথে পথে। ফুলে ফুলে ভরে উঠবে দেশের সব শহিদ মিনার। দিনটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ ও দেশের ভাষাগুলোর মর্যাদা রক্ষায় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে, যা দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার পরেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলা ভাষার গৌরবের আন্দোলনে সম্পৃক্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশে এক বছর পরে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ১৪ নারীসহ জীবিত ৬৮ জনকে ভাষাসৈনিক হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হয়। তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ২০১২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেখানে কিছু নামে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি ওই তালিকার। হাইকোর্টের নির্দেশনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় কমিটি গঠন করে তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভাষাসৈনিক আহমদ রফিককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছিল। কমিটির একটি বৈঠক হয়েছিল, যাতে কাজের পদ্ধতির জটিলতা নিয়েই শুধু আলোচনা হয়।
ভাষাশহিদদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে গবেষণাও থমকে আছে। ২১ ফেব্রুয়ারি কতজনকে কবর দেওয়া হয়েছিল সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য নেই কারও কাছে। আজিমপুরে ভাষাশহিদদের কবরগুলোও সারা বছর অযত্ন-অবহেলায় থাকে। ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদ নামের একটি সংগঠন গত কয়েক বছর ধরে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কাছে ১১ দফা দাবি জানিয়ে আসছে। দাবিগুলোর মধ্যে আছে-শহিদদের কবর শনাক্ত ও ভালোভাবে সংরক্ষণ করা। শহিদ ও সংগ্রামীদের নামে চত্বর, তোরণসহ বিভিন্ন স্থাপনা, স্থান, সড়ক নির্মাণ ও নামকরণ করা। আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত রশিদ বিল্ডিং, শহিদ মিনার হয়ে আজিমপুর কবরস্থান পর্যন্ত সড়কটিকে ‘শহিদ সরণি’ বা ‘ভাষা আন্দোলন স্মৃতি সড়ক’ নামকরণ করা এবং নামফলক লাগানো। ১৮ নভেম্বর ভাষাশহিদ আব্দুল সালামের কবর সংরক্ষণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর একটি আবেদন জানিয়েছে সংগঠনটি।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুব সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসক গোষ্ঠীর চোখ-রাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসেন। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলে; সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন। আহত হন অনেকে। সবার রক্তের বিনিময়ে বাংলা এ দেশের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়। যার ধারাবাহিকতায় পরে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।
বিশ্বের দেশে দেশে নানা ভাষা, নানা বর্ণ, নানা সংস্কৃতির মানুষ আজ গাইছে একুশের অমর গান- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র“য়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।
চলারপথে রিপোর্ট :
অতিরিক্ত মূল্যে চার্জার ফ্যান বিক্রির অপরাধে রাজধানীর নবাবপুরে অভিযান চালিয়ে দুই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।
আজ ৮ জুন বৃহস্পতিবার নওয়াবপুরে ন্যাশনাল ফ্যান হাউজ ও মিডিয়া হোম অ্যাপ্লায়েন্স নামে দুই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর।
তবে, অভিযান শুরুর খবরে অধিকাংশ চার্জার ফ্যান বিক্রেতারা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। অনেকে দোকানে থাকা ফ্যান সরিয়ে ফেলে। অনেকে ব্যবসায়ী দোকান ছেড়ে পালিয়ে যান।
অভিযান পরিচালনা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার। তিনি বলেন ১১ ফেব্রুয়ারিতে আমদানিকারক যে ফ্যান ২৪০০ টাকায় বিক্রি করেছেন, সে চার্জার ফ্যান ৪ জুন সাড়ে ৬ হাজারে বিক্রি করেছেন।
এসময় দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তিনি বলেন, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আকস্মিকভাবে বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ভোক্তাদের কাছে এমন গলাকাটা দাম নিয়ে প্রতারণা করতে দেওয়া হবে না।
দেশজুড়ে চলমান তীব্র দাবদাহে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন। ভাপসা গরমে নাকাল রাজধানীবাসী। এ অবস্থায় একটু স্বস্তির আশায় তারা ছুটছেন চার্জার ফ্যানের দোকানগুলোয়। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটার মহোৎসবে মেতে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার এ নৈরাজ্য ঠেকাতে মাঠে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ঢাকায় অধিদপ্তরের তিনটি টিম বাজার তদারকির কার্যক্রম পরিচালনা করে। বায়তুল মোকাররম এলাকায়, স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এবং নবাবপুর মার্কেট এলাকায় অভিযানে চালানো হয়।