চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে রেলওয়ের জায়গার একটি পুকুরের দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ইদ্রিস মিয়া নামে এক ব্যক্তির হাত থেকে কব্জি বিচ্ছিন্নসহ দু’পক্ষের ছয়জন আহত হয়েছেন। ২২ জুন রবিবার দুপুরে উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর এলাকার চানপুর গ্রামে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত ইদ্রিস মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ মো. ইছামউদ্দিন তার স্ত্রী পেয়ারা বেগম ও ছেলে আমিনুল ইসলাম আহত হয়েছেন। তাদের জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চানপুর গ্রামে রেলওয়ের একটি পুকুরের দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামের ইছাম উদ্দিনের সাথে একই গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার বিরোধ চলে আসছে। উভয় পক্ষের দাবি তারা পুকুরের লিজ নিয়ে রেখেছেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। এর জেরে দুপুরে চানপুর গ্রামে রেললাইনের ওপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষের লোকজন। সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ইদ্রিস মিয়ার হাত থেকে কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সময় তার ছেলে মেহেদী ও তার পক্ষের হুমায়ুন কবির নামের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়। এছাড়াও এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ মো. ইছামউদ্দিন তার স্ত্রী পেয়ারা বেগম ও ছেলে আমিনুল ইসলামও আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে আসলে ইদ্রিস মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয় এবং অন্যান্য আহতদের জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, রেলওয়ের একটি পুকুরের লিজ নেয়ার দাবি ও দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় একজনের হাতের কবজি বিচ্ছিন্নসহ পাঁচ থেকে ছয় জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
চলারপথে রিপোর্ট :
সিএনজি ও অটোরিক্সার মুখোমুখী সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন। আজ ৩ আগস্ট রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার রামপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি।
কাজী মো. মিজানুর রহমান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রামপুর এলাকায় ঢাকামুখী দুটি মোটরসাইকেল ও মাধবপুর অভিমুখী সিএনজি চালিত অটোরিক্সার সংঘর্ষ হয়। পরে আরেকটি মোটরসাইকেল এসে ধাক্কা দেয়। পরে হাইওয়ে থানা পুলিশ এসে সেখান থেকে তিন জনের লাশ উদ্ধার করে। পরে আরো একজন মারা যায়।
ঘটনার সতত্যা নিশ্চিত করে খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিন জনের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে একজনের লাশ তার আত্মীয়রা নিয়ে গেছে বলে স্থানীয়ভাবে জানতে পেরেছি। তবে নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিজয়নগরে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে পোস্টারে পলিথিনের আবরণ, প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার ও দুপুর দুইটার আগে মাইকিং করার দায়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আজ ১ জুন শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বিজয়নগর উপজেলা নির্বাচনের নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক এই জরিমানা করেন।
জরিমানা যারা দিয়েছেন তারা হলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছিমা মুকাই আলী (ঘোড়া প্রতীক) ও চেয়ারম্যান প্রার্থী আল জাবের (আনারস প্রতীক) এর ৪ জন সমর্থক।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বিজয়নগর উপজেলা নির্বাচনের নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন, উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬” এর সংশ্লিষ্ট বিধি লঙ্ঘনের অপরাধে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের চল্লিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।
এসময় উপস্থিত প্রার্থী ও সমর্থকদের নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে বিপণিবিতান তৈরির জন্য চার দশকের পুরোনো একটি পুকুর ভরাট করছেন স্থানীয় কয়েকজন। যদিও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিন ট্রাক্টরে মাটি ফেলে ভরাট চললেও রহস্যজনক কারণে নীরব কর্তৃপক্ষ। দুই মাস ধরে পুকুর ভরাটের কাজ চলছে।
ভরাটকাজে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, সবাইরে ‘ম্যানেজ’ করেই তাঁরা ভরাট করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তবে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, তাঁরা কাউকে পুকুর ভরাটের অনুমতি দেননি। একবার ভরাটের খবর পেয়ে ভরাট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আবার ভরাট শুরু হলে তাঁরা উদ্যোগ নেবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, পুকুরটি বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের ৫০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত। ইউএনও, সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রতিদিন পুকুরের সামনে দিয়ে যাতায়াত করেন। তাঁরা এ বিষয়ে কোনো কিছু বলছেন না। দুই মাস ধরে মাটি ফেলার কাজ করলেও তাঁরা শুরু থেকে নীরব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিজয়নগরের চান্দুরা-আখাউড়া সড়কে ইছাপুরা ইউনিয়নের মির্জাপুর মোড়ে রাস্তা-সংলগ্ন পুকুরটি ৪০-৫০ বছরের পুরোনো। পুকুরের পূর্ব দিকের বাসিন্দা জলফু মিয়া, তাঁর ছোট ভাই আজিজুল হক ওরফে মলাই মিয়া, করিম মিয়াসহ কয়েকজন পুকুরটির ৭২ শতকের মালিক। সাড়ে তিন মাস আগে পুকুরটি ভরাট করতে পানি সরানো হয়। এরপর জলফু, মলাইসহ পাড়ের বাসিন্দারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি এনে ভরাটের কাজ শুরু করেন। পুকুরটি ভরাট করে সেখানে বিপণিবিতান নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। এ জন্য তাঁরা ইউএনও বরাবর আবেদন করেছেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
অন্যদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের (২০১০ সালে সংশোধিত) ৬ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা-ই থাকুক না কেন, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।’
বিজয়নগর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের নাজির মো. সৈয়দ মিয়া ও বুধন্তি ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের তহসিলদার কাজল বণিক বলেন, তাঁরা যতটুকু জানেন, জমিটি নালা শ্রেণির। সেটি ভরাটের অনুমতির জন্য তাঁরা ইউএনওর কাছে আবেদন করেছেন বলে শুনেছেন।
বিজয়নগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদি হাসান খান বলেন, অভিযোগ আসার পর ভরাট বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আবার শুরু করলে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। জমিটি জলাশয় না পুকুর শ্রেণির কাগজপত্র না দেখে বলা যাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন ও শ্রেণিভুক্ত না হলে ভরাটের অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করতে হবে। বাস্তবতার নিরিখে জমিটি কী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুকুরের মালিক আজিজুল হক বলেন, ‘আপনে আমারে কেন জিগাইতেছেন। ম্যাডামরে (ইউএনও) জিগান। ম্যাডামের কাছে সব কাগজপত্র জমা আছে। সব দিছি। জায়গাটি ২০০০ সালে আমরা কিনছি। এইডা পুকুর না, জলাশয়। এখানে জায়গা আছে ৭২ শতক। আমরার ভাই-বোনদের বাড়িঘরের প্রয়োজনে এইডা ভরাট করতাছি।’
তবে ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, ‘আনুমানিক ৪০ বছর ধরে পুকুর হিসেবে দেখতেছি। ভরাট বন্ধের জন্য বলেছি। বিষয়টি ইউএনওকেও জানিয়েছি।’
কোনো পুকুর ভরাটের জন্য কাউকে অনুমতি দেননি বলে দাবি করেন ইউএনও রুবাইয়া আফরোজ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন। প্রশাসনকে উৎকোচ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যিনি এই অভিযোগ করছেন, তাঁকে রেকর্ড বা প্রমাণ থাকলে দেখাতে বলেন। আমি তো বলছি, আমাকে একটু সময় দিন।’ দুই মাস ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় ভরাট চলছে উল্লেখ করলে রুবাইয়া আফরোজ বলেন, ‘আমি খোঁজ নেব।’