ডেস্ক রিপোর্ট :
কর্মী সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকে বিজয়নগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানের শত শত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকঢোলসহ মিছিল নিয়ে হাজির সভাস্থলে। উচ্চ শব্দে বাজতে থাকে মাইক। পাশের তিনটি বিদ্যালয়েও এর শব্দ ছড়িয়ে পড়ে। এতে ব্যাহত হয়েছে স্বাভাবিক পাঠদান। শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে জানালা-দরজা বন্ধ করে ক্লাস নিয়েছেন। এ সমাবেশ চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে এভাবে চলেছে ছাত্রলীগের কর্মী সমাবেশ। ২২ জানুয়ারি রবিবার উপজেলার চম্পকনগর উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী কলেজসহ তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবহূত মাঠে এ আয়োজন করা হয়। কলেজ ছাড়াও চম্পকনগর মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করে মাঠটি।
কর্মী সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুজন দত্তের সভাপতিত্ব ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভনের সঞ্চালনায় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল খাঁন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কর্মী সমাবেশে হৃদয় আহমেদকে আহ্বায়ক করে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
জানা গেছে, সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক শব্দদূষণ ও কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে ব্যাহত হয় তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক পাঠদান। এতে শিক্ষার্থীরা অস্বস্তিবোধ করে। উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, শব্দদূষণের কারণে তাঁরা ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারেননি। বেশি শব্দ হওয়ায় শিক্ষকরা দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন।
মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাঠে সমাবেশ হবে জানা ছিল তাঁদের। আয়োজক কমিটি শিক্ষার্থীদের বিষয়টি ভাবেনি। সরকারি দলের হওয়ায় তারা ছিল অসহায়। নিয়ম রক্ষার কারণে বিদ্যালয় খোলা রাখতে হয়েছে। তবে ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান দস্তগীর দাবি করেন, ক্লাস নিতে তাঁদের কোনো সমস্যা হয়নি।
কলেজ খোলা অবস্থায় মাঠে কর্মী সমাবেশের অনুমতি দিয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার সরকার বলেন, ‘ফোনে এ ব্যাপারে আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারব না। সরাসরি এসে দেখা করেন।’ এ সময় তিনি কল কেটে দিলে পরে চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
চম্পকনগর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাহেলা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের সামনে কর্মী সমাবেশের অনুমতি নেওয়া হয়নি। দরজা-জানালা বন্ধ করে ক্লাস নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা এভাবে প্রোগ্রাম করি না। কিন্তু এটা হয়ে গেছে।’ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন শোভন বলেন, বিষয়টি তাঁদের জানা ছিল না।
উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ‘সহকারী প্রধান হিসেবে আমি বক্তব্য দিতে পারি না। আপনি প্রধানকে কল দেন।’ তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল জলিলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জুলফিকার হোসেন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও পাঠদান চলার সময় মাঠে রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমোদন দেওয়া ঠিক হয়নি।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিজয়নগর উপজেলায় পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি শাহপরান ওরফে পরানকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৩ এপ্রিল সোমবার রাতে জেলা পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
পরানের বিরুদ্ধে ১০টি মাদক মামলা চলমান রয়েছে। তিনি একটি মামলায় পলাতক ছিলেন। পরান উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের উথারিয়াপাড়া এলাকার প্রয়াত নান্নু মিয়ার ছেলে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) ইকবাল হোছাইন জানান, পরান তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারি। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার একটি মাদক মামলায় পলাতক ছিলেন। সোমবার ভোরে তাকে বিজয়নগরের সিঙ্গারবিল এলাকা থেকে জেলা গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা গ্রেফতার করে।
এসময় তার কাছ থেকে মাদক বিক্রির নগদ ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা এবং দুটি স্মার্ট ফোন জব্দ করা হয়। পরে বিকেলে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
বিজয়নগর প্রতিনিধি :
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের পরিকল্পিতভাবে সব সেক্টরে বিশাল উন্নয়ন ঘটিয়েছে। উক্ত উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় আনা দরকার। তাই আপনারা যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী জনগোষ্ঠী রয়েছেন তাঁরা আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড সাধারণ জনগণের মাঝে তুলে ধরে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করবেন পরিকল্পিত উন্নয়নের দ্বারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আবারও ক্ষমতা আনার জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদান করার জন্য বলে উপস্থিতি জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতি ব্যক্তিবর্গের প্রতি আহ্বান জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।তিনি বিজয়নগর উপজেলার অভাবনীয় উন্নয়নের কিছু বর্ণনা প্রদান করে এবং বিজয়নগর উপজেলাকে সাজিয়ে তুলতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে এমন অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার জন্য এখন থেকে মাঠে নির্বাচনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
আজ ২৮ জানুয়ারি শনিবার সকাল ১১ টায় বিজয়নগর উপজেলার বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ করে এমন বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় বিজয়নগর উপজেলায় মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় বিজয়নগরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি মাদক চোরাচালান বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো সতর্ক থাকার আহ্বান করেন। শেখ কামাল আন্তঃ স্কুল ও মাদ্রাসা অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় বিজয়ী বিভিন্ন শিক্ষার্থী মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাছিমা মুকাই আলী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান খাঁন শাওন, বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রাজু আহমেদ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মান্না, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিত্রী রাণীসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
এর আগে সকালে তিনি উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে উপজেলা কৃষক প্রশিক্ষণের শুভ উদ্বোধন করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না। েেবশ কিছুদিন ধরে। এনিয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাতীয় দিবস ব্যতীত পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্থানীয়রা বলছেন, এটা একটি সরকারি অফিস। সকালে খুলে বিকাল বন্ধ হয়। কিন্তু সব সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা গেলেও এখানে চিত্র ভিন্ন। এ অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে দেখা যায়নি।
আজ ২২ সেপ্টেম্বর রবিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় ভূমি অফিসে বেশ কিছু লোকের সমাগম রয়েছে। অফিসের সামনে জাতীয় পতার টানানোর জন্য একটি স্টীল খুঁটি রয়েছে। তবে তাতে জাতীয় পতাকা ছিল না।
হরষপুর ভূমি অফিসে জনবল রয়েছে তিন জন। ইউনিয়ন ভুমি সহকারি কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম, উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা সৈয়দ জাবের এবং অফিস সহায়ক মো: বাচ্চু মিয়া। প্রয়োজনীয় জনবল থাকা সত্ত্বেও কেন জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করায় স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় দেওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, আগে অফিস খোলার সাথে সাথে পতাকা উত্তোলন করা হতো। আর পতাকা উড়তে দেখে আমরা দূর থেকে বুঝতাম কাচারি ঘর (ভুমি অফিস) খোলা।
হরষপুর ইউনিয়ন ভুমি সহকারি কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, জাতীয় দিবসে আমরা পতাকা উত্তোলন করি। দিবসগুলোতে আমাদের বলে দেয়, নির্দেশনা পেলে আমরা উত্তোলন করি। গত সোমবার নির্দেশনা ছিল উত্তোলনের। এছাড়া পতাকা উত্তোলন করা হয় না।
বিজয়নগর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: মোজাহেরুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
বিজয়নগরে ভিন্ন কৌশলে ভারতে শিশু পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঈদের দিন বেলা ১১টায় দেওয়ান বাজারে আইসক্রিম আনতে গেলে দুই শিশুকে অটোরিক্সা দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তুলে নিয়ে যায় পাচারকারী চক্র। দুই শিশুর নাম সুবর্ণা আক্তার (৯) ও মাফিয়া আক্তার (৮)।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের নিদারাবাদ গ্রামের রিপন মিয়ার মেয়ে সুবর্ণা ও মামুন মিয়ার মেয়ে মাফিয়া। সুবিধাজনক স্থানে শিশু দুটিকে পানিতে ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে পাহাড়পুর ইউনিয়নের মনিপুর এলাকায় ভারতীয় সীমান্তে পাচার করার উদ্দেশ্যে নেয়। সেখানে একটি কুঁড়ে ঘরে তাদের আটকে রাখে। পরে জ্ঞান ফিরলে ভয়ভীতি দেখায়, যাতে চিৎকার না করে।
এদিকে দুই শিশুর বাবা-মা তাদেরকে খুঁজে না পেয়ে তাৎক্ষণিক বিজয়নগর থানায় জানান এবং এলাকায় মাইকিং ও স্যোশাল মিডিয়ায় শিশুদের ছবিসহ প্রচার করেন।
পাচারকারীর চক্র জনতার উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে এলাকার লোকজন শিশু দুটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। দুই শিশুর বর্ণনা অনুযায়ী অটোরিক্সাকে পাশের সোনামোড়া গ্রামের একটি অটোগ্যারেজে খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে চালককে খোঁজ করলে তিনি দৌড়ে পালান এবং লোকজন তাকে চিনতে পারেন।
এ নিয়ে শনিবার ১ জুলাই বিজয়নগর থানায় সুবর্ণা আক্তারের বাবা মো. রিপন মিয়া বাদী হয়ে ওই অটোরিক্সা চালক উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামের মৃত সফর আলীর ছেলে তকদির হোসেন প্রকাশ তছর আলীর (৪৮) নামে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রাজু আহম্মেদ বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে বিপণিবিতান তৈরির জন্য চার দশকের পুরোনো একটি পুকুর ভরাট করছেন স্থানীয় কয়েকজন। যদিও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিন ট্রাক্টরে মাটি ফেলে ভরাট চললেও রহস্যজনক কারণে নীরব কর্তৃপক্ষ। দুই মাস ধরে পুকুর ভরাটের কাজ চলছে।
ভরাটকাজে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, সবাইরে ‘ম্যানেজ’ করেই তাঁরা ভরাট করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তবে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, তাঁরা কাউকে পুকুর ভরাটের অনুমতি দেননি। একবার ভরাটের খবর পেয়ে ভরাট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আবার ভরাট শুরু হলে তাঁরা উদ্যোগ নেবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, পুকুরটি বিজয়নগর উপজেলা পরিষদের ৫০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত। ইউএনও, সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রতিদিন পুকুরের সামনে দিয়ে যাতায়াত করেন। তাঁরা এ বিষয়ে কোনো কিছু বলছেন না। দুই মাস ধরে মাটি ফেলার কাজ করলেও তাঁরা শুরু থেকে নীরব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিজয়নগরের চান্দুরা-আখাউড়া সড়কে ইছাপুরা ইউনিয়নের মির্জাপুর মোড়ে রাস্তা-সংলগ্ন পুকুরটি ৪০-৫০ বছরের পুরোনো। পুকুরের পূর্ব দিকের বাসিন্দা জলফু মিয়া, তাঁর ছোট ভাই আজিজুল হক ওরফে মলাই মিয়া, করিম মিয়াসহ কয়েকজন পুকুরটির ৭২ শতকের মালিক। সাড়ে তিন মাস আগে পুকুরটি ভরাট করতে পানি সরানো হয়। এরপর জলফু, মলাইসহ পাড়ের বাসিন্দারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি এনে ভরাটের কাজ শুরু করেন। পুকুরটি ভরাট করে সেখানে বিপণিবিতান নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। এ জন্য তাঁরা ইউএনও বরাবর আবেদন করেছেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
অন্যদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের (২০১০ সালে সংশোধিত) ৬ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা-ই থাকুক না কেন, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।’
বিজয়নগর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের নাজির মো. সৈয়দ মিয়া ও বুধন্তি ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের তহসিলদার কাজল বণিক বলেন, তাঁরা যতটুকু জানেন, জমিটি নালা শ্রেণির। সেটি ভরাটের অনুমতির জন্য তাঁরা ইউএনওর কাছে আবেদন করেছেন বলে শুনেছেন।
বিজয়নগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদি হাসান খান বলেন, অভিযোগ আসার পর ভরাট বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আবার শুরু করলে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। জমিটি জলাশয় না পুকুর শ্রেণির কাগজপত্র না দেখে বলা যাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন ও শ্রেণিভুক্ত না হলে ভরাটের অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করতে হবে। বাস্তবতার নিরিখে জমিটি কী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুকুরের মালিক আজিজুল হক বলেন, ‘আপনে আমারে কেন জিগাইতেছেন। ম্যাডামরে (ইউএনও) জিগান। ম্যাডামের কাছে সব কাগজপত্র জমা আছে। সব দিছি। জায়গাটি ২০০০ সালে আমরা কিনছি। এইডা পুকুর না, জলাশয়। এখানে জায়গা আছে ৭২ শতক। আমরার ভাই-বোনদের বাড়িঘরের প্রয়োজনে এইডা ভরাট করতাছি।’
তবে ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, ‘আনুমানিক ৪০ বছর ধরে পুকুর হিসেবে দেখতেছি। ভরাট বন্ধের জন্য বলেছি। বিষয়টি ইউএনওকেও জানিয়েছি।’
কোনো পুকুর ভরাটের জন্য কাউকে অনুমতি দেননি বলে দাবি করেন ইউএনও রুবাইয়া আফরোজ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন। প্রশাসনকে উৎকোচ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যিনি এই অভিযোগ করছেন, তাঁকে রেকর্ড বা প্রমাণ থাকলে দেখাতে বলেন। আমি তো বলছি, আমাকে একটু সময় দিন।’ দুই মাস ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় ভরাট চলছে উল্লেখ করলে রুবাইয়া আফরোজ বলেন, ‘আমি খোঁজ নেব।’