চলারপথে ডেস্ক :
মহান মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের উত্থাপিত প্রস্তাবটি প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রস্তাবটি যাতে বিবেচিত হয় সে জন্য বাংলাদেশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
আজ ২৫ জানুয়ারি বুধবার জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সদস্য এ. কে. এম. রহমতুল্লাহর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত এ প্রশ্নোত্তরে পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত নৃশংসতা যে কোনো যুদ্ধকে ছাড়িয়ে গেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখের বেশি মানুষের আত্মত্যাগ ও লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। যুদ্ধের সময় মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের নৃশংসতা বিশ্বের অন্য যে কোনো যুদ্ধে সংগঠিত নৃশংসতাকে ছাড়িয়ে গেছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসি নৃশংসতাসহ ইতিহাসের সকল কালো অধ্যায়কে হার মানিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এত বেশিসংখ্যক মানুষকে হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের চিত্র ইতিহাসে আর একটিও পাওয়া যাবে না। এই ইতিহাসকে স্মরণ রেখে বিশ্বের যে কোন প্রান্তি সংগঠিত গণহত্যার বিরুদ্ধে আমরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে জোরাল প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি।
এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকার গঠনের পর থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে নানান পদক্ষেপ চালিয়েছি। এরই ফলশ্রুতিতে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে চালানো হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য গত বছরের ১৪ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে (হাউস অব রিপ্রেজেন্টিভস) একটি প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছেন ওহিও অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসম্যান স্টিভ চ্যাট এবং ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান রো খান্না। পরবর্তীতে কো-স্পন্সর হিসেবে যোগ দিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাটি পোর্টার এবং নিউজার্সির ট ম্যালিনোস্কি।
প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, কংগ্রেসম্যানদের উত্থাপিত প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। প্রস্তাবটি যাতে বিবেচিত হয় সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ঐকান্তিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন আইনপ্রণেতাদের উত্থাপিত এই প্রস্তাবটি বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক সফলতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেই নয় বরং স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অগণিত মানুষের আত্মত্যাগ বিশেষত মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের ও বীরঙ্গনা মা-বোনদের সম্মানিত করা হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
জাতীয় সংসদ ভবনে নির্মিত ‘মুজিব ও স্বাধীনতা’ সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি আজ ২৪ জুন সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের প্রথম লেভেলে স্থাপিত ‘মুজিব ও স্বাধীনতা’ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ছিলেন।
এ সময় ‘মুজিব ও স্বাধীনতা’ সংগ্রহশালায় প্রদর্শিত বিভিন্ন স্থিরচিত্র ও ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন স্পিকার।
পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টির প্রশংসা করেন এবং পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। তিনি জাতীয় সংসদে ‘মুজিব ও স্বাধীনতা’ স্থাপনের জন্য স্পিকারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিনন্দন জানান। পরে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ জাতীয় সংসদ সদস্যরা ‘মুজিব ও স্বাধীনতা’ পরিদর্শন করেন।
সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার এক অনন্য প্রয়াস ‘মুজিব ও স্বাধীনতা’।
এখানে প্রথম কক্ষে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর শৈশব ও কৈশোর, খোকা থেকে শুরু হয়ে তারুণ্যে মুজিব ভাই হয়ে ওঠা, ভারত ভাগ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, উত্তাল ভাষা আন্দোলন ও ১৯৫০-এর দশকের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও ১৯৭০-এর নির্বাচন পর্যন্ত প্রদর্শিত হয়েছে।
১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বিজয়ের প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে দ্বিতীয় কক্ষের ঘটনাপ্রবাহ এগিয়ে গেছে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের দিকে। বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে ৭ মার্চের ভাষণ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২৫ মার্চের গণহত্যা, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা, দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের অকাতর সংগ্রাম এবং মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের আত্মত্যাগের ধারা বর্ণনা স্থান পেয়েছে এই কক্ষে।
তৃতীয় কক্ষে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল বিজয়, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ অবদানের সঙ্গে আরো রয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন, আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের পরিচিতি সুসংহত করার স্বর্ণালি ইতিহাস।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সংগ্রামী জীবন ও বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক জীবনের কিছু খণ্ডচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এরপর বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো অধ্যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্থান পেয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
আরও ১৮ দিন সময় বাড়ানো হয়েছে আগামী হজের নিবন্ধনের। ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে আজ ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আগের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী হজের নিবন্ধন আগামী রোববার (৩১ ডিসেম্বর) শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ২৫ হাজার ৪৭৮ জন হজযাত্রী নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২২ হাজার ৫৪৯ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২ হাজার ৯২৯ জন হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ১৬ জুন (১৪৪৫ হিজরি সনের ৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের মতো আগামী বছরও (২০২৪ সাল) বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি মাধ্যমের কোটা ১০ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি এজেন্সির কোটা এক লাখ ১৭ হাজার জন।
সময় বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে হজে গমনেচ্ছু ব্যক্তি, হজ এজেন্সি, হজ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় হতে হজ চুক্তির আগেই হজযাত্রীর চূড়ান্ত সংখ্যা জানানোর তাগিদ থাকা সত্ত্বেও বিশেষ বিবেচনায় সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমের হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো। এসময়ের মধ্যে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন বা প্যাকেজের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করে চূড়ান্ত নিবন্ধন করা যাবে।
প্রাথমিক নিবন্ধন করা হলে প্যাকেজের অবশিষ্ট মূল্য আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবশ্যিকভাবে একই ব্যাংকে জমা দিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় হজে যাওয়া যাবে না এবং প্রদত্ত অর্থ ফেরত দেওয়া হবে না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
চলারপথে ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ক্ষমতায় স্বাধীনতা বিরোধী, খুনী ও অগ্নি সন্ত্রাসীরা কখনই যেন ফিরতে না পারে সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে রিজ কার্লটন হোটেলের হলরুমে আমেরিকায় বাংলাদেশী প্রবাসীদের দেয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘খুনী, স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীরা যাতে আর কখনই ক্ষমতায় ফিরতে না পারে তা নিশ্চিত করুন। এই বিএনপি-জামাত জোট বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ২০১৩ থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত তথাকথিত আন্দোলনের নামে বহু মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে এবং রাস্তার পাশের হাজার হাজার গাছ উজাড় করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ‘এই চক্র দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল যেখানে আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৪ বছরে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে একে আবারো উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছে।বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। আমরা এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাগুলোকে সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে দেশে বিদেশে রাষ্ট্র বিরোধী অপপ্রচার চালানোর জন্যে বিএনপি জামাত জোটের কঠোর সমালোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরও বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। বিএনপি-জামাত জোট ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ব্যবহার করে আমাদেরই বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অপপ্রচারে কান না দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে। তিনি বলেন, সবাইকে মাথা উঁচু করে ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে বিশ্বে চলতে হবে।
বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সরকার অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ প্রতিটি খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আমরা এটা করতে পেরেছি।
দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের উন্নয়নে প্রবাসীরা অনেক অবদান রেখেছে।’
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে হুন্ডির পরিবর্তে বৈধ মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান কারণ, সরকার যথাযথ প্রক্রিয়ায় রেম্যিটান্স প্রেরণকে উৎসাহিত করতে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের পরও সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারনে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, চলমান যুদ্ধের কারণে উন্নতসহ অনেক দেশ সংকটে পড়লেও বহু দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা এখনও ভালো।
প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন যেন বাংলাদেশ কোন সংকটে না পড়ে।
দেশের দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশ এবং অতি দারিদ্রের হার ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে কোন চরম দারিদ্র্য থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাংক অনুসরণ করে সারাদেশে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে বাড়ি দিয়ে আসছে।
তিনি আরো বলেন, তাঁরা ইতোমধ্যে আবাসন প্রকল্পের আওতায় ৩৫ লাখ লোককে বাড়ি দিয়েছেন এবং তাদের জীবিকা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না, কারণ সরকার প্রতিটি গৃহহীন লোককে বিনামূল্যে আবাসন প্রকল্পের আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এ লক্ষে আরো ৬০ হাজার ঘর তৈরি হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ সময় মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান অন্ষ্ঠুান পরিচালনা করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এসে নতুন সূচনা করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়িয়েছে ৩৭ জনে। তাদের মধ্যে ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী। আর ১১ জন পাচ্ছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আজ ১০ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি মোট ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রীর নামের তালিকা পেয়েছি। এখানে আসার আগে তাদেরকে টেলিফোনে জানিয়েছি।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব, মন্ত্রী হচ্ছেন আ ক ম মোজাম্মেল হক, ওবায়দুল কাদের, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, আসাদুজ্জামান খান কামাল, দীপু মনি, তাজুল ইসলাম, ফারুক খান, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আনিসুল হক, হাছান মাহমুদ, আবদুস শহীদ, সাধন চন্দ্র মজুমদার, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আব্দুর রহমান, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আব্দুস সালাম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ফরহাদ হোসেন, ফরিদুল হক খান, জিল্লুল হাকিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, নাজমুল হাসান পাপন, ইয়াফেস ওসমান এবং সামন্ত লাল সেন।
তাদের মধ্যে ইয়াফেস ওসমান ও ডা. সামন্ত লাল সেন টেকনোক্রেট মন্ত্রী হচ্ছেন।
প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন সিমিন হোসেন রিমি, নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহমেদ পলক, মোহাম্মদ এ আরাফাত, মহিবুর রহমান, জাহিদ ফারুক, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রুমানা আলী, শফিকুর রহমান চৌধুরী, আহসানুল টিটু এবং খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান হবে শুক্রবার। সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইতোমধ্যে জানিয়েছে। নতুন সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয় পাবেন, তা জানা যাবে দপ্তর বণ্টনের পর।
চলাপথে রিপোর্ট :
‘হঠাৎ কী যে হইলো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মনে হলো মাথায় আসমান ভেঙে পরতাছে। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে রেখে আল্লাহকে ডাকছিলাম। মুহূর্তের মধ্যেই সব ঘটে গেল। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে এভাবেই দুর্ঘটনার বর্ণনা দিলেন দ্বিতীয় জীবন পাওয়া আনোয়ারা বেগম (২৫)।
পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনাকবলিত ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের যাত্রী ছিলেন তিনি। আজ ১৯ মার্চ রবিবার ভোরে বাসটি খাদে পড়ে ১৬ জন প্রাণ হারান।
আনোয়ারা বেগম এবং তার শিশু সাজ্জাদকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে উদ্ধারকর্মীরা।
উদ্ধারের পর অনেকটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন আনোয়ারা। কিছুক্ষণ পর ঘটনার ভয়াবহতা দেখে আঁতকে উঠলেন এবং সন্তানকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি।
বার বার আল্লাহকে ডাকছেন এবং আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জানাচ্ছেন তিনি।
ঘোর কাটলে নিজের পরিচয় দেন আনোয়ারা। জানান, বাগেরহাটের মোল্লারহাটের গারফা গ্রামের তাহিম মোল্লার স্ত্রী তিনি। মোল্লারহাট থেকে বাসে উঠেন।
আলাপচারিতায় আনোয়ারা বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়িটি বেশ দ্রুত গতিতে চলছিল। কিছুক্ষণ পরেই পদ্মা সেতু। এমন আলোচনা করছিল যাত্রীরা। হঠাৎ করেই গাড়িটি রাস্তা থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছিল। ওই সময়ে শুধু সন্তানকে জড়িয়ে রেখেছিলাম। ’
আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘বাগেরহাটের মোল্লারহাট থেকে ভোর ৬ টায় গাড়িতে উঠি। ঢাকার ধানমণ্ডি বড় বোনের বাসায় যাচ্ছিলাম। দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার মুহূর্তে মনে হয় জ্ঞান ছিল না। গাড়ির মধ্যে থেকে কে বা কারা বের করে আনছে তা মনে নাই। স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে এখনও। ’
এদিকে, খবর পেয়ে আনোয়ারার পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দিয়েছেন। এখন আর ঢাকায় বোনের বাসায় যাবেন না, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাবেন বলে জানান তিনি।
আনোয়ারা বেগমের ছেলে সাজ্জাদকে প্রশ্ন করা হলে সে বলে, আমি কিছুই বুঝতে পারি নাই। মায়ের কোলে ছিলাম।
প্রসঙ্গত, রবিবার সকাল ৮ টার দিকে শিবচরের এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকার ঢাকাগামী লেনে ইমাদ পরিবহনের বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিং ভেঙে উল্টে নিচে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। হাসপাতালে মারা যান আরও ২ জন। হতাহতের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে। দুর্ঘটনার পর হাইওয়ে পুলিশ, শিবচর থানা পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের টিম উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন।