চলারপথে ডেস্ক :
প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ ২৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের চেয়ে পুলিশের দায়িত্ব বেশি। আইন অনুযায়ী আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেই কেবল মামলা হবে। শুধু মামলা হলেই যেন গ্রেফতার করা না হয় সে বিষয়টিও বলা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভালো ও খারাপ দিক খতিয়ে দেখতে একটা কমিটি কাজ করছে, যদি প্রয়োজন হয় এই আইন সংশোধন করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, রাজনৈতিক মামলা বলে কিছুই নেই। অপরাধ করলে মামলা হয়। সেই মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন আছে, সেগুলোর বিচার হবে।
মন্ত্রী বলেন, সরকার একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রসিকিউশন সার্ভিস চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ৩০ শতাংশ স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হবে। বাকি ৭০ শতাংশ প্রচলিত ব্যবস্থার মতো নিয়োগ দেওয়া হবে। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে- আগামী নির্বাচনের পর এটা কার্যকর করা হবে।
তিনি বলেন, ডেটা প্রটেকশন অ্যাক্ট যেটা করা হবে সেটা কন্ট্রোল করার জন্য নয়, প্রটেক্ট করার জন্য। এটা সংসদে নেওয়া হবে। যেভাবে আইন পাস হয়, ঠিক সেই প্রক্রিয়ায় হবে এবং স্টেকহোল্ডারদের বক্তব্য শোনা হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, পিপি ও জিপিদের (সরকারি কৌঁসুলি) আগে বেতন ছিল ২ হাজার ও ৩ হাজার টাকা, সেটাকে আমরা বাড়িয়েছি। আমি মনে করি, তাদের একটি সম্মানজনক অবস্থানে আনার জন্য এই বেতন কাঠামো বদলানো অত্যন্ত প্রয়োজন। আমার প্রস্তাব, ৬৪ জেলাকে ৩টি ভাগে বড়, মাঝারি ও ছোট জেলায় ভাগ করে বেতন কাঠামো প্রস্তুত করা হবে। বড় জেলার পিপির বেতন হবে ৫০ হাজার টাকা, মাঝারি জেলার ৪৫ হাজার ও ছোট জেলার পিপির বেতন হবে ৪০ হাজার টাকা।
তিনি আরো বলেন, কতগুলো সহকারী প্রসিকিউটর এবং অতিরিক্ত প্রসিকিউটর ও অতিরিক্ত জিপি থাকবেন সেটাও নির্ণয় করা হবে কী কী কোর্ট আছে সেটার ওপর নির্ভর করে। সে জন্য ২৬৭ কোটি টাকা আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চেয়েছি, তারা বরাদ্দ দিতে রাজি হয়েছে। আমার মনে হয়, আগামী নির্বাচনের পরে যেই সরকারে আসুন না কেন, তারা এটা অবশ্যই বিবেচনা করবেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
টাঙ্গাইলের সখীপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাইসাইকেল ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। আজ ৩১ জুলাই সোমবার বিকেলে উপজেলা মাঠে এ সব বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আলম।
একশত শিক্ষার্থীকে স্কুল ব্যাগ, খাতা, কলম অন্যান শিক্ষা উপকরণসহ দশটি বাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল, পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ আজাদ, চর্যাপদ গবেষক প্রফেসর আলীম মাহমুদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (ইউ.এস.ও) ডা. মো. রুহুল আমীন মুকুল, সখীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাকিল আনোয়ার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রাফিউল করিম, উপজেলা ট্রইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আসিস কুমার বর্মন, আদিবাসী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আশ্চার্য বর্মণ প্রমুখ।
চলারপথে ডেস্ক :
আগামী ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। পবিত্র শবে কদরের ছুটির পর ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হওয়ার আগের দিন হওয়ায় এদিনও ছুটি থাকবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আজ ১১ এপ্রিল মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার আগামী ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করল।
প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ঈদপরবর্তী সময়ে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে।
চলারপথে ডেস্ক :
অন্তত তিন হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় খাতা পুনর্নিরীক্ষণে। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৩১৫ জন। অকৃতকার্য থেকে ৩৯৯ জন উত্তীর্ণ ও জিপিএ ৫ পেয়েছেন একজন। এ ছাড়া বিভিন্ন গ্রেডে ২ হাজার ৮৩৫ শিক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে।
খাতা পুনর্নিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হয় ১০ মার্চ শুক্রবার। দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ৯টির প্রকাশিত ফল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফল এখনও বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনে উত্তরপত্রের চারটি বিষয় দেখা হয়। এগুলো হলো– উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেওয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে ওঠানো হয়েছে কিনা ও প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কিনা। কোনো প্রশ্নের উত্তরে পরীক্ষক যে নম্বর দিয়ে থাকেন, সেটি পরিবর্তনের সুযোগ নেই।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, করোনার পর এবার বেশি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। ফলে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন বেশি পড়েছে। এখানে অস্বাভাবিক কিছু দেখছি না।
এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়ে খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ৩১ হাজার ৫৭৪ শিক্ষার্থী আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে ৯১৩ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১৩৪ জন। অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৪৫ পরীক্ষার্থী। চট্টগ্রাম বোর্ডে অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৭৪ জন। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৫৫ পরীক্ষার্থী।
খাতা পুনর্নিরীক্ষণে সিলেট বোর্ডে অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৯ জন। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১১ পরীক্ষার্থী। রাজশাহী বোর্ডে নতুন করে উত্তীর্ণ ২৪ জন ও জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২৫ পরীক্ষার্থী। ফল পরিবর্তন হয়েছে ৮৬ জনের। দিনাজপুর বোর্ডে ১৬৬ জনের ফল পরিবর্তন ও নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪৯ জন। অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬৪ জন।
যশোর বোর্ডে ৯৩ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২৫ জন। আর অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪৩ জন। কুমিল্লা বোর্ডে অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪৪ শিক্ষার্থী। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৩২ জন । তাঁদের মধ্যে এক পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছেন। খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ময়মনসিংহ বোর্ডে অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৭ শিক্ষার্থী। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১০ পরীক্ষার্থী।
এ ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ফল পরিবর্তন হয়েছে ৪৯ শিক্ষার্থীর। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১০ জন। আর অকৃতকার্য থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৫ শিক্ষার্থী।
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাস ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মোট জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ঝিনাইদহে স্কুল ও কলেজে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আড্ডা দেওয়ায় ২৪ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে সদর থানা পুলিশ। আজ ৪ জুন রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, শহরে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে বিপথগামী হতে না পারে সে জন্য স্কুল টাইম কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। সেই কর্মসূচির আওতায় শহরের বিভিন্ন স্থান ও পার্কে অভিযান চালানো হয়। সেসময় বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের ২৪ শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় আনা হয়। পরে অভিভাবকদের ডেকে তাদের জিম্মায় দেওয়া হয়।
এর আগে গত ১ জুন ঝিনাইদহের বিভিন্ন পার্কে আড্ডা ও গলিতে দেওয়ায় প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অনলাইন ডেস্ক :
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে রুনা লায়লা নামের এক হাজতিকে নির্যাতনের অভিযোগে যুব মহিলা লীগের সাবেক নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়াকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে পাঁচ টার দিকে তাকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেন কারাগারের জেল সুপার মো. ওবায়দুর রহমান।
এক কারা কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, পাপিয়া গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে প্রায় ৪০ মাস ধরে বন্দি ছিলেন। ২৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হিসেবে জেল বিধি অনুযায়ী পাপিয়াকে ‘রাইটার’ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তিনি রুনা লায়লা নামে এক হাজতিকে সম্প্রতি নির্যাতন করে তার কাছ থেকে টাকা পয়সা লুট করে নেয়, এমন অভিযোগে রুনার ছোট ভাই জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। পরে গঠন করা হয়েছে দুটি তদন্ত কমিটি। তার প্রেক্ষিতে সোমবার বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানে হয়েছে।
কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের (ভারপ্রাপ্ত) জেল সুপার মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পাপিয়ার হামলায় আহত রুনা কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের বেডে।
গাজীপুরে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাবন্দি বহিষ্কৃত মহিলা যুবলীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার মারধর ও নির্যাতনের শিকার রুনা লায়লা গুরুতর অবস্থায় এখনো গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ৭০৭ নাম্বার কক্ষে ভর্তি আছেন। হাসপাতালের বিছানায় রুনাকে কাতরাতে দেখা গেছে।
কারাগারের মারধরের শিকার হওয়ার পর থেকে রুনা অসংলগ্নভাবে কথা-বার্তা বলছেন। ২ জুলাই রবিবার বিকেলে রুনার বোন রওশন আরা বিষিয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হাসপাতালে তার বোনের অবস্থা এখনো খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না।
রুনা লায়লা গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কড়িহাতা গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে। ওই ঘটনায় জেলা প্রশাসক বরাবর তার ভাই আব্দুল করিম অভিযোগ করেন।
ওই হাসপাতালের বেডে শুয়ে রুনা সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার (১৭ জুন) ভোর ৫ টায় মাইকিং করে আমাকে কারাগারের বিচার বৈঠকে যেতে বলে। সকাল ৯টায় বিচার বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি ময়লা পরিষ্কার করতে যাই। বিকেল ৪টায় থালা-বাসন পরিষ্কার করি। বিকেলে আমাকে আমার কক্ষ থেকে বদলি করে পাপিয়ার অধিনে ৪০১ নম্বর কক্ষে দেওয়া হয়।
তিনি আরো জানান, পরদিন রবিবার ভোর ৫টায় সোনালী নামে একজন মাইকিং করে তাকে বিচার বৈঠকে আসতে বলে। তিনি সেখানে যাওয়ার পর আবার ওপরে উঠেন টয়লেটে যাওয়ার জন্য, এরপর তার নামতে দেরি হয়। এটাই ছিল আমার অপরাধ। সকাল ৭টার দিকে ফাতেমা নামে একজন আমাকে ডেকে নেয়। ফাতেমা লাঠি দিয়ে আমাকে আঘাত করে। আমি আত্মরক্ষার্থে হাতের লাঠি ফেরানোর চেষ্টা করি। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আরও মারধর শুরু করে। কিছুক্ষণ পড়ে একটা হাতুড়ি নিয়ে এসে আমাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে আমি পড়ে যাই। পড়ে যাওয়ার পর লাথি মারে। এসময় হঠাৎ ছালমা এসে হাজির হয়। ছালমা এসে আমার পরনের কমলা রঙ্গের জামাটা ছিড়ে ফেলে। এমন অবস্থায় আমি পালানোর চেষ্টা করি। পালাতে গিয়ে পড়ে যাই। আমাকে ওরা ধরে নিয়ে আসে। নাজমা ও মিনা নামে দুজন গিয়ে আমাকে হাতকড়া পড়তে বলেন। আমি ভয় পেয়ে হাতকড়া পড়তে চাই না। আমাকে জোর করে হাতকড়া পড়ায়। হাতকড়া পড়িয়ে আমাকে একটা নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে। আবার আমাকে বিচার বৈঠকে নিয়ে আসে। সেখানে দুদিকে ২ হাত উপরে তুলে লোহাড় শিকল দিয়ে বেঁধে দেয়। পাপিয়া এসে পায়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। তখন কারাগারের সবাই আমাকে উঁকি দিয়ে দেখে। আমি আমার শরীর ঢাকতে চেষ্টা করি। পাপিয়ার পিটানিতে আমি প্রস্রাব-পায়খানা আটকাতে পারিনি। আমি তখন পানি চাই। বার বার পানি পানি করে কাঁদতে থাকি। আমাকে ময়লা পানি খাওয়ার কথা বলে। আমাকে পানি দেওয়া হয়নি। আমার মাথায় পানি ঢেলে দেওয়া হয়।
রুনা লায়লা বলেন, একটা সময় পাপিয়ার আঘাতে আমি মাটিতে পড়ে যায়। মুনিয়া নামে একজন আমাকে আমার জামা পরিবর্তনের কথা বলে ময়লা স্তুপের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করে। ওইখানে ঘণ্টা খানেক মারধর করলে আমি আর কিছু বলতে পারি না। চেতনা ফিরে পেলে আমাকে ওরা গাছে টানায়। ওড়না দিয়ে গাছে টানিয়ে রাখে। আমি খুব অসুস্থ বোধ করি। সন্ধ্যায় জেল সুপার ওবায়দুর আমার হাতকড়া খুলে দেয়।
রুনা লায়লার ভাই আব্দুল করিম বলেন, এ ঘটনায় গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি’র) কাছে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করেছি। পরে গঠন করা হয়েছে দুটি তদন্ত কমিটি।
গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক শামসুল হুদা বলেন, রোগীর শরীরে রক্ত শূন্যতা দেখা গেছে। বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর রিপোর্ট আসেনি। রিপোর্টগুলো আসার পর রোগীর প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে।
কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) ওবায়দুর রহমান বলেন, ওই নারী গোপনে ৭ হাজার ৪০০ টাকা নিয়ে কারাগারে আসেন। বিষয়টি পরদিন তদন্ত করে পাওয়া যায়। টাকার বিষয়ে কারাগারের হাবিলদার ফাতেমা বেগম জানতে চাইলে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন রুনা।
জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) ওবায়দুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন দুইটি তদন্ত কমিটি গঠণ করেছে। এছাড়া এ ব্যাপারে ২৬ জুন জেলার ফারহানা আক্তার, ডেপুটি জেলার জান্নাতুল তায়েবা এবং মেট্রোনকে শো’কজ করা হয়েছে। তবে এখনও কারো জবাব পাওয়া যায়নি।