নাসিরনগরে অটোরিক্সা আটকে গণডাকাতি : নারীসহ আহত ৩০

নাসিরনগর, 27 January 2023, 1228 Views,

নাসিরনগর প্রতিনিধি :
নাসিরনগরে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা আটকে গণডাকাতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার ভোররাতে উপজেলার চাপরতলা ইউনিয়নের চাপড়তলা-ছাতিয়াইন সড়কের বুড়ইউরি গ্রামের পাশে এই ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা কমপক্ষে ৩০টি অটোরিক্সা আটকে এর যাত্রীদেরকে মারধোর করে তাদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন ও প্রায় নগদ ৩ লাখ টাকা নিয়ে যায়। ডাকাতদের মারধোর ও দায়ের কোপে মহিলাসহ কমপক্ষে ৩০জন আহত হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি ডাকাতদের হামলায় ৪/৫ জন আহত হয়েছে। ডাকাতরা কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু নিতে পারেনি।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার চাপরতলা ইউনিয়নের খান্দুরা গ্রামে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওয়াজ মাহফিল শুনতে সেখানে হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষ সমবেত হন। ওয়াজ শুনে ভোর রাত ৪টার দিকে মুসল্লীরা অটোরিক্সায় করে বাড়িতে ফেরার পথে চাপরতলা-ছাতিয়াইন সড়কের বুড়ইউরি গ্রামের পাশে পৌছলে ২০/২৫ জনের একটি ডাকাত দল যাত্রীবাহী ৩০টি অটোরিক্সা আটক করে। পরে যাত্রীদেরকে নামিয়ে সড়কের পাশের জমিতে নিয়ে চোখ বেঁধে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, নারীদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুটে নেয়।

যাত্রীদের চিৎকার শুনে তাদেরকে উদ্ধার করতে গেয়ে ডাকাতরা সাদ্দাম মিয়া নামে এক যুবকের হাতে রামদা দিয়ে কোপ দিলে তার হাতের চারটি আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ডাকাতদের মারধোরে আহতদের মধ্যে আলফাজ মিয়া, ফয়েজ মিয়া, ছোয়াব মিয়া, আলাল মিয়া, রমজান মিয়া, জোবাইদ মিয়া, আনালক মিয়া, আবু কালাম মিয়া, ভুট্টু মিয়া, হৃদয় মিয়া, আনাল হক, সাদ্দাম মিয়া, আনোয়ারা বেগম, শরিফা বেগম, ইন্তেজ আলী, লায়েছ মিয়া, ফায়েজ মিয়া ও আব্দুল মালেক মিয়ার নাম জানা গেছে।

শুক্রবার সকালে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এর মধ্যে আঙ্গুল হারারো সাদ্দামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করা হয়। নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহত আলফাজ মিয়া ও আলাল মিয়া বলেন, খান্দুরা গ্রামে ওয়াজ মাহফিল শুনে শুক্রবার ভোররাতে অটোরিক্সা যোগে বাড়িতে আসার সময় চাপরতলা-ছাতিয়াইন সড়কের বুড়ইউরি গ্রামের পাশে পৌছলে ২০/২৫ জনের একটি ডাকাত দল আমাদের অটোরিক্সা গুলো আটক করে। পরে আমাদেরকে অটোরিকসা থেকে নামিয়ে পাশের জমিতে নিয়ে চোখ বেঁধে আমাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও নারীদের স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। যাত্রীদের বাঁচাতে গিয়ে সাদ্দাম নামে এক যুবক এগিয়ে আসলে ডাকাতরা রামদা দিয়ে কোপ দিয়ে তার হাতের ৪টি আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন করে। তিনি বলেন, তাদের সাথে প্রায় একশত যাত্রী ছিলো। ডাকাতরা সবার মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা নিয়ে যায়। তাদের মারধোরে কমপক্ষে ৩০জন যাত্রী আহত হন। তিনি বলেন, শুনেছি এই রাস্তায় প্রায়ই অটোরিক্সায় ডাকাতি হয়। এই রাস্তায় রাতের বেলা টহল পুলিশ থাকলে ডাকাতির ঘটনা ঘটতোনা।

এ ব্যাপারে চাপরতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মনসুর আলী ও ইউপি সদস্য মোঃ হাবিব মিয়া আহত যাত্রীদের বরাত দিয়ে জানান, শুনেছি ভোররাতে ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরার পথে যাত্রীবাহী ৩০টি অটোরিক্সা ডাকাতের কবলে পড়ে। ডাকাতরা তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা পয়সা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ হাবিবুল্লাহ সরকার জানান, শুক্রবার ভোররাতে বড়ইউরি গ্রামের পাশে অটোরিক্সায় ডাকাতি হয়েছে বলে শুনেছি। এ সময় ডাকাতদের হামলায় ৩ জন আহত হয়েছে। ডাকাতরা কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু নিতে পারেনি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

Leave a Reply

নবীনগরে অগ্নিকান্ডে ১২ দোকান ভস্মিভূত

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগরে একটি বিপণীবিতানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে Read more

মদসহ ভারতীয় নাগরিক আটক

চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অভিযান চালিয়ে বিদেশি Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮৩…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সঠিক প্রক্রিয়ায় ৮৩জন Read more

জননিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত…

চলারপথে রিপোর্ট : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত একান্ত Read more

বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ১ Read more

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরে ১৪৪ ধারা…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও Read more

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও Read more
ফাইল ছবি

আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞাতনামা Read more

আখাউড়ায় বিনামূল্যে ধান বীজ বিতরণ চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া উপজেলায় Read more

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবু বাক্কার নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : কুয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় শেখ আবু বাক্কার (৩৪) Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস উল্টে যাত্রী নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলায় বাস উল্টে গোপী কান্ত ঘোষ Read more

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার Read more

নাসিরনগরবাসী এক ব্যক্তির কারাগার থেকে মুক্তি চায় : একরামুজ্জামান

নাসিরনগর, 27 December 2023, 545 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বিএনপি চেয়ারপার্সনের বহিষ্কৃত উপদেষ্টা ও আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১-(নাসিরনগর) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী (কলার ছড়ি প্রতীক) সৈয়দ একে একরামুজ্জামান বলেছেন, নাসিরনগরে এখন নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করছে।

আজ ২৭ ডিসেম্বর বুধবার বেলা ১১টায় নাসিরনগরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের একটা চাপ ছিলো তাই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, নির্বাচনী মাঠে জনগণের বিরাট সাড়া পাচ্ছি। জনগণ পরিবর্তন চায়। জনগণ এক ব্যক্তির কারাগার থেকে মুক্তি চায়। তিনি বলেন, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নেই নির্বাচনী পরিবেশ ভালো। আশাকরি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহানুল করিম (গরিবউল্লাহ সেলিম) আমাকে সমর্থন করে নির্বাচন থেকে সড়ে দাড়িয়েছেন। বর্তমান পরিবেশ যদি ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বজায় থাকে তাহলে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদি।

তিনি বলেন, আগে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। তাই আমার সাথে আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা আছে। আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত তিন প্রার্থী মাঠে আমার জন্য কাজ করছেন। সাধারন মানুষের কাছ থেকেও বিপুল সাড়া পাচ্ছি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ একে একরামুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, আমি নির্বাচিত হলে নিরাপদ নাসিরনগর বির্নিমান করবো। নাসিরনগর সরকারি কলেজে অনার্স, মাস্টার্স কোর্স চালু করে শিক্ষার ক্ষেত্রে উন্নয়ন করবো।

তিনি বলেন, নাসিরনগরের জেলেরা উপেক্ষিত। তাদের যে দাবি-দাওয়া গুলো আছে, প্রয়োজনে আমি নিজে জেলে হয়ে জেলেদের দাবি-দাওয়া আদায় করবো। তিনি বলেন, জাল যার জলা তার নীতির ভিত্তিতে জেলেদেরকে সুযোগ-সুবিধা করে দিবো।

তিনি বলেন, সব জায়গায় বিশেষ শিল্প কারখানা গড়ে তোলা যায়না। তিনি বলেন, ঢাকায় নাসিরনগরের প্রায় ২ হাজার কুটির শিল্পের উদ্যোক্তা আছে। আমি নির্বাচিত হলে ওই শিল্পটা নাসিরনগরে এনে শিল্পটা প্রসারিত করবো।

নির্বাচনী মাঠ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে প্রতিপক্ষের অনবরত হুমকি পাচ্ছি। এর মধ্যে যে গুলো জরুরি মনে করছি সে গুলোর বিষয়ে অভিযোগ করছি। কিছু কিছু বিষয় আমলে নিচ্ছি না। কারণ কিছু বিষয় থাকে সব বিষয় আমলে নেয়া যায় না।

তিনি বলেন সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমাদের ভোটারদেরকে ভয় দেখানো হচ্ছে। তারা বলছে তোমরা যেখানেই ভোট দাও রেজাল্ট আমার পক্ষেই আসবে। এটা ভোটারদের জন্য বড় হুমকি। যার কারণে ভোটাররা মনে করছে ভোট দিয়ে তাহলে কি হবে। ভোট যদি ওরা পাল্টে ফেলে। তখন তাদেরকে আমি বলি আপনারা এ গুলোতে কান দেবেন না। তিনি বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়তা দিয়েছেন,সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, নাসিরনগরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা সন্তোষজনক। তবে শেষের কথা এই মূহুর্তে বলতে পারছিনা।

মতবিনিময় সভায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের কার্যকরি কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সিনিয়র সাংবাদিকগণসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

বিল পাইয়ে দিতে ইউএনওর বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ

নাসিরনগর, 2 May 2023, 1225 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে একটি সমবায় সমিতিকে বিল পাইয়ে দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছে ক্ষুব্ধ জেলেরা।

অন্যদিকে, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও চাপে আছেন বলে স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ইউএনও।
অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ৩৯৬ দশমিক ৬৫ একরের শাপলা বিলের অবস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায়। তবে বিলের অধিকাংশ জমির মালিকানা সরাইল উপজেলার শাহজাদপুর ও মলাইশ গ্রামের লোকজনের। বিলের পাশ দিয়ে বয়ে চলা তিতাস ও শাপলা বিল, এই এলাকার সাত শতাধিক জেলের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম।

সম্প্রতি ১৪৩০-১৪৩২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত তিনবছরের জন্য বিলটি ইজারা দিতে বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে তদন্তক্রমে ও উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ছক মোতাবেক প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয় জেলা প্রশাসন। তদন্তে জলমহাল নীতিমালা-২০০৯ উপেক্ষা করে জেঠাগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে বিল বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়।

যেখানে জলমহাল নীতিমালা-২০০৯ এর (৫) ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ীও সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত নিকটবর্তী বা তীরবর্তী প্রকৃত মৎস্যজীবীদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা। জলমহাল নীতিমালা-২০০৯ এর (৫) ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট নিকটবর্তী বা তীরবর্তী প্রকৃত মৎস্যজীবীদের সমিতি যা সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত, সেই সমিতি বা সমিতিসমূহ নির্দিষ্ট বা তীরবর্তী জলমহাল ব্যবস্থাপনার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

শাহজাদপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির আবেদন উপজেলার বাইরের হওয়ায় বিবেচনাযোগ্য নয় বলেও ইউএনও ছক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। তবে বিল বরাদ্দের শর্ত কিংবা জলমহাল নীতিমালার কোথাও সমবায় সমিতিকে একই উপজেলার হতে হবে এমন কথা উল্লেখ নেই। এ অবস্থায় ইউএনওর বিরুদ্ধে বিতকির্ত ও পক্ষপাতমূলক তদন্তের অভিযোগ এনে তা বাতিল করতে এবং পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন স্থানীয় জেলেরা। এ বিল বন্দোবস্ত তাদের অনুকূলে না দিলে জীবন জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে ওঠবে বলে জানান জেলেরা।

একাধিক জেলে অভিযোগ করে বলেন, এ বিলে আমরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। এ বিল থেকে আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলে। আমাদের পার্শ্ববর্তী উপজেলার লোকজন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিল নিতে চাচ্ছে। বিল নিয়ে গেলে আমরা বউ-বাচ্চা নিয়ে খাব কি?

শাহজাদপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি অধীর চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের ৭০০ এর অধিক জেলের একমাত্র ভরসা এই বিল। আমাদের পেটে লাথি দিয়ে এ বিল এখন প্রভাবশালীরা নিয়ে যাচ্ছে। আমি সরকার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বিলটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।

শাহজাদপুর ২ নম্বর ইউপি মেম্বার মো. জুয়েল মিয়া বলেন, শাপলা বিল নাসিরনগর মৌজায় পড়লেও এ বিলের ৯৫ ভাগ জমিই শাহাজাদপুর ইউনিয়নের। প্রকৃত জেলেদের মূল্যায়ন করা হলে বিল দিয়ে দাঙ্গা ফ্যাসাদ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউএনও কার্যালয়ে গেলে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম। তবে জলমহাল বরাদ্দের তদন্তের বিষয়ে তিনি চাপে আছে বলে জানান।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ও ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি

আখাউড়া, কসবা, নবীনগর, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 17 October 2024, 273 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের বরখাস্তের প্রতিবাদে ও ২ দফা দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ও ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি পালন করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

আজ ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে তারা এই কর্মসূচি শুরু করে। ব্ল্যাক আউটের কারণে জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ৫ লক্ষ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সাথে অভিন্ন সার্ভিস কোড ও অনিয়মিত কর্মচারীদের চাকুরী নিয়মিত করণের ২ দফা দাবিতে দেশের ৮০ টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন।

তবে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কোন দাবি পূরণ না করে বরং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ মকবুল হোসেন ও নবীনগরের ডিজিএম আসাদুজ্জামানসহ সারা দেশের প্রায় ২০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে।

বরখাস্তকৃত অন্য কর্মকর্তারা হলেন এজিএম রাজন কুমার দাস, ডিজিএম দিপক কুমার সিংহ, এজিএম মনির হোসেন, জুনিয়র জেনারেল ম্যানাজার মো. জাকির হোসেন, জিএম মো. হুমায়ুন কবির, ওয়ারিং পরিদর্শক আবু সালাম জাবেদ, ডিজিএম মো. রাহাত, এজিএম আবদুল হাকিম, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মো. হাসানুজ্জামান, জেনারেল ম্যানাজার মুশফিকুল ইসলাম, জিএম জুলফিকার, জিএম মো. আবুল হাসান, ডিজিএম মো. বেলাল হোসেন, ডিজিএম জাহিদুল ইসলাম, ডিজিএম আবদুল জলিল, এজিএম ইয়াসির আরাফাত ও ডিজিএম সামিউল কবির। এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ব্ল্যাকআউটসহ কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন।

আন্দোলনকারীরা জানান, বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের স্বপদে পুনর্বহালের আগ পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। এদিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় স্থানীয় গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির প্রধান ফটকে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করার চেষ্টা করলেও আন্দোলনকারীরা বরখাস্তকৃত কর্মকর্তাদের পুনর্বহালের আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নাসিরনগর আঞ্চালিক কার্যালয়ের সহকারী জেনারেল ম্যানাজার মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ১৪ কোটি গ্রাহককে বিদ্যুৎ বিতরণ করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। বিদ্যুতায়ন বোর্ড পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে যাবতীয় মালামাল ক্রয় করে দেয়। এগুলির বেশীর ভাগই নিম্নমানের হয়। এতে তারা বিপুল পরিমান দুর্নীতি করে থাকে। পল্লীবিদ্যুৎ ও বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও চাকুরী বৈষম্য দুর করতে এ আন্দোলন। আগেও বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রেখেই আন্দোলন করেছি। তারপরও আমাদের ২০জন কর্মকর্তাকে চাকুরীচ্যুৎ করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানজার মো. মুকবুল হোসেনকে চাকুরীচ্যুৎ করায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন কসবা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. মোস্তাফিকুর রহমানকে। তিনি বলেন, চাকুরীচ্যুতদের চাকুরীতে বহাল এবং দাবি আদায়ের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমপ্লিট শাট দিয়েছে। বেলা ১১টা থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুৎ আমদানী ও বিতরণ কার্যাক্রম বন্ধ করে রেখেছে।

উল্লেখ্য, পল্লী বিদ্যুতের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা দুইটি, নাসিরনগর, নবীনগর, আখাউড়া উপজেলার ৫টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে।

নাসিরনগরে খাল ভরাট, পানিবন্দি ৩০০ পরিবার

নাসিরনগর, 9 July 2023, 836 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে দুইশত বছরের পুরনো খাল ভরাট করায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় তিনশত পরিবার। বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীর পক্ষে গত ১৯ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারাবর লিখিত অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কালন চৌধুরী। অভিযোগের পরও জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান না হওয়ায় বিপাকে গ্রামবাসী।

লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের মান্নান মিয়া, রুহুল আমীন, সোলমান মিয়াসহ কয়েকজন প্রভাবশালী লোক মিলে কয়েক বছর পূর্বে খালটি ভরাট করেন। ভরাটের সময় গ্রামের অন্যান্যরা বাধা দিলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা (ড্রেন নির্মাণ) করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৌশলে খালটি ভরাট করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা সেখানে কোন ড্রেন নির্মাণ না করে সরু পাইপের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করে। এতে করে সামান্য বৃষ্টি হলেই গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

শুক্রবার সরেজমিন ফুলপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পানিতে ডুবে আছে বাড়ির উঠান, গবাদি পশুর খড় আর রান্নার চুলা। পানিবন্দি থাকায় স্কুলে যেতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। বাড়ির সামনে থাকা আবাদি জমিগুলো ডুবে আছে। সাপ, জোঁক সহ অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণীর ভয়ে শিশুদের নিয়ে আতংকিত অভিভাবকরা।

ফুলপুর গ্রামের কৃষক ছুরুক মিয়া বলেন, খাল ভরাট করায় জমে থাকা পানিতে আমার গরুর খড়, রান্নার চুলা পানিতে ডুবে গেছে। আমি কিছুই করতে পারছি না। আমি কৃষক মানুষ, কৃষি না করলে খাব কি। এভাবে পানি জমে থাকলে বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় উঠা লাগবে।

গ্রামের বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.জামাল উদ্দিন জানান, আমরা জন্মের পর থেকেই দেখছি এখানে খাল ছিল। এখন খাল ভরাট করার কারণে গ্রামে পানি জমে আছে। ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। আমরা চাই খাল উদ্ধার করে জলাবদ্ধতার সমস্যার সমাধান করা হোক।

খাল ভরাটের বিষয়ে অভিযুক্তদের মধ্যে মান্নান মিয়া বলেন, আমাদের ব্যক্তি মালিকানা জায়গা আমরা ভরাট করেছি। গ্রামবাসীর কথা চিন্তা করে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপও বসিয়েছি।

সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুতুল রানী দাস বলেন, খাল ভরাট করার বিষয়টি আমি শুনেছি। আশা করছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত জলাবদ্ধতার নিরসন হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোনাববর হোসেন বলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ওই জায়গা পরিদর্শন করেছি। আশা করছি দ্রুততম সময়ে সমস্যার সমাধান হবে।

আগামী ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি নাসিরনগরের ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউকের সভা

নাসিরনগর, 14 February 2024, 485 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের পীরে কামেলে মোকাম্মল হযরত শাহসূফী আলহাজ¦ সৈয়দ আবদুস ছাত্তার নকশে বন্দী (রঃ) ও পীরে কামেলে মোকাম্মেল হযরত শাহসূফী আলহাজ¦ সৈয়দ নাছিরুল হক (মাসুম) নকশে বন্দী মোজাদ্দেদী ফান্দাউকী (রঃ) দ্বয়ের বার্ষিক ইছালে ছওয়াব উপলক্ষে ২ দিনব্যাপী ফান্দাউকের সভা আগামী ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি শুক্র ও শনিবার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।

দু‘দিনব্যাপী মাহফিলের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে শুক্রবার বিকেল থেকে। মাহফিল উপলক্ষে প্রায় ১৫ দিন ধরে সামিয়ানা টানানোসহ অন্যান্য কাজ চলছে। বিশাল প্যান্ডেল টানানো হয় আশেকানদের জন্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, নাসিরনগর, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ভৈরবসহ বিভিন্ন স্থান থেকে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। তাদের সুবিধার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। শতাধিক শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। ৫ হাজার লোক এক সাথে খাবার খাওযার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশাল এলাকা জুড়ে প্যান্ডেল নির্মান কাজ প্রায় শেষের পথে। আর এর পুরোটাই করা হচ্ছে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। এক পাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এ মাহফিলকে ঘিরে এলাকার লোকজনের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। প্রতিবারের ন্যায় এবারও লাখো মুসল্লির অংশগ্রহনে মূখরিত হবে ফান্দাউক দরবার শরীফ। মাহফিলে তা‘লীম তারবিয়াত প্রদান করবেন ফান্দাউক দরবার শরীফের গদ্দীনিশীন আলহাজ¦ মাওলানা সৈয়দ ছালেহ আহ্মাদ (মামুন)। ওই মাহফিলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ উপস্থিত হয়ে দু‘জাহানের অশেষ ছওয়াব হাসিলের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার বাদ ফজর আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন ফান্দাউক দরবার শরীফের গদ্দীনিশীন আলহাজ¦ মাওলানা সৈয়দ ছালেহ আক্ষাদ (মামুন)।

উল্লেখ্য, মাহফিলে দরবার শরীফের আওতায় পরিচালিত প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ফান্দাউক মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে পাগড়ি প্রদান করা হবে।