চলারপথে ডেস্ক :
সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ২৯ জানুয়ারি রবিবার বেলা ১১টা ১৭ মিনিটের দিকে সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন তিনি। বিটিভিসহ দেশের একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩৮তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবেন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রী প্রশিক্ষণে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী কর্মকর্তাদের মাঝে ট্রফি বিতরণ করবেন এবং নবীন এই পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন।
অনুষ্ঠান শেষ করে রাজশাহীর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর মাদ্রাসা মাঠে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ১৭ মার্চ, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মদিন।
সেদিন ছিল মঙ্গলবার। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। রাত ৮ টার দিকে মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে আসেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। পরাধীনতার নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা বাঙালি জাতির মুক্তির দূত হয়ে পৃথিবীতে আসেন একটি শিশু।
সেদিনের সেই শিশুই আজ অবিসংবাদিত নেতা বাঙালি ও বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ সেই মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকী। শুভ জন্মদিন জাতির পিতা। আজ বাঙালি জাতির আনন্দে পুলকিত হওয়ার দিন। দিনটি পরবর্তীতে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির এ জন্মদিনে দেশের ১৬ কোটি মানুষ বিনম্র শ্রদ্ধা, সালাম আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
খোকা থেকে জাতির পিতা : পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে আসা শেখ মুজিবুর রহমান চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়।
বাবা-মায়ের আদরের খোকা নামের ছোট্ট শেখ মুজিব ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলজীবন শুরু করেন। নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন।
পরবর্তীকালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
একই বছরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে এই কলেজ থেকেই স্নাতক সম্পন্ন করেন।
বিয়ে করেন শেখ ফজিলাতুননেছাকে (রেনু)। তারা দুই কন্যা- শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন পুত্র- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের জনক-জননী ছিলেন।
১৯৪৩ বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের (অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের শাখা) কাউন্সিলর নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৬ সালে শেখ মুজিব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের পাশাপাশি তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বতন্ত্র, স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন।
যদিও এই উদ্যোগ বাতিল হয় কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটিই একজন জাতির পিতার স্বপ্নের রাষ্ট্র গড়ার ভিত্তি হয়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ৪ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদলীয় ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
২ মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থাতেই তাকে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
১৯৫২ সালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ আরও অনেকেই। জেল থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে শেখ মুজিব শহিদদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানান।
একই বছর তিনি শান্তি সম্মেলন উপলক্ষ্যে চীন সফর করেন। শান্তি সম্মেলনে তিনি বাংলায় বক্তৃতা দেন, ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে যান বৈশ্বিক অঙ্গনে।
১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং একজন বাঙালি নেতা হিসেবে তার উত্থান হয়। ১৯৫৪ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসনে জয়লাভ করে।
আওয়ামী লীগ একাই পায় ১৪৩টি। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হন এবং ১৫ মে নতুন প্রাদেশিক সরকারের সমবায় ও কৃষিমন্ত্রী হন।
৩০ মে ভারত স্বাধীনতা আইন-১৯৪৭, প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার হঠাৎ করে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। ১৯৫৬ সালে খান আতাউর রহমানের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকারে তিনি মন্ত্রী হন।
মাত্র নয় মাস তিনি মন্ত্রী পদের দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বাঙালির অধিকার আদায় আন্দোলনকে বেগবান করা এবং সংগঠনকে আরও সুসংহত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৫৭ সালের ১৩-১৪ জুন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিতিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে এক বিশেষ সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
এই অধিবেশনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থেকে আলাদা হয়ে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়।
১৯৬৬ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।
এই ছয় দফা মুক্তিকামী বাঙালি জাতির জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির বীজ বুনে দেয়। ১৮-২০ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মিটিংয়ে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
ছয় দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি সারা বাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন। এ সময় তাকে আটবার গ্রেফতার করা হয় এবং সর্বশেষ ৮ মে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। প্রায় তিন বছর তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন।
১৯৬৮ সালে ৩ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার মোট ৩৫ জন বাঙালির (রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সরকারি অফিসার) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।
জেলে বন্দি থাকা অবস্থাতেই ১৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবের ওপর পুনরায় গ্রেফতার আদেশ জারি হয়। ভারতের সহায়তায় পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা দায়ের করা হয়।
বঙ্গবন্ধুসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং তার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র গণআন্দোলন শুরু হয়। টানা গণআন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সব বন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বিশাল ছাত্র সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আওয়ামী লীগের এক জনসভায় শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ’।
১৯৭০ বঙ্গবন্ধু ছয় দফার আলোকে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বা?ন জানান। আওয়ামী লীগের জন্য তিনি নৌকা প্রতীক বেছে নেন।
১২ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় উপকূল এলাকায় লাখো মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত রেখে ঘূর্ণিঝড়বিধ্বস্ত অঞ্চলে ছুটে যান।
৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়। ১৯৭১ সালে ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর মাত্র দুই দিন আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন।
এই ঘোষণার ফলে সর্বস্তরের বাঙালি জনতা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নতুন মোড় নেয়। ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু কার্যত ছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধান।
একদিকে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার নির্দেশ যেত, অপরদিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে যেত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ। বাংলার মানুষ মেনে চলতেন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ।
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধু বজ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
এই ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান।
২৫ মার্চ রাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাক হানাদার বাহিনী শতাব্দীর অন্যতম ঘৃণ্য গণহত্যা চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
এরপরই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় এবং গণপরিষদ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে ফিরে আসেন।
সেদিন বাঙালি জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা জানায়। লাখো মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্নাত হয়ে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে আসেন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।
১২ জানুয়ারি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে নতুন বাংলাদেশকে শক্ত ভিত্তির ওপর স্থাপন করেন।
অনলাইন ডেস্ক :
কাতার অর্থনৈতিক ফোরাম (কিউইএফ) ২০২৩-এ যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ২৫ মে সকালে দেশে ফিরেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ভোর ০৫:৫৮ টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে ফ্লাইটটি হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় রাত ১০:২৫ টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ০১:২৫ টায়) ছেড়ে আসে। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির আমন্ত্রণে তৃতীয় কাতার অর্থনৈতিক ফোরামে (কিউইএফ) যোগ দিতে গত ২২ মে শেখ হাসিনা তিন দিনের সরকারী সফরে দোহায় পৌঁছান।
সফরকারী শেখ হাসিনা কাতার ইকোনমিক ফোরামে যোগদান ছাড়াও আমিরি দিওয়ানে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির সঙ্গে সাক্ষাত, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল সানির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এছাড়াও, কাতারের জ্বালানি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সাদ বিন শেরিদা আল কাবি এবং সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিহ ও সৌদি অর্থনীতি ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ফয়সাল আলিব্রাহিম একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
শেখ হাসিনা কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশেও ভাষণ দেন এবং দোহায় কাতার ফাউন্ডেশনের অধীনে পরিচালিত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল আওসাজ একাডেমি পরিদর্শন করেন।
অনলাইন ডেস্ক :
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আন্দোলন, ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞা বা বিদেশিদের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। নৌকা সারাজীবন উজান ঠেলেই এগিয়েছে। উজান ঠেলেই এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, অনেকে আন্দোলনের কথা বলে। আবার ভিসানীতি বা নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখায়। আমার স্পষ্ট কথা, দেশ আমাদের, দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। এসব ভয় আমাদের দেখিয়ে লাভ নেই।
আজ ২ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরোনো বাণিজ্যমেলা মাঠে ঢাকায় দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন পরবর্তী সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশের এত উন্নয়ন কেন হয়েছে? দেশে একটা গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা রয়েছে বলেই সেটা হয়েছে। অনেকে এখন গণতন্ত্র উদ্ধার করবে বলেন। তারা কী গণতন্ত্র দিয়েছে, আমরা জানি। এখন আবার অনেকে আন্দোলনের কথা বলে। ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখায়। এসব ভয় আমাদের দেখিয়ে লাভ নেই।
তিনি বলেন, আজ যারা আন্দোলনের নামে রোজই আমাদের ক্ষমতা থেকে ফেলে দিচ্ছে, আমি তাদের বলবো- মেঘ দেখে করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। ভয়কে জয় করে বাংলাদেশের জনগণ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। নৌকা সারাজীবন উজান ঠেলেই এগিয়েছে। উজান ঠেলেই এগিয়ে যাবে।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, নৌকা মার্কা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছে। এই নৌকাই স্মার্ট বাংলাদেশ দেবে। আত্মবিশ্বাস রেখে জনগণের কল্যাণে কাজ করলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব। এটা আমরা দেখেছি। তবে তার জন্য স্থিতিশীলতা দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৭ সময়কালে দেশ ছিল অন্ধকারে। এখন আর সেটা নেই। বাংলাদেশ আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। আমরা যে ওয়াদা দিয়েছি, সেটা একের পর এক পূরণ করে যাচ্ছি। কবি সুকান্তের ভাষায়- ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আজ একটা সাময়িক সমস্যা চলছে। আমাদের ওপর অর্থনৈতিক ধাক্কা এসেছে। এজন্য আমি বলেছি, দেশে কোনো অনাবাদি জমি থাকবে না। নিজের ফসল নিজে ফলাবো। নিজের খাবার নিজে উৎপাদন করে খাবো। কারও কাছে হাত পাতবো না। জাতির পিতা বলতেন, ভিক্ষুকের জাতির উন্নতি হয় না।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি, বাংলাদেশকে দাবায়ে রাখা যায় না। মেট্রোরেল, উড়াল সড়ক উদ্বোধন করলাম। এগুলো সবই জনগণের স্বার্থে। সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবনীয় উন্নতি করেছি। আমরা চাই, আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, জাতির পিতার এই স্বাধীন দেশের একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। তাদের ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি। বেকারদের কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছি। সরকারি চাকুরেদের মতো সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন চালু করেছি। শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতও যেন আলোকিত হয়, আমরা সে উদ্যোগই নিচ্ছি।
দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক উদ্বোধন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমি আপনাদের আরেকটি নতুন উপহার দিচ্ছি। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এ উড়াল সড়ক। সময় বাঁচবে। মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের নান্দনিক ভিলেজ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর ছোটবোন শেখ রেহানা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান, সংসদ সদস্য হাবিব হাসান ও মোহাম্মদ আলী আরাফাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সেতু সচিব মঞ্জুর হোসেন।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর প্রান্তের কাওলা অংশে নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে বহুল কাঙ্ক্ষিত দেশের প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি এ প্রকল্প সম্পর্কে সচিবের দেওয়া প্রেজেন্টেশন দেখেন ও ব্রিফ শোনেন। এরপর কাওলা প্রান্ত থেকে টোল দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠেন। প্রায় ১১ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে ১৪ মিনিটে পার হয়ে তিনি আগারগাঁওয়ে সুধী সমাবেশে পৌঁছান। সেখানে রাখা উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন এবং পরে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন শেখ হাসিনা।
চলারপথে ডেস্ক :
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আগেও বলেছি, এখনও বলছি, উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদে যাওয়ার আগে এর অংশীজনদের সঙ্গে আবারও আলাপ-আলোচনা করা হবে। এর আগেও আমরা অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি। এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে যাতে এই আইনটির বিষয়ে এমন মনে না হয় যে, এটা উপাত্ত নিয়ন্ত্রণের জন্য করা হচ্ছে। এটার উদ্দেশ্যই হচ্ছে উপাত্ত সুরক্ষা করা। উপাত্ত সুরক্ষাই যাতে দেওয়া হয়, সেই ব্যবস্থাই থাকবে এতে।
আজ ১৯ ফেব্রুয়ারি রবিবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে ১৪শ বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী জজদের জন্য ১২শ ওরিয়েন্টশন কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান উপহার দেন, সেখানে তিনি পরিষ্কারভাবে বাক-স্বাধীনতাকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে রাখেন এবং তার সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাও মৌলিক অধিকার হিসেবে রাখা হয়, যা বহু গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধানে রাখা হয়নি। তাই কেউ যদি এমন দুশ্চিন্তা বা কল্পনা করেন যে, শেখ হাসিনার সেবামূলক সরকারের সময় এমন একটি আইন হবে, যেখানে জনগণের বাক-স্বাধীনতা বা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নষ্ট হবে, সেটা সঠিক নয়।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় নির্বাচন করতে পারবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ৬৬নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, কারো যদি নৈতিক স্খলনের কারণে দুই বছর বা তার বেশি সাজা হয়, তাহলে তিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে পারবেন না। এগুলো তো স্পষ্ট।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সাওয়ার ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) শেখ আশফাকুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রখ্যাত মার্কিন অর্থনীতিবিদ জেফারই ডেভিড সাকাহাসের নেতৃত্বে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্কের (এসডিএসএন) একটি স্বাধীন মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করা হয়েছে।
সম্প্রতি করা এই স্বাধীন মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই প্রধানমন্ত্রী জনগণের রায় নিয়ে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উন্নয়ন এজেন্ডাকে যথাযথ এসডিজির সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন।
বাংলাদেশের এসডিজি অর্জনের তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ধারাবাহিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০১৭ সালে ১৫৭টি দেশের মধ্যে অবস্থান ছিল ১২০তম। ২০২০ সালে বৈশ্বিক র্যাংকিং ছিল ১৬৬টি দেশের মধ্যে ১০৯তম।
মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুটি অভিষ্ট (গুণগত শিক্ষা এবং পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন) সঠিক পথে আছে দেশ। এ ছাড়া ছয়টিতে (দারিদ্র্য বিলোপ, ক্ষুধা মুক্তি, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানি এবং শিল্প উদ্ভাবন ও অবকাঠামো) পরিমিত রূপে উন্নতি করেছে। পাঁচটি অভিষ্ট অর্জনে (জেন্ডার সমতা, শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, টেকসই নগর ও জনপদ, জলবায়ু কার্যক্রম এবং অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারিত্ব) অপরিবর্তিত অবস্থায় আছে। অর্থাৎ এগুলোতে উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগ রয়েছে। তবে তিনটি অভিষ্ট অর্জনে (জলজ জীবন, স্থলজ জীবন এবং শান্তি-ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান) ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া অভীষ্ট-১০ (অসমতার হ্রাস) অর্জনের মূল্যায়নে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তের ঘাটতি আছে। ফলে মূল্যায়ন করা যায়নি।
এসডিএনএস’র স্বাধীন মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, কোভিড-১৯ এর অভিঘাতের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে ভালো করছে। দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করা এবং সঠিক দিকনির্দেশনা ও সব অংশীজনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এমডিজির মতো এসডিজিতেও সাফল্য আসবে বলে আশা করা যায়।