আখাউড়া স্থলবন্দরে কর্মবিরতি, আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত

আখাউড়া, 30 January 2023, 1584 Views,
ফাইল ছবি

আখাউড়া প্রতিনিধি :
সারা দেশের ন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দরেও চলছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কর্মবিরতি কর্মসূচি। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

banner

আজ ৩০ জানুয়ারি সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোনো পণ্যবোঝাই ট্রাক ভারতে প্রবেশ করেনি। এসময় স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে মাছসহ বিভিন্ন পণ্যবোঝাই ১৯টি ট্রাক।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে চলা এ কর্মবিরতি আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফা জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক মৌলিক অধিকার পরিপন্থী কাস্টমস এজেন্টস লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ এবং পণ্য চালান শুল্কায়নে এইচএস কোড ও সিপিসি নির্ধারণে প্রণীত বিতর্কিত আইন বাতিলের দাবিতে সারা দেশেই কর্মবিরতি চলছে।

Leave a Reply

জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির…

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান Read more

বাঞ্ছারামপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

চলারপথে রিপোর্ট : ৬ দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য Read more

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্ক : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল Read more

রাইস কুকারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা-মেয়ের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক : মাগুরার সদর উপজেলার টিলা গ্রামে রাইস কুকারে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

চলারপথে রিপোর্ট : সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় Read more

নাসিরনগরে মৎস্য আড়তে অভিযান, নিষিদ্ধ পিরানহা…

চলারপথে রিপোর্ট : বিক্রির জন্য রাখা নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ জব্দ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন চাঁদাবাজ গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাটিহাতা (বিশ্বরোড) গোলচত্বর নামক এলাকায় চাঁদাবাজির Read more

সড়ক মেরামতের সপ্তাহ না পেরোতেই উঠে…

চলারপথে রিপোর্ট : সড়ক মেরামতের এক সপ্তাহ না পেরোতেই ইতিমধ্যে Read more

কসবায় গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : আজ ২৪ জুন মঙ্গলবার সকালে এস আই Read more

শাস্তি পেলেন ঋষভ পন্ত

অনলাইন ডেস্ক : আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট Read more

বাংলাদেশে গুগল পে এর উদ্বোধনী

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আহসান এইচ মনসুর Read more

যে কাজে নেক আমল নষ্ট হয়

ইসলাম ডেস্ক : মানুষের জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক দিক হলো Read more

আখাউড়ায় যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

আখাউড়া, 6 November 2024, 380 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়ায় মোহন মিয়া (২৬) নামে এক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ ৬ নভেম্বর বুধবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া পৌরশহরের তারাগন এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত মোহন মিয়া ওই এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে।

banner

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মোহন মিয়ার স্ত্রী প্রবাসে যান। প্রতিদিনই তাদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে কথা হতো। গত রাতে খাবার খেয়ে নিজ ঘরে ঘুমাতে যান মোহন মিয়া। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় পরিবারের লোকজন তাকে ডাকাডাকি করে। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে জানালা দিয়ে দেখে টিনের ঘরের তীরের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় মোহন মিয়া ঝুলে আছেন। স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দিলে দ্রুত এসে সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহতের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে মোহনের স্ত্রী সৌদি আরব গেছে। সন্ধ্যার দিকে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে শুনেছি। তাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা ছিল কিনা বলতে পারছি না। তার একটা সন্তান রয়েছে। এভাবে সে মরে যাবে, তা কল্পনাও করতে পারছি না।

আখাউড়া থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল হাসিম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহ থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে।

দুই-তিনটা রাজনৈতিক দল দেশকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে : আইনমন্ত্রী

আখাউড়া, রাজনীতি, 2 May 2023, 2095 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য দুই-তিনটা রাজনৈতিক দল খুব চেষ্টা করছে। জনগণকে সেই ষড়যন্ত্র সম্বন্ধে সজাগ থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষ তাদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে এবং ছিন্নভিন্ন করে দিবে।

banner

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকা আখাউড়ায় আজ ২ মে মঙ্গলবার দিনভর গণসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে মনিয়ন্দ ইউনিয়নের শৌনলোহঘর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের পথসভায় বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির সময় জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষকে বিনা পয়সায় ৩টি টিকা দিয়েছেন। ১ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছেন। গার্মেন্টস শ্রমিকদেরকে বিনা কাজে ৩ মাস বেতন দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষের টাকা পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনকে গৃহ দিয়েছেন। পরে তুলাই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পথসভায় মন্ত্রী আরও বলেন, শেখ হাসিনা থাকলেই বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে। বিএনপি জামাত থাকলে বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে উন্নয়নের রুল মডেল হিসাবে ধরা হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আরও উন্নত হতে চাই। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে ২০৪১ সালে আমরা একটি উন্নত দেশ হব।

পথসভায় নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনিসুল হক বলেন, আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারো বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করলে বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।

পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল, কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান রাশেদুল কায়সার জীবন, কসবা পৌরসভার মেয়র এম.জি হাক্কানি, মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম চৌধুরী দীপক, আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বাবুল, যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মমিন বাবুল, আতাউর রহমান নাজিম, তুলাই শিমুল উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সভাপতি মোঃ লুৎফুর রহমান প্রমুখ।

এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সকাল সাড়ে ১০টায় মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে পথসভার মাধ্যমে এসব পথসভায় তিনি এলাকার অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিগত ২০২০ সাল থেকে করোনা ভাইরাস অতিমারির কারণে এলাকার সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকায় লোকজনকে দেখাশোনা করতে না পারায় তিনি দু:খ প্রকাশ করেন। দিনভর গণসংযোগ শুরু করেন। বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তিনি মনিয়ন্দ ইউনিয়নের ৯টি পথসভায় যোগদান করেন।

আখাউড়ায় এক পোলিং এজেন্টকে কারাদণ্ড সহকারী প্রিজাইডিং প্রত্যাহার

আখাউড়া, 21 May 2024, 631 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে অবৈধভাবে গোপনকক্ষে গিয়ে অন্য ভোটারের ব্যালট পেপারে সিল মারার দায়ে মাহবুব মিয়া (৩৮) নামে এক পুলিং এজেন্টকে ৭ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তিনি মাইক প্রতীকের এজেন্ট ছিলেন।

banner

এসময় ভোট কক্ষে দ্বায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়ায় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল আলীকে নির্বাচনের দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম শেখ। আজ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার এ ঘটনা ঘটে। এক ভোটারের ভোট জোর করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য প্রতীকে দেওয়ায় দণ্ডবিধির ১৭১-চ ধারায় ০৭ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

আখাউড়া ইমিগ্রেশনের কাজ চলে ছোট্ট কক্ষে, নেই বসার সুব্যবস্থা

আখাউড়া, 16 May 2023, 1530 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
লক্ষ্মী রানী দাস। তিনি ভারত থেকে স্বামী ও সন্তান নিয়ে আগরতলা স্থলবন্দর দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন।

banner

যাত্রাকালে আগরতলা ইমিগ্রেশনে সুষ্ঠু ও স্বাচ্ছন্দ্যে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে এলেও আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে এসে রীতিমত অবাক হক তিনি। বসারও সুব্যবস্থা নেই এখানে।

ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়ালেও ছোট কক্ষটিতে নেই কোনো ফ্যান। হঠাৎ ১২ বছর বয়সী ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা করার জন্য কোনো স্থান না পেয়ে ইমিগ্রেশন ভবনের এক কোনায় বসে তার সেবা যত্ন করেন। আশেপাশে ছিল না কোনো টিউবওয়েল। যাও বা ট্যাংকের পানি জুটেছে, তাও তীব্র তাপদাহে তপ্ত। তা দিয়েই ছেলেকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যান।

লক্ষ্মী রানী দাসের বলেন, আগরতলা ইমিগ্রেশনে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ও সুন্দর পরিবেশে আরামে সব কাজ করে এসেছি। বন্দর থেকে গাড়িতে আমাদের ফ্রি চেকপোস্ট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। অথচ আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনে এসে নাজেহাল হতে হলো। এখানে কোনো কিছুরই সুব্যবস্থা নেই। একতলা পুরোনো ভবনের ছোট্ট কক্ষে শত শত লোক ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে। এখানকার ইমিগ্রেশনের অব্যবস্থাপনা দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। এখানে যাত্রীদের জন্য পরিষেবা বাড়ানো উচিত। আশা করব, বাংলাদেশ সরকার দুই দেশের যাত্রীদের কথা বিবেচনায় এনে ইমিগ্রেশন উন্নত করবে।

আগরতলা থেকে আসা আরেক যাত্রী খোকন মিয়া বলেন, আমি গত ছয় বছর ধরে এ চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করছি। ইমিগ্রেশনটি যে হালতে দেখেছিলাম, সে হালতেই আছে। একজন রোগী এলে যে বসবে, সে উপায় নেই। এখানে যে পরিমাণ জায়গা দরকার, সে তুলনায় খুবই কম আছে।

বন্দরটি ঘুরে দেখা গেছে, মূলফটক পার হলেই একতলা বিশিষ্ট তিন রুমের একটি ভবন। এর মধ্যে দুটি ছোট রুম ও একটি মাঝারি রুম। একটিতে ইমিগ্রেশন ইনচার্জ বসেন, আরেকটি হচ্ছে ব্যারাক। মাঝারি কক্ষটিতে চলে অফিসের কার্যক্রম। পুরোনো ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরে গেছে। প্রতিদিন যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই গাদাগাদি করেই চলে কার্যক্রম। যাত্রীদের মালপত্র বারান্দায় রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বসার জন্য ইমিগ্রেশন কক্ষে কোনো জায়গা নেই। আর বাইরে টিনের একটি ছাউনি আছে, যেখানে ১৫/২০টি চেয়ার থাকলেও কোনো টেবিল নেই। অথচ ফরম পূরণ করতে টেবিল প্রয়োজন। ফরম পূরনের জন্য দেখা গেছে কেউ বারান্দার মেঝেতে বসে, আবার কেউ কেউ বিদ্যুৎতের জেনারেটরের ওপরে ফরম রেখে পূরণ করছেন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশ্রামের জন্যও জায়গা নেই। কক্ষটিতে এসির ব্যবস্থা থাকলেও ভিড় থাকায় যাত্রীদের লাইন কক্ষের বাইরে বারান্দায় চলে যায়। ফলে এসিগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তীব্র গরমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক ফ্যানের ব্যবস্থা না থাকায় গরমে কষ্ট সহ্য করে ইমিগেশনের কাজ শেষ করতে হয়।

তবে বিড়ম্বনা এখানেই শেষ নয়। কাস্টমসের কাজ করতে পাড়ি দিতে হচ্ছে অন্তত দুইশ গজ দূরবর্তী অন্য আরেকটি ভবনে। মূলত এক ভবন ও এক ছাদের নিচে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কাজ করতে না পারায় তাদের দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে চালু হয় আখাউড়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম। সুবিধাজনক ভৌগলিক অবস্থান হওয়ায় এ বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট থেকে অনেকেই আখাউড়া ইমিগ্রেশন ব্যবহার কররে ভারতে যাতায়াত করছেন।

কাস্টমস সূত্র জানায়, এ ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে প্রতিদিন অত্যন্ত এক হাজার যাত্রী দুই দেশে যাতায়াত করছেন। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক যাত্রী ভারতে যান। যা থেকে প্রতি মাসে ৭৫ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে সরকারের। বিগত ছয় মাসে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।

এদিকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে আখাউড়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন আধুনিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও ২০১৭ ও ২০১৯ সালে সীমান্ত আইনের অজুহাতে বিএসএফ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।

মৌলভীবাজার জেলা থেকে ভারতগামী বাংলাদেশি যাত্রী সুমন আহমেদ বলেন, আমি ইমিগ্রেশনের পরিবেশ দেখে হতবাক হয়ে গেছি। এখানে লাইনের কোনো শৃঙ্খলা নেই। কোনো ধরনের আধুনিকায়ন নেই। অথচ আগরতলা ইমিগ্রেশনের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফারহানা মিলি নামে এক নারী চিকিৎসক তার বাবার চিকিৎসা জন্য ভারতে যাওয়া সময় আক্ষেপ করে বলেন, আগরতলা ইমিগ্রেশন ও আখাউড়া ইমিগ্রেশনের মধ্যে অনেক পার্থক্য। আমাদের এখানে ভালো ব্যবস্থা নেই। মালপত্র রাখার জায়গা পাই না। আরেকজনের কাছে পাহারা দিয়ে রাখতে হয়। বছরের কয়েকবার যেতে হয়। তবে এর উন্নতি দেখছি না। এখানে দ্রুত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগুক সেই কামনা করি।

মুক্তি খান নামে এক যাত্রী বলেন, বর্তমানে আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবন নামেমাত্র টিকে আছে। জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে কোনোমতে ঝুঁকি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হচ্ছে। স্থায়ী ভবন তৈরির পর এক ছাদের নিচে সব পরিষেবা পাওয়া গেলে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশিদের আসা যাওয়া আরও বেড়ে যাবে। যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগও লাঘব হবে।

জেলা পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি যাত্রী পারাপার হচ্ছেন। তবে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালানোর জন্য যে ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে, তা খুবই অপ্রতুল। নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে সেবার মান বাড়বে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, এ ইমিগ্রেশন দিয়ে দুই দেশের বিপুল সংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করলেও ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের পর্যাপ্ত সুবিধার কমতি রয়েছে। আমাদের নতুন একটি ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ কাজ চলছিল, তা বিএসএফের বাধায় বন্ধ রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কথা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলে আমরা ভবনটির কাজ আবার শুরু করতে পারব। এছাড়া বলে রাখি, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখানে একটি আধুনিক বন্দর নিমার্ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ৩.৫৭ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ হাতে নিয়েছি। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। তখন স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম আরও বেগবান হবে। যাত্রীসেবার মানও উন্নত হবে।

তিনি আরো বলেন, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চারলেন সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে এবং আধুনিক স্থলবন্দরটি তৈরি হলে আখাউড়াই হবে বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য স্থলবন্দর।

পুকুরের পাড়ে পাড়ে হাজারো সবরি কলার গাছ

আখাউড়া, 23 January 2024, 847 Views,

চলারপথে রিপোর্ট:
বিস্তির্ণ ফসলের মাঠ চারপাশে। জমিতে যাওয়ার মেঠো পথ মাঝখান দিয়ে। পথের এক প্রান্তে গড়ে উঠেছে ছোট্ট বসতি। কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা এ পথ ধরে জমিতে যায়। বসতির লোকজনও এ পথ দিয়ে যাতায়াত করে।

banner

পথের এক পাশে বড় একটি একটি পুকুর। পুকরের চারপাড়ে রয়েছে সহস্রাধিক কলা গাছের বাগান। গাছে গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। কলাপাতার ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে কলার মোচা। হাওয়ায় দুলছে কচি সবুজ কলাপাতা। এক অপরূপ দৃশ্য নজর কাড়ছে কৃষক, শ্রমিক, পথচারিদের। চলার পথে একটু দাঁড়িয়ে চোখ বুলায় কলাবাগানের দিকে। মাঝে মধ্যে স্থানীয় তরুন-যুবারাও আসে কলাবাগান দেখতে।

আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের ছোট কুড়িপাইকা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার (অব.) জাবেদ ইকবাল খন্দকার ছোট কুড়িপাইকা ফসলি মাঠে বাগানটি করেছেন। ইতোমধ্যে শতাধিক গাছে কলার ছড়া এসেছে। কয়েক ছড়া কলা নিজেরা খেয়েছেন। পাইকাররা এসে বাগান দেখে দরদাম করছেন। ফলন ভালো হওয়ায় তিনি উদ্যোক্তা খুশি। দুই লক্ষাধিক টাকার কলা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা জাবেদ ইকবাল খন্দকারের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১ বছর আগে সাড়ে তিন বিঘা অনাবাদি জমিতে পুকুর খনন করেন। পুকুরের চারপাড়ে সবরি জাতের ৪’শ কলা রোপন করেন। সাথে কিছু সাগর ও আনাজি কলা। একটি চারা থেকে ৩/৪টি গাছ হয়েছে। বর্তমানে বাগানে প্রায় ১ হাজার ৩’শ কলা গাছ আছে। প্রায় দেড়শ গাছে কলা এসেছে। আরও আসছে।

কলা গাছের বাগান করার পরিকল্পনার বিষয়ে প্রবীন বীর মুক্তিযোদ্ধা জাবেদ ইকবাল খন্দকার আরও বলেন, আমি জমিতে এসে দেখি কৃষক-শ্রমিকরা রোদের মধ্যে জমিতে কাজ করে। রোদে বসে খাবার খায়। শ্রমিকরা প্রায়ই বলতো এখানে যদি গাছ থাকতো তাহলে তাদের সুবিধা হতো।

এজন্য আমি পুকুর খনন করে পুকুরের চার পাড়ে কলা গাছ রোপন করেছি। ১২টি কাঁঠাল গাছ লাগিয়েছি। শ্রমিকদের বলেছি বাগানে বসে খাবার খাওয়া এবং বিশ্রাম করার জন্য। অনেক সময় ছেলে মেয়েরা এখানে ঘুরতে আসে। বাগান দেখে আনন্দ পায়।

তিনি আরও বলেন, প্রায় ১৩ হাজার টাকার কলার চারা রোপন করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পুকুরে কাতল, রুইসহ বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করছেন। আশা করছেন দুই লক্ষাধিক টাকার কলা বিক্রি করতে পারবেন। শ্রমিক নিয়ে তিনি নিজেই বাগানোর দেখাশুনা করেন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কলা গাছে ছোট বড় কলার ছড়া ঝুলছে। পাতার ফাঁক গলে বেরিয়ে আসছে কলার মোচা। পুকুরে মাঝে মাঝে টুপ-টাপ শব্দ করে করে জানান দিচ্ছে মাছেরা আছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা জাবেদ ইকবাল খন্দকারের সৌদি আরব প্রবাসী পুত্র সুমন খন্দকার বলেন। বাবা সব সময় কৃষি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এতে তিনি আনন্দ পান। আমরা বিদেশ থেকে খোঁজ খবর রাখি। যখন যা প্রয়োজন হয় সহযোগিতা করি। বাগানটি দেখে খুব ভালো লাগছে।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাস্সুম বলেন, ভালোভাবে পরিচর্যা করলে সবগুলো গাছেই কলা আসবে। সবরি কলার ফলন ভালো। রোগ-পোকার আক্রমন কম হয়। অন্যান্য কলার তুলনায় সবরি কলার পুষ্টিগুণ বেশি। আইরনের চাহিদা পূরণ করে।

সবরি কলার বাজার চাহিদাও বেশি। কৃষক আসাদের সাথে যোগাযোগ করতে আমরা তাকে পরামর্শ দিব। আমাদের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাকে বলবো বাগানটি দেখে আসতে।