চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দাবি আদায় না হওয়ায় আবারো বাড়ানো হয়েছে আদালত বর্জন কর্মসূচি। আজ ৩০ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে ৫ম দফায় বর্ধিত কর্মসূচির শেষ দিনে আরো ৮ দিনের জন্য আদালত বর্জন কর্মসূচি নিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
বিকেলে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে সর্বদলীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি এক সভার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন কর্মসূচির আওতায় আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করবেন আইনজীবীরা। এসময় আদালতের কোনো বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না তারা।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর ভূঁইয়া জানান, দাবি আদায় না হওয়ায় কর্মসূচি বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এবং আদালতের নাজিরকে অপসারন করার দাবি আদায় না হলে আইনজীবীদের সর্বদলীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয়। এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারীরা। এ অবস্থায় জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারি থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। পরবর্তীতে পুরো আদলতের পরিবর্তে জেলা জজ ও নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুন্যাল-১ আদালত বর্জন করে আসছে আইনজীবীরা। এছাড়াও বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও অশালীন স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ আইনজীবীকে দু’দফায় তলব করেছে উচ্চ আদালত।
অনলাইন ডেস্ক :
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানিরা বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়ার পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল দেশের স্বাধীনতার কথা আপনি কখন থেকে চিন্তা করেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ১৯৪৮ সালে যখন মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পাকিস্তানিরা কেড়ে নিয়েছিল সেদিন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওদের সঙ্গে আর থাকবো না।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই কিন্তু স্বাধীনতা। একজন নেতা নিজের জীবনের সব বিসর্জন দিয়ে একটি জাতির জন্য দিনের পর দিন অধিকার বঞ্চিত-শোষিত মানুষের কথা বলতে গিয়ে বারবার কারাবরণ করেছেন। জেলজুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন। যে লক্ষ্য তিনি স্থির করেছিলেন, সেই লক্ষ্য সামনে রেখে একটার পর একটা পদক্ষেপ নিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ৫৪ সালে নির্বাচনও করেছেন, ৫৬ সালে তিনি জাতীয় পরিষদে ছিলেন। নিয়ম মেনেই কিন্তু এগিয়ে গেছেন। একটি লক্ষ্য স্থির রেখে। যেটা কখনও তিনি মুখে উচ্চারণ করেননি। কিন্তু একটি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা বা তাদের সংগঠিত করা, ঐক্যবদ্ধ করা এটা একটি কঠিন কাজ ছিল। সেই কঠিন কাজ তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে যান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটাই আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। যে কাজটা তিনি করতে গিয়েও করতে দেওয়া হয়নি। ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। কাজেই এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা জয়বাংলা স্লোগানে বিশ্বাস করে না, ৭ মার্চের ভাষণকে যারা প্রেরণা বলে মনে করে না, তার অর্থ তারা স্বাধীন বাংলাদেশই চায় না। তারা দেশের উন্নয়ন চায় না। দেশের মানুষের অর্থ-সামাজিক উন্নতি চায় না।
তিনি আরও বলেন, তাদের কেন মানুষ ভোট দেবে। সেজন্যই তারা বারবার ইলেকশন বানচাল করে কীভাবে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে, বারবার অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করে দেশটাকে ধ্বংস করতে চায়।
অনলাইন ডেস্ক :
ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপক রফিকুল আমীনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি আত্মপ্রকাশ করেছে। নতুন এ দলের সদস্য সচিব ফাতিমা তাসনিম। আজ ১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন পার্টির আহ্বায়ক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন।
বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য অধিকার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠের শুরুতে রফিকুল আমীন বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের ৫৪ বছরেও দেশের মানুষ বঞ্চনা ও বৈষম্যের সাথে লড়াই করে চলেছে। তাই দেশের মানুষকে এক হয়ে স্বৈরাচার বিদায় করতে হয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে চায় বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি।
তিনি বলেন, দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন, সরকারি-অফিস ও আদালতে ডিজিটালাইজেশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালতে রাজনীতি নিরুৎসাহিত করাসহ বেশ কিছু সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে বলে জানান বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টির আহ্বায়ক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন।
দলটির সদস্য সচিব ফাতিমা তাসনিম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, রাজনৈতিক সচেতনতা না থাকলে দেশে আবার স্বৈরাচার সরকার গঠন হবে। আমরা আওয়ামী স্বৈরাচার দলকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছি। সামনেও আমরা কাউকে স্বৈরাচার হতে দেব না।
অনুষ্ঠানে ২৯৭ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন পেশার নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং ফোর্সেস গোল-২০৩০ অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে ৮ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান রয়েছে। ভবিষ্যতে বিমান বাহিনীকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর আলোকে আরো উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সংসদ কার্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আনিসুল হক সংসদকে এ তথ্য জানান।
লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের সার্ভভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে বর্তমানে দুটি সাবমেরিনসহ ছোট বড় ৬৫টির বেশি যুদ্ধজাহাজ এবং দুটো হেলিকপ্টার ও চারটি মেরিটাইম এয়ারক্রাফট রয়েছে।
আনিসুল হক বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে বাজেট বরাদ্দের উপর ভিত্তি করে পর্যায়ক্রমে ফ্রিগেট, করভেট, অফসোর পেট্রল ভেসেল (ওপিভি), মাইন কাউন্টার মেজার ভেজেল (এমসিএমভি), লার্জ পেট্রল ক্রাফট (এলপিসি), ওশান টাগ, হারবার টাগ, ওয়েল ট্যাংকার, লজিস্টিক শিপ, ফ্লোটিং ক্রেন, হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে ভেসেল ও হোভার ক্রাফট সংযুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে।
এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
জাকের পার্টির মহাসচিব মোঃ শামীম হায়দার বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে শহীদানরা একটি নতুন বাংলাদেশ এনে দিয়েছে। সেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব শুধু তড়িঘরি করে নির্বাচন ডেকে দেয়া নয়। বরং নির্বাচন ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নির্বাচন পদ্ধতির জঞ্জাল শতভাগ সংস্কার করে জনগণের বহুল কাঙ্ক্ষিত একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া উচিত। তবে যেকোনো ধরণের পক্ষপাত ঠেকাতে এবং বিতর্কমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ও নন হ্যাকেবল পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে।
আজ ১৯ অক্টোবর শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পৈরতলা এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে জাকের পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, ষড়যন্ত্র দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়না। তাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সকল ভেদাভেদ ভুলে ইসলামি দল ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক ও সাম্য গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় সংলাপের বিকল্প নেই। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যে জাতীয় সংলাপ হচ্ছে সেখানে সবার আগে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সভায় জেলা জাকের পার্টির সভাপতি মোঃ সেলিম কবিরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত মহাসচিব মাহাবুবুর রহমান হায়দার, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবীর, কৃষক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৃষক মহীউদ্দীন, শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বাস্তুহারা ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ, তালাবা ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুফতী কাউসার আহমেদ চাঁদপুরী, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান।
অনলাইন ডেস্ক :
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে ১৯৫২ সালের এই দিনে বুকের রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন ঢাকার রাজপথ। পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছিল মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের অভূতপূর্ব নজির। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রচিত হয়েছিল স্বাধীনতার সোপান। পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালি জাতি ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছে। কিন্তু ৭৩ বছর পরে এসে প্রশ্ন উঠছে-গৌরবমময় সেই ইতিহাস আমরা কতটা সংরক্ষণ করতে পেরেছি। কিংবা এখনো করতে পারছি।
সাত দশকেরও বেশি সময় পার হলেও ভাষাসংগ্রামী বা ভাষাসৈনিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি। একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত ভাষাশহিদদের চূড়ান্ত তালিকা দেখতে পায়নি জাতি। কারা আমাদের গৌরবের এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন-‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। সেইসব বীরদের পরিচয় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি দীর্ঘদিনেও। শুধু তাই নয়, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও স্থাপনাগুলোও হারাতে বসেছে। চিহ্নিত বা সংরক্ষণ করা যায়নি সব ভাষাশহিদের কবর। রাজধানীসহ সারা দেশে এ ধরনের স্মৃতি নিদর্শনগুলোর সংখ্যাও সীমিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতিহাস ও চেতনার অভাব এবং সংরক্ষণে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে চোখের সামনে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিত পারি’-ভাষা আন্দোলন নিয়ে কালজয়ী এ গানের কথায় রয়েছে একুশ এবং একুশের ইতিহাসকে না ভোলার আকুলতা। সেই আকুলতা আজও জাগ্রত প্রতিটি বাঙালির মনে। আজ প্রভাতফেরি নামবে সারা দেশের পথে পথে। ফুলে ফুলে ভরে উঠবে দেশের সব শহিদ মিনার। দিনটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ ও দেশের ভাষাগুলোর মর্যাদা রক্ষায় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে, যা দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার পরেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলা ভাষার গৌরবের আন্দোলনে সম্পৃক্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশে এক বছর পরে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ১৪ নারীসহ জীবিত ৬৮ জনকে ভাষাসৈনিক হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হয়। তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ২০১২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেখানে কিছু নামে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি ওই তালিকার। হাইকোর্টের নির্দেশনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় কমিটি গঠন করে তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভাষাসৈনিক আহমদ রফিককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছিল। কমিটির একটি বৈঠক হয়েছিল, যাতে কাজের পদ্ধতির জটিলতা নিয়েই শুধু আলোচনা হয়।
ভাষাশহিদদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে গবেষণাও থমকে আছে। ২১ ফেব্রুয়ারি কতজনকে কবর দেওয়া হয়েছিল সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য নেই কারও কাছে। আজিমপুরে ভাষাশহিদদের কবরগুলোও সারা বছর অযত্ন-অবহেলায় থাকে। ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদ নামের একটি সংগঠন গত কয়েক বছর ধরে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কাছে ১১ দফা দাবি জানিয়ে আসছে। দাবিগুলোর মধ্যে আছে-শহিদদের কবর শনাক্ত ও ভালোভাবে সংরক্ষণ করা। শহিদ ও সংগ্রামীদের নামে চত্বর, তোরণসহ বিভিন্ন স্থাপনা, স্থান, সড়ক নির্মাণ ও নামকরণ করা। আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত রশিদ বিল্ডিং, শহিদ মিনার হয়ে আজিমপুর কবরস্থান পর্যন্ত সড়কটিকে ‘শহিদ সরণি’ বা ‘ভাষা আন্দোলন স্মৃতি সড়ক’ নামকরণ করা এবং নামফলক লাগানো। ১৮ নভেম্বর ভাষাশহিদ আব্দুল সালামের কবর সংরক্ষণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর একটি আবেদন জানিয়েছে সংগঠনটি।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুব সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসক গোষ্ঠীর চোখ-রাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসেন। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলে; সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন। আহত হন অনেকে। সবার রক্তের বিনিময়ে বাংলা এ দেশের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়। যার ধারাবাহিকতায় পরে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।
বিশ্বের দেশে দেশে নানা ভাষা, নানা বর্ণ, নানা সংস্কৃতির মানুষ আজ গাইছে একুশের অমর গান- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র“য়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।