চলারপথে ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার ঢাকাকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলবে। আজ ১৯ ফেব্রুয়ারি রবিবার রাজধানীতে কালশী ফ্লাইওভার এবং ইসিবি স্কয়ার থেকে কালশী হয়ে মিরপুর পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক উদ্বোধনের পর একথা বলেন তিনি।
এ উপলক্ষে সকালে কালশী বালুর মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঢাকা শহরকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলবো।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জীব বৈচিত্র ও চমৎকার সবুজে ভরা একটি দেশ। ফুল, ফল, পাখির অত্যন্ত সৌন্দর্য্যে ভরা এই দেশটিকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলবো। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়বো এবং ঢাকা সিটিও স্মার্ট সিটি হবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেজন্য বহু পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী এর আগে ফলক উন্মোচন করে ফ্লাইওভার ও সড়কের উদ্বোধন করেন।
সমাবেশে তিনি মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে গৌরবময় অবদানের কারণে হারুন মোল্লার নামে কালশী ফ্লাইওভারের নামকরণের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছি বলেই বাংলাদেশকে আজ উন্নত করতে পেরেছি। জাতির পিতার রোখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি এবং এই মর্যাদাকে ধরে রেখেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা হল এর পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ভালো সংযোগ না থাকা। তার সরকার রাজধানীর এই অংশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
তিনি বলেন, ইসিবি স্কোয়ার থেকে ২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার কালশী ফ্লাইওভার এবং ৩ দশমিক ৭০ কিলোমিটার প্রশস্ত ও ছয় লেনের রাস্তা মিরপুর, ডিওএইচএস, পল্লবী, কালশী, মহাখালী, মানিকদি, মাটিকাটা, ভাষানটেক, বনানী, উত্তরা এবং বিমানবন্দরে যোগাযোগ সহজ করবে। মেট্রোরেলের পর কালশী ফ্লাইওভার ও ছয় লেনের সড়ক চালু হলে ঢাকার যানজট অনেকটাই কমে যাবে।
ঢাকা উত্তর সিটির উন্নয়নে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১১ সালে ঢাকা শহরকে দুই ভাগ করার পর গত ১২ বছরে ৩,৫০০ কোটি টাকার ২৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে গত কয়েক বছরে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থায়নে ১৬টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর সৌন্দর্যায়ন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ফুটপাথ নির্মাণ ও উন্নয়ন, সড়ক, সেতু ও ফ্লাইওভারের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ রাজধানীর যোগাযোগ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়েছে।
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কালশী বালুর মাঠকে একটি বিনোদন পার্ক হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। সেখানে শিশু ও যুবকদের খেলার মাঠ এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের চলাচলের জন্য হাঁটার পথ থাকবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড) প্রায় ১,০১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
প্রকল্প বিবরণী অনুযায়ী, ফ্লাইওভারটি ইংরেজি ‘ওয়াই’ অক্ষরের মতো। এই প্রকল্পে যাত্রীদের ভ্রমণ সহজ করার লক্ষ্যে আগের চার লেন বিশিষ্ট রাস্তাগুলোকে ছয় লেন করা হয়েছে।
প্রধান চারলেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভারটি ইসিবি স্কোয়ার থেকে কালশী ও মিরপুরের ডিওএইচএস হয়ে গেছে। দুই-লেন বিশিষ্ট র্যাম্পটি কালশী মোড় থেকে শুরু হয়ে কালশী সড়কে যাবে।
প্রকল্পটির আওতায় একটি পিসি গ্রিডার ব্রিজ, দুইটি ফুল ওভার ব্রিজ, একটি পাবলিক টয়লেট, দুটি পুলিশ বক্স, একটি ৭.৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন, একটি ১৭৫৫ মিটার আরসিসি পাইপ ড্রেন, ৩৩৮৩ মিটার যোগাযোগ তার, পৃথক সাইকেল লেন ও ছয়টি বাস বে নির্মাণ করা হয়েছে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম।
সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মনোয়ারুল ইসলাম সরদার কালশী ফ্লাইওভার ও ছয় লেনের সড়ক সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশন দেন। অনুষ্ঠানে কালশী ফ্লাইওভার ও সড়ক প্রকল্পের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়। সূত্র : বাসস
অনলাইন ডেস্ক :
উন্নয়ন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে অন্যায্য ক্ষতিপূরণের পথ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রকল্প হওয়ার খবরে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাতারাতি স্থাপনা নির্মাণ করে অন্যায্য ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। এ ধরনের অপচেষ্টা রোধে প্রাথমিক পর্যায়েই প্রকল্প এলাকার ছবি তুলে রাখতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।
আজ ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন নির্দেশনা এবং একনেকের অন্যান্য প্রসঙ্গে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই ব্যয় হয় এ খাতে। এর মধ্যে আবার ভূমি মালিকদের কেউ কেউ বেশি ক্ষতিপূরণের লোভে প্রকল্প এলাকায় রাতারাতি বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্পের নকশা প্রণয়নে দুর্বলতা নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। নড়াইলে কালিয়া সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার পর নকশায় ভুল ধরা পড়ে। সেতুর নিচ দিয়ে নৌকা চলাচল করতে পারে না। জনগণের টাকা গেল, সময় নষ্ট হলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে সব প্রকল্প নির্মাণ শুরুর আগেই সঠিক নকশা করতে হবে।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হওয়া সেতুটির জন্য নতুন করে আরও ৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করেছে একনেক। প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ৭৫ কোটি টাকা। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের জুনে। এখন ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর অন্য নির্দেশনা প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল নির্মাণে যথাযথ উচ্চতা রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যাতে প্যানেলের নিচে জায়গা থেকে যেখানে পর্যাপ্ত পানি ও বাতাস চলাচল করতে পারে। ফসল ফলানো যায়।
অসমাপ্ত প্রকল্প উদ্বোধন এবং নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের নির্বাচনী ভাবনা রয়েছে কিনা– সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এখন যেসব প্রকল্প চালু হয়েছে, সেগুলো ছয় মাস-এক বছর আগের প্রকল্প। প্রকল্পের যে অংশ ব্যবহার উপযোগী হয়েছে, সে অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে। মানুষ ব্যবহার করে খুশি।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক। ভোট হচ্ছে গণতন্ত্রের ভিত্তি। সরকার এটি চাইলে দোষের কিছু নয়। তবে নির্বাচন সামনে রেখে কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। এখন যেসব প্রকল্প উদ্বোধন হচ্ছে, এগুলো আরও আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল।
একনেকে বিভিন্ন খাতের মোট ১৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১০টি নতুন, বাকি সাতটি চলমান প্রকল্পের সংশোধনী। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। এ ব্যয়ের মধ্যে ২ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর নামমাত্র ১৪ কোটি এবং বাকি ১০ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব জোগান। এ ছাড়া দুটি প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে এক বছর করে। নতুন করে ব্যয় বাড়ানো হয়নি।
অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণসহ পুবাইল ধীরাশ্রম রেল লিঙ্ক নির্মাণে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটির সম্পূর্ণ অর্থই সরকারের নিজস্ব জোগান থেকে দেওয়া হচ্ছে। আগামী অক্টোবরে প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে। শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের অক্টোবরে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের এ প্রকল্প ২০২৭ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। মঙ্গলবার একনেকে অনুমোদিত তৃতীয় সর্বোচ্চ বড় ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ প্রকল্পে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এ প্রকল্পও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের। আগামী মাসে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। একইসঙ্গে আইনটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের জন্য নয়, বরং সাইবার অপরাধ দমনের জন্য করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আজ ৩ মে বুধবার দুপুরে রাজধারীর ধানমন্ডি মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) হলরুমে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৩ উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজিত হয়।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় সম্পাদক পরিষদের দাবির প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে না। এখন এই আইনে কেউ অভিযোগ করলেই মামলা নেওয়া হয় না। এটি প্রথমে পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের নির্ধারিত সেলে পাঠানো হয়। সেখানে বিষয়টি যুক্তিযুক্ত মনে হলে পরে এটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয় বা আদালতে পাঠানো হয়। মামলা হতে পারে এমন কিছু প্রতিষ্ঠিত না হলে গ্রেপ্তার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ ভবিষ্যতে প্রণয়ন করা প্রত্যেক আইনে সাংবাদিকদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, অনলাইন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায়িত্বশীলতার ঘাটতি রয়েছে। যার মাধ্যমে সাইবার অপরাধ সংগঠিত হতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাইবার অপরাধ দমনে আইন রয়েছে। বাংলদেশেও এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয় তখন গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের কার্যকর পদক্ষেপের কারণে এখন আইনটির অপব্যবহার কমেছে। এটিকে আরও পরিশুদ্ধ করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আমরা একটা কমিটি গঠন করেছি, যাতে আইনটির সমস্যাগুলো সমাধান করে সকলের গ্রহণযোগ্য একটা আইন করা যায়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের জন্য নয় দাবি করে আনিসুল হক বলেন, এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে সাইবার অপরাধ দমনের জন্য। প্রধানমন্ত্রী কখনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করবেন না, তিনিও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চান। এখন ডাটা প্রোটেকশন অ্যাক্টের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। স্বাধীনতা না থাকলে এগুলো নিয়ে আলোচনায় যেতাম না। আইন হচ্ছে ডাটা প্রোটেক্ট করার জন্য, নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়। মুক্তগণমাধ্যম নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গিকারবদ্ধ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার সময় মতামত নেওয়া হয়নি, সম্পাদক পরিষদের এমন দাবির প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, আইনটি যখন করা হয় তখন তারা আমার সঙ্গে আলোচনা করতে আসে। যে পর্যায়ে আলোচনা করতে আসে তখন আইনটি সংসদে চলে যায়। কিন্তু স্ট্যান্ডিং কমিটিতে তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছেন, তাদেরকে সে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তখন প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সবাই আইনটির ব্যপারে ঐক্যমত ছিলেন। তাদের মতামত অনুযায়ী ২১ ধারায় শাস্তি কমানোর বিষয়টি গ্রহণ করা হয়, জামিনযোগ্য এবং অজামিনযোগ্যের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, আমি নিজ উদ্যোগে ডাটা প্রোটেকশন অ্যাক্টের বিষয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে যাব। প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট নিয়েও আলোচনা হবে। আমরা সবসময় আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখতে চাই, আলোচনা না করে কিছু হবে না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের চেষ্টা করা হবে। এ আইনে কারো অভিযোগ পর্যবেক্ষণের জন্য যে সেল করা হয়েছে সেটি আইসিটি মন্ত্রণালয় বা আইন মন্ত্রণালয়ে পাবেন না, সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাবেন।
স্বাধীন সাংবাদিকতা করার অধিকার সবার আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সত্য তুলে ধরার দায়িত্ব আপনাদের। প্রত্যেকটা জিনিসেরই দুইটা দিক থাকে, আপনারা দুটোই তুলে ধরবেন যাতে জনগণ বুঝে নিতে পারে।
মুক্তগণমাধ্যমের সূচকে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের নিচে অবস্থান করছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে নীর্ণায়কে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের নিচে থাকে, আমার বিষয়ে সেই নির্ণায়কের বিষয়েই সকলের প্রশ্ন থাকা উচিৎ।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় এ সময় আরো বক্তব্য দেন সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেজান্ড্রা বের্গ ভন লিনডে, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতিআরা নাসরিন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, ইউনাইটেড ন্যাশনস ইন বাংলাদেশের রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটর জিউন লিউইস, ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের অফিসার ইন চার্জ সুজান ভিজ।
অনলাইন ডেস্ক :
১৩০ দিন পর আজ খোলা হয়েছে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স। এবার মসজিদের ৯টি দানবাক্স বা সিন্দুকে পাওয়া গেছে ২৭ বস্তা টাকা।
আজ ২০ এপ্রিল শনিবার সকাল ৮টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মসজিদের ৯টি সিন্দুক খোলা হয়। এরপর টাকাগুলো বস্তাবন্দি করে নেওয়া হয় মসজিদের দোতলায়।
টাকাগুলো ভরতে ২৭টি বস্তার প্রয়োজন হয়। পুরো কাজে তত্ত্বাবধান করছেন জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট।
এর আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল মসজিদের সিন্দুকগুলো। তখন পাওয়া গিয়েছিল ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা।
এবার দানের পরিমাণ সেই টাকাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে গত বছরের ১৯ আগস্ট মসজিদের সিন্দুকে পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তারও আগে ৬ মে মসজিদের সিন্দুকে মিলেছিল পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ সাত হাজার ৬৮৯ টাকা। জানুয়ারি মাসেও পাওয়া যায় চার কোটিরও বেশি টাকা।
স্থানীয়রা জানান, এ মসজিদের দানবাক্স খুললেই পাওয়া যায় কয়েক কোটি টাকা। এ কারণে মসজিদের দানবাক্সে কী পরিমাণ টাকা পাওয়া গেল, তা নিয়ে লোকজনের থাকে অনেক কৌতূহল। তাই গণনা শেষে জানিয়ে দেওয়া হয় টাকার অঙ্ক।
তবে স্থানীয়রা অনেকে বলেছেন, স্বচ্ছতার স্বার্থে আয়ের পাশাপাশি মসজিদের টাকা-পয়সা ব্যয়ের হিসাবটাও জনসম্মুখে নিয়মিত প্রকাশ করা উচিত। ইদানীং মসজিদে দানের প্রবাহ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
স্থানীয়রা জানান, মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করে। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসে পাগলা মসজিদে। দান করে মোটা অঙ্কের টাকা। তবে এ মসজিদের দানবাক্সে যে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়, তা জেলার আর কোনো মসজিদে মেলে না। টাকার সঙ্গে সোনা-রুপার অলঙ্কারসহ থাকে বিদেশি মুদ্রাও। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করে লোকজন।
তা ছাড়া আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দানবাক্সে পাওয়া চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনে পাওয়ার আনন্দ, না-পাওয়ার বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করে। এমনকি শত্রুকে ঘায়েলের দাবিও থাকে কোনো কোনো চিঠিতে।
দানবাক্স বা সিন্দুক খোলার সময় মসজিদে নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বড় দল টাকা-পয়সা গণনার তত্ত্বাবধান করে থাকেন।
সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিন্দুকের টাকা-পয়সা বস্তাবন্দি করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন। পরে বস্তাগুলো ধরাধরি করে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপেক্ষমাণ গণনাকারীদের সামনে ঢেলে দেওয়া হয় টাকাগুলো। এভাবেই শুরু হয় গণনার কাজ।
পাগলা মসজিদের টাকা জমা হয় রূপালী ব্যাংকে। তাই এই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মসজিদের কর্মচারী ও কমিটির লোকজন, মাদরাসার ছাত্রসহ সব মিলিয়ে দুই শতাধিক লোক সারা দিন টাকাগুলো গুনবে।
মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ পৌর মেয়র।
জানা গেছে, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব অসহায় লোকদের আর্থিক সহায়তা, ক্যান্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছে। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান দেওয়া হয় মসজিদের তহবিল থেকে। এইসব সেবামূলক কর্মকাণ্ড সারা বছরই করে থাকে পাগলা মসজিদ।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি জানায়, শুধু মুসলমান নয়, অন্য ধর্মের লোকজনও পাগলা মসজিদে বিপুল অঙ্কের টাকা-পয়সা দান করে। সব সম্প্রদায়ের মানুষ পাগলা মসজিদ পরিদর্শনে আসে। যা প্রকৃতপক্ষে অসাম্প্রদায়িকতার বিরল এক দৃষ্টান্ত।
মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দানের টাকায় মসজিদের বড়সড় উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মসজিদ ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল ইসলামী কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ থাকবে আরো বিভিন্ন আয়োজন। এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষের পথে। এখন সব কিছু গুছিয়ে আনা হচ্ছে। খুব শিগগিরই হয়তো কাজে হাত দিতে পারব আমরা।
কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদ গড়ে উঠেছিল। সময়ের সঙ্গে আজ পাগলা মসজিদের পরিধির সঙ্গে বেড়েছে খ্যাতিও।
অনলাইন ডেস্ক :
শ্রম আইন লঙ্ঘনের দুটি ধারায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এক মাসের মধ্যে আপিলের শর্তে জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ ১ জানুয়ারি সোমবার ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা তাঁর এ জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে একই আদালত আজ বিকেল ৩টার দিকে ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ডাদেশ দেন। অপর তিনজন হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। তাঁদের প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
রায়ের ব্যাপারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার মক্কেল ন্যায়বিচার পাননি। এটি একটি ত্রুটিপূর্ণ রায়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
চলারপথে ডেস্ক :
প্রতি বছর ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ওড়াতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে ১৭ মার্চের আগে প্রজ্ঞাপন জারি করার মাধ্যমে এ নির্দেশনা দিয়ে আসছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এখন এটি ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২’-তে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
গত ২৫ এপ্রিল সংশোধিত বিধিমালা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ২৬ এপ্রিল এটির গেজেট জারি করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংগীত, পতাকা এবং প্রতীক অধ্যাদেশ, ১৯৭২’-এর আর্টিকেল-৫-এ দেওয়া ক্ষমতাবলে সরকার ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২’-তে সংশোধন আনা হয়েছে।
বিধিমালা সংশোধন করে যেসব দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনের অফিস ও কনস্যুলার পোস্ট গুলোতে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হবে, সেখানে জাতির পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস ১৭ মার্চকে যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া এ তালিকায় আগে থেকেই ছিল- মহানবির (স.) জন্মদিবস (ঈদে মিলাদুন্নবি), ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং সরকারের প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোনো দিবস।
এসব দিবসে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়ে থাকে।