কুমিল্লা প্রতিনিধি :
চুরির পর অটোরিক্সার পার্টসগুলো খুব দ্রুত আলাদা করা হতো। কখনো কখনো রং পরিবর্তন করা হতো। এছাড়াও ব্যাটারি খুলে বিক্রি করে দিত চোর চক্রের সদস্যরা। ৩০ মিনিটে অটোরিক্সা তার অস্তিত্ব হারিয়ে পরিণত হতো পার্টসে (যন্ত্রাংশে)!
ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাসহ চোর চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এই তথ্য পাওয়া যায়। এ সময় চুরি হওয়া চারটি অটোরিক্সা উদ্ধার করা হয়। চোর চক্রের সদস্যদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল সোমবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা আশফাকুজ্জামান জানান, ১০ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি চাঙ্গিনী এলাকা থেকে ফজলুর রহমান নামে এক ব্যক্তির অটোরিক্সা চুরি হয়। এ ঘটনায় ফজলুর রহমান বাদী হয়ে সদর দক্ষিণ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি অভিযান চালায়। অভিযানে চোর চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতারকৃতদের তথ্য মোতাবেক চোর চক্রের আরো ৬ সদস্যকে রবিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজেস বড়ুয়াসহ গোয়েন্দা পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মানিকগঞ্জ জেলার বেহুতা গ্রামের মোঃ সাইদুর রহমান (৩০), কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার শাকতলা এলাকার মোঃ রুবেল (২৮), চান্দিনা উপজেলার অম্বরপুর গ্রামের মোঃ শরীফ (৩২), লালমাই উপজেলার সোন্ডা গ্রামের মোঃ শাহ ইমরান ওরফে শাহিন (৩৪), চান্দিনা উপজেলার শাকুছ গ্রামের মোঃ ছাদেক হোসেন (৩৭), চান্দিনার মহিচাইল গ্রামের মোঃ রুবেল (২৫), চাঁদপুর জেলার কুটিয়া লক্ষ্মীপুর গ্রামের মোঃ মানিক হোসেন (২৭), চান্দিনা উপজেলার মুরাদনগর গ্রামের মোঃ লিটন (৩২) ও সদর দক্ষিণ উপজেলার দারোরা লক্ষ্মীপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন (৩০)।
অনলাইন ডেস্ক :
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ট্রেনের অনলাইন টিকিট পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন করা হবে। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন বিষয় জানিয়েছেন।
আজ ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার রেল ভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের রুট রেশনালাইজেশন এবং ই-টিকেটিং ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। রেল উপদেষ্টা বলেন, আজ একটা প্রেজেন্টেশন হয়েছে। সেখান আমরা অনেক কিছু পেয়েছি। রেলের টিকিটিং পদ্ধতি নিয়ে একটা ডায়াগনস্টিক (কিছু সমস্যা চিহ্নিতকরণ) হয়েছে। প্রেজেন্টেশনে দেখা গেল, কমলাপুর থেকে টিকিট চাইলেন সেখানে নেই। কিন্তু তেজগাঁও থেকে আছে। আবার ৭টার ট্রেনে টিকিট নেই, কিন্তু ১০টার ট্রেনে আছে। তবে, সেটির কী অবস্থা তা জানা যাচ্ছে না। যাত্রী যেন এখন থেকে এটা দেখতে পান কখন, কোথায় কোন স্টেশন থেকে টিকিট আছে। ‘সহজ’ বলেছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে এটা ঠিক হবে। না হলে আপনারা অভিযোগ করবেন। তিনি বলেন, রেলে অনেকেই কর্মকর্তা আছেন। এখানে কাজ করেন। কিন্তু এটা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি না। এটা জনগণের সম্পত্তি।
রেলের সচিব, মন্ত্রীর জরুরি কাজ আছে বলে অন্যদের নেই এমন তো না। আমরা দেশটাকে সাধারণ মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। মৌখিক বা টেলিফোনে টিকিট বিতরণ বন্ধ হয়ে যাবে এখন থেকে। আবার বিভিন্ন স্টেশন থেকেও টিকিট বরাদ্দ আছে। এখন সেটি এক স্টেশনে বিক্রি না হলে অন্য স্টেশন থেকে পাওয়া যাবে। সেটাও ‘সহজ’কে বলা হয়েছে। আমরা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, অনলাইনে টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু কালোবাজারে ২০০ বা ৩০০ টাকায় টিকিট পাওয়া যায়। এই বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। যারা কালোবাজারি করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা রেলের লোক তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেবো। আমরা সমস্যার গোড়ায় যেতে চাই। সবাই বলে এই সরকার কিছু করে না। কিন্তু এটা সময় লাগবে। আমরা গত একমাসে সমস্যার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির বলেন, আমাদের যথেষ্ট লোকোমোটিভ কোচ নাই। সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।যেখানে যাত্রী নেই সেখানে ট্রেন যাচ্ছে। আবার যেখানে যাত্রী আছে সেখানে ট্রেন নেই। প্রবাসীরা যেসব জায়গা যায় যেমন, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম এসব রুটে আলাদা ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, রেলের প্রকল্পগুলো নিয়ে রিভিউ চলছে। অনেক প্রকল্প আগে হয়েছে যেগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ। সামনে রেলের প্রকল্প নিয়ে আমরা আরও বেশি সতর্ক আছি। আমরা সামনে বসবো। কোন প্রকল্প কেন বাদ দেওয়া হয়েছে, সেটা আমরা জানাব। ঠিকাদারের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এখন আর আগের মতো পরিবেশ নেই। যে কেউ বিড করতে পারে। সেই সুযোগ তৈরি করতে হবে। এখন গিয়ে দেখি- দুই-তিনজন ঘুরেফিরে কাজ পাচ্ছে। এটা আর হবে না। সবাই কাজ পাবে। রেল ও সড়ককে সেই সুযোগ তৈরি করতে হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
জাতিসংঘকে নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির চিঠির প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি তো এখন দিকদ্বিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তারা ভেবেছিল দেশে নির্বাচন হবে না এবং নির্বাচন হলেও জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে না। এখন তারা বুঝতে পেরেছে, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে বিএনপির সমর্থকরাও যোগ দিয়েছে।
আজ ১ জানুয়ারি সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ’র (পিআইবি) গবেষক পপি দেবী থাপা গ্রন্থিত ‘শরণার্থীর জবানবন্দি ১৯৭১’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই পেট্রোলবোমা, সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে মানুষ হত্যা করে, মা ও শিশুকে এক সাথে হত্যা করে, ট্রেন লাইন কেটে, ট্রেনের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে, গাড়িতে, বাসে মানুষের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে নির্বাচন ভণ্ডল করতে চেয়েছে, পারেনি। না পেরে তারা এখন তাদের সেই পুরনো কায়দা বিদেশিদের কাছে চিঠি লেখা শুরু করেছে।’
যারা পেট্রোলবোমা সন্ত্রাস চালিয়েছে তাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে, ট্রেন লাইন যারা কেটে ফেলেছিল তারা ধরা পড়েছে, স্বীকার করেছে কে টাকা দিয়েছে, কার নির্দেশে এগুলো করেছে, এগুলো দিবালোকের মতো স্পষ্ট জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি এই কাজগুলো ২০১৩-১৪-১৫ সালে করেছে, এখন আবার করছে। এখন আত্মরক্ষার্থে চিঠিপত্র লিখছে।
যাদের কাছে চিঠি লিখছে, তারাও এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে, পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে এবং তারা বলছে যে, নির্বাচন যেন সহিংসতামুক্ত হয়। দেশের বিরুদ্ধে বহু চিঠি বিএনপি লিখেছে, এই চিঠিতে কোনো লাভ হবে না।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো নির্বাচনী এলাকায় কোনো প্রার্থী মারা গেলে সেই আসনে নির্বাচনটা বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে তারা এই পরিকল্পনা করেছে।
তবে সন্ত্রাসী দলের মতো এ সব ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না।’
‘শরণার্থীর জবানবন্দি ১৯৭১’ গ্রন্থ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে কত বেদনার, কত সংগ্রামের, সেটি যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাদের পক্ষে অনুধাবন করা কঠিন। আমরা ১ কোটি শরণার্থীর কথা বলি, কিন্তু দেশের অভ্যন্তরেও ১ কোটি মানুষ শরণার্থী হয়েছিলো, যাদের ঘরবাড়ি হানাদারেরা জ্বালিয়ে দিয়েছিল, অপরের ঘর-বাড়িতে থাকত।’
বাল্যস্মৃতিচারণ করে হাছান বলেন, ‘চট্টগ্রামের প্রান্তে রাঙ্গুনিয়ায় আমাদের গ্রামটা ছিল শরণার্থী যাওয়া আসার রোড। সেই পথ ধরে মিজোরাম যেতে হলে উঁচু পাহাড় পাড়ি দিতে হতো।
অনেক বাচ্চা ও বয়স্ক যারা পাহাড়ে উঠতে পারত না, তাদের ফেলে অন্যরা চলে যেত -এ রকম বহু ঘটনা ঘটেছে।’
গ্রন্থকার, পিআইবির সহ-সম্পাদক আকিল উজ-জামান, গবেষক মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন বইমোড়ক উন্মোচনে অংশ নেন।
অনলাইন ডেস্ক :
দুই বছর আগে গুম ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম, অভিনেত্রী শমী কায়সার ও তারানা হালিমসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধ মামলা করেছেন বিএনপির কর্মী সৈয়দ হাসান মাহমুদ। আজ ৯ অক্টোবর বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি এ মামলার আবেদন করেন।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেলাল হোসেন বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগের বিষয়ে অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক, হাছান মাহমুদ, দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা, পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ১৯৯০ সালের ছাত্র আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বাদী ২০১১ সালের ২১ নভেম্বর তৎকালীন ১৪ দলীয় জোটের নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি সিএমএম আদালত খারিজ করে দেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাদী মগবাজার নয়াতলা নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। বাদী ২০১৯ সালের সিটি করপোরেশন ঢাকা উত্তরের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষে কমিশনার পদে নমিনেশন প্রত্যাশী ছিল।
এলাকায় প্রচার প্রচারণা শুরু করলে তাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ২০২২ সালের ২২ জুন বাদীর ওপর হামলা করে দোকানের মালামাল লুটপাট করা হয়। এরপর ওই বছর ২৫ জুন সন্ধ্যা ৬টায় বাদী মগবাজার থেকে তার ব্যবসায?িক কাজে রামপুরা ব্রিজে যাওয়ার পথে সাদা পোশাকধারীরা তাকে মাইক্রোবাসে তুলে চোখে কালো কাপড় বেঁধে ও হাতে হাতকড়া পরিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে হাত-পা বেধে মশিউর রহমান রাঙ্গা, শমী কায়সার ও তারানা হালিমের উপস্থিতিতে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। সেখানে চার দিন গুম করে রেখে ২৯ জুন হাতিরঝিল রাস্তার আইল্যান্ডের ওপরে রেখে যায়।
এরপর ওই বছরের ৮ জুলাই ভোর ৫টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে ১৪ দিন পর গত ২১ জুলাই সকাল ৬টার দিকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে ফেলে রেখে যায়। সর্বশেষ ওই বছর ২৬ জুলাই ভোর ৭টায় হাতিরঝিল থানার পুলিশ বাদীকে তুলে নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
হবিগঞ্জের মাধবপুরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৫ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। আজ ২৪ সেপ্টেম্বর ভোররাতে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম।
আটককৃতরা হলো জেলার বাহুবল উপজেলার হিমেরগাঁও গ্রামের মৃত খোরশেদ মিয়ার পুত্র রুপন মিয়া (৩৮), আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা গ্রামের দানু মিয়ার পুত্র ছালেহ আহমেদ (৩৩), একই এলাকার মৃত আমরু মিয়ার পুত্র আল আমিন (২৯), মো: লায়েক মিয়ার পুত্র মাহবুব মিয়া (৩২) ও মতি মিয়ার পুত্র তাবিদুল ইসলাম (২৮)। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের ডাকাত দলের বেশ কয়েকজন সদস্য পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: রকিবুল ইসলাম খান জানান, আটককৃত ডাকাতদের বিরুদ্ধে মাধবপুর থানায় মামলা রুজু করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশের এমন অভিযান চলমান থাকবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন শেখ হাসিনা।
১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান তিনি। ১৯৬৫ সালে ঢাকার আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৬৭ সালে বকশীবাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত শেখ হাসিনা কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। এ সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। স্বামী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাও। এরপর দীর্ঘ ছয় বছর প্রবাসে দুঃসহ জীবন কাটে তাদের।
১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে গত ৪২ বছর ধরে নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।
কেবল তাই নয়, বিশ্বের সমস্যা ও সংকট নিরসনের পাশাপাশি শোষিত-নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখায় তাঁকে এখন বিশ্বনেতার মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। সর্বশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিক সংকট এবং রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি।
তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বিজয়ী হয়। ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে ওই বছরের ১৬ জুলাই চাঁদাবাজিসহ দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হন শেখ হাসিনা। ওই সময় সংসদ ভবন চত্বরের বিশেষ কারাগারে দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস বন্দি ছিলেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে এর আগেও কয়েক দফা গৃহবন্দি হয়েছেন তিনি।
এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। সাফল্যগাথার এই কর্মময় জীবন ছিল কণ্টকাকীর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাঁকে কারা নির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বারবার তাঁর জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। কমপক্ষে ২০ বার তাঁকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তাঁর লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এই পর্যন্ত চার মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়েছে। ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জনের পর ৭ জানুয়ারি টানা তৃতীয় মেয়াদে শপথ নেয় তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার। এ নিয়ে মোট চারবার সরকারপ্রধানের দায়িত্বে এলেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে অর্থাৎ মোট তিন দফা বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার টানা প্রায় ১৫ বছরে দেশের বিশাল অগ্রগতি ও বিস্ময়কর উন্নতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, কল্যাণকর ও নিরাপদ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জলবায়ুসহিষ্ণু বদ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘ডেলটা প্ল্যান-২১০০’ ঘোষণা করা হয়েছে।
এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে মাদার অব হিউম্যানিটি, চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ, লেডি অব ঢাকাসহ দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিভিন্ন দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপন করবে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে ওয়াশিংটনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হবে।
আওয়ামী লীগের দু’দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে– আজ বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল; বাদ আসর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া এবং মিলাদ মাহফিল, সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, সকাল ৯টায় মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার ও সকাল ৯টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে বিশেষ প্রার্থনা এবং আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা।
আওয়ামী লীগের সব সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশে আলোচনা সভা, আনন্দ শোভাযাত্রা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা, আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য সারাদেশের দল ও সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংস্থার নেতাকর্মী-সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।