চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের আলিয়াবাদ এলাকায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৩ প্যাকেট নুডুলস, ৩ প্যাকেট সেমাই, ১ প্যাকেট লিচি মাত্র ১০০ টাকায় বিক্রি করছিল নরসিংদীর আকবর আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী (৪০)।
বিষয়টি মামুনের সন্দেহ জনক মনে হলে তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা জাহানকে অবগত করেন।
এরই প্রেক্ষিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা জাহান। ভৈরব থেকে এ সকল নকল পণ্য ক্রয় করে নবীনগরে নিয়ে এসে বিক্রি করেন বলে জানান আটককৃত মোহাম্মদ আলী। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা জাহান বলেন, এ সব উৎপাদিত পণ্য মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় ও কর্তৃপক্ষের কোন অনুমোদন না থাকায় আটককৃত ব্যক্তিকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। উদ্ধারকৃত মালামাল আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে। তিনি বলেন, জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নবীনগর উপজেলায় কয়েক বছর ধরে ওল কচুর আবাদ হচ্ছে। খরচ কম কিন্তু ফলন বেশি হওয়াতে কৃষক বসত বাড়ি কিংবা ফলজ বাগানে সীমিত পরিসরে আবাদ করছে। ইব্রাহীমপুর ব্লকের ওল চাষী মোখলেছ মিয়া বলেন- আগে নবীনগরে বাণ্যিজিক ভাবে ওল কচু চাষাবাদ দেখিনি, আমি এ বছর চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাকে বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
ইতিমধ্যে অনেকেই ওল চাষে আগ্রহী। ওল কচুর পাশাপাশি বীজ বিক্রি করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি। বড়িকান্দি ব্লকের কৃষক আজিজ মিয়া জানান- ওল কচু আমাদের এলাকায় নতুন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই নতুন ফসল আবাদ করেছি। ২০ শতক পরিত্যক্ত উচু জমিতে আবাদ করেছি এখন পর্যন্ত গাছের বৃদ্ধি ভালো। নবীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে- ওল কচু গাছে তেমন কোন রোগ হয় না, তবে পাতা ও কচু পঁচা রোগ দেখা যেতে পারে, ওল কচুর ক্ষেত্রে কীট পতঙ্গ তেমন কোন সমস্যা হয় না। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার, গোড়া মাটি উঁচু করে দেয়া ও খড় বা আচ্ছাদন দিয়ে মাটি ঢেকে দিলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। জৈব সার ব্যবহার করা ভাল। তবে রাসায়নিক সার যেমন- ইউরিয়া, পটাশ, টিএসপি ও কিছু দেওয়া যায়। গাছ লাগানোর ৭-৯ মাস পর যখন ৮০% গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাবে, তখন ওল সংগ্রহ করতে হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান- কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্র্রকল্পের আওতায় আমরা নতুন জাতের কন্দাল ফসল জনপ্রিয় করার জন্য প্রদর্শনী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকি। ওল কচু চাষের জন্য ফেব্রুয়ারি – এপ্রিল পর্যন্ত ভাল সময়, এর পর রোপণ করলে ফলন কমে যায়।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে চলছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সওজ‘র জায়গা দখলের মহোৎসব! আর এইসব দখল মহোৎসবের আড়ালে কোটি টাকার বাণিজ্যে মেতে উঠেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল।
সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে গিয়ে এ বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে দেয়া ‘তরী বাংলাদেশ’ এর একটি ফেইসবুক পোস্ট নজরে আসলে নড়েচড়ে বসেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ঘটনাটি নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের মালাইবাংগরা বাজার এলাকায়।
কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের পূর্ব পাশে অবস্থিত বাংগরা বাজার। বাজারটির পশ্চিম পাশে সওজ’র সড়ক। সড়কের পশ্চিম পাশে প্রসস্ত খাল। যা যুক্ত হয়েছে অদের খালের সাথে। এই সড়কের পাশে দোকানপাট নির্মাণের নামে সরকারী জায়গা হরিলুট চলছে দীর্ঘদিন ধরেই!
জানা যায়, সওজ’র একশ্রেণীর অসাধূ কর্চারীর যোগসাজসে এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতায় সরকারী জমি দখলের এই মহোৎসবের পাশপাশি চলে আসছে বিশাল অংকের আর্থিক বাণিজ্যও। যার পরিমাণ কোটি কোটি টাকা। রাস্তা ও খালের পাশে দখলের মহোৎসবের ফলে একদিকে যেমন সংকুচিত হয়ে খালটির অবস্থা হচ্ছে বেহলা, অন্যদিকে সড়কও হচ্ছে সংকুচিত। এতেকরে এখানে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে প্রকট আকারে। যানজট লেগে থাকার কারণে যাত্রীদের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বছরের পর বছর।
এ ব্যাপারে ‘তরী বাংলাদেশ’ এর আহবায়ক শামীম আহমেদ বলেন, কিছুদিন যাবৎ তরী’র কাছে বিভিন্ন সূত্র থেকে এমন সংবাদ আসছিলো যে, ‘নবীনগরের সাবেক এমপি এবাদুল করিম বুলবুলের সময়ে বাংগরা বাজারের পাশে দুইশ’টির মতো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ওই উচ্ছেদের বছর পাড় না হতেই আবারও সেই জায়গায় দোকানপাট ও পাকা স্থাপনা তৈরী করছে দখলদারার।’এমন সংবাদের সত্যতা যাচাই করতেই গত ২১ এপ্রিল রবিবার নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক আন্দোলন ‘তরী বাংলাদেশ’ এর একটি প্রতিনিধিদল দখলকৃত স্থানটি পরিদর্শন করে। আহবায়ক শামীম আহমেদ এর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন, তরী বাংলাদেশ এর আহবায়ক কমিটি সদস্য, খালেদা মুন্নী ও সোহেল রানা ভূঁইয়া প্রমূখ। তরী বাংলাদেশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ পেয়ে গত ২৩ এপ্রিল তরী’র পক্ষ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক বরাবর অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য আবেদন করা হয়।
শামীম আহমেদ আরো বলেন, আমরা সরজমিন গিয়ে যা দেখলাম তা রীতিমতো বিস্মিত হওয়ার মতো! বাজারের উত্তর পাশে নেমে পায়ে হেটে বাজারের দক্ষিণ মাথায় অদের খালের উপর অবস্থিত ব্রিজটির কাছে যাই। সেখানে ব্রিজের নীচের অবস্থা দেখে আরও বিস্মত হই! পরে আমরা অদের খালটির রাজাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে অবাক হই। এখানে একটি অবৈধ ব্রিজও দেখতে পাই যার ফলে নৌরুট বন্ধেরও অভিযোগ আছে! এ বিষয়টি নিয়েও আমরা কাজ করছি।
শামীম আহমেদ বলেন, এখানে যেভাবে দখলের হরিলুট চলছে তা দেখে মনে হবেনা দেশে আইন বলতে কিছু আছে! তিনি বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন কালে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে সরকারী জায়গায় গড়েতোলা এসব দোকানের বৈধতা দিচ্ছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা।
নাম প্রকাশ না করা সর্তে বেশ কয়েকজন অবৈধ দখলদার জানান, প্রতিটি দোকনের পজিশন ফিরে পেতে মাথাপিছু এক থেকে দেড় লাখ টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের!
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাজারজুড়ে চলা এই দখলের প্রতিযোগিতায় যাত্রীছাউনি হয়েছে সেলুন! ব্রিজের ওপরে বসেছে চায়ের দোকান। অদের খালের পাশ নদী দখল করে বসানো হয়েছে মুরগীর দোকান! যার মালিক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাইয়ের বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
বাংগরা বাজার কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. রবিউল আলম রবি বলেন, সবাই নিজ নিজ দায়িত্বেই সড়কের পাশে দোকানঘর নির্মাণ করছে। এখানে কোনো টাকা-পয়সার লেনদেন করা হয়নি। তিনি বলেন, তারা আগে থেকেই এখানে ব্যবসা করে আসছিল। সড়কের গাইডওয়াল নির্মাণকাজের প্রয়োজনে সাবেক এমপির অনুরোধে তারা দোকান সরিয়ে নিয়েছিল।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত আছি। উচ্ছেদ অভিযানের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট পেলেই আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালাব।’
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় তরী’র একটি পোস্ট আমার নজরে আসে। এ বিষয়ে জেলাপ্রশাসক স্যারের সাথেও কথা বলেছি। আমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি, অবৈধ দখলকৃত জায়গাগুলো সওজ’র। সংশ্লিষ্ট দপ্তর যদি উচ্ছেদে সহযোগিতা চায় তাহলে আমরা সহযোগিতা করব।’
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগর পৌরসভার বিজয়পাড়ার বাসিন্দা সোহাগ মিয়া, তার স্ত্রী জান্নাতুল আক্তারকে দুই মেয়ে ফারিয়া ও ফাহিমাসহ পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে।
২৮ জুলাই রোববার মাগরিব নামাজের পর জানাযা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর পৌরসভার ইমামবাড়ি কবরস্থানে তাদেরকে দাফন করা হয়েছে। রোববার সকালে সোহাগের ঘর থেকে তাদের চারজনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ময়নাতদন্ত শেষে চারজনের লাশ বাড়িতে এলে শত শত লোক লাশ দেখতে নিহতদের বাড়িতে ভিড় জমায়। গোসল শেষে তাদেরকে জানাযার জন্য নেয়া হয় নিমতলা মাঠে। সারিবদ্ধ করে রাখা হয় লাশগুলো। মাগরিব নামাজের পর তাদের চারজনের আলাদাভাবে জানাযা শেষে নবীনগর পৌরসভার ইমামবাড়ি কবরস্থানে পাশাপাশি কবরস্থ করা হয়।
জানাযায় শত শত মুসল্লি অংশ গ্রহণ করেন। মুসল্লিদের মুখে মুখে আলোচনায় ছিলো, সোহাগ খুব ভালো ছেলে, ছেলেটা নামাজী ছিলো, কী কারণে এমন একটা কাজ করলো? এমন প্রশ্ন ছিলো উপস্থিত সবার। নিহতের বাবা আমির হোসেন জানান, সোহাগ আমার বড় ছেলে। তাদের মধ্যে পারিবারিক কোনো সমস্যা ছিল না। রাতেও তারা হাসিখুশি ছিল। কী কারণে তার স্ত্রী, দুই শিশু সন্তানসহ গলায় ফাঁস লাগালো, কিছুই বুঝতে পারছি না। সোহাগের শাশুড়ি জানান, আমার ঘরের সঙ্গে আমার মেয়ের ঘর, সকাল হয়ে গেল। কিন্তু আমার মেয়ে ঘুম থেকে উঠছে না। অনেকবার ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চিৎকার শুরু করি। আমার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এসে ঘরের দরজা ভাঙে। তখনই দেখতে পেলাম আমার মেয়ে, দুই নাতনি ও জামাই ফাঁসিতে ঝুলে আছে।
নবীনগর থানার ওসি মাহবুব আলম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ দাফনের জন্য তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মুত্যুর কারণ জানতে আমাদের তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও তদন্ত শেষ হওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগরে বসতঘর থেকে দুই শিশু সন্তানসহ এক পরিবারের চারজনের লাশ উদ্ধার ॥ এলাকায় শোকের ছায়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায় বসতঘর থেকে দুই শিশু সন্তানসহ এক পরিবারের চারজনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আজ ২৮ জুলাই রোববার বেলা ১১টার দিকে নবীনগর পৌর এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া চারজন হলেন- সোহাগ মিয়া (৩৫), তাঁর স্ত্রী জান্নাতুল ইসলাম (২৫), তাঁদের দুই শিশুসন্তান চার বছর বয়সী ফারিয়া আক্তার ও দুই বছর বয়সী ফাহিমা আক্তার। এদিকে একসঙ্গে পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ ঘরে চারজনের লাশ পাওয়া নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
তাঁদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়েছে। সোহাগ মিয়া বিজয়পাড়ার আমির মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোহাগ মিয়া নবীনগরের নিউমার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে পৌর এলাকার বিজয়পাড়ায় বসবাস করতেন। মারা যাওয়া জান্নাতুল ইসলামের মা মনো বেগম সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার দিবাগত রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে স্বাভাবিকভাবে সবাই ঘুমাতে যান। রোববার সকালে তাঁর মেয়ে, জামাতা ও নাতনিরা ঘুম থেকে না ওঠায় সন্দেহ হয় তাদের। তিনি ঘরের দরজা খোলার জন্য ডাকাডাকি করতে থালেও ঘরের ভেতর থেকে কারও সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না।
একপর্যায়ে পথচারী উজ্জ্বল মিয়ার সহযোগিতায় দরজা ভেঙে ভেতরে মেয়ে, দুই নাতনি ও জামাতার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বসতঘরে একই পরিবারের চারজনের লাশ ঝুলছে, এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
ময়নাতদন্তের জন্য তাঁদের লাশ জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে পাঠানো হয়েছে। সিরাজুল ইসলাম বলেন, সোহাগ কাপড়ের ব্যবসা করতেন। স্ত্রী, দুই সন্তানসহ তিনি এককভাবে নিজের পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করতেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে তাঁদের সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এক পরিবারের চার সদস্য ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা নাটঘর ইউনিয়ন। ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন বিশাল জায়গাজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। নিজের খেয়াল খুশি মতো আসেন এই কেন্দ্রের একমাত্র স্টাফ ফার্মাসিস্ট শাহ আলম। সরকারি এই স্থাপনার চাবি এলাকাবাসীর কাছেই দিয়ে রেখেছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাটঘর ইউনিয়নে জনসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এই ৩০ হাজার মানুষকে সেবা দিতে ইউনিয়নে রয়েছে একটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এর ভেতরে রয়েছে ৬টি কক্ষ। প্রতিদিন এই সেবা কেন্দ্র সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকার সরকারি নিয়ম থাকলেও সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘণ্টা খোলা থাকে।
এই কেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক নেই। ফার্মাসিস্ট পদে থাকা শাহ আলম নামে একজন দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি এলাকাবাসীর কাছে শাহ আলম ডাক্তার নামে পরিচিত। প্রতি কর্মদিবসে শাহ আলম সকাল সাড়ে ৯টার পর এসে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টার ভেতর চলে যান। এরপর তালাবদ্ধই থাকে এই ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র৷ সরকারি এই স্থাপনার চাবিও তিনি দিয়ে রাখেন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে।
সরেজমিনে দুপুর ১টায় নাটঘর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় গেট তালাবদ্ধ। স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করলে জানান, ডাক্তার শাহ আলম কিছুক্ষণ আগে চলে গেছেন। এর চাবি রয়েছে পাশের বাড়ির রিনা বেগম নামে এক নারীর কাছে।
রিনা বেগমের বাড়িতে গেলে তিনি জানান, আজ আমার কাছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চাবি নেই। চাবি আছে এলাকার আব্দুল হান্নানের কাছে৷
আব্দুল হান্নানকে খবর দিলে তিনি রিনা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে প্রধান গেইটের তালা খোলেন। এরপর ভবনের গেটের তালা খুলে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করেন।
জানতে চাইলে আব্দুল হান্নান বলেন, চাবি আমার কাছেও থাকে। ডাক্তাররা টিকা দিতে বা ডেলিভারির রোগীরা এলে আমাকে খবর দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টার ভেতরে খোলা হয়, আর দুপুরে চলে যান ডাক্তার শাহ আলম।
রিনা বেগম বলেন, আমি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধোয়ামোছার কাজ করি। পাশাপাশি ডেলিভারির কাজ করি। প্রতিদিন জোহরের আযান দিলে শাহ আলম ডাক্তার চলে যান।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নাটঘর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট শাহ আলম বলেন, এই কেন্দ্রে আমি ছাড়া কেউ সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত নেই। রিনা বেগম স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন। এই অফিসের চাবি রিনা বেগমের কাছেও আছে। আমাদের অফিস টাইম সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা। আমি নিয়মিত অফিস করি।
নবীনগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। নাটঘরে শুধুমাত্র একজন ফার্মাসিস্টের মাধ্যমে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আমি চেষ্টা করছি স্টাফ বাড়াতে। কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছি। নাটঘর কেন্দ্রে নিয়মিত অফিস না করা এবং সরকারি সম্পদের চাবি অন্যের কাছে দিয়ে রাখার বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের আপনারা (সাংবাদিক) তথ্য দিলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়।