শিশু নাট্যমের উদ্যোগে ৩দিনব্যাপী বসন্তকালীন আর্ট ক্যাম্প সমাপ্ত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 5 March 2023, 1015 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
‘প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিশুরা’ এই শ্লোগানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের উদ্যোগে তিনদিনব্যাপী বসন্তকালীন আর্ট ক্যাম্পের সমাপনী ৪ মার্চ শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের তালুকদার বাড়ি খলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি কবি দেওয়ান মারুফ।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনদিনব্যাপী আর্ট ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাহারুল ইসলাম মোল্লা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এক ঝাঁক শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীর কেউ কেউ বাড়ির বারান্দা ও আঙ্গিণায়, কেউ কেউ গাছ-গাছালির নিচে, কেউ পুকুরপাড়ে আবার কেউ তিতাস নদীর পাড়ে দূরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে সারিবদ্ধ ভাবে আসন পেতে বসেছে। সবার হাতেই বোর্ড, সাদা কাগজ ও নানা রঙের পেন্সিল। প্রকৃতির সান্নিধ্যে তারা সবাই নিজেদের চিন্তাকে রঙ তুলিতে রাঙিয়েছেন। গত তিনদিন ধরেই তারা এঁকেছে নানা ছবি। আর্ট ক্যাম্পে অংশ নেওয়া ২৬৫জন শিক্ষার্থী তিনদিনে প্রকৃতির সান্নিধ্যে দেড় হাজারের বেশি ছবি এঁকেছে।

তিনদিন ব্যাপী আর্ট ক্যাম্পে সংগঠনের চারুকলা বিভাগের প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেনীর ২৬৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। প্রতিদিন সকালে শিক্ষার্থীরা একটি ও বিকেলে একটি করে ছবি এঁকেছেন। তিনদিনের এই ক্যাম্পে একজন শিক্ষার্থীকে ৬টি করে ছবি আঁকতে হয়েছে। ২৬৫জন শিক্ষার্থী ১ হাজার ৫৯০টি ছবি এঁকেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা সাদা কাগজের নানা রঙের পেন্সিলের আঁচড় দিয়ে ঘর, নদী, সেতু, পুকুর, গাছ, নদীর তীরে খড়ের গাদা কিংবা প্রাকৃতিক দৃশ্য আাঁকছে।

শিক্ষার্থী ত্রিদিবা দেবনাথ ও সোহান আহমেদ বলেন, গত বছরও তারা এই আর্ট ক্যাম্পে অংশ নিয়েছিলো। খোলা জায়গায় বসে গ্রামের পরিবেশে চোখের সামনে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে ছবি আঁকাটা অনেক দারুণ।

অভিজিত রায় ও রাখি আক্তার বলেন, চোখের সামনে থাকা দৃশ্য দেখে আঁকতে পেরে ভালো লেগেছে। সবাই যার যার মতো করে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বসে ছবি আাঁকছে।

অভিভাবক শ্যামল চন্দ্র সরকার, হামজা ইসলাম ও চয়ন বিশ্বাস বলেন, প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে শিশুদের দিয়ে ছবি আঁকানোর উদ্যোগটা প্রশংসনীয় ও ব্যতিক্রম। এ থেকে শিশুরা অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারবে। পাঠ্য বইয়ের বাইরে যে আরো অনেক কিছু শিখা ও জানা যায় তা তারা এখান থেকে জানতে পারবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু নাট্যমের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলেন, শিশু নাট্যম প্রতি বছরই শিশুদের নিয়ে তিন দিনব্যাপী কর্মশালা আয়োজন করে থাকে। যাতে করে শিশুরা তাদের মাঝে প্রকৃতিকে খুঁজে পায়, প্রকৃতির পায়, প্রকৃতির সাথে তাদের একটা যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

এই পাথরে গড়া দালান-কোঠায় থেকে তাদের মন-মানসিকতা শক্ত হয়ে যাচ্ছে। সেই মন মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। আমরা প্রতি বছর শিশুদের গ্রামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। এটি আমাদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের সাথে শিশুদের মানসিক সম্পর্ক গড়ে তুলে ও মানসিক পরিবর্তন ঘটাতেই এই আয়োজন।

Leave a Reply

ঈদুল ফিতরে ৫ দিন, ঈদুল আযহায়…

অনলাইন ডেস্ক : আগামী বছরের (২০২৫ সাল) সরকারি ছুটির তালিকা Read more

৩০ লাখ টাকা করে পাবে ছাত্র…

অনলাইন ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য Read more
ফাইল ছবি

২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক : ২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন করেছে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভূমিকম্প ও অগ্নিকান্ড বিষয়ক মহড়া…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দূর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেশীয় অস্ত্র-নগদ টাকা উদ্ধারসহ দুই…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৪ ঘন্টায় গ্রেফতারী পরোয়ানার আসামীসহ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অনির্দিষ্টকালের জন্য…

চলারপথে রিপোর্ট : পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের বরখাস্তের প্রতিবাদে ও Read more

আন্দোলনে নিহত তানজিল মাহমুদ সুজয় এইচএসসি…

চলারপথে রিপোর্ট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর Read more

পল্লীবিদ্যুতের ১০ জেলা কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুৎ, বিদ্যুৎ…

চলারপথে রিপোর্ট : বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কয়েকটি জেলার ১০ Read more
ফাইল ছবি

শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারে ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানা

অনলাইন ডেস্ক : পদত্যাগের পর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী Read more

ভারত ৪৬ রানে অলআউট

অনলাইন ডেস্ক : ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে দাপট দেখিয়েছিল ভারত। Read more

কসবায় ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদ্যুৎ…

চলারপথে রিপোর্ট : অস্ত্র মামলায় ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত মো. মোস্তাফিজুর Read more
ফাইল ছবি

৮ জাতীয় দিবস বাতিল করে আদেশ…

অনলাইন ডেস্ক : আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করে আদেশ জারি Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দৈনিক ইত্তেফাকের ৭১ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে কেক কাটা ও আলোচনা সভা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 24 December 2023, 449 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
দৈনিক ইত্তেফাকের ৭১ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আজ ২৪ ডিসেম্বর রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে কেক কাটা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এতে প্রধান অতিথিছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কবি ও নাট্যকার আবদুল মান্নান সরকার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: বাহারুল ইসলাম মোল্লা, সাবেক সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রেজা,খ আ ম রশিদুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান, আ ফ ম কাউসার এমরান, দীপক চৌধুরী, সাংবাদিক শিহাব উদ্দিন বিপু, আশিকুল ইসলাম, ফরহাদুল ইসলাম পারভেজ, হাবিবুর রহমান পারভেজ, ইত্তেফাকের সরাইল উপজেলা প্রতিনিধি জুলকার নাইন ও ইত্তেফাকের বিজয়নগর উপজেলা প্রতিনিধি জিয়াদুল হক । অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দৈনিক ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি মোহাম্মদ আরজু ।

সভায় বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে দৈনিক ইত্তেফাকের ভূমিকা ছিল অপরিসিম।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, রাজনীতি, 30 July 2024, 163 Views,

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে সরকার ঘোষিত দেশব্যাপী শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ। আজ ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিলো অবস্থান, কালো ব্যাজ ধারণ ও দোয়া। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে জমায়েত হতে থাকেন। এরপর কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। দুপুরে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন ওলামা সমন্বয় পরিষদ নেতা মাও. আবদুল্লাহ। এসময় জেলা আওয়ামী লীগ সিনিয়র সহ-সভাপতি মো.হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সহ-সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন খান খোকন,যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এড. মাহবুবুল আলম খোকন, এড. তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত,সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মো.মহসিন,তানজিন আহমেদ,দপ্তর সম্পাদক মো.মনির হোসেন,ত্রাণ সম্পাদক আবদুল খালেক বাবুল,বন পরিবেশ সম্পাদক শাহআলম আলম,সাংস্কৃতিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম,বিজ্ঞান প্রযুক্তি সম্পাদক অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল,ধর্ম সম্পাদক মাও.আবুল কালাম,যুব ক্রীড়া সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ,উপদপ্তর সম্পাদক সুজন দত্ত,কার্যকরী সদস্য জায়েদুল হক,জাহাঙ্গীর আলম,মাহমুদুর রহমান জগলু,সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এমএএইচ মাহবুব আলম,জেলা যুবলীগ সভাপতি এড.শাহানুর ইসলাম,সাধারণ সম্পাদক এড.সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস,জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি এড.লোকমান হোসেন,সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান আরিফ,জেলা কৃষকলীগ যুগ্ম-আহবায়ক সেলিম ভূঞা,জেলা শ্রমিকলীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফ খান আশা,জেলা তাতী লীগ সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দুলাল,জেলা মৎস্যজীবী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহপরান।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি

জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে গেছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 22 June 2024, 168 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চালু থাকা বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। গত ৩ জুন থেকে চিকিৎসকরা বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে একদিকে দুর্ভোগে পড়েছে জেলার সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় রোগীরা, অন্যদিকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৩ জুন থেকে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করেন হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রয়াত ডাঃ মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নির্ধারিত ফির মাধ্যমে অসহায় রোগীদের সেবাদান শুরু করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রোগীদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলার হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা থেকেও অনেক রোগী এই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতেন।

বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় মেডিকেল কর্মকর্তার সরকারি ফি ২০০ টাকা, জুনিয়ার কনসালটেন্ট ও আবাসিক সার্জনের ফি ৩০০ টাকা এবং সিনিয়র কনসালটেন্টের ফি ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা চালু করায় সাধারণ রোগীরা অনেক খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত ৩ জুন থেকে এই স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীরা এখন অনেক অসন্তুষ্ট। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় জেলার দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে।

হাসপাতালের হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবায় বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চালু থাকা প্যাথলজি বিভাগের বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে সরকারি কোষাগারে অনেক টাকা জমা দিতে পেরেছেন। গত বছরের জুন মাসে শুধু পরীক্ষা-নীরিক্ষা থেকে প্রাপ্ত ২১ হাজার ৫৩৫ টাকা, জুলাই মাসে ৮৬ হাজার ৭০ টাকা, আগস্ট মাসে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৬০ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫ টাকা, অক্টোবর মাসে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৩০ টাকা, নভেম্বর মাসে ১ লাখ ৮ হাজার ৪০০ টাকা ও ডিসেম্বর মাসে ৯০ হাজার ৮১৫ টাকার রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দেন।
আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৯১ হাজার ৩৫৫ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ৮৬ হাজার ৯৩০ টাকা, মার্চ মাসে ৬৪ হাজার ৭৮০ টাকা এবং এপ্রিল মাসে ৫৪ হাজার ৩৫০ টাকার রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বিকেল তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালুর প্রথম মাসে গত বছরের জুন মাসে চিকিৎসকরা ২৫১ জন রোগী, দ্বিতীয় মাস জুলাই মাসে ১ হাজার ২২৬ জন, আগস্ট মাসে ১ হাজার ৪৫৭ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ৫২৩ জন, অক্টোবর মাসে ১ হাজার ২১১ জন, নভেম্বর মাসে ১ হাজার ১৪০ জন ও ডিসেম্বর মাসে ৮৯২ জন রোগী দেখেছেন চিকিৎসকরা। চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাসে ৯০৫ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১ হাজার ১১৮ জন, মার্চ মাসে ৬৩১ জন ও এপ্রিল মাসে ৮৫৭ জন রোগী দেখেন চিকিৎসকরা।

জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরা ১১ হাজার ৩৬০ জন রোগী দেখেছেন, যেখান থেকে আয় হয়েছে ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ টাকা।

গত বছরের জুন মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত আট মাস এসব রোগী দেখার টাকা থেকে নিজেদের প্রাপ্ত সম্মানী ভাগাভাগি করে নিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিভাগের এক সভায় বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগী দেখা থেকে প্রাপ্ত টাকা চিকিৎসকদের না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের এক পরিচালক। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় নিযুক্ত চিকিৎসকদের সম্মানী বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকেই হাসপাতালে বিকেলে রোগী দেখায় আগ্রহ হারাতে শুরু করেন চিকিৎসকরা।

চলতি বছরের ৩ জুন থেকে কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগী দেখা বন্ধ করেন চিকিৎসকরা। তবে প্যাথলজি বিভাগ চালু রয়েছে।

হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন জানান, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতালে রোগী দেখার চেয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখায় স্বাচ্ছন্দবোধ করেন চিকিৎসকরা। কারণ এতে চিকিৎসকদের আয়-রোজগার বেশি হয়। হাসপাতালের এক সভায় চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের এক পরিচালক জানান, বাংলাদেশে যেসব সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়েছে, সেখানকার কোনো হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকদের সম্মানি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা সম্মানি উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৩ জুন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান। তাঁর যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালে যথাসময়ে চিকিৎসকের উপস্থিত হওয়াসহ সকল বিভাগেই স্বাস্থ্যসেবার বিরাট পরিবর্তন হয়েছিল। পাশাপাশি তার সময়ে হাসপাতাল থেকে সরকারি কোষাগারে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব জমা হয়েছে। তার একান্ত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে একমাত্র হাসপাতাল হিসেবে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সকালের পর দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্যাথলজি বিভাগ চালু হয়। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগের সকল হাসপাতালের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবার বিবেচনায় প্রথম হয়েছিল জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কর্মস্থলেই অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। চলতি বছরের ৩ জুন থেকে হাসপাতালের বৈকালিক সেবা বন্ধ হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, একটু প্রশাসনিক জটিলতা চলছে। বৈকালিক সেবায় নিযুক্ত চিকিৎসকদের সম্মানী বন্ধ রয়েছে। তাই বৈকালিক সেবার বিষয়ে আলোচনা চলছে। আগে বৈকালিক সেবার সবগুলো বিভাগ খোলা থাকত। কিন্তু এখন বিষয়টি রিশিডিউলিং করা হচ্ছে। এখন প্রতিটা বিভাগ হয়তো চালু থাকবেনা । কাস্টমাইজড করা করে কিছু বিভাগ কমিয়ে আবার চালু করা হবে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে বৈকালিক সেবা চালু হবে।

এ ব্যাপারে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রতন কুমার ঢালী বলেন, কিছু জটিলতার কারণে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ আছে। আমরা সীমিত পরিসরে সেবাটা আবার চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কাস্টমস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি ও হয়রানি অভিযোগে মানববন্ধন

জাতীয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 26 June 2024, 308 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি ও হয়রানির অভিযোগে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখা।

আজ ২৬ জুন বুধবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল হাসান, নিউ মার্কেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জেলার রেস্তোরাঁ ও মিষ্টান্ন ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত ভ্যাট দেয়। কিন্তু ভ্যাট কর্মকর্তা আবু হানিফ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বিভিন্ন সময় এমনকি মধ্য রাতেও ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। তাকে টাকা না দিলে ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। ব্যবসায়ীরা দ্রুত এ কর্মকর্তার অপসারণের দাবি জানান। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। তবে ব্যবসায়ীদের করা বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা আবু হানিফ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, বিধি মোতাবেক অভিযান পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, গতকাল এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলা দায়ের করেন মো. রাশেদুল হক নামে এক ব্যবসায়ী। আদালত মামলাটি তদন্তে পিবিআইকে আদেশ দেয়।

দুর্নীতির অভিযোগে আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক অবরুদ্ধ : পাঁচ ঘণ্টা পর উদ্ধার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 18 September 2024, 48 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে দুর্নীতির অভিযোগে আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আবু জামালকে পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখের শিক্ষার্থীরা। পরে জেলা প্রশাসনের দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। আজ ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নাঈমা ও ইশরাত জাহান তৃষ্ণাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক আবু জামাল বিভিন্ন জাতীয় দিবসে ভুয়া বিল তৈরি করে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করেছেন। অথচ এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শতাধিক ছাত্রীদের কাছ থেকেও ৬০০ টাকা হারে নেন তিনি। এ ঘটনা জানাজানি ও বিষয়টি প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকের পরিবর্তে এক নৃত্য শিক্ষকের চাকরি চলে যায়। বিদ্যালয়ের তহবিল তছরুপ করতে অফিস সহকারী হরিশঙ্কর চক্রবর্ত্তী অবসর নেওয়ার পরও তাকে বেআইনিভাবে বহাল রেখেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তারা সাংবাদিকদের কাছে আরো অভিযোগ করে বলেন, ঝাড়ুদার মিনা রানী দাসের চাকরি স্থায়ী করতে তার কাছ থেকে দেড়লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক আবু জামাল। সেই টাকা এখনো ফেরত দেননি। ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়। পরে ইউএনওর অফিসে অভিযোগ দিলে প্রধান শিক্ষক ক্ষমা চেয়ে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে এমনটাই জানালেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সকাল ৯টার দিকে প্রধান শিক্ষক আবু জামালকে তার কক্ষে অবস্থান করার সময় শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন। এসময় তারা তার বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্লোগান দেন। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা আসেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে প্রধান শিক্ষককে বের হতে দেননি শিক্ষার্থীরা।

এ অবস্থায় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ইকরামুল হক নাহিদ ও নুশরাত জাবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা প্রধান শিক্ষক আবু জামালের বিষয়ে তদন্ত করে বিচারের আশ্বাস দেন। পরে দুপুর ২টার দিকে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আবু জামাল বলেন, তদন্তে সব প্রমাণ হবে।

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির দাতা সদস্য লতিফুর রহমান বলেন, বিভিন্ন দিবসে অংশ নিতে বিদ্যালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিজয় দিবসেও ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আলাদাভাবে ৬০০ টাকা করে নেওয়া হয়। যা প্রমাণ হওয়ার পর সেই টাকা স্কুল ফান্ডে রেখে দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ইকরামুল হক নাহিদ বলেন, ‘প্রধান শিক্ষককে শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের পাঠানো হয়। সেখান থেকে উনাকে (প্রধান শিক্ষক) আমরা নিয়ে আসি।’