“মাদকমুক্ত নবীনগর চাই” এর দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

নবীনগর, 13 March 2023, 1306 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
প্রতিবাদের সুরে মাদক থাকবে দূরে, এখনই সময় শপথ নেওয়ার, মাদক মুক্ত সমাজ গড়ার” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে নবীনগরে মাদকমুক্ত নবীনগর চাই সংগঠনের নাটঘর উচ্চ বিদ্যালয় শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন আজ ১৩ মার্চ সোমবার বিদ্যালয়ের হল রুমে অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল্লাহ-র সভাপতিত্বে ও মাদক মুক্ত নবীনগর চাই নাটঘর ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক রুবেলের সঞ্চালণায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-মাদকমুক্ত নবীনগর চাই কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবু কাউছার, অত্র বিদ্যালয়ের হেড মাওঃ দেলোয়ার হোসেন।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাদক মুক্ত নবীনগর চাই নাটঘর ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নাইমুল ইসলাম।

এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন,জরু মিয়া সর্দার, হাজী জমির আলী সর্দার, ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হুমায়ুন কবির, অত্র বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক বাবু কেশবচন্দ্র আচার্য্য, সিনিয়র শিক্ষিকা সাজেদা বেগম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে আলোচনা সভা শেষে ঐশী রানী আচার্য্যকে সভাপতি ও পারভেজ আহমেদ কে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।

আগামী এক মাসের মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরামর্শে ক্রমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।

Leave a Reply

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮৩…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সঠিক প্রক্রিয়ায় ৮৩জন Read more

জননিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত…

চলারপথে রিপোর্ট : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত একান্ত Read more

বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ১ Read more

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরে ১৪৪ ধারা…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও Read more

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও Read more
ফাইল ছবি

আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞাতনামা Read more

আখাউড়ায় বিনামূল্যে ধান বীজ বিতরণ চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া উপজেলায় Read more

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবু বাক্কার নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : কুয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় শেখ আবু বাক্কার (৩৪) Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস উল্টে যাত্রী নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলায় বাস উল্টে গোপী কান্ত ঘোষ Read more

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের বিতর্ক প্রতিযোগিতা

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশু নাট্যমের ৩৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে Read more

ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই পাচারকারী গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ১হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গোপাল রায় Read more

নবীনগরে অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই বসতঘরসহ আসবাবপত্র

নবীনগর, 22 December 2022, 1343 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরে অগ্নিকান্ডে বসতঘর পুড়ে গেছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ঘরে থাকা সমস্ত আসবাবপত্র। বসতঘরে থাকা টিভি, ফ্রিজ, চাল, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, খাট ও অন্যান্য আসবাবপত্র পুড়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত বুধবার গভীর রাতে উপজেলা নাটঘর ইউনিয়নের রুদ্রাক্ষ বাড়িতে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঘরের বাসিন্দারা একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন আগুনে স্বর্বস্ব পুড়ে যাওয়া ঘরের মালিক। ঘটনার পর সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, প্রথমে রান্না ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুণ ভয়াবহতা আকারে রূপ নেয়। পাশের মসজিদের মাইকে ঘটনা জানিয়ে সহযোগিতা চাইলে এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় প্রায় দুই ঘন্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে।
মোঃ আব্দুর রহিম মিয়ার স্ত্রী বলেন, বুধবার রাতে আমার ঘরে আগুন লেগে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার ঘরে আর কিছুই নেই, সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আমাদের পড়নের কাপড় ছাড়া আর কিছুই রইল না। অনেক কষ্ট করে একটি ঘর নির্মাণ করেছিলাম সেটি আগুনে পুড়ে গেল।

নবীনগরে বিট পুলিশিং এর সচেতনেতা মূলক সভা অনুষ্ঠিত

নবীনগর, 21 May 2023, 1163 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে গতকাল ২০ মে রছুল্লাবাদ ইউনিয়নের কালঘড়া গ্র্রামের ৩নং ওয়ার্ডের বিট পুলিশিং ও সচেতনতা মূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উক্ত ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত বিট কর্মকর্তা এস.আই মো. বাছির মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুদ্দিন আনোয়ার।

যুবলীগ নেতা মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ডা. শফিকুর রহমান, মাদকমুক্ত নবীনগর চাই সংগঠনের সভাপতি মো. আবু কাওছার, শ্রীকাইল কলেজের সাবেক জি. এস আজিজুর রহমান রাসেল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সুমন আহমেদ মাস্টার, বিশিষ্ট সমাজ সেবক শফিউল আলম, ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার মামুন মিয়া, ১ নং ওয়ার্ড মেম্বার সাদেক মিয়া, কালঘড়া হাফিজ উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় এর অভিভাবক সদস্য কামাল সরকার, সাবেক ছাত্রনেতা আবু কাউসার সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন ইদানিং গ্রামে চুরি ও ইভটিজিং বিষয়ে মাদক সেবীদেরকে দায়ী করে বলেন- যারা মাদক সেবন করে টাকার জন্য তারাই ছিচকে চুরি করে থাকে ও বিভিন্ন দোকানে বসে আড্ডা দেয়, তাই রাত ৯ টার পরে গ্রামে কোন দোকান খোলা রাখা যাবে না এবং কোন কারণ ছাড়া রাতের বেলায় সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে চলাফেরা করিলে প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। আপনারা প্রত্যেকেই যার যার পরিবারের সন্তানদেরকে দায়িত্ব নিয়ে মাদকের কুফল সম্পর্কে বোঝাবেন ও সচেতনতা বৃদ্ধি করবেন। নতুবা একদিন চোখের পানি ফেলতে হবে। মাদকের চাহিদা কমিয়ে আনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন মাদকমুক্ত নবীনগর চাই সংগঠন ও কাজ করছে।

নবীনগরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছে গুঞ্জন পাঠাগার

নবীনগর, 24 July 2023, 885 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছে গুঞ্জন পাঠাগার। মাত্র ৩টি বই নিয়ে যাত্রা করা গুঞ্জন পাঠাগারে এখন বইয়ের সংখ্যা ১০ হাজার। গ্রামের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা এই পাঠাগারের বই দিয়ে পড়াশুনা করে। ২০০৪ সালের ৩০ মার্চ ছোট একটি টিনের একচালা ঘরে যাত্রা শুরু করা পাঠাগারটি এখন ১ তলা বিশিষ্ট ভবন।

গুঞ্জন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা স্বপন মিয়া (৩২)। তিনি নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের মরহুম স্বপন মিয়ার ছেলে। বর্তমানে স্বপন মিয়া জেলার কসবা উপজেলার একটি বেসরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক।

স্থানীয়রা জানান, ছোট বেলা থেকেই বইয়ের প্রতি আগ্রহ ছিলো স্বপন মিয়ার। ২০০৪ সালে স্বপন মিয়া যখন ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র তখনই তিনি তার বাড়ির একটি টিনের ঘরে মাত্র তিনটি বই দিয়ে পাঠাগারটি চালু করেন। পাঠাগারের নামকরন করেন “গুঞ্জন পাঠাগার”। প্রায় ১৯ বছরে পাঠাগারটি এখন ১০ হাজার বইয়ে সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার। পাঠাগারে গ্রামের ছেলে মেয়েরা এক সাথে স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন লেখকের বই পড়তে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র দেড় বছর বয়সে পিতাকে হারান স্বপন মিয়া। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন মা রাজিয়া খাতুন। তিনি মাটি কাটার কাজ করে সন্তানদের খুবই কষ্টে লালন-পালন করেন। স্বপনের দুই ভাই রিকশা চালক।

স্বপন মিয়া যখন গ্রামের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র তখনই একটি পাঠাগার গড়ার চিন্তা মাথায় আসে তার। তখন তিনি পরিবারের সদস্যদের অমতে একটি এনজিও থেকে ৮ হাজার টাকা ঋন নিয়ে বাড়ির জায়গায় একটি ছোট একচালা টিনের ঘর তৈরী করে মাত্র তিনটি বই দিয়ে গুঞ্জন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন।

পাঠাগারটি নিয়ে স্বপনের পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। বড় দুই ভাই তাকে শর্ত দেন, পরিবারে থাকতে হলে পাঠাগার ছাড়তে হবে। কিন্তু স্বপন পরিবারকে ছেড়ে পাঠাগারকে আকড়ে ধরে রাখেন। পরবর্তীতে স্বপনের মা রাজিয়া খাতুন স্বপনকে সম্মতি দেন।

এক পর্যায়ে নিজের পড়াশুনা, সংসার আর পাঠাগার দেখাশুনা করতে স্বপন মিয়া দিন-মজুরি শুরু করেন। পথে ঘাটে ফেরি করে পান-সিগারেটসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন তিনি। তবুও পাঠাগারটি বন্ধ করেননি।

উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।

পরে তিনি মায়ের কাছ থেকে পাওয়া সোয়া ২ শতাংশ জায়গা পাঠাগারের নামে দান করে সেখানে ঋণের টাকায় একতলা বিশিষ্ট পাকা ভবন করেন। পাঠাগারেই রাত্রিযাপন করেন তিনি। কলেজ থেকে যে টাকা বেতন পান, তার বেশির ভাগই ব্যয় করেন এই পাঠাগারে।

বর্তমানে প্রতি শুক্রবারে পাঠচক্র বসে পাঠাগারে। সেখানে শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজন করা হয় সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগীতার।

নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের রমজান জানান, তার পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় অষ্টম শ্রেনীতে পড়ার সময় তার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বাধ্য হয়ে তিনি বাবার সাথে কৃষি কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে স্বপন তাকে গুঞ্জন পাঠাগারে নিয়ে আসেন। এই পাঠাগারে থাকা বই দিয়েই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যান। অনার্স শেষ করে বর্তমানে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাস্টার্স করছেন।

নবীনগর উপজেলার ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাওহীদ জাহান চৌধুরী জানায়, সে নিয়মিত গুঞ্জন পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ে সে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সবধরনের বই আছে এখানে। এছাড়া তার কয়েকজন সহপাঠীও পাঠাগারে এসে বই পড়ে।

উপজেলার কৃষ্ণনগর আবদুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক রোকসানা জেবিন মলি জানান, গুঞ্জন পাঠাগারের মনোরম পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। পাঠাগারটি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে।

পাঠাগারে নিয়মিত আসা পাঠক ও কসবা উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তুহিন কান্তি দাস বলেন, নবীনগর তথা পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্য আলোর দিশারী হয়ে দাঁড়িয়েছে গুঞ্জন পাঠাগারটি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি ও বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছে পাঠাগারটি।

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা স্বপন মিয়া বলেন, পাঠাগারটি সমৃদ্ধ করতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও অনেক ব্যক্তি তাকে সহায়তা করেছেন। যার জন্য তিনি পাঠাগারটিকে একচালা টিনের ঘর থেকে পাকা ভবন তৈরি করতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, ‘সমাজে আমার মতো অনেকেই আছে- যারা বই কিনে পড়তে পারে না। অর্থের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের কথা চিন্তা করেই পাঠাগারটি করা হয়েছে। এই পাঠাগারের জন্য আমাকে পরিবার থেকে আলাদা হতে হয়েছিল। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আমি রাস্তায় ফেরী করে পান-সিগারেট বিক্রি করেছি। তবুও পাঠাগারটি বন্ধ হতে দেইনি।

তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই পাঠাগারের বই পড়ে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। সুহাতা গ্রাম আলোকিত হয়েছে গুঞ্জন পাঠাগারের আলোতে। আমি চাই জ্ঞানের এই আলো ছড়িয়ে পড়–ক সবখানে।

এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, পাঠাগারের জন্য স্বপন তার নিজের ব্যক্তি জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছে। গুঞ্জন পাঠাগার শুধু জ্ঞানের আলোই ছড়াচ্ছে না, ছেলে-মেয়েদের মাদক থেকেও দূরে রাখতে সহায়তা করছে। বই পড়ার কারণে মেধার বিকাশ হচ্ছে, জ্ঞানের পরিধি বাড়ছে।

নবীনগরে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে

নবীনগর, 5 April 2023, 1241 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার এককালে মৃৎশিল্পের সুনাম ছিল কিন্তু নানা প্রতিকূলতার বর্তমানে নবীনগরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প বিপন্ন হতে চলেছে।

এ উপজেলার নারায়ণপুর, ভেলানগর, ইব্রাহিমপুর, শ্রীরামপুর, বিটঘর গ্রাম মৃৎশিল্পের প্রাণ কেন্দ্র ছিল। এ সব গ্রামে ন্যূনতম পক্ষে ৩০০০ মৃৎশিল্পী রাত দিন কাজ করত। তারা সুনিপুণ ভাবে হাড়ি, পাতিল, বাসন, ডাকনা, কলকে ও কলস, হরিন, হাতি, গরু,জলকাদা, মটকা, মুিক্ত, বসারপিড়ি, ঘোড়া ,বাঘ, ফুলদানী, টব ব্যাংক, প্রভৃতি তৈরি করত। তাদের তৈরি পুতুল শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় নয় ঢাকা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ও সরবরাহ হত, কিন্তু বর্তমানে নানা প্রতিকূলতার শিকার হয়ে নবীনগরের মৃৎশিল্পীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এখন মাত্র শ’খানেক মৃৎশিল্পী তাদের পেশা কোনো মতে আঁকড়ে ধরে আছে। তাদের পেশার দৈন্যদশায় সংসার জীবনে বিরাট বিপর্যয় নেমে এসেছে। মাটির তৈরি জিনিষের স্থান দখল করে নিয়েছে এলুমনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি তৈজষপত্র। এর দাম বেশি হলেও অধিক টেকশয়। তাই গ্রামের সাধারণ মানুষ এলুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি তৈজসপত্র কিনে।

মৃৎশিল্পী জয় পাল জানান, “মৃৎশিল্প তৈরীর উপকরণের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। ফলে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পে আমাদের ঋণের বোঝা ভারী হয়ে গেছে”। নানা প্রতিকূলতায় অনেকেই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই নবীনগর উপজেলার মৃৎশিল্প বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে ১ বৈশাখ উপলক্ষে কয়েক জন মৃৎশিল্পী ব্যস্থ সময় পার করছেন। নবীনগর উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ও স্থানীয় এনজিও হোপ এর সহযোগিতায় অত্র এলাকার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য স্থানীয় কারিগরদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় যদিও এর প্রতিফলন খুব একটা চোখে পড়েনি। ভবিষ্যতে যদি সরকারী ভাবে তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ করানো ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হয় তাহলে হয়তো এ শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

আন্দোলনে নিহত তানজিল মাহমুদ সুজয় এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ

নবীনগর, 17 October 2024, 64 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বিটঘর (দঃপাড়া) গ্রামের তানজিল মাহমুদ সুজয় (১৯) এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন সুজয়। কিন্তু এই আনন্দের বার্তা কোন আনন্দই আনতে পারেনি তার পরিবারে। গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় সুজয়। পরিবারের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা-বাবাসহ তার গোটা পরিবার।

‘আমাদের ছেলে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে, কিন্তু সে তো আর নেই,’ ভেঙে পড়েন মা তাহমিনা আক্তার। ‘আমাদের জন্য অনেক কিছু করার স্বপ্ন ছিল ওর। কিন্তু সব শেষ। আমরা গরিব মানুষ, কীভাবে চলব? ছেলের বাবা আগে রোজগার করত, এখন আর পারে না। দুই মেয়ে আছে, তাদের মানুষ করতে হবে। আমরা সরকারের সাহায্য চাই।’

‘ছেলে বেঁচে নেই, তার এই ফলাফল দিয়ে কী হবে?’ প্রশ্ন বাবা শফিকুল ইসলামের। ‘নিজেরা না খেয়ে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। ঢাকায় পড়তে পাঠিয়েছি। ওর অনেক স্বপ্ন ছিল। সব স্বপ্ন গুলি মুছে ফেলেছে। আমার একমাত্র ছেলে সুজয় সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে।’

সুজয়ের দুই বোন, এনি ও স্বর্ণা, ভাইয়ের স্মৃতি আঁকড়ে বলে, ‘আমার ভাই দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। শহীদ হয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে স্বাধীনতা দিয়েছে। আমরা ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’

সুজয়ের কলেজ বন্ধু সাগর শেখ বলেন, অত্যন্ত মেধাবী ও খুব সাহসী বন্ধু ছিল সে। এখনো তার স্মৃতি চোখে ভাসে। তার বন্ধু হতে পেরে আমি গর্বিত। আজ সে এইচএসসি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছে কিন্তু আমার বন্ধু সুজয় আর নেই।’

প্রত্যক্ষদর্শী সুজয়ের নানা আল আমিন সরকার বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট সোমবারে সরকারের পতন ঘটলে সবার সাথে সুজয় আনন্দে আত্মহারা হয়ে উদযাপন করতে রাস্তায় নামলে পুলিশ এলোপাথারি গুলি করেলে সেখানে থাকা অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়, পরবর্তীতে তাকে সহ ১১জনকে একটি কাভার ভ্যানে তুলে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলে সেখানে সকলেরই মৃত্যু হয়।’