চলারপথে রিপোর্ট :
সময় থমকে গিয়েছিল এ বাংলার বুকে। তার পাতায় পড়েছিল কালিমার ছাপ। আর পৃথিবী নীরব চোখে দেখেছিল এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ।
মেশিনগানের গুলিতে মারা হয়েছিল নিরস্ত্র বাঙালিদের। বাদ যায়নি বৃদ্ধ-বয়স্ক-জোয়ান-কিশোর-শিশু কেউ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘরবাড়ি। আজ সেই বিভীষকার ২৫ মার্চের কালরাত।
পাকিস্তানি সামরিক জান্তার আগ্রাসনে বাংলার বুকে নেমে এসেছিল মৃত্যুর কালো আঁধার। স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হিংস্র হায়েনার মতো হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ১৯৭১ সালের এদিন রাত ১০টা অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে দেশব্যাপী পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত ছিল এ হত্যা-অভিযান। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালি হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের পথেই এগিয়েছিলেন। অত্যাচার, উৎপীড়ন, পাশবিকতা, নৃশংসতা আর হিংস্রতার কালো থাবায় মৃত্যুর নগরীতে পরিণত করেছিলেন ঢাকা শহরকে।
বর্বর হত্যাযজ্ঞের এ দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে। দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের কাজ চলছে।
১৯৭১ সালের এ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশলাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ এবং অগ্নিসংযোগ। এ রাতেই গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি দেশকে শুত্রুমুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। এ রাতের বেদনাদায়ক ঘটনা সমগ্র জাতিকে শিহরিত করে। হত্যা করে সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ভয়াবহ সেই হত্যাযজ্ঞ বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রণোদনা জোগায়।
প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের এদিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি এয়ারপোর্ট চলে যান। নিরপরাধ বাঙালিদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে রাত পৌনে ৮টায় তিনি গোপনে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ রাতে শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে।
রাত ১টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টারে আক্রমণ চালায়। কেন্দ্রীয় কোয়ার্টারে ১৮ জন বাঙালি গার্ড থাকলেও তারা পালটা আক্রমণের সুযোগ পাননি। পিলখানা আক্রমণের পাশাপাশি রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারি বাজারসহ সমগ্র ঢাকাতেই শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। বিভিন্ন এলাকাতে যথেচ্ছ হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে বর্বর হানাদার বাহিনী।
মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে ট্যাংক ও সেনা বোঝাই লরি। ইকবাল হল (বর্তমানে জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হলে মধ্যযুগীয় কায়দায় চলে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা। শহিদ হন কয়েকশ ছাত্রছাত্রী। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের নয়জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। হানাদারর চলার পথে রাস্তার দুপাশে গুলি ছুড়ে মারে অসংখ্য নিরীহ, গরিব মানুষকে। মেডিকেল কলেজ ও ছাত্রাবাসে গোলার পর গোলা ছুড়ে হত্যা করা হয় অজস্র মানুষকে। রাজারবাগে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তাদের সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই।
ট্যাংক আর ভারী মেশিনগানের মুখে এ প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টেকেনি। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুরো সদর দপ্তর।
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গোপন ওয়্যারলেস বার্তায় তিনি বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্র-জনতা-পুলিশ-ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘোষণা করছি, আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন, যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করুন। এ হয়তো আপনাদের প্রতি আমার শেষ বাণী হতে পারে। আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান।
এর আগে সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে ভুট্টো-ইয়াহিয়া এবং ইয়াহিয়া ও পিপলস পার্টির উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছেছিল। রাত ৯টার পর বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট অখন্ড পাকিস্তানের সমাপ্তি টানতে চলেছেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত বাণী পিলখানায় ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে মেসেজ আকারে পাঠানো হয়। এ বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দপ্তরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙর করা একটি বিদেশি জাহাজও এ বার্তা গ্রহণ করে। চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী সাইক্লোস্টাইল করে রাতেই শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন।
রাত ১টায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের অদূরে শুক্রাবাদে ব্যারিকেডের মুখোমুখি হয়। এখানে প্রতিরোধ ব্যূহ ভেঙে হানাদাররা রাত দেড়টায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে আসে। তারা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এলাপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধুকে রাত দেড়টায় বন্দি করে শেরেবাংলা নগরের সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হয় সেনানিবাসে। সকাল পর্যন্ত আদমজী কলেজের একটি কক্ষে তাকে আটক রাখা হয়।
২৫ মার্চের পরদিন সকালে লুকিয়ে জগন্নাথ হলের হত্যাযজ্ঞের কিছু আলোকচিত্র ও ভিডিও ধারণ করেছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. নূরুল উলা। ১৯৭২ সালে বাংলার বাণী পত্রিকার এক বিশেষ সংখ্যায় ‘জগন্নাথ হলের মাঠে’ শীর্ষক লেখায় তিনি লিখেন, ‘২৬ মার্চ সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যবর্তী সময়ে ক্যামেরা চালু করি। জানালা দিয়ে লক্ষ্য করলাম, জগন্নাথ হলের সামনেই মাঠে কিছু ছেলেকে ধরে বাইরে আনা হচ্ছে এবং তাদের লাইনে দাঁড় করানো হচ্ছে। তখনই আমার সন্দেহ হয় এবং আমি ক্যামেরা অন করি। দেখলাম একজন বুড়ো দাড়িওয়ালা লোক রয়েছে। সে বসে পড়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছে। তার দাড়ি দেখিয়ে বোঝাতে চেয়েছিল যে সে মুসলমান। কিন্তু বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী তার কোনো কথাই শুনতে চায়নি। তাকে গুলি করে মারা হলো। মাঠের পূর্ব পাশে পাকিস্তানি বাহিনী একটা তাঁবু বানিয়ে ছাউনি করেছিল। সেখানে দেখছিলাম, ওরা চেয়ারে বসে বেশ কয়েকজন চা খাচ্ছে আর হাসি-তামাশা ও আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়ছে। যাদের আমার চোখের সামনে মারা হয়েছে ও যাদের মারার ছবি আমার ক্যামেরায় রয়েছে, তাদের দিয়ে প্রথমে হলের ভেতর থেকে মৃতদেহ বের করে আনা হচ্ছিল। মৃতদেহগুলো এনে সব এক জায়গায় জমা করা হচ্ছিল এবং ওদের দিয়ে লেবারের কাজ করানোর পর আবার ওদেরই লাইনে দাঁড় করিয়ে এক সারিতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার মনে হয়, প্রায় ৭০-৮০ জনের মৃতদেহ এক জায়গায় জমা করা হয়েছিল।
শহিদ জননী জাহানার ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে কালরাত নিয়ে ২৬ মার্চের লেখার এক জায়গায় লিখেছেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রচন্ড যুদ্ধের পর বাঙালি পুলিশরা বেশিরভাগ প্রাণ দিয়েছে। অল্প কয়েকজন পালাতে পেরেছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন পাকসেনার গুলিতে ঝাঁজরা। পাক আর্মি ‘দ্য পিপল’ অফিস পুড়িয়েছে, পুড়িয়েছে ইত্তেফাক অফিস। ঢাকায় যত বাজার আছে, বস্তি আছে, সব জায়গা আগুনে পুড়ে ছাই-ছাই হয়েছে রায়েরবাজার, ঠাটারি বাজার, নয়াবাজার, শাঁখারি পট্টি।’
চলারপথে রিপোর্ট :
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ এর তত্ত্বাবধানে MIPS প্রকল্পের অধিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, গণমাধ্যম কর্মী, সিভিল সোসাইটি ও ধর্মীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত Peace Facilitator Group (PFG) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদস্যদের তিন দিনব্যাপী বেসিক প্রশিক্ষণ ২৩-২৫ মে ২০২৪, সিলেটে হোটেল ব্রিটানিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রশিক্ষণে সহিংসতা ও দ্বন্দ্ব নিরসনের রূপরেখার উপর প্রশিক্ষকরা বিস্তারিত আলোচনা করেন।
প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ ফেসিলেট করেন হাঙ্গার প্রজেক্টের উত্তম সরকার, তুহিন আফসারী, মনির হোসেন। প্রশিক্ষণে এম্বাসেডর হিসেবে মহসিন মিয়া, এ বি এম মোমিনুল হক, এস এম শাহীন ও রুমানুল ফেরদৌসী সহ ৩০ জন অংশ গ্রহণ করে।
প্রশিক্ষণ সমাপনীতে পিএফজি সদস্যরা নিরাপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।
সিলেট রিজিয়ন কো অর্ডিনেটর আকলিমা চৌধুরী ও পিএফজি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কো অর্ডিনেটর নীহার রঞ্জন সরকার প্রশিক্ষণের সমন্বয় করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ৬ এপ্রিল শনিবার পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আজ শনিবার সন্ধ্যা থেকে সারাদেশে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে পবিত্র লাইলাতুল কদরের রজনী পালন করবেন।
লাইলাতুল কদর একটি সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে।’ ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ ‘এ রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় এ রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত’। (সূরা কদর)।
আভিধানিকভাবে লাইলাতুল কদর অর্থ সম্মানের রাত। তাফসিরের কিতাবগুলোতে উল্লেখ রয়েছে, একদিন নবী করিম (সা.) এ ভেবে অস্থির হচ্ছিলেন যে, আগের নবীর উম্মতেরা দীর্ঘ হায়াত পেত। ফলে তারা অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ পেত। কিন্তু শেষ নবির উম্মতের হায়াত খুবই সীমিত। অতএব তাদের পক্ষে উচ্চমর্যাদা লাভের সুযোগ কম। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এ সূরা নিয়ে উপস্থিত হন হজরত জিবরাইল (আ.)। ফলে শান্ত হন মহানবি (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা।
আল্লাহতায়ালা এ রাতেই কুরআন মাজিদ নাজিল করেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তেমনি এ রাতটির মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি বলেও ঘোষণা করেছেন; কিন্তু রাত কোনটি তা বলে দেননি। হাদিস শরিফেও নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোনটি কদরের রাত। নিঃসন্দেহে এতে অনেক রহস্য ও তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন। ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে রাতটি কাটাতে পারলে এ রাতের প্রকৃত সুফল পাওয়া যায়।
হয়তো আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূল (সা.) চাননি মুসলমানরা একটি রাতের ভরসায় বসে থেকে সারা বছর বা সারা মাস অবহেলায় কাটিয়ে দিক। এজন্য এটিকে রহস্যময় করে রাখা হয়েছে। তা ছাড়া পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমেই মূল্যবান কিছু অর্জন করতে হয়। যে রাতের মূল্য হাজার মাসের চেয়ে বেশি, তা যদি সহজে পাওয়া যেত, তা হলে মানুষ হয়তো এটিকে বেশি গুরুত্ব দিত না। তাই তা অনির্দিষ্ট করে রেখে মানুষকে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে।
বেশিরভাগ বর্ণনা অনুসারে রমজানের শেষ দশকেই তা লুক্কায়িত রয়েছে। আবার কারও কারও মতে, এ রাতের তারিখ পরিবর্তনশীল। কোনো বছর একুশ, কোনো বছর তেইশ, কোনো বছর পঁচিশ, কোনো বছর সাতাইশ, আবার কোনো বছর ঊনত্রিশ তারিখের রাত লাইলাতুল কদর হয়।
কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে অনেক মনীষী রমজানের ২৭ তারিখের রাতকে লাইলাতুল কদর হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। সাহাবী হজরত উবাই ইবনে কাব (রা) জোর দিয়ে বলতেন, রমজানের সাতাশতম রাতই কদরের রাত। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন ২৭ রমজানের রাতটিই কদরের রাত? জবাবে তিনি বলেন, এ রাতের যেসব আলামত মহানবী (সা.) আমাদের বলেছেন, আমরা সেগুলো সাতাশ তারিখে পেয়েছি।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন, কদরের রাতের যে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য, তার মূল উপাদান কুরআন মজিদ। শেষ নবীর (সা.) উম্মতের জন্য জীবনব্যবস্থার চূড়ান্ত নির্দেশনা হিসাবে কুরআন মাজিদ নাজিলের সঙ্গে রাতটি সম্পর্কিত হওয়ায় এ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত হয়েছে। অতএব এ রাতের সুফল পুরো মাত্রায় পাওয়ার জন্য কুরআন মাজিদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করাই আসল উপায়। কুরআন পাঠ ও অধ্যয়ন এবং কুরআনি বিধান ও নির্দেশনা অনুসরণেই নিহিত রয়েছে মানুষের প্রকৃত সাফল্য। লাইলাতুল কদরে সালাত, তেলাওয়াত ও জিকির তাসবিহের সঙ্গে যেমন অতীত জীবনের পাপরাশি মোচনের জন্য মহান প্রভুর কাছে আকুল আবেদন জানাতে হবে, তেমনি তার তাওফিক প্রার্থনা করতে হবে কুরআনকে জীবনের দিশারি হিসাবে মেনে চলার।
মহান আল্লাহতায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবাদত-বন্দেগি করে থাকেন।
পবিত্র রমজান মাসের লাইলাতুল কদরে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। মুসলমানরা নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিলের মধ্যদিয়ে শবে কদরের রজনী কাটাবেন।
পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। শবে কদর উপলক্ষে আগামীকাল ৫ এপ্রিল রবিবার সরকারি ছুটি থাকবে।
স্টাফ রিপোর্টার :
আজ ২১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার অমর একুশে। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্র“য়ারি ঢাকার রাজপথে ঘটেছিল ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার ঘটনা। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে যে সংগ্রামের সূচনা ঘটেছিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চুড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ বিলিয়ে দেয় বাঙালি তরুণ প্রজন্ম। ইতিহাস বিদদের মতে, ভাষার প্রশ্নে একুশের আন্দোলন হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে তা ছিল শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রথম সম্মিলিত প্রতিবাদ। রক্তঝরা সে দিনটি তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে আত্ম অধিকার সচেতন করেছিল। সেখান থেকেই সমতা ভিত্তিক সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার প্রথম দৃস্টান্ত এটি। মাতৃভাষার জন্য বাঙালির গৌরবময় আন্দোলনের ৬৬ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউরের রক্তে সিক্ত শোকের এ দিনটি এখন গৌরবের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই বরাবরের মতো এবারও অনন্য আয়োজনে দিনটি পালন করা হচ্ছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের ৩০তম সম্মেলনে ২৮টি দেশের সমর্থনে ফেব্রুয়ারির দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮ দেশে একযোগে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্য সাধারণ অর্জন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার এত বছর পর আজও একুশের অম্লান চেতনা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া যায়নি। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দেশের সংবিধানে বাংলার স্বীকৃতি মিললেও সর্বস্তরে তা চালুর দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির সরকার ক্ষমতাসীন থাকায় জাতি অনেকটা আশান্বিত। বিশেষ করে এ সরকারের আমলে বাংলাভাষা চর্চা ও বিকাশের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শেষ হওয়ায় আশাবাদী হয়েছে মানুষ।
আজ সরকারি ছুটির দিন।
সারাদেশে আজ দিনের শুরু হয়েছে শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের মধ্য দিয়ে। বিশ্বের দেশে দেশে নানা ভাষা, নানা বর্ণ, নানা সংস্কৃতির মানুষ আজ গাইছে একুশের অমর গান- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।
চলারপথে রিপোর্ট :
তথ্য অধিকার আইন এবং অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে জামালপুরে দুদিনব্যাপী তথ্য মেলা শুরু হয়েছে। আজ ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেলে জামালপুর সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি’র উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই তথ্য মেলা উদ্বোধর করা হয়।
জামালপুর জিলা স্কুল সংলগ্ন মাঠে দুদিনব্যাপী তথ্য মেলার উদ্বোধন করেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো: শফিউর রহমান। পরে আলোচনা সভায় সনাক জামালপুরের সভাপতি অজয় কুমার পালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো: শফিউর রহমান। এছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: মোক্তার হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার সোহরাব হোসেন, পৌর মেয়র মো: ছানোয়ার হোসেন ছানু, দুদকের উপ পরিচালক মলয় কুমার সাহা, সিনিয়র তথ্য অফিসার মুহাম্মদ জালাল উদ্দীন, তথ্য মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক কায়েদ উদ জামান, সনাকের সহ-সভাপতি শামীমা খান প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, অবাধ তথ্য প্রবাহের মাধ্যমে সহজেই দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে দুর্নীতির শিকার হলে সাধারণ মানুষকে তার ন্যায্য সেবা সম্পর্কে অবহিত হতে অবশ্যই তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ করতে হবে। এবারের তথ্য মেলায় জামালপুরের সরকারি-বেসরকারি ৩৮ প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চালের ড্রামে গাঁজা পাচারকালে ২২ কেজি গাঁজাসহ একজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। আজ ৩০ জুলাই রবিবার ভোরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের একটি দল।
র্যাব সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের দলটি ভৈরব উপজেলার জগন্নাথপুর বেণীবাজারে একটি মাদ্রাসার সামনে অভিযান চালায়। এ সময় উজ্জ্বল মিয়া (১৯) নামে একজনকে আটক করে। পরে তার কাছে থাকা একটি চালের ড্রাম তল্লাশি করে ৮টি বান্ডিলে মোড়ানো ২২ কেজি গাঁজা, একটি মোবাইল ফোনসেট ও নগদ ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়। উজ্জ্বল মিয়া হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার মুড়াপাড়া গ্রামের মৃত কুদ্দুস মিয়ার ছেলে।
র্যাবের স্কোয়াড কমান্ডার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আক্কাছ আলী গ্রেফতার উজ্জ্বল মিয়াকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে জানান, তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে ভৈরব থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ অনুযায়ী মামলা দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।