চলারপথে রিপোর্ট :
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ডাকাতের গুলিতে মো. সোহাগ নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় ১ এপ্রিল শনিবার রাত আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সোহাগ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার ৬ নং নাটেশ্বর ইউনিয়নের নজরপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম ট্যান ডলার বাড়ির মো. কোবাদ মিয়ার ছেলে। সোহাগের মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
ছয় ভাই-বোনের মধ্যে ছোট ছেলেকে হারিয়ে সবাই পাগল প্রায়। কোনোভাবে সোহাগের এই মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের লোকজন। মৃত্যুর খবরে সোহাগের স্ত্রী এক বাচ্চা নিয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছেন।
স্থানীয় প্রবাসীরা জানান, রাত আটটার দিকে জোহানেসবার্গে সোহাগের কনফেকশনারী দোকানে ডাকাত দল অতর্কিত গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করে। বর্তমানে সোহাগের মরদেহটি আফ্রিকার হিলব্র ক্লিনিকে রাখা হয়েছে।
চলারপথে ডেস্ক :
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজা প্রস্তাব পাশ হয়েছে। গাজা উপত্যকায় আরও অধিক মানবিক সহায়তা পাঠানোর এ প্রস্তাবটি ১৩-০ ভোটে পাশ হয়েছে। খবর আলজাজিরা।
২২ ডিসেম্বর শুক্রবার সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রথম প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। প্রস্তাবটির খসড়ায় গাজায় অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তা পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল। তবে যুদ্ধবিরতির কথা থাকায় এতে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র। পরে যুদ্ধবিরতির কথা বাদ দিয়ে শুধু মানবিক সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এক সপ্তাহ ধরে ঝুলে থাকা প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত পাশ হলেও গাজায় যুদ্ধবিরতি বন্ধে এতে কোনো আলোচনা করা হয়নি।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ দেশের মধ্যে ১৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও; যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল। নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য রাশিয়া বলেছে, এই প্রস্তাব একটি ‘দন্তহীন’ ও ‘অক্ষম’ প্রস্তাব।
জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভাসিলি নিবানজিয়া বলেছেন, এই প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে বলা হয়নি। এর বদলে এটির মাধ্যমে ‘মুক্তহস্তে’ ইসরাইলকে তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
গাজায় ইসরাইলের হামলায় ২৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গাজার পরিস্থিতিকে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা পৃথিবীর নরক বলে মন্তব্য করেছেন।
অনলাইন ডেস্ক :
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে চিঠি লিখেছেন হামাসের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া ৪০ জনসহ মোট ২৫০ জিম্মির পরিবারের সদস্যরা। চিঠিতে গাজায় নতুন সামরিক অভিযান বন্ধ করে হামাসের সাথে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা, যাতে বাকি ৫৯ জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করা যায়। তারা আরো সতর্ক করে বলেছেন, তা না করলে জীবিত জিম্মিদের হত্যা করা হতে পারে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “এই চিঠিটি রক্ত ও অশ্রু দিয়ে লেখা। এটি আমাদের সেসব বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যরা লিখেছেন যাদের প্রিয়জনদের বন্দিদশায় হত্যা করা হয়েছে এবং যারা চিৎকার করছে, ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন’। আলোচনার টেবিলে ফিরে আসুন এবং একটি চুক্তি সম্পূর্ণ করুন যা যুদ্ধ শেষ করার মূল্যে সমস্ত জিম্মিদের ফিরিয়ে দেবে। সামরিক চাপ তাদের বিপদে ফেলছে। সমস্ত জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চেয়ে জরুরি আর কিছুই নেই।”
এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, “আমরা সকলেই (যুদ্ধ বন্ধ) সমর্থন করি। যারা বন্দিদশা থেকে ফিরে এসেছে তারা ভয়াবহতা সহ্য করেছে, যারা এখনও গাজায় জিম্মি, তাদের পরিবার আতঙ্কে অস্থির হয়ে আছে, যারা তাদের প্রিয়জনদের আলিঙ্গন করতে পেরেছেন এবং যারা তাদের প্রিয়জনকে দাফন করতে বাধ্য হয়েছেন, তারা ভাবতেন যে তারাও বেঁচে ফিরতে পারতেন।”
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, “যুদ্ধে জীবিত জিম্মিদের হত্যা করা হয় এবং মৃতদের নিখোঁজ করা হয়। এটি কোনও স্লোগান নয়, এটি বাস্তবতা। ৪১ জন জিম্মি তাদের জীবন দিয়ে মূল্য দিয়েছেন, আমরা, তাদের পরিবারের সদস্যরা, মূল্য দিয়েছি। তারা ফিরে আসতে পারত, কিন্তু তারা ফিরে আসবে না।”
জিম্মিদের বাঁচানো বা ফিরিয়ে না এনে অন্তহীন যুদ্ধ বেছে নেওয়ার জন্য এবং তাদের বলিদান দেওয়ার জন্য সরকারের সমালোচনাও করা হয়েছে চিঠিতে। উল্লেখ করা হয়েছে, “এটি একটি অপরাধমূলক নীতি- আপনার ৫৯ জন জিম্মিকে বলি দেওয়ার কোনও এখতিয়ার নেই।”
চিঠিটি যুদ্ধ বন্ধ করে অবিলম্বে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে শেষ করা হয়েছে। এতে লেখা হয়েছে, “যুদ্ধ সমাপ্তি ও আগামীদিনের সমাধান খুঁজে বের করার বিনিময়েই সব জিম্মিদের মুক্তি। যদি আপনি তা না করেন, তাহলে পরবর্তী জিম্মির রক্ত (মৃত্যু) এবং সমস্ত জিম্মির ভাগ্য আপনার হাতে থাকবে।”
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তিতে সম্মত হয়, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ৪২ দিন স্থায়ী ছিল। এর অধীনে হামাস ৩০ জন জীবিত জিম্মি এবং আটজন নিহত বন্দীর মৃতদেহ ফেরত দেয়। এর বিনিময়ে মুক্তি পায় ইসরায়েলি কারাগারে থাকা প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি। সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল
অনলাইন ডেস্ক :
নিজ ঘরের মানুষের বিদ্রোহে সব উলট-পালট করে দেয়। যেমনটি ঘটেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ক্ষেত্রে। তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন হঠাৎ বিদ্রোহ করে বসে। আর এতে সব হিসাব পাল্টে যেতে থাকে। দ্রুত ঘুরে যেতে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে মোড়। রাশিয়া যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে নিজ ঘর রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে ২৪ ঘন্টা পার না হতে সেই ভয়ঙ্কর পরিস্তিতি থেকে বেরিয়ে আসছে পেরেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। বলা চলে বেঁচে গেলে তিনি।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতায় রয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। দিন দিন বেড়েছে সেই ক্ষমতা। রাজনৈতিক জীবনে বহু বাধা আর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হয়েছে তাকে। সেসব উৎরেই এই পর্যন্ত এসেছেন তিনি। ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর থেকে নানা সংকট তাকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। তবে সেই পরিস্থিতি হঠাৎ করে কালবৈশাখীতে রুপ নেয় বেসরকারি আধা-সামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ।
ভয়ংকর এক দিন পার করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন পুতিনকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করে এত বড় হুমকিতে এর আগে ফেলতে পারেনি কেউ। তবে এই যাত্রায় ‘বেঁচে’ গেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
জানা গেছে, রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন ‘রক্তপাত এড়াতে’ তার অনুগতদের মস্কোমুখী যাত্রা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি নিজে বেলারুশে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে রাজি হয়েছেন। এর মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রাজনৈতিক জীবনে নেমে আসা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্চের অবসান হলো বলে ধারণা করা হয়েছে।
নতুন কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায় যে প্রিগোঝিন ও তার বাহিনী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রোস্তভ-অন-ডন ত্যাগ করছে।
এদিকে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের সাথে করা চুক্তির ব্যাপারে ক্রেমলিন খুব বেশি কিছু বলছে না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেছেন, প্রিগোঝিনকে প্রেসিডেন্ট পুতিন ‘কথা দিয়েছেন’ যে তিনি বেলারুশে যেতে এবং সেখানে বসবাস করতে পারবেন। আর তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করা হবে।
এর আগে রাশিয়ার রাজধানী দখলের উদ্দেশে লিপেৎস্ক থেকে ২০০ কিলোমিটার এগিয়ে গিয়েও আচমকা থমকে যায় প্রিগোঝিনের ভাড়াটে সেনাবাহিনী। কারণ হিসাবে জানানো হলো, রক্তপাত এড়াতেই আপাতত মস্কো অভিযান স্থগিত। ভাড়াটে সেনাবাহিনীর প্রধান প্রিগোঝিন নিজের টেলিগ্রামে জানিয়েছেন, রক্তপাত এড়াতেই মস্কো দখলের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিবিসি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বেলারুসের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা হয় ভাড়াটে সেনাবাহিনীর প্রধান প্রিগোঝিনের। তার পরেই প্রিগোঝিন মস্কোর দিকে ধাবমান সেনাসদস্যদেরকে ফিরে আসার নির্দেশ দেন।
চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেনের সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে বড় অভিযান শুরু করে বিদ্রোহী ওয়াগনার বাহিনী। প্রিগোজিনের মালিকানাধীন ভাড়াটে যোদ্ধারা শনিবার সকালে ইউক্রেন সীমান্তের অদূরে পশ্চিম রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর ভোরোনেজ দখল করে বলে কয়েকটি পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়েছে। এর আগে ওয়াগনার বাহিনী শুক্রবার ইউক্রেন সীমান্ত লাগোয়া রোস্তভ-অন-ডন শহরের দখল নিয়েছিল। প্রিগোজিন দাবি করেছেন, একটি গুলি খরচ না-করেও রোস্তভ-অন-ডন শহরে সেনার সদর দফতর দখল করে তার বাহিনী। আর এতে সহায়তা করেছেন স্থানীয়েরা। তিনি একটি অডিও-বার্তা দিয়ে জানিয়েছিলেন, গোটা দেশের তার বাহিনীকে সমর্থন করা উচিত। কারণ তার বাহিনী ‘ন্যায়ের পদযাত্রায় নেমেছে। রোস্তভ-অন-ডন থেকে মস্কোর দূরত্ব প্রায় হাজার কিলোমিটার। এর পর মস্কোর দিকে আরো ২০০ কিলোমিটার এগিয়ে যায় তারা। কিন্তু তার পরেই আচমকা বন্ধ অভিযান।
কিন্তু আচমকা কেন মন বদল হলো একদা পুতিনের সহচর প্রিগোঝিনের? তার একাধিক ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসির নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাংবাদিক ফ্রাঙ্ক গার্ডনারের দাবি, মস্কো অভিযান অসমাপ্ত রাখার চাপের উৎস রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনই। লুকাশেঙ্কোকে কাজে লাগিয়ে তিনি ভাড়াটে বাহিনীকে ঘোল খাইয়ে দিলেন। পাশাপাশি, গার্ডনারের বক্তব্য, প্রিগোঝিন মস্কো দখলের অভিযানে যোগ দিতে যে প্রকাশ্য বার্তা দিয়েছিলেন জনসাধারণের কাছে, তা-ও কাজে আসেনি। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ তো দূরঅস্ত , সাধারণ মানুষকেও খুব বেশি সংখ্যায় ভাড়াটে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে দেখা যায়নি। তাই সম্ভবত দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকেই মস্কো অভিযান বাতিল করার ভাবনা প্রিগেঝিনের। মস্কো অভিযান বাতিল হলো বটে, কিন্তু এর পর কী হবে প্রিগোঝিনের? তার রাজনৈতিক বা সামরিক ভবিষ্যৎ কিন্তু এখন পুতিনের মুঠোবন্দি, এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ।
একদা পুতিন-ঘনিষ্ঠ হোটেল ব্যবসায়ী প্রিগোঝিনের ওই ভাড়াটে বাহিনী রুশ সেনাবাহিনীর অংশ নয়। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে তারা রুশ বাহিনীর সহযোগী হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। অতীতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধেও লড়েছে এই পেশাদার ভাড়াটে বাহিনী। ইউক্রেন যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সাথে মতবিরোধ চলছিল প্রিগোঝিনের। রুশ সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে ওয়াগনার যোদ্ধাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এ বার সরাসরি মস্কোর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরেছে প্রিগোজিনের ভাড়াটে যোদ্ধারা।
ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে প্রায় ২০ হাজার ওয়াগনার যোদ্ধা মস্কো দখলের অভিযানে নেমেছিল বলে একাধিক সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছিল। তাদের রুখতে রুশ ‘চপার’ (যুদ্ধ হেলিকপ্টার) ধারাবাহিক আক্রমণ চালাচ্ছিল। এমনকি, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সাধারণ নাগরিকদের প্রাণহানির ঝুঁকি সত্ত্বেও আকাশপথে হামলা চালানো হয়। প্রেসিডেন্ট পুতিন শনিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন, ‘বিশ্বাসঘাতকেরা সমুচিত জবাব পাবে।’ প্রিগোঝিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেন তিনি।
শনিবার সন্ধ্যায় যখন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর দিকে এগিয়ে আসছিল প্রিগোঝিনের ভাড়াটে বাহিনী, এই পরিস্থিতিতে বাসিন্দাদের শহরে ঘুরে বেড়ানোর বিষয়ে সতর্ক করছিলেন মস্কোর মেয়র সেরগেই সোবিয়ানিন। তিনি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘পরিস্থিতি কঠিন। আমি বলব, যতটা সম্ভব শহরে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ করুন।’ তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, শহরের বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ থাকবে। রাশিয়ার রোস্টভ শহর দখল করেছে ওয়াগনার যোদ্ধারা। ইউক্রেন-সংলগ্ন দক্ষিণ রাশিয়ার রোস্টভ অঞ্চলের গভর্নরও বাসিন্দাদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় সময় মধ্যরাতেই নাটকীয় পালাবদল!
একদা পুতিন-ঘনিষ্ঠ
প্রিগোজিন একদা পুতিন-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। পেশায় হোটেল ব্যবসায়ী। তার ওই ভাড়াটে বাহিনী রুশ সেনার অংশ নয়। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে তারা রুশ বাহিনীর সহযোগী হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। অতীতে লিবিয়া, সিরিয়া, মোজাম্বিক, সুদানের মতো দেশে গৃহযুদ্ধেও লড়েছে প্রায় ৪০ হাজার যোদ্ধার এই পেশাদার ভাড়াটে বাহিনী। ইউক্রেন যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সাথে মতবিরোধ চলছিল প্রিগোজিনের। রুশ সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে ওয়াগনার যোদ্ধাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এবার সরাসরি মস্কোর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরেছে প্রিগোঝিনের ভাড়াটে যোদ্ধারা।
‘ন্যায়ের পদযাত্রা’
চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেনের সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে বড় অভিযান শুরু করেছিল বিদ্রোহী ওয়াগনার বাহিনী। প্রিগোঝিনের মালিকানাধীন ভাড়াটে যোদ্ধারা শনিবার সকালে ইউক্রেন সীমান্তের অদূরে পশ্চিম রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর ভোরোনেজ দখল করে বলে কয়েকটি পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়েছিল। এর আগে ওয়াগনার বাহিনী শুক্রবার ইউক্রেন সীমান্ত লাগোয়া রোস্তভ-অন-ডন শহরের দখল নিয়েছিল। প্রিগোজিন দাবি করেছেন, একটি গুলি খরচ না-করেও রোস্তভ-অন-ডন শহরে সেনার সদর দফতর দখল করেছে তার বাহিনী। আর এতে সহায়তা করেছেন স্থানীয়েরা। তিনি একটি অডিও-বার্তা দিয়ে জানিয়েছেন, গোটা দেশেরই তার বাহিনীকে সমর্থন করা উচিত। কারণ তার বাহিনী ‘ন্যায়ের পদযাত্রা’য় নেমেছে। রোস্তভ-অন-ডন থেকে মস্কোর দূরত্ব প্রায় হাজার কিলোমিটার। এর পর মস্কোর দিকে আরো কয়েক শ’ কিলোমিটার এগোয় তারা। তার পরেই অভিযান বাতিল ঘোষিত হয়। সূত্র : আল জাজিরা, সিএনএন, বিবিসি ও অন্যান্য।
অনলাইন ডেস্ক :
সুদানে আটকে পড়া ব্যক্তিদের সরিয়ে আনতে যাওয়া তুরস্কের একটি উড়োজাহাজ হামলার শিকার হয়েছে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, রাজধানী খার্তুমের কাছে ওয়াদি সেইদনা বিমানবন্দরে অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এতে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
এক বিবৃতিতে তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলার শিকার হওয়ার পরও সি-১৩০ মডেলের উড়োজাহাজটি নিরাপদে অবতরণ করেছে। সেটির জ্বালানিব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিমানবন্দরে তা মেরামতের কাজ চলছে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। তবে উড়োজাহাজটিতে কে বা কারা গুলি চালিয়েছে, তা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি।
উড়োজাহাজটিতে হামলার জন্য সুদানের আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) দায়ী করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। তবে এ দাবি নাকচ করে এক বিবৃতিতে আরএসএফ বলেছে, ‘মধ্যরাত থেকে আমরা যে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছি, তা মেনে চলতে আমাদের বাহিনী কঠোরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর ওয়াদি সেইদনার আকাশসীমায় আমরা কোনো উড়োজাহাজকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছি, এমন খবর সত্য নয়।’
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা থেকে আরো তিন দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় আরএসএফ। তবে এই যুদ্ধবিরতি তেমন একটা কার্যকর হয়নি। যুদ্ধবিরতির পরও গতকাল রাতভর খার্তুমে আরএসএফের নানা লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে সুদানের সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো। এর আগের তিন দিনের যুদ্ধবিরতির সময় সুদান থেকে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ কাজে হাত লাগিয়েছে তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সুদানের সামরিক বাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে ১৫ এপ্রিল লড়াই শুরু হয়। এ সংঘাতের এক পক্ষে সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। অপর পক্ষে আরএসএফের প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেদতি। প্রায় দুই সপ্তাহের সংঘাতে দেশটিতে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার।
দুই পক্ষে সশস্ত্র এই লড়াই সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে খার্তুম ও আশপাশের এলাকাগুলোতে। লড়াই শুরুর আগে সেখানে কোটি মানুষের বসবাস ছিল। সংঘাতের মুখে অনেকেই সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। আর এখনো যাঁরা থেকে গেছেন, তাঁরা খাবার, পানি ও জ্বালানির চরম সংকটে রয়েছেন।
অনলাইন ডেস্ক :
দখলদার ইসরাইলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর ভিডিও প্রকাশ করেছে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। তারা জানিয়েছে, সম্প্রতি একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এ হামলা চালানো হয়েছে। আর হামলায় যে ক্ষেপণাস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিতে একটি ক্যামেরা লাগানো ছিল। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
হিজবুল্লাহ আরো জানিয়েছে, যেখানে হামলা চালানো হয়েছে, সেখানে ইসরাইলিদের গোয়েন্দা নজরদারির সরঞ্জামাদি ছিল। এছাড়া ওই স্থান থেকে তারা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ত।
ইসরাইলের সামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালাতে যে ক্ষেপণাস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি একটি ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্রটিতে লাগানো ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে, এটি ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ছোড়া হচ্ছে। যে ঘাঁটিতে হিজবুল্লাহ এর আগেও একাধিকবার হামলা চালিয়েছে।
নতুন করে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরাইলের ওই ঘাঁটির ভেতর সরাসরি আঘাত হানতে দেখা যায়। এবারই প্রথম হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে চালানো হামলার এমন ভিডিও প্রকাশ করল।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে লড়াই শুরু হয়। এর পরের দিন থেকে ইসরাইলের বিভিন্ন অবৈধ বসতিতে বিক্ষিপ্ত হামলা চালানো শুরু করে হিজবুল্লাহ। যা এখন পর্যন্ত চলছে।
লড়াইয়ের শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে পূর্ণ যুদ্ধে জড়াবে। কিন্তু সেই পথে না গিয়ে ইসরাইলি সেনাদের ব্যস্ত রাখতে প্রতিদিনই বিক্ষিপ্ত হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা।