চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে উপজেলা বিএনপি আয়োজিত সভায় যোগদান শেষে ঢাকায় ফেরার পথে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জািতক বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে বহনকারী প্রাইভেটকারকে ধাওয়া করেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
৮ এপ্রিল শনিবার বিকেল ৫টার দিকে সরাইল উপজেলা সদরের উচালিয়াপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। তবে, পুলিশী তৎপরতায় অল্পের জন্যে হামলার হাত থেকে বেঁচে যান তিনি।
এর আগে দুপুরে আশুগঞ্জে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচীতে যোগদান শেষে সরাইল উপজেলা সদরের গরুর বাজার এলাকায় সরাইল উপজেলা বিএনপি আয়োজিত অবস্থান সভায় যোগ দেন তিনি।
সরাইলের সভায় ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সম্প্রতি সরাইলে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, সরাইলের মানুষ আপনাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আগামী দিনেও আপনাদেরকে একইভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, সরাইলের মাটি বিএনপির ঘাঁটি, তারেক রহমানের ঘাঁটি, বেগম জিয়ার ঘাঁটি। সরাইলের মানুষকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবেনা।
এদিকে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সরাইলে আসার খবর পেয়ে সরাইল উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উচালিয়াপাড়া মোড়ে জড়ো হয়। পরে তারা প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সভা শেষে পুলিশী প্রহরায় ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার গাড়িটি উচালিয়া পাড়া মোড়ে পৌছামাত্র ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গাড়িটিকে ধাওয়া করেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনে গাড়ীটিকে নিরাপদে স্থান ত্যাগ করার সুযোগ করে দেন।
এ সময় সরাইল উপজেলা ছাত্র ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ শরিফ উদ্দিন বলেন, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সরাইল-আশুগঞ্জের কেউ নন। তিনি এই এলাকায় বহিরাগত। তিনি প্রায়ই সরাইল এলাকার এসে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেন। পাশাপাশি সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে নিয়ে কটুক্তি করেন। তার প্রতিবাদে আমরা তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছি। আগামীদিনেও একইভাবে তার মিথ্যাচারকে প্রতিহত করা হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে নিখোঁজের তিন দিন পর তিতাস নদী থেকে রহমত আলী (৬৯) নামের এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আজ ১৭ জানুয়ারি বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরে তিতাস নদীর সেতু এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রহমত আলী উপজেলার আইড়ল গ্রামের মৃত জহের আলীর ছেলে।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম জানান, রহমত আলী বাংলাদেশ ব্যাংকের কেয়ারটেকার পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। তার ছেলেও একই পদে চট্টগ্রামে চাকরি করেন। তিনি চট্টগ্রামে ছেলের কাছে থাকতেন। সম্প্রতি তিনি উপজেলার দেওড়া গ্রামে তার মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রহমত আলী মসজিদে নামাজে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি। এই ঘটনায় তার মেয়ে একটি জিডি করেছিলেন। বুধবার তার মরদেহ পাওয়া গেছে।
তিনি আরো জানান, মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ইতিপূর্বে তিনি তিনবার ষ্ট্রোক করে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্যে পাঠানো হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইল উপজেলার রাজাবাড়িয়াকান্দী এলাকায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় এক মোটর সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।
৮ মার্চ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত আ. রহমান মিঠুন হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার মির্জাপুর এলাকার আ. জলিল ব্যাপারীর ছেলে। এ ঘটনায় তার অপর ভাই মো. লিটন মিয়া আহত হয়েছেন।
সরাইল খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সন্ধ্যার দিকে উপজেলার শাহবাজপুর বড় ব্রিজের কাছে রাজাবাড়িয়াকান্দী এলাকায় একটি প্রাইভেটকার মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে মোটর সাইকেলে থাকা দুই ভাই ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আহত দু’জনতে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মিঠুন নামে একজনের মৃত্যু হয়। আরেকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে পাঠানো হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের (আসন নং-৩১২) সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদের গত ১৯ জুন জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে আজ রোববার সরাইলে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে নাগরিক সমাজের ব্যানারে আওয়ামীলীগের সাবেক নেতারা। পাশাপাশি জাতীয় সংসদ থেকে উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদ এমপিকে অপসারনের দাবি জানান।
আজ ৯ জুলাই রবিবার সকালে সরাইল হাসপাতাল মোড় থেকে উপজেলা চত্বর পর্যন্ত দীর্ঘ কিলোমিটার মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন চলাকালে প্রায় ১ ঘন্টা ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
মানববন্ধন শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সরাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ ইসমত আলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোঃ আনোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল জব্বার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মাহফুজ আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফেজুল আসাদ সিজার প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, একটি কুচক্রী মহল নেতা হওয়ার জন্য উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদের স্বামী এ.কে.এম ইকবাল আজাদকে হত্যা করেছে। ওই মহলটি ইকবাল আজাদ হত্যা মামলায় নির্দোষ ব্যক্তিদের আসামী করে উপজেলা আওয়ামীলীগকে নেতৃত্ব শুন্য করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা প্রকৃত খুনিদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। আর উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদ এমপি সংসদে দাঁড়িয়ে তার স্বামী হত্যা ঘটনায় নিয়মিত মিথ্যাচার করছেন।
বক্তারা বলেন, কতিপয় দুস্কৃতকারী ইকবাল আজাদকে হত্যা করেছেন। হত্যাকান্ড সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা। অথচ ৮জন মুক্তিযোদ্ধাসহ আমাদেরকে আসামী দিয়ে হয়রানি করছে।
বক্তারা বলেন, গত ১৯ জুন উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদ এমপি জাতীয় সংসদে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।
বক্তারা চ্যালেঞ্জ করে বলেন, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদ এমপির শ্বশুর আবদুল খালেককে (তৎকালীন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান) হত্যা করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁর ভাসুর হুমায়ূন আজাদ মারা গেছেন সড়ক দুর্ঘটনায়।
বক্তারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার পুনরায় তদন্ত দাবি করে বলেন, প্রকৃত দোষীদের সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে সাপ্লিমেন্টারি অভিযোগপত্র দাখিল করতে হবে। পাশাপাশি উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম প্রকাশ শিউলী আজাদ এমপিকে জাতীয় সংসদ থেকে অপসারনের দাবি জানান বক্তারা। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেন।
উল্লেখ্য, দলীয় কোন্দলের জেরে ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর সরাইল উপজেলা সদরে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন সিনিয়র নহ-সভাপতি একেএম ইশবাল আজাদ। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আজাদ উপজেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিক উদ্দিন ঠাকুরসহ দলীয় ২১ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে লাখ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। কোনোরকম সরকারি ইজারা ছাড়াই প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে প্রায় এক মাস ধরে চলছে বালু তোলার মহোৎসব। কিন্তু নীরব ভূমিকায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় ছয়টি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের কাজ।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা অবৈধভাবে কাজটি করে যাচ্ছেন। এতে পানির প্রবাহে গতি পরিবর্তন হওয়ায় নদীর পাড় ভেঙে এলাকার ফসলি জমিসহ বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। তবে বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভৈরবের সাদেকপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর গ্রামের মেঘনা নদীর অংশ থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নাম করে মাসখানেক ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা অংশ থেকেও নিয়মিত বালু তোলা হয়। ফলে এর প্রভাব পড়ছে উপজেলার ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের ওপর।
জানা গেছে, এ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ভৈরব পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোশারফ হোসেন মিন্টু ও সেখানকার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন মুসা। যদিও বালু উত্তোলনের জন্য তাদের কাছে কোনো ধরনের অনুমতি নেই। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর মাঝখানে ও কূল ঘেঁষে ছয়টি ড্রেজার মেশিন বসানো। এর প্রতিটি মেশিনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একেকটি বাল্কহেড। প্রতিটি বোটে ১২/১৩ জন লোকের পাহারা। বেলা ১২টার দিকে দেখা গেল মেন্দিপুর এলাকার মেঘনা নদীর কূল ঘেঁষে ছয়টি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে দেদারচ্ছে তোলা হচ্ছে বালু। সেই বালু বাল্ডহেডের মাধ্যমে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সময় সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে তারা নড়েচড়ে বসে। ছবি তুললে তাদের অনেককেই ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের পিছু নিয়ে ধাওয়া করতে থাকে। তারা তাদের স্পিডবোট দিয়ে সাংবাদিকদের স্পিডবোটকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরক্ষণেই প্রভাবশালী মহলটি সাময়িক সময়ের জন্য বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিনগুলো বন্ধ করে দেয়।
সরাইল উপজেলার কয়েকটি গ্রামের একাধিক গ্রামবাসী বালু উত্তোলনের কারণে দুর্দশার কথা জানিয়ে বলেন, এই অবৈধ বালু উত্তোলন আমাদের সর্বস্বান্ত করে ছাড়বে। আমাদের গ্রাম নদী গ্রাস করে নিচ্ছে।
প্রবীণ বাসিন্দা নিজাম মিয়া বলেন, আমার তিন কানি জমি ছিল। এর মধ্যে দুই কানি জমির মাটি ভেঙে নদীতে চলে গেছে। আমি ছাড়াও অন্যান্য মানুষের ফসলি জমিও চলে গেছে। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের জীবনটা বাঁচব।
আজব গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা কাজী লিয়াকত মিয়া বলেন, নদীটা অনেক দূরে ছিল। আমরা নদীর অনেক দূরে গিয়ে গবাদি পশু গোসল করতাম। ড্রেজারে বালু তোলার ফলে ধীরে ধীরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় আধা মাইল পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন হুমকির মুখে আমাদের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে।
নদীর পাড়েই দু’তলা ভবনের মালিক জুনায়েদ মিয়া বলেন, প্রতিদিন একটু একটু করে পাড় ভেঙে চলছে। মূলত অবাধে বালু তোলার কারণে সব সময় আতঙ্কে থাকি। কখন জানে আমাদের ভবন পানিতে চলে যায়। প্রভাবশালী চক্রটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাধে বালু উত্তোলন করছে।
সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. আবুল বাশার বলেন, ‘ভৈরবের মুসা মিয়ার (মোশারফ হোসেন) নেতৃত্বে অনুমতি ছাড়াই এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা হলে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে। ’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন মিন্টু মোবাইল ফোন বলেন, ‘বৈশাখ মাস পর্যন্ত আমি নদী ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করেছি। আমার সঙ্গে ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকজনও ব্যবসায়িক অংশীদার ছিল। এখন কে বা কারা বালু তুলছে জানি না। ’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ড্রেজারগুলো বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বালু তোলে। আমার কাজের সময় ব্যবহার করা একই রকম ড্রেজার যদি তুলে থাকে তাহলে তো আমার কিছুর করার নেই। ’
এ বিষয়ে ভৈরবের আওয়ামী লীগ নেতা মো. মুসার মোবাইল ফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদেকুর রহমান সবুজ বলেন, ‘নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। মন্ত্রণালয় থেকেও এই বিষয়ে আমাদের চিঠি দিয়েছে। শুনেছি কখনো তারা মেন্দিপুর আবার কখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের অংশে বালু তুলে। আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পেরও কাজ শেষ। বালু উত্তোলনকারীরা আসলে আমাদের কথা বলে সুবিধা নিতে চায়। যারা বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা জয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমানের সঙ্গে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারিভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বর্তমানে বন্ধ আছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ভাঙন রোধে সরাইল, পানিশ্বরসহ বিভিন্ন ভাঙনপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে সম্ভাব্যতা প্রকল্পের কাজ চলছে। সম্ভাব্যতা প্রকল্পের সুপারিশের আলোকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে ওই অঞ্চলগুলোতে স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
স্টাফ রিপোর্টার :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচন আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। গত ১৬ জানুয়ারি সোমবার এ নির্বাচনে অংশ নেওয়া পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক পরিবর্তন করা হয়েছে।
উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর প্রতীক পরিবর্তন করে তাদের মধ্যে নতুন প্রতীক বরাদ্দ দেন। এর মধ্যে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ‘ডাব’ প্রতীক পরিবর্তন করে ‘কলার ছড়ি’ প্রতীক ও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত নেতা অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধার ‘সিংহ’ প্রতীক পরির্বতন করে ‘আপেল’ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর মধ্যে বরাদ্দ করা ‘ডাব’ ও ‘সিংহ’ প্রতীক দেশের দুটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক। ‘ডাব’ প্রতীক হচ্ছে বাংলাদেশ কংগ্রেস নামে একটি রাজনৈতিক দলের। যার নিবন্ধন হয়েছে ২০১৯ সালের ৫ মে। এই দলের বর্তমান চেয়ারম্যান হচ্ছেন অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন এবং মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম।
আর ‘সিংহ’ প্রতীক হচ্ছে জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) নামে একটি দলের। যার নিবন্ধন হয়েছে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। এই দলের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হুমায়ূন পারভেজ খান। এর আগে সোমবার উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া ৫ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে ‘ডাব’ প্রতীক, স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধাকে ‘সিংহ’ প্রতীক, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদকে ‘মটর গাড়ি (কার)’ প্রতীক, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাসানী ‘লাঙ্গল’ প্রতীক ও জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল ‘গোলাপ’ ফুল প্রতীক পান।
এ ব্যাপারে উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম জানান, ডাব ও সিংহ প্রতীক হচ্ছে দেশের দুটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক। জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের দৃষ্টিগোচর না হওয়ায় ডাব ও সিংহ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে, মঙ্গলবার বরাদ্দকৃত প্রতীক দুটি সংশোধন করে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে ‘কলার ছড়ি’ প্রতীক ও জিয়াউল হক মৃধাকে ‘আপেল’ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা উভয়ই বিষয়টি মেনে নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ছিলেন। গত ১১ ডিসেম্বর তিনি জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। পরে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির চেয়ারপার্সনের পদ থেকে পদত্যাগ করে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
উপনির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো প্রার্থী দেয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। পরে দলীয় সিদ্ধান্তে তারা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।