চলারপথে রিপোর্ট :
নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথ চলা। আজ শুক্রবার পহেলা বৈশাখ। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৯ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হবে নতুন বছর ১৪৩০। আজ সকালে সোনালি সূর্য রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে, বাঙালি জাতি আজ এক কাতারে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে বাঙালির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন এটি। আবহমানকাল বাংলার গ্রামীণ জনপদে উদযাপিত হওয়া নববর্ষের আয়োজন এখন ছুঁয়েছে নগর জীবনে এবং নতুন মাত্রায়। সর্বত্র উদযাপিত হচ্ছে বাংলার উৎসব, উচ্চারিত হচ্ছে বাঙালিয়ানার জয়গান। পহেলা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় জীবনে পরম আনন্দের দিন। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন আজ। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদ থেকে সকাল ৯টায় বের হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা নববর্ষকে আবাহন জানিয়েছিলেন এভাবেই। নববর্ষ বিদায়ী বছরের গস্নানি মুছে দিয়ে বাঙালি জীবনে ওড়ায় নতুনের কেতন, চেতনায় বাজায়
মহামিলনের সুর। সব ভেদাভেদ ভুলে সব বাঙালিকে দাঁড় করায় এক সম্প্রীতির মোহনায়। নববর্ষের আগমনী ধ্বনি শুনলেই সমগ্রজাতি নতুনের আহ্বানে জেগে ওঠে। গ্রামের জীর্ণ-কুটির হতে বিলাসবহুল ভবন কিংবা দূর প্রবাসের মেগাসিটি-সর্বত্রই প্রবাহিত হয় আনন্দের ফলগুধারা। পহেলা বৈশাখ উদযাপন এখন বাংলাদেশের গন্ডি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। প্রতিটি বাঙালি দিনটিকে উদযাপন করে উৎসবের আমেজে। বাংলা নববর্ষে মহামিলনের আনন্দ উৎসব থেকেই বাঙালি ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্র করার আর কুসংস্কার ও কূপমন্ডূকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা পায়।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এম আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ আমাদেরকে উদার হতে শিক্ষা দেয় এবং জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বমানবের সঙ্গে মিশে যাওয়ার শক্তি জোগায়। এই উদারনৈতিক চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আদর্শ এবং রাষ্ট্রভাষা চেতনার বহ্নিশিখা অন্তরে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হোক আজকের দিনে সকলের অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘এই শুভ নববর্ষের প্রাক্কালে আমাদের প্রার্থনা এই যে, আমরা যেন সমস্ত অন্ধকার ও বাধা-বিপত্তি দূর করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারি।’
কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবে। নতুন পোশাক পরে সবাই মিলিত হন সাংস্কৃতিক আয়োজনে। ছায়ানট রমনার বটমূলে বর্ষবরণের যে প্রভাতী অনুষ্ঠান শুরু করেছিল তা আজ বিশ্ব জুড়ে বর্ষবরণের প্রতীক হয়ে উঠেছে। শহরে বৈশাখ যে ব্যাপক উৎসবের উপলক্ষ নিয়ে আসে গ্রামীণ জীবনে তার আমেজ ভিন্ন। নগরজীবনে এই দিন যেমন পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়, তেমনি যুক্ত হয় নতুন কাপড় পরার আয়োজনও। গ্রামবাংলায় সকালবেলা দই-চিড়া দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করার রেওয়াজ আছে। ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে হালখাতার আনুষ্ঠানিকতায় মিষ্টি দিয়ে তাদের ক্রেতাদের স্বাগত জানান।
কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে চৈত্র সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় বিজু উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সব মানুষ, সব বাঙালি সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সমগ্র জাতি একই হৃদয়াবেগে একটি মোহনায় মিলিত হয়ে পালন করে এই সর্বজনীন উৎসব। চিরায়ত বাঙালিত্বের অহংকার আর সংস্কৃতির উদার আহ্বানে জাগরুক হয়ে নাচে-গানে, গল্পে-আড্ডায়, আহারে-বিহারে চলে নতুন বছরকে বরণ করার পালা। বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালিদের জীবনে সবচেয়ে বড় সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এর মাধ্যমে জাতি তার স্বকীয়তা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার শক্তি সঞ্চয় করে, সচেষ্ট হয় আত্মপরিচয় ও শিকড়ের সন্ধানে। নববর্ষই বাঙালি জাতিকে ইস্পাত-কঠিন ঐক্যে আবদ্ধ করেছিল, শক্তি ও সাহসের সঞ্চার করে স্বাধিকার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জুগিয়েছিল।
১৪২৯-এর আনন্দ বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। ১৪৩০ সনকে বরণ করতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে ঘরোয়া পরিবেশে মেতে ওঠা বাঙালি গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। আবহমান বাংলার চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনার মূলে রয়েছে এক অসাধারণ অনুষঙ্গ; সেটি হলো বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠানমালা আমাদের সেই ঐতিহাসিক চেতনাকে প্রোজ্জ্বল করে। স্বদেশ মানস রচনায় বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য সর্বোপরি ইতিহাসের আলোকে রক্ষণশীল ও পশ্চাৎপদ চিন্তা-চেতনাকে পরিহার করে আধুনিক ও প্রাগ্রসর অভিধায় জাতিসত্তাকে যথাযথ প্রতিবাদ করার সম্মিলিত প্রতিশ্রম্নতি বাংলা নববর্ষকে দান করেছে অনবদ্য মাঙ্গলিক যাত্রাপথ।
বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য হলো বাংলা বর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। আর বাঙালিদের কাছে বাংলা নববর্ষ বরণ হলো একটি প্রাণের উৎসব। বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো মঙ্গলশোভাযাত্রা। ইউনেস্কো বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বাস সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রদান করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করে নববর্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সাংস্কৃতিক সৌধের ভিত আরও সুদৃঢ় করুক, নববর্ষের উদার আলোয় ও মঙ্গলবার্তায় জাতির ভাগ্যাকাশের সব অন্ধকার দূরীভূত হোক, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটুক, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, এটাই হোক নতুন বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ এর প্রত্যাশা।
নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার ও সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। বাংলা বর্ষবরণ বাংলাদেশের একটি সার্বজনীন উৎসব। নতুন বছরের প্রথম দিন সবাই যার যার সাধ্যমতো উৎযাপনের মাধ্যমে দিনটি পালন করেন। বর্ষবরণ যে কয়টি জিনিস এখন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পান্তা ইলিশ বা ইলিশ মাছ খাওয়া। বাঙালির বর্ষবরণ ইলিশ ছাড়া হয় না। এ ছাড়া কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোনো খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। মেলাতে থাকে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানা রকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওযার ব্যবস্থা থাকে। ইলিশ মাছের সঙ্গে পান্তা ভাত ও শুঁটকি মাছ, আচার, ডাল, কাঁচা লঙ্কা, এবং পিঁয়াজ কুঁচির সংমিশ্রণের এই খাদ্যটি পয়লা বৈশাখের জনপ্রিয় খাদ্য। এই দিনের একটি পুরানো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। এর মধ্যে থাকে নৌকা বাইচ, লাঠিখেলা ও কুস্তি। হাল আমলে ক্রিকেট ও ফুটবল যুক্ত হচ্ছে।
দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সঙ্গে পালিত হয় সর্বজনীন উৎসব। বিশ্বের সব প্রান্তের সব বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেন, ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সব দুঃখ-গস্নানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেন। এদিনে তারা হালখাতা করে থাকেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
বাংলা দিনপঞ্জির সঙ্গে হিজরি ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরি সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির হিসাবে চলে। এ কারণে হিজরি সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে। পহেলা বৈশাখ ভোর থেকে শুরু হয়। ভারতবর্ষে মোঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সঙ্গে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো।
হালখাতা বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সব স্থানেই পুরানো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন লাল রংঙের হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকেন। এই প্রথাটি এখনো অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষ করে স্বর্ণের দোকানে। ১৯৬০-১৯৭০ দশকে পুরান ঢাকায় হিন্দু ব্যবসায়ী বিশেষ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে হালখাতা প্রথা অনুসরণের প্রবণতা ছিল। এমনকি বেশ ভাবগাম্ভীযের্র সঙ্গেই পালিত হতো অসাম্প্রদায়িক এই আচার-অনুষ্ঠানটি। হালনাগাদের খাতাটি ছিল লাল রঙের লাল সালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো। দুই-তিন ভাঁজ করে তার উপর ফিতা দিয়ে বেঁধে রেখে হাত বিনিময় হতো। এই খাতাটিই ছিল বিগত বছরের যাবতীয় হিসাবের বিবরণী নথি।
আবহমান বাংলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন যশোরে সর্বপ্রথম নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ নানা শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো শোভাযাত্রাটি দেশ জুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। অতঃপর এর আদলেই ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত হয় আরও একটি শোভাযাত্রা। তখন প্রেক্ষাপট ছিল ১৯৮০’র দশকের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এক হওয়া এবং শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনা। সেই আনন্দ শোভাযাত্রাটি সকল স্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। সেদিন থেকে প্রতি বছর বৈশাখের প্রথম সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই আনন্দ শোভাযাত্রা অব্যাহত রাখে। বিশালাকার পুতুল, বিভিন্ন পশুপাখির বিচিত্র মুখোশ ও সাজসজ্জার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্যের মাধ্যমে জাকজমক করে তোলা হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। প্রথম দিকে চারুকলার এই শোভাযাত্রাটির নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সাল থেকে এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। অশুভ মানুষের কথা ভেবে মুখোশ করা হয় শোভাযাত্রায়।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার পহেলা বৈশাখকে জাতীয় পার্বণ হিসেবে ঘোষণা করেন। স্বাধিকার আন্দোলনের সময় ছায়ানটের গানে গানে যে প্রতিবাদের ধারা সৃষ্টি করেছিল তা মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণার পথে বড় শক্তি যুগিয়েছে। ২০০১ সালে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের পরে যেমন মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছায়ানট যেন মানবতার পক্ষে লড়াইয়ে তাদের প্রত্যয়ের কথাই ব্যক্ত করছে বারবার। আজ সেই আলোড়ন পরিণত হয়েছে প্রতিটি বাঙালির প্রাণের উৎসবে।
ডেস্ক রিপোর্ট :
নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদে কয়লাবোঝাই একটি লাইটার জাহাজ ডুবে গেছে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টায় তলা ফেটে এমভি আর রাজ্জাক নামে জাহাজটি ডুবে যায়। ওই জাহাজে ৮২০ টন কয়লা ছিল, যার আনুমানিক মূল্য দেড় কোটি টাকা।
এমভি আর রাজ্জাকের মাস্টার মুরাদ হোসেন জানান, নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী মেসার্স শেখ ব্রাদার্সের আমদানি করা ৮২০ টন কয়লা হারবাড়িয়া থেকে রওনা হয়ে গত ১০ ডিসেম্বর নওয়াপাড়ায় সরদার মিল ঘাটে নোঙর করে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জাহাজটি ঘাটে ভেড়ানোর সময় তলা ফেটে জাহাজে পানি ঢুকে তলিয়ে যায়। জাহাজের কয়লা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় অভয়নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হচ্ছে।
শেখ ব্রাদার্সের পরিচালক শেখ শফিয়ার রহমান বলেন, নওয়াপাড়া ভৈরব নদে কয়লাবোঝাই লাইটার জাহাজের তলা ফেটে পানি ঢুকেছে। জাহাজটি উদ্ধারে কাজ চলছে।
অনলাইন ডেস্ক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ৬২টি আসনে বিজয়ী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সংসদে ভূমিকা কী হবে, এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। তবে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতারা দলীয় পদ-পদবি হারাতে চান না। এ কারণে তাঁরা সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি নির্দেশনা দিলে বেশির ভাগ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন।
অন্যথায় স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা রাখবেন।
জাতীয় সংসদের চিঠির অপেক্ষায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু স্বতন্ত্রদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়ায় ইসির পাঠানো চিঠির জবাব দিতে পারেনি সংসদ সচিবালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে বিজয়ী হলেও দ্বাদশ সংসদেও বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকছে, এটা অনেকটা নিশ্চিত।
সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তেমনটিই জানিয়েছেন। ফলে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা থাকছেন না। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রদের ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে বেশির ভাগ সংসদ সদস্য সরকারি দলে যোগ দিতে আগ্রহী।
কারণ এবারের নির্বাচনে বিজয়ী ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের ৫৯ জন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দুজন বাদে সবার দলীয় পদ-পদবি রয়েছে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দলীয় প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁদের আশঙ্কা, সংসদে বিরোধী দলের সঙ্গে থাকলে স্থানীয় রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হতে পারে। সরকারি দলের সংসদ সদস্যের মতো সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।
আবার আগামী দিনে দলীয় মনোনয়ন পেতে সমস্যা হতে পারে।
জানা গেছে, একই কারণে দলের পদ-পদবি না থাকলেও সরকারের সঙ্গে থাকতে চান গাইবান্ধা-১ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ নাহিদ নিগার। জাপার সঙ্গে সমঝোতার কারণে ওই আসনের নৌকার প্রার্থী আফরোজা বারী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় তাঁর মেয়ে নাহিদ নিগার স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। আফরোজা বারী সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর পিরোজপুর-৩ আসনে জয়ী শামীম শাহনেওয়াজেরও আওয়ামী লীগে পদ নেই। তাঁর ভাই উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুর রহমান মনোনয়ন পেয়েছিলেন। জাপাকে আসন ছাড়ায় নৌকা হারান। শামীম শাহনেওয়াজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন নীলফামারী-৪ আসনে জেলা জাপার সহসভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার হওয়া সিদ্দিকুল আলম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে জয়ী হয়েছেন নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এ কে একরামুজ্জামান। এ ছাড়া সিলেট-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছেন ফুলতলীর হুজুরের ছেলে ও অনিবন্ধিত দল আঞ্জুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মোহাম্মদ হুছামউদ্দিন চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি না করলেও সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র এমপিদের স্বতন্ত্র থাকাই ভালো।
বরগুনা-১ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, স্বতন্ত্র হিসেবে জয়ী প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের। কিন্তু দল থেকে এখনো কোনো সিগন্যাল পাইনি।
যেকোনোভাবেই সরকার ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে চান হবিগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।
রাজশাহী-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। শেখ হাসিনা আমার নেত্রী। তাই দলের সিদ্ধান্তের ওপর আমার সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে।’
সরকারে থাকতে আগ্রহী বরিশাল-৪ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে সংসদে কাজ করব।
কুষ্টিয়া-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল আরেফিন বলেন, ‘স্বতন্ত্র এমপিদের নিয়ে জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে আমরা আওয়ামী লীগের বাইরে নই।’ সরকারে থাকতে চান ময়মনসিংহ-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান সুমন।
রংপুর-৫ আসনে জয়ী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য জাকির হোসেন সরকার বলেন, দীর্ঘ ৩৭ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগে থাকতে চাই।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী ১৬ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য দশম সংসদে আওয়ামী লীগ নেতা হাজি সেলিমের নেতৃত্বে জোট করেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের পদে থাকলেও দলটির সংসদীয় দলে যোগ দিতে পারেননি। যদিও পরবর্তী নির্বাচনী দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এবারও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের জোট করে বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে জোটবদ্ধ হয়ে তাঁরা সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন।
সংরক্ষিত নারী নির্বাচনের বিষয়ে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের চিঠির অপেক্ষায় আছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির বৈঠকে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে। সাধারণ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা এই নির্বাচনের ভোটার। যদিও সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, কোন দল কতটি আসন পাবে, সে বিষয়ে জানানোর জন্য জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। চিঠির জবাব এলে সংসদের সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হবে। এটার সময় আছে, আইন অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে এই নির্বাচন করতে হবে। আশা করছি, এই সপ্তাহে অথবা আগামী সপ্তাহে সংসদ সচিবালয়ের চিঠির জবাব পাব।
স্বতন্ত্র এমপিদের অবস্থান জানতে চেয়ে ইসির চিঠি
স্বতন্ত্র এমপিরা রাজনৈতিক দলে বা জোটে যোগদান করতে চাইলে তা আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে। এ বিষয়ে মতামত জানানোর জন্য সংসদ সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল মঙ্গলবার ইসি সচিব জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে দল ও জোট গঠনের বিষয়টি ইসিকে জানাতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কোনো নির্দলীয় সংসদ সদস্য আপনার দলে বা জোটে যোগদান করেছেন কি না, অথবা সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে অন্য কোনো দলের সঙ্গে আপনার দলে জোট গঠিত হয়েছে কি না; তা ৩১ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা-৪ আসনের স্বতন্ত্র এমপি আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আমি ১৯৭৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একটা প্রেক্ষাপটের কারণে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছি। এখন সংসদে আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে যোগদান করব।’
চলারপথে রিপোর্ট :
বরিশালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাকে দেখে বাড়ি ফেরার পথে চলন্ত থ্রি-হুইলারের ওপর গাছ পড়ে মাদ্রাসা শিক্ষক মনিরুল ইসলামের (৫০) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মাহিন্দ্রা চালক মাহাবুবসহ চারজন আহত হয়েছেন।
বরিশাল সদর উপজেলার বরিশাল-বুখাইনগর সড়কের চাঁদেরহাট এলাকায় সোমবার গভীর রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত দুইজনকে বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন আজ ৮ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত মনিরুল মনিরুল ইসলাম চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার গণিতের শিক্ষক ছিলেন। তার স্থায়ী বাড়ি বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলায়। তিনি চরমোনাই এলাকায় অবস্থান করে চাকরি করতেন।
আহতরা হলেন- মাহিন্দ্রা চালক মাহাবুব, চরমোনাই মাদ্রাসার ছাত্র আল আমিন, সায়েম হোসেন ও ইমাম হোসেন। তারা সবাই চরমোনাই ইউনিয়নের বাসিন্দা।
চরমোনাই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সৈয়দ শীষ মুহাম্মদ মামুন প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানান, বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীর অপর প্রান্ত বেলতলা খেয়াঘাট থেকে যাত্রীবাহী থ্রি-হুইলার মাহিন্দ্রায় ওঠেন মনিরুল। তিনি মাহিন্দ্রাযোগে চরমোনাই মাদ্রাসার দিকে যাওয়ার পথে চাঁদের হাট এলাকায় পৌঁছলে গাছের গোড়ার মাটি নরম হয়ে বিশাল একটি রেইনট্রি গাছ গাড়ির ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মাদ্রাসাশিক্ষক মনিরুল। স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করেন। পরে গুরুতর আহত দুইজনকে বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত শিক্ষক মনিরুল ইসলাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়ের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়ে ফিরছিলেন।
ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, মাদ্রাসাশিক্ষকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। পরে চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল আব্দুল কুদ্দুসের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় রবিউল হোসেন (১৭) নামের এক কিশোর নিহত হয়েছে। কানে হেডফোন গুঁজে রেললাইনে হাঁটার সময় গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার ফৌজদারহাট রেল স্টেশনের সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রবিউল হাসান বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার কাউলিয়া বাজার গ্রামের মাহবুবুর আলমের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, রবিউল মামার বাসায় বেড়াতে এসে রাতে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনে রেললাইনে হাঁটছিল। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে সে নিহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফৌজদারহাট রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. ফারুক বলেন, ট্রেনের ধাক্কায় এক কিশোর নিহত হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
২১ জুলাই শুক্রবার একাদশ দিনের মতো আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায় করতে যেয়ে জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে আমি আপনাদের পাশে রয়েছি। প্রয়োজনে দাবি আদায় করতে গিয়ে রক্ত দেব, জীবন দেব।
আন্দোলন করতে যেয়ে মারা গেলে আপনারা আমার লাশটা বাড়ির স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেবেন। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) এর সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া এসব কথা বলেন।
সাড়ে পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর দাবি আদায়ে টানা ১১ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকা ‘শিক্ষা জাতীয়করণ চাই’ মিছিলে স্লোগানে মুখরিত। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে তাদের এই আন্দোলন।
সারা দেশ থেকে আসা হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী অনেকটা মানবেতরভাবে এখানে রাতদিন অবস্থান করছেন। রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে খেয়ে না খেয়ে জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগররা দাবি আদায়ের জন্য রাজপথকে বেছে নিয়েছেন।
আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, গত ১১ জুলাই থেকে তাদের এই কর্মসূচি চলছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝোলানোর কর্মসূচি চলছে ১৬ জুলাই থেকে।
আন্দোলনের সপ্তম ও নবম দিনে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলোচনার ডাক পেয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং ১৯ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু এসব বৈঠক থেকে তারা দাবি পূরণে কার্যকর কোনো আশ্বাস পাননি। তাই তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান। তারা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বললেই তাদের দাবি আদায় হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. বজলুর রহমান মিয়া বলেন, আমরা আন্দোলনে অব্যাহত রয়েছি। শেষ পর্যন্ত যদি আমাদের হতাশ করা হয় তাহলে আমরণ অনশনে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।’
শুক্রবার বিকেলে সমাবেশে বক্তৃতা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে বিটিএ’র সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ওপর শিক্ষক সমাজের কোনোদিনই আস্থা ছিল না। তিনি শিক্ষকদের মন্ত্রী নন। এ কারণেই এমন কথা বলতে পেরেছেন। শিক্ষকরা সাড়ে চার বছরে এই প্রথম শিক্ষামন্ত্রীর দেখা পেয়েছেন। তিনি শিক্ষকদের নিয়ে তাদের দাবির বিষয়ে বৈঠক করেছেন। কমিটি গঠনের কথাও বলেছেন। অথচ কমিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধি রাখার আগ্রহ নেই। আসলে তিনি শিক্ষকদের কষ্ট বোঝেন না। তাই শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে শিক্ষকরাও সন্তুষ্ট হতে পারেনি। কোনো বাছবিচার ছাড়াই বলে দিলেন, নির্বাচনের আগে জাতীয়করণ সম্ভব নয়। এমনকি এও বলেছেন, কিসের ভিত্তিতে জাতীয়করণ করা হবে, সেটা পর্যালোচনা করতে হবে। আমাদের সাফ কথা, ৬ শ স্কুল-কলেজ এই সরকার যার ভিত্তিতে জাতীয়করণ করেছে, সেটিই হবে এমপিওভুক্ত সাড়ে ৯ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের মানদণ্ড।
সমাবেশস্থলে বক্তৃতা শেষে শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, চাকরিতে যোগদান থেকে শুরু করে অবসর জীবন পর্যন্ত পদে পদে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। একজন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষক চাকরির শুরুতে ১২ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পান। কিন্তু সরকারি স্কুলে দেওয়া হয় ১৬ হাজার। তারা মূল বেতনের শতভাগ উৎসব-ভাতা (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায়) বা বোনাস পেলেও বেসরকারিতে দেওয়া হয় মাত্র ২৫ শতাংশ। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশে সব চাকরিজীবী এমনকি এনজিও কর্মীদেরও শতভাগ উৎসব-ভাতা দেওয়া হয়। চিকিৎসা ভাতা এক মাসে ৫০০ টাকা পান তারা। যেখানে একজন ডাক্তারের ভিজিট সর্বনিম্ন ৬০০, ৮০০ বা ১০০০ টাকা, সেখানে একটি পরিবারকে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি শিক্ষকদের দেওয়া হয় দেড় হাজার। আবার বাড়িভাড়া বাবদ এক মাসে এক হাজার টাকা পান। কিন্তু সরকারি শিক্ষকদের মূল বেতনের ৪৫-৫০ শতাংশ দেওয়া হয়।
সমাবেশে শিক্ষক নেতারা বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আরো অনেক ধরনের বৈষম্যের মধ্যে আছেন। তাদের কোনো বদলি নেই। অনেকে পরিবার এবং বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বহু দূরে চাকরি করছেন বছরের পর বছর। কিন্তু বদলি হয়ে নিজ এলাকায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এককালীন অবসর-ভাতা দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে চাকরি জীবনে অবসর খাতে ৬ শতাংশ ও কল্যাণ খাতে ৪ শতাংশ মিলিয়ে মোট ১০ শতাংশ বেতন থেকে কেটে রাখা হয়। অথচ অবসরে গেলে এককালীন কিছু টাকা পেতে ৪-৫ বছর লেগে যায়। এই টাকা দেওয়া ছাড়া আর কোনো বেতন-ভাতা দেওয়া হয় না। অনেক শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর সময়মতো অবসরের টাকা না পেয়ে টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারেন না।
অবসরে গিয়ে এসব শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করেন। অনেকে পেনশনের টাকা ভোগ না করেই মারা যান।
শিক্ষকরা আরো জানান, এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ডিসিদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় আন্দোলন করা হয়েছে। কিন্তু সরকার বা ঊর্ধ্বতন কোনো কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের এসব কষ্ট বা দুর্দশার কথা আমলে নেয়নি। তাই এখন লাখ লাখ শিক্ষক বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে প্রেস ক্লাবে জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান করছে। এখন একটাই দাবি জাতীয়করণ। জাতীয়করণ করলে শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি-বেসরকারি কোনো বৈষম্য আর থাকবে না।