চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগরে বিষধর সাপের ছোবলে মিনা বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।
২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সকালে নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের বড়িকান্দি গ্রামে সাপের ছোবলে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
নিহত মিনা ওই গ্রামের মাজু মিয়ার স্ত্রী।
মিনার পারিবার জানান, সকাল ৭টার দিকে নিজ ঘরে ভাতের মিটসেফের ওপর টর্চ লাইট রাখার সময় একটি বিষধর সাপ তার হাতে ছোবল দেয়। টের পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের লোকজন মিনাকে উদ্ধার করে প্রথমে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে বিকেল ৪টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর মিনাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আব্দুর রাজ্জাক সাপের ছোবলে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, খবর পেয়েছি গ্রামবাসী বিষধর সাপটিকে ধরে মেরে ফেলেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর পৌরসভার নারী কাউন্সিলর নিলুফা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মামলা কপিটি ভাইরাল হয়।
উপজেলা মহিলা লীগের নেত্রী সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল গত ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এর ২৫(৩)/২৬(৩)/২৯(২)/৩১/৩৫ ধারায় মামলা করেন। মামলায় আরও ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। বাদীর আইনজীবী স্বরুপ কান্তি নাথ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পৌর এলাকার আলমনগর গ্রামের আবদুল কুদ্দুস মিয়ার স্ত্রী কাউন্সিলর নিলুফা ইয়াসমিনের সঙ্গে একই গ্রামে নসু মিয়ার মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল এর বিরোধ চলে আসছিল। তারই জেরে বিভিন্ন সময় নারী কাউন্সিলর বাদী পুতুলের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমধ্যম ফেসবুকে মিথ্যা, কুৎসিত, অশ্লীল ও মানহানিকর বক্তব্য তুলে ধরতেন ও প্রচার করতেন।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল বলেন, ‘আমি উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। আসন্ন পৌর নির্বাচনে আমি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছি। তাই ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাকে হেয় করতে মিথ্যা ,কুৎসিত, অশ্লীল ও মানহানিকর বক্তব্য ছড়ানো হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে কাউন্সিলর নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তার আইন মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।’
চলারপথে রিপোর্ট :
জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত মেধাবী ছাত্র সাজন সাহা। তিন মাস পর পর শরীরে দিতে হয় রক্ত।
তারপর জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে অসুস্থতা নিয়েও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
সাজন সাহা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং পালপাড়া গ্রামের সঞ্জিত সাহা ও স্মৃতি রাণী সাহার ছেলে।
জানা গেছে, সঞ্জিত সাহা কাজ কারেন খাবার হোটেলে। একদিকে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত অন্যদিকে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সাজন সাহার শরীরে ধরা পড়ে জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়া। গত ২ বছর আগে একমাত্র ছোট বোনটিও মারা যায় শারীরিক অসুস্থতায়। সব মিলিয়ে তার জীবনযুদ্ধ যেন হার মানায় সবকিছুকেই।
কথা হয় জীবন যুদ্ধে লড়াকু সৈনিক সাজন সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, শরীরে যখন রক্ত কমে আসে তখন শরীরজুড়ে জ্বর আসে, মাথা ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল হয়ে ভেঙে আসে। তবু হার মানিনি। রক্ত দিয়ে আবারও নেমে পড়ি ভালো কিছু করার উদ্দেশ্যে। আমার মা আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেন ভাল কিছু করার জন্য। তবে শারীরিক দুর্বলতা আমাকে হার মানাতে না পারলেও দরিদ্রতা আমার এগিয়ে যাওয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। বাবার সামান্য আয় দিয়ে আমার চিকিৎসা আর সংসার চালাতে হিমশিম খায়। আমার ইচ্ছে ছিল আইনজীবী হওয়ার। যেন দরিদ্র মানুষের ন্যায় বিচারে কাজ করে যেতে পারি। তারপরও আমি হতাশ হচ্ছি না। সৃষ্টিকর্তা যখন এইটুকু এগিয়ে নিয়ে এসেছেন, হয়ত তার ইচ্ছাতেই সবাই আমার পাশে থাকবেন। আমার এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করবে।
তিনি আরো বলেন, আমার রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ। স্বেচ্ছাসেবী ব্লাড ফাউন্ডেশন আমার জন্য তিন মাস পর পর রক্তের ব্যবস্থা করে থাকেন। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
সাজনের সহপাঠীরা বলেন, সে একজন মেধাবী ছাত্র। নিয়মিত কলেজ করত। সে অসুস্থ হলেও দৃঢ়তার লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সাজনে সবার জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।
সাজনের মা স্মৃতি রাণী জানান, আমার ছেলে প্রায় ১০ বছর ধরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। আমার ছেলেকে নিয়ে আমি অনেক বড় স্বপ্ন দেখি তবে সাদ আর সাধ্যের ফারাক যে নির্মম বাস্তবতা। অর্থহীন সংসারে এগিয়ে যাওয়া অনেক কষ্ট। আমার ছোট মেয়েটিও দুই বছর আগে মারা গেছে। এখন সাজনই আমার একমাত্র সম্বল। যেহেতু আমার ছেলে অসুস্থ তাই আমি চাই সে একটা ভাল সরকারি চাকরি করুক।
নবীনগর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ এ কে এম রেজাউল করিম জানান, সাজনের কৃতিত্বে আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত। সে কলেজের একজন নিয়মিত ছাত্র। আমরা আশা করি তার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে। আর আমরা নিজস্ব উদ্যোগে তার সহযোগিতায় পাশে থাকব।
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রয়োজনে তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) আরো ১০টি পণ্যকে মান সনদের আওতায় এনেছে। বিএসটিআই’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কাউন্সিলের ৩৭তম সভায় বাধ্যতামূলক মান সনদের তালিকায় ১০টি নতুন পণ্যকে মান সনদের অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোববার রাজধানীর তেজগাঁওস্থ বিএসটিআই’র প্রাধন কার্যালয়ে এই প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কাউন্সিলের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পমন্ত্রী ও বিএসটিআই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। নতুন যে ১০টি পণ্য মান সনদের আওতায় আনা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ডিসপোজেবল ডায়াপারস, ফেসওয়াস, পেট্রোলয়িাম জেলি, রুটি (ফ্ল্যাটব্রেড/ টরটিলা), এ্যারোসলস, গিজার, শেভিং ফোম/জেল, আই কেয়ার, হেয়ার ডাইস লিকুইড ও শু-পলিশিং লিকুইড। বর্তমানে বিএসটিআই’র বাধ্যতামূলক মান সনদের আওতাভুক্ত পণ্যের সংখ্যা ২২৯টি। বিএসটিআই কাউন্সিলের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, দ্বিতীয় ভাইস চেয়ারম্যান শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, এ সভায় শিল্প, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট, তথ্য, কৃষি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, তথ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ টেলিভিশন, কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বিসিএসআইআর, আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক, ইপিবি এবং এমসিসিআই, ক্যাবসহ কাউন্সিলের সদস্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বিএসটিআই’র মহাপরিচালক ও কাউন্সিলের সদস্য সচিব মোঃ আবদুস সাত্তার এ সভা পরিচালনা করেন।
সভাপতির বক্তৃতায় শিল্পমন্ত্রী বলেন, বিএসটিআই সকলের জন্য একটি আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআইকে আরও সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। অভ্যন্তরীণ বাজার এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা এবং মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে হালাল পণ্যের সার্টিফিকেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিএসটিআইকে পণ্যের হালাল সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে গুণগত মান ঠিক রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
জনগণের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রয়োজনে বিএসটিআইকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়ে কাউন্সিলের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ব্যবসায়ীরা করোনা মহামারিকে পূঁজি করে অতিরিক্ত মুনাফা করেছে। তারা পণ্যে ভেজাল দিচ্ছে, সিন্ডিকেট করছে। তিনি বলেন, ১৭ কোটি মানুষকে রক্ষায় বিএসটিআইকে দায়িত্ব নিতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় রেখে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআইকে কাজ করতে হবে।
কাউন্সিল সভার পরে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বিএসটিআই’র ৯১ জন নবনিযুক্ত কর্মকর্তার নিয়োগ, যোগদান এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, বিএসটিআই’র মহাপরিচালক, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকারসহ শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিএসটিআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে পুকুর থেকে শিশু হাজেরার মরদেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টায় রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। শিশুটির মা রুমা বেগম নিজেই তার সন্তানকে মধ্যরাতে পুকুরে ফেলে দেন। পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
আজ ২২ অক্টোবর রবিবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পরই পারিপার্শ্বিক অবস্থায় নিহত শিশুর মা রুমা বেগমকে সন্দেহ হচ্ছিল। তাই আমরা তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রুমা তার সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
সিরাজুল ইসলাম আরো বলেন, শিশু হাজেরার মরদেহ উদ্ধারের পর রুমা জানান শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ২টায় ঘুম থেকে উঠে টয়লেটে যান রুমা। ঘরে ফিরে আবারো ঘুমিয়ে যান। ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখেন ঘরের দরজা খোলা, পাশে হাজেরা নেই। কীভাবে পুকুরে গেলো জানেন না রুমা। কিন্তু তার এ বক্তব্য ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, তবে জিজ্ঞাসাবাদে রুমা জানান তার স্বামী দেড়বছর আগে আরব আমিরাতের দুবাই গিয়েছেন। তাদের দুটি মেয়ে আছে। বড় মেয়ের বয়স ছয় বছর ও আরেকটির চার মাস বয়স। একান্নবর্তী পরিবারের সব কাজ করতে হয় রুমাকে একাই। এ নিয়ে শাশুড়ি ও নন্দের অনেক কথাও শুনতে হয়। তাই সন্তান হাজেরার সঠিকভাবে যত্নও নিতে পারছিলেন না। এসব নিয়ে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তাই শুক্রবার মধ্যরাতে সন্তান হাজেরাকে বাড়ির কাছাকাছি একটি পুকুরে ফেলে দিয়ে আসেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, রুমা বেগমকে রবিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। এর পেছনে যদি অন্য কিছু থেকে থাকে আশা করছি তদন্তে তা বের হয়ে আসবে।