অনলাইন ডেস্ক :
জাপানের পথে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপান যাওয়ার আগে আজ ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নবনির্মিত ভিভিআইপি লাউঞ্জ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সকাল ৮টায় প্রধানমন্ত্রী তার সফর সঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে জাপানের টোকিওর উদ্দেশে রওনা হন।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫-২৮ এপ্রিল জাপানে সরকারি সফর করবেন।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেলে টোকিও থেকে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ মে সোমবার বিশ্বব্যাংক সদরদপ্তরে বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যে সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে ‘রিফ্লেকশন অন ৫০ ইয়ার্স অব ওয়ার্ল্ড ব্যাংক – বাংলাদেশ পার্টনারশিপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি।
এরপর ৪ মে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের আমন্ত্রণে লন্ডন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
৬ মে শনিবার ওয়েস্টমিনিস্টারে রাজা ও রানির রাজ্যাভিষেকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
তিন দেশ সফর শেষে ৯ মে মঙ্গলবার সকালে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চলারপথে রিপোর্ট :
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিএসএফের) বাঁধায় দীর্ঘ আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর আখাউড়া-লাকসাম রেলওয়ে প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে।
আজ ১২ মার্চ রবিবার বেলা ১১টায় বিজিবির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম কসবায় প্রকল্প কাজ পরিদর্শনের পর নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর আখাউড়া-লাকসাম রেলওয়ে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের কসবা ও সালদা নদী স্টেশন দুটির অবস্থান বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে হওয়ার কারণে বিএসএফ নির্মান কাজে আপত্তি তুলে। এক পর্যায়ে বিএসএফ’র বাঁধায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
পরে বিভিন্ন পর্যায়ের কুটনৈতিক তৎপরতা এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিএসএফ’র সাথে কার্যকর যোগাযোগ শুরু করে।
অবশেষে আড়াই বছর পর বিএসএফের বাঁধায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বহুল প্রতীক্ষিত আখাউড়া-লাকসাম রেলওয়ে প্রকল্পের কসবা ও সালদা নদী অংশের নির্মান কাজ পুনরায় হয়।
এ ব্যাপারে সরাইল রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জানান, প্রকল্পটির অসম্পন্ন হওয়া কাজ পুনরায় শুরু করার জন্য বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে এবং রিজিয়ন, সেক্টর, ব্যাটালিয়ন, কোম্পানী ও বিওপি কমান্ডার পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বিএসএফ কর্তৃপক্ষের সাথে বিজিবি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও কার্যকর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করে। বিশেষ করে গত বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে বন্ধ থাকা আখাউড়া-লাকসাম রেলওয়ে প্রকল্পের বিষয়টি জোরালো ভাবে উত্থাপন করা হয়।
একই বছর সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের নয়া দিল্লীতে বাংলাদেশ ও ভারত প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রকল্পটির বিষয়ে একটি ফলপ্রসু আলোচনা হয়। এছাড়াও অতি স¤প্রতি বাংলাদেশ ও ভারত উভয় রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যেও প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
তিনি জানান, গত ১ মার্চ বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ.কে.এম নাজমুল হাসান আখাউড়া আইসিপি, আখাউড়া-লাকসাম রেলওয়ে পকল্পের কসবা ও সালদা নদী স্টেশন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং প্রকল্পটির বন্ধ থাকা কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার দেশের অন্যতম জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হয়।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক সুুবক্ত গীন জানান, প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডুয়েলগেজ প্রকল্পের সব ধরনের বাঁধা দূর হয়েছে। চলতি বছরই কাজটি শেষ হবে। এতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে সময়ও কমে আসবে।
এ সময় বিজিবি-৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আশিক হাসান উল্লাহ, তমা গ্রুপের ট্রেগ ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মহিউদ্দিনসহ বিজিবি ও রেলওয়ের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
অনিবন্ধিত ও অবৈধ অনলাইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তিনি বলেন, আপনাদের দাবির সাথে আমি একাত্মতা প্রকাশ করছি—একটা ডিসিপ্লিন আনা দরকার। যেহেতু নিবন্ধনের একটা প্রক্রিয়া আছে, সেটাকে কার্যকর করা দরকার।
আজ ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘অনলাইন নিউজপোর্টাল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ওনাব) কার্যনির্বাহী সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) বলছেন, নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকার যে নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং আপনারাই বলছেন কিছুটা দরকার ডিসিপ্লিনের (শৃঙ্খলা) জন্য। অর্থাৎ নিবন্ধন প্রক্রিয়ার বাইরেও অনেকে অনলাইন সংবাদমাধ্যম পরিচালনা করছেন। এখানে গণমাধ্যম এতটাই মুক্ত, উন্মুক্ত এবং স্বাধীন যে, নিবন্ধন ছাড়াও চলতে পারে এবং নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের কথা পেশাগত সাংবাদিকরাই বলছেন—এটা করা দরকার।
তিনি বলেন, আমরা এগুলো করি না। যেটা প্রমাণ করে—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সংবাদমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তবে, একইসাথে আমি মনে করি, এটা মুক্ত না, উন্মুক্ত। স্বাধীনতা এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যেটা লিমিটলেস (সীমাহীন)। যে কারণে কিছুটা ডিসিপ্লিনের অভাবও হয়ে গেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি আবারও বলব, নিয়ন্ত্রণ কিংবা নজরদারির প্রশ্ন আসে না। আমরা এগুলোর পক্ষে না, আমরা করতে চাই না। আমরা এগুলোতে বিশ্বাস করি না। আমরা মুক্ত গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করি। যারা নিবন্ধিত, তাদের কিছুটা প্রণোদনা ও সহায়তা দেওয়ার দরকার আছে, দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাকে প্রমোট (এগিয়ে) করার জন্য। আর অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টালগুলোর মাধ্যমে অনেক চটকদার, অসত্য, মানহানিকর ও ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইন হয়। এটা একটা ভালো দিক—সাংবাদিক মহলই চাচ্ছেন একটি শৃঙ্খল ডিসিপ্লিনযুক্ত সাংবাদিকতার বিকাশ। এখানে পূর্ণাঙ্গভাবে আপনাদের সাথে একমত।
তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ও সব ধরনের নজরদারির বাইরে আমরা এখানে প্রমোট করতে চাই। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, এটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশ। আমাদের এখন ৪২৬টি নিবন্ধিত অনলাইন পোর্টাল আছে। এরমধ্যে ২১৩টির মূলধারার গণমাধ্যম আছে—ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া। আর ২১৩টি কেবল অনলাইন নিউজপোর্টাল। আরও কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, নতুন কেউ অনলাইন নিউজপোর্টাল নিয়ে আসতে চাইলে তাদের নিজেদের প্রমাণ করার সময় দেওয়া দরকার। আর যারা অনিবন্ধিত, আমি মনে করি, অবৈধভাবে কোনো কিছু সঠিক না, তারা সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে না। সেগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেব। আর এটা আপনাদের (সাংবাদিক) দাবি। আমি কিন্তু বলছি না। কাজেই আমি সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আপনাদের দাবি পূরণের ঘোষণা দিচ্ছি। আমি চাই না, সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমি ঘোষণা দিলাম যে, অনিবন্ধিত অনলাইন বন্ধ করে দেব, কালকে হেডলাইন করে পরের দিন আলাপ হবে, সরকার তো গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরছে। সেটা আমি চাই না।
এ সময়ে ওনাব সভাপতি মোল্লাহ এম আমজাদ হোসেন, সহ-সভাপতি লতিফুল বারী হামিম ও সৌমিত্র দেব, যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ও আশরাফুল কবির আসিফ, কার্যনির্বাহী সদস্য নজরুল ইসলাম মিঠু, তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু, রফিকুল বাসার, হামিদ মো. জসিম, মহসিন হোসেন, অয়ন আহমেদ, খোকন কুমার রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলা পঞ্জিকা মতে পয়লা আষাঢ় আজ। ১৪৩০ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসের প্রথম দিন আজ। আষাঢ়ের প্রথমদিনেও আকাশে নেই মেঘের ঘনঘটা। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি নেই। অথচ বর্ষার বৃষ্টিতে পুরাতন জঞ্জাল ধুয়েমুছে জেগে ওঠে প্রাণচাঞ্চল্যে। আষাঢ় নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। এ মাসের মধ্য দিয়েই বাংলার প্রকৃতিতে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় প্রিয় ঋতু বর্ষার। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাল তমাল, ঝুঁই, শাল পিয়াল আর মরাল কপোতের বন বীথিকায় চোখে পড়ে বকুল, কদম, জারুল, পারুল, কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়াসহ অসংখ্য ফুল।
সবুজের সমারোহে নতুন প্রাণের বার্তা নিয়ে এসেছে আষাঢ়। আকাশ ছেয়েছে মেঘের ঘনঘটায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে আঘাঢ়ে প্রথম দিনে বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে এবং এবার বর্ষায় বেশি বৃষ্টি হতে পারে।
মেঘদূতের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে আষাঢ়। গাছের পাতা, টিনের চাল কিংবা ছাদের রেলিং ছুঁয়ে এবং খোলা আকাশের প্রান্তর জুড়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ার দিন। সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকলার অঙ্গন আষাঢ় বন্দনায় নিবেদিত, উচ্ছ্বসিত। কবির কবিতায়, শিল্পীর সুরে-গানে, চারুশিল্পীর তুলির আঁচড়ে, চলচ্চিত্রে, নকশিকাঁথার ফোঁড়ে ফোঁড়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ ভাণ্ডারে বর্ষার বৃষ্টির রূপবর্ণনা রয়েছে।
যদিও কয়েক দিন আগে থেকে কালবৈশাখীকে সঙ্গী করে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেশে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। গ্রীষ্মের রুদ্র প্রকৃতির গ্লানি আর জরাকে ধুয়ে মুছে প্রশান্ত স্নিগ্ধতা ও সবুজে ভরে তোলে আষাঢ়। বাংলা সনের তৃতীয় মাস। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে জুন-জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আষাঢ় মাস। এ মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। গ্রীষ্মের দাবদাহ শেষে আষাঢ়ে বৃষ্টির ছোঁয়ায় বাংলার প্রকৃতি যেন ফিরে পায় প্রাণ। নতুন আনন্দে জেগে উঠে প্রকৃতি।
আষাঢ় মানেই মেঘ, বৃষ্টি, প্রেম, নতুন প্রাণ, জেগে ওঠার গান। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামল বাঙলার কৃষি নবজন্ম পায় বর্ষার বৃষ্টিতে। আষাঢ়ের প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। কদম ফুলের মতো তুলতুলে নরম, রঙিন স্বপ্ন দুই চোখের কোণে ভেসে ওঠে, ঠিক যেমন করে আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়।
ঋতু পরিবর্তিত চিরায়ত ধারায় আষাঢ়-শ্রাবণ এ দুই মাসকে ঘিরে আসে বর্ষাকাল। কদম, কেয়া আর কেতকীর নয়নাভিরাম রূপের পসরা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছল নৃত্যের আবাহন নিয়ে আসে বৃষ্টি। বাঙালি মননে সবচেয়ে বেশি রোমান্টিকতা-আধ্যাত্মিকতার সুর বাজে এই বর্ষায়।
পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। বর্ষায় আবেগ ও অনুভূতির জোয়ারে ভাসেননি এমন কবি, সাহিত্যিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। শুধু যে কবি-সাহিত্যিক, তা নয়-সাধারণ মানুষও। কালীদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ বা নির্মলেন্দু গুণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে হুমায়ূন আহমেদ- কেউ বর্ষাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি।
অপরূপ রূপবতী মেঘবতীকে সঙ্গী করে বাংলায় আসে বর্ষা। বহুকাল আগে মহাকবি কালীদাস তার ‘মেঘদূত’ কাব্যে আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে বিরহ কাতর যক্ষ মেঘকে দূত করে কৈলাশে পাঠিয়েছিলেন তার প্রিয়ার কাছে। এর আগে বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতি লিখেছিলেন: ‘এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর, এ ভরা ভাদর, মাহ ভাদর; শূন্য মন্দির মোর।’
‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ দিয়ে প্রণয় নিবেদন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার ‘বর্ষা-মঙ্গল’ কাব্যে লাবণ্যস্নিগ্ধ রূপবতী বর্ষাকালকে নিয়ে লিখেছেন, ‘ওগো সন্ন্যাসী, কী গান ঘনাল মনে। গুরু গুরু গুরু নাচের ডমরু, বাজিল ক্ষণে ক্ষণে। তোমার ললাটে জটিল জটার ভার, নেমে নেমে আজি পড়িছে বারম্বার, বাদল আঁধার মাতাল তোমার হিয়া, বাঁকা বিদ্যুৎ চোখে উঠে চমকিয়া।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাছে বর্ষাকে মনে হয়েছে ‘বাদলের পরী’। তিনি লিখেছেন:রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে, কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরর্ষে।’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মা নদীর মাঝি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে, হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিন- এ বর্ষা এক বিপুল বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত। কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘গ্রীষ্ম চলিল, বর্ষা আসিল, আষাঢ়ে নামিল ঢল;/বুনো পাখি সব ডাকে অবিরল: ‘বাওয়া ক্ষেত কর তল, এই তো কখন নেমেছে বৃষ্টি, অবিরাম তবু ঝরছে; না পেয়ে উপায় রাখালের দল ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরছে।’
আষাঢ়ের বৃষ্টিতে খাল বিল পানিতে ভরে ওঠে। বর্ষায় প্রধানত পদ্ম ও শাপলা ফুলের সমারোহ দেখা যায়। এগুলো নদী-নালা, খাল-বিলে ফুটতে শুরু করেছে। কদম, চালতা, নিশিপদ্ম, সুলতানচাঁপা, কেয়া, চাঁদমালা, কামিনী, চামেলি, ঝুমকো লতা, মালতি, লিলি ইত্যাদি ফোটে এ সময়। কয়েক প্রজাতির বিদেশি ফুলও ফোটে এই বর্ষায়। শুধু ফুল নয়, বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিডও ফোটে এই সময়। এগুলোকে বর্ষার ফুলও বলা যায়। এ বর্ষায় মেলে মুখরোচক ফল কাউফল, ডেউয়া, লটকন, বিলেতি গাব, বাতাবি লেবু বা জাম্বুরা। এ ছাড়া আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, চালতা, তাল ইত্যাদি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলও পাওয়া যায় এ ঋতুতে।
বর্ষা আমাদের জন্য অপরিহার্য এক ঋতু। বৃষ্টি না হলে শস্যাদি জন্মাবে না, বেড়ে উঠবে না প্রাণ। বৃষ্টির অভাবে মাটি যখন অনুর্বর হয়ে যায়, তখন বর্ষা এসে তা উর্বর করে। আমাদের নদী, মাঠ, ঘাটের দেশ বর্ষায় ভরে ওঠে সবুজে শ্যামলে। একঘেয়ে যান্ত্রিক জীবনে বর্ষা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। শহরে বায়ু দূষণ বন্ধ করে বৃষ্টি। অন্যদিকে বাংলার কৃষি ও অর্থনীতি বৃষ্টিনির্ভরশীল। যথাযথ বৃষ্টিপাত ফসল ফলাতে সহায়তা করে।
প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর বর্ষাকে স্বাগত জানাতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগর সংসদ বর্ষাবন্দনা অনুষ্ঠান করছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সূত্রধর অর্জন সেতার বাজানোর মাধ্যমে আয়োজন এগিয়ে দেন। এ সময় তবলা বাজান হরিপদ সূত্রধর। বর্ষা উৎসবে নৃত্য, সঙ্গীত, বর্ষাকথন ও আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হবে।
এবার অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সারাদেশে ৫৫ হাজার তালগাছ রোপণ করা আলোচিত ব্যক্তি চিত্তরঞ্জন দাস। প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করেছে বর্ষা বরণের। সরকারি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও নানা আয়োজনের দেখা মিলবে।
অনলাইন ডেস্ক :
দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ আগামীকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
আজ ১১ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ আরো উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১১.৬ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭.৯ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঘূর্ণিঝড়টি আরো ঘণীভূত হয়ে আগামীকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এবং পরবর্তী সময়ে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
চুয়াডাঙ্গায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্তৃপক্ষের তদারকিতে অসংগতি ধরা পড়ায় দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে সতর্কতামূলক জরিমানা করা হয়েছে। আজ ১০ মে বুধবার সকাল সাড় ১০টা থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কেদারগঞ্জ,সার্কিট হাউজ ও হাটকালুগঞ্জ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ এ তদারকি পরিচালিত হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সজল আহম্মেদ জানান, ফ্লাওয়ার মিল, মুদিখানা ও চাউলের দোকানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রতিষ্ঠানে তদারকি করার সময় সার্কিট হাউজ এলাকায় মেসার্স নিউ তানিয়া ফ্লাওয়ার মিলে আটা, ময়দা ও ভূষিতে ওজন, মেয়াদ, মুল্য ইত্যাদি না লেখা ও মুল্যতালিকা প্রদর্শন না করার অপরাধে ওই প্রতিষ্ঠানটির মালিক শহিদুল্লাহকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৩৭ ও ৩৮ ধারায় অনুযায়ী ১০ হাজার টাকা ও হাটকালুগঞ্জ এলাকায় মেসার্স মর্ডান স্টোরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মুল্যতালিকা প্রদর্শন না করা ও প্রচুর মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য দোকানে রেখে বিক্রয় করার অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির মালিক আলিমুজ্জামানকে ৩৮ ও ৫১ ধারায় ১০ হাজার টাকা টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সতর্ক করে নির্দেশনা দেয়া হয়।
তিনি আরো জানান,জনস্বার্থে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ কাজ সার্বিক সহযোগীতায় ছিল চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনের একদল পুলিশ।