চলারপথে রিপোর্ট :
আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, প্রত্যেক ধর্মই মানবিকতার কথা বলে। ধর্ম মানুষকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে রাখে। মানুষকে সুন্দর জীবন ও সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে ধর্ম পথ দেখায়। এই অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আজ ৩ মে বুধবার বিকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা অর্ন্তগত স্থায়ী দূর্গা মন্দির সংস্কারে নগদ অর্থ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সব ধর্মের মানুষকে একত্রিত করেছিলেন। ধর্ম যার যার; রাষ্ট্র সবার, এরকম একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম এবং সেই মুক্তিযুদ্ধে কোন ধর্মগোষ্ঠী বা কোন বর্ণগোষ্ঠী একক কোন ভূমিকা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। আমরা সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ একত্রে মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে আমরা জয়যুক্ত হয়েছি।
বিএনপিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি অহেতুক ভিত্তিহীন আন্দোলন করছে। তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। বিকল্প পথে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে। তাদের সেই স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা বদলের কোনো সুযোগ নেই।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রীমান গোপন চন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ ফয়সল বিন করিম, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুফ আলী চৌধুরী সেলিম, সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বিপ্লব, সহসভাপতি শফিউল আজম খান বারকু, শাক্তা ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, কালিন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসান মোস্তান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা অর্ন্তগত ৩৪ টি মন্দিরকে ৩৪ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
আগামী নির্বাচন বর্জন করলে বিএনপি গুরুত্বহীন দলে রূপান্তরিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
আজ ৯ এপ্রিল রবিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (টিসিএ) আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা চাই আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক। দেশের গণতন্ত্র সংহত হোক।
আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক যে, দেশে যখন জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে, তখন তারা সংসদে নেই। আসলে তারা পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি বা সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সে কারণে তারা সংসদে থাকলেও কিছুদিন আগে পদত্যাগ করেছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি ভেবেছিল তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে সরকারের মধ্যে ঝাঁকুনি লাগবে, সরকার কাঁপবে, পড়ে যাবে। কিন্তু সরকারের কিছুই হয়নি, একটু কাতুকুতু লেগেছে, এর বেশি কিছু না।
তথ্যমন্ত্রী এসময় ক্যামেরা সাংবাদিকসহ সব সাংবাদিকের কাজকে রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক কাজের মধ্যদিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে।
টিসিএ সভাপতি শেখ মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক জীবনের সঞ্চালনায় সভায় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কাদের খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, এশিয়ান টিভির চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ও স্পেনের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশ ও স্পেনের মধ্যে ব্যবসা বাড়াতে চাই।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ তার সরকারি বাসভবন গণভবনে স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল মারিয়া সিস্তিয়াগা ওচোয়া ডি চিনচেত্রু সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
নাঈমুল ইসলাম খান জানান, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে তার দেশের বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বাংলাদেশে প্রায় ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, “স্প্যানিশ বিনিয়োগকারীরাও সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। কারণ আমরা স্পেন থেকে আরও বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছি।” এসময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে স্পেনের সমর্থন চান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে আরও জানানো হয় যে, দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব চুক্তির জন্য আলোচনা হবে- যা আগামী সেপ্টেম্বরে শুরু হবে।
স্পেনে বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার (বাংলাদেশি) বসবাস করে। প্রধানমন্ত্রী স্পেনের প্রতি বিশেষ করে আইটি খাত থেকে আরও বেশি বাংলাদেশি নেওয়ার আহ্বান জানান।
স্পেনের রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমানে তার দেশ বাংলাদেশ থেকে শুধু তৈরি পোষাক (আরএমজি) আমদানি করে এবং বাংলাদেশের সিমেন্ট খাতে স্প্যানের বিনিয়োগ রয়েছে।
তিনি চলতি অর্থ-বছরের জন্য বাংলাদেশের বাজেটের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, সরকার শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে গুরুত্ব দিয়েছে।
মারিয়া সিস্তিয়াগা আরও বলেন, “এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আপনার বর্ধিত আগ্রহ ও বরাদ্দ আমাদের দেশের সাথেও মিলেছে।”
রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে তাকে স্পেন সফরের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পেনের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
অ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদিন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন।-বাসস
চলারপথে রিপোর্ট :
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের সংবিধান মেনে চলি। তার কারণ হচ্ছে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে এই সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। সেই সংবিধান মেনেই নির্বাচন করব। যারা সংবিধান মানে না তারা নিজেদেরকে বাংলাদেশের নাগরিক বলাটা সঠিক হবে না।
আজ ১৪ জুলাই শুক্রবার সকালে আখাউড়া রেলওয়ে ষ্টেশনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেতারা অনেক কথাই বলতে পারে।
এর আগে তিনি আখাউড়া ষ্টেশনে উপস্থিত নেতাকমীর্দের উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন এক উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। আমরা শেখ হাসিনার পলিকল্পনা অনুয়ায়ী তাঁর নেতৃত্বে কাজ করব এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। এর আগে তিনি ঢাকা থেকে আন্ত:নগর মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে সকাল সাড়ে ১০টায় আখাউড়া এসে পৌঁছেন।
এসময় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল’সহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগ সহ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে তিনি সড়ক পথে নিজ উপজেলা কসবার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি বিকালে উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের টানমান্দাইল গ্রামে ফুটবল খেলার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমপি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আইন পাশ করে সংবিধান থেকে সেটা বের করে দিয়েছে। আর সেখানে ফিরে যাওয়া যাবে না।
তিনি আজ ২১ জুলাই শুক্রবার দুপুরে কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
খাড়েরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু আবদুল্লাহ ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভায় আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সৃষ্টি করা তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পৌছে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর বিএনপি-জামায়াত দেশ চালিয়েছেন। তারা চেষ্টা করেছে যেন বাংলাদেশ যেন একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়। তারা চেষ্টা করেছে বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রি করে দেয়ার জন্য। তারা চেষ্টা করেছে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য। আমরা ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ভুলে যাইনি। তারা নির্বাচন করতে চায়না। তারা চায় পেছনের দরজা দিয়ে যদি কেউ তাদেরকে ক্ষমতায় ঢুকিয়ে দেয়। তিনি বলেন, আজকে বড় বড় শত্রুদের মোকাবেলা করতে হবে। আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে জামায়াত-বিএনপির ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধ ভাবে মোকাবেলা করবেন।
তিনি আরো বলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের ভবিষৎ অন্ধকার। বিএনপি যদি আবার ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ আবার একটা নৈরাজ্যের দেশ হয়ে যাবে।
বিশেষ বর্ধিত সভায় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রাশেদুল কাউছার ভূঁইয়া জীবন, পৌরসভার মেয়র এমজি হাক্কানী, সাবেক পৌর মেয়র এমরান উদ্দিন জুয়েল, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনির হোসেন, ছাত্রলীগের আহবায়ক আফজাল হোসেন রিমন প্রমুখ।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ১৭ মার্চ, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মদিন।
সেদিন ছিল মঙ্গলবার। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। রাত ৮ টার দিকে মা সায়েরা খাতুনের কোল আলোকিত করে আসেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। পরাধীনতার নিকষ অন্ধকারে ডুবে থাকা বাঙালি জাতির মুক্তির দূত হয়ে পৃথিবীতে আসেন একটি শিশু।
সেদিনের সেই শিশুই আজ অবিসংবাদিত নেতা বাঙালি ও বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ সেই মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকী। শুভ জন্মদিন জাতির পিতা। আজ বাঙালি জাতির আনন্দে পুলকিত হওয়ার দিন। দিনটি পরবর্তীতে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির এ জন্মদিনে দেশের ১৬ কোটি মানুষ বিনম্র শ্রদ্ধা, সালাম আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
খোকা থেকে জাতির পিতা : পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে আসা শেখ মুজিবুর রহমান চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়।
বাবা-মায়ের আদরের খোকা নামের ছোট্ট শেখ মুজিব ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলজীবন শুরু করেন। নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন।
পরবর্তীকালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
একই বছরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে এই কলেজ থেকেই স্নাতক সম্পন্ন করেন।
বিয়ে করেন শেখ ফজিলাতুননেছাকে (রেনু)। তারা দুই কন্যা- শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন পুত্র- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের জনক-জননী ছিলেন।
১৯৪৩ বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের (অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের শাখা) কাউন্সিলর নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৬ সালে শেখ মুজিব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের পাশাপাশি তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বতন্ত্র, স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন।
যদিও এই উদ্যোগ বাতিল হয় কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটিই একজন জাতির পিতার স্বপ্নের রাষ্ট্র গড়ার ভিত্তি হয়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ৪ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদলীয় ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
২ মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থাতেই তাকে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
১৯৫২ সালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ আরও অনেকেই। জেল থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে শেখ মুজিব শহিদদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানান।
একই বছর তিনি শান্তি সম্মেলন উপলক্ষ্যে চীন সফর করেন। শান্তি সম্মেলনে তিনি বাংলায় বক্তৃতা দেন, ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে যান বৈশ্বিক অঙ্গনে।
১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং একজন বাঙালি নেতা হিসেবে তার উত্থান হয়। ১৯৫৪ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসনে জয়লাভ করে।
আওয়ামী লীগ একাই পায় ১৪৩টি। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হন এবং ১৫ মে নতুন প্রাদেশিক সরকারের সমবায় ও কৃষিমন্ত্রী হন।
৩০ মে ভারত স্বাধীনতা আইন-১৯৪৭, প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার হঠাৎ করে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। ১৯৫৬ সালে খান আতাউর রহমানের নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকারে তিনি মন্ত্রী হন।
মাত্র নয় মাস তিনি মন্ত্রী পদের দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বাঙালির অধিকার আদায় আন্দোলনকে বেগবান করা এবং সংগঠনকে আরও সুসংহত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৫৭ সালের ১৩-১৪ জুন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিতিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে এক বিশেষ সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
এই অধিবেশনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থেকে আলাদা হয়ে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়।
১৯৬৬ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।
এই ছয় দফা মুক্তিকামী বাঙালি জাতির জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির বীজ বুনে দেয়। ১৮-২০ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মিটিংয়ে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
ছয় দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি সারা বাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন। এ সময় তাকে আটবার গ্রেফতার করা হয় এবং সর্বশেষ ৮ মে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। প্রায় তিন বছর তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন।
১৯৬৮ সালে ৩ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার মোট ৩৫ জন বাঙালির (রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সরকারি অফিসার) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।
জেলে বন্দি থাকা অবস্থাতেই ১৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবের ওপর পুনরায় গ্রেফতার আদেশ জারি হয়। ভারতের সহায়তায় পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা দায়ের করা হয়।
বঙ্গবন্ধুসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং তার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র গণআন্দোলন শুরু হয়। টানা গণআন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সব বন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বিশাল ছাত্র সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আওয়ামী লীগের এক জনসভায় শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ’।
১৯৭০ বঙ্গবন্ধু ছয় দফার আলোকে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বা?ন জানান। আওয়ামী লীগের জন্য তিনি নৌকা প্রতীক বেছে নেন।
১২ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় উপকূল এলাকায় লাখো মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত রেখে ঘূর্ণিঝড়বিধ্বস্ত অঞ্চলে ছুটে যান।
৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়। ১৯৭১ সালে ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর মাত্র দুই দিন আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন।
এই ঘোষণার ফলে সর্বস্তরের বাঙালি জনতা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নতুন মোড় নেয়। ১ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু কার্যত ছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধান।
একদিকে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার নির্দেশ যেত, অপরদিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে যেত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ। বাংলার মানুষ মেনে চলতেন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ।
৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধু বজ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
এই ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান।
২৫ মার্চ রাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাক হানাদার বাহিনী শতাব্দীর অন্যতম ঘৃণ্য গণহত্যা চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
এরপরই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় এবং গণপরিষদ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে ফিরে আসেন।
সেদিন বাঙালি জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা জানায়। লাখো মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্নাত হয়ে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে আসেন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।
১২ জানুয়ারি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে নতুন বাংলাদেশকে শক্ত ভিত্তির ওপর স্থাপন করেন।