চলারপথে রিপোর্ট :
লক্ষ্মী রানী দাস। তিনি ভারত থেকে স্বামী ও সন্তান নিয়ে আগরতলা স্থলবন্দর দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
যাত্রাকালে আগরতলা ইমিগ্রেশনে সুষ্ঠু ও স্বাচ্ছন্দ্যে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে এলেও আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে এসে রীতিমত অবাক হক তিনি। বসারও সুব্যবস্থা নেই এখানে।
ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়ালেও ছোট কক্ষটিতে নেই কোনো ফ্যান। হঠাৎ ১২ বছর বয়সী ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা করার জন্য কোনো স্থান না পেয়ে ইমিগ্রেশন ভবনের এক কোনায় বসে তার সেবা যত্ন করেন। আশেপাশে ছিল না কোনো টিউবওয়েল। যাও বা ট্যাংকের পানি জুটেছে, তাও তীব্র তাপদাহে তপ্ত। তা দিয়েই ছেলেকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যান।
লক্ষ্মী রানী দাসের বলেন, আগরতলা ইমিগ্রেশনে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ও সুন্দর পরিবেশে আরামে সব কাজ করে এসেছি। বন্দর থেকে গাড়িতে আমাদের ফ্রি চেকপোস্ট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। অথচ আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনে এসে নাজেহাল হতে হলো। এখানে কোনো কিছুরই সুব্যবস্থা নেই। একতলা পুরোনো ভবনের ছোট্ট কক্ষে শত শত লোক ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে। এখানকার ইমিগ্রেশনের অব্যবস্থাপনা দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। এখানে যাত্রীদের জন্য পরিষেবা বাড়ানো উচিত। আশা করব, বাংলাদেশ সরকার দুই দেশের যাত্রীদের কথা বিবেচনায় এনে ইমিগ্রেশন উন্নত করবে।
আগরতলা থেকে আসা আরেক যাত্রী খোকন মিয়া বলেন, আমি গত ছয় বছর ধরে এ চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করছি। ইমিগ্রেশনটি যে হালতে দেখেছিলাম, সে হালতেই আছে। একজন রোগী এলে যে বসবে, সে উপায় নেই। এখানে যে পরিমাণ জায়গা দরকার, সে তুলনায় খুবই কম আছে।
বন্দরটি ঘুরে দেখা গেছে, মূলফটক পার হলেই একতলা বিশিষ্ট তিন রুমের একটি ভবন। এর মধ্যে দুটি ছোট রুম ও একটি মাঝারি রুম। একটিতে ইমিগ্রেশন ইনচার্জ বসেন, আরেকটি হচ্ছে ব্যারাক। মাঝারি কক্ষটিতে চলে অফিসের কার্যক্রম। পুরোনো ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরে গেছে। প্রতিদিন যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই গাদাগাদি করেই চলে কার্যক্রম। যাত্রীদের মালপত্র বারান্দায় রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বসার জন্য ইমিগ্রেশন কক্ষে কোনো জায়গা নেই। আর বাইরে টিনের একটি ছাউনি আছে, যেখানে ১৫/২০টি চেয়ার থাকলেও কোনো টেবিল নেই। অথচ ফরম পূরণ করতে টেবিল প্রয়োজন। ফরম পূরনের জন্য দেখা গেছে কেউ বারান্দার মেঝেতে বসে, আবার কেউ কেউ বিদ্যুৎতের জেনারেটরের ওপরে ফরম রেখে পূরণ করছেন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশ্রামের জন্যও জায়গা নেই। কক্ষটিতে এসির ব্যবস্থা থাকলেও ভিড় থাকায় যাত্রীদের লাইন কক্ষের বাইরে বারান্দায় চলে যায়। ফলে এসিগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তীব্র গরমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক ফ্যানের ব্যবস্থা না থাকায় গরমে কষ্ট সহ্য করে ইমিগেশনের কাজ শেষ করতে হয়।
তবে বিড়ম্বনা এখানেই শেষ নয়। কাস্টমসের কাজ করতে পাড়ি দিতে হচ্ছে অন্তত দুইশ গজ দূরবর্তী অন্য আরেকটি ভবনে। মূলত এক ভবন ও এক ছাদের নিচে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কাজ করতে না পারায় তাদের দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে চালু হয় আখাউড়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম। সুবিধাজনক ভৌগলিক অবস্থান হওয়ায় এ বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট থেকে অনেকেই আখাউড়া ইমিগ্রেশন ব্যবহার কররে ভারতে যাতায়াত করছেন।
কাস্টমস সূত্র জানায়, এ ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে প্রতিদিন অত্যন্ত এক হাজার যাত্রী দুই দেশে যাতায়াত করছেন। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক যাত্রী ভারতে যান। যা থেকে প্রতি মাসে ৭৫ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে সরকারের। বিগত ছয় মাসে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
এদিকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে আখাউড়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন আধুনিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও ২০১৭ ও ২০১৯ সালে সীমান্ত আইনের অজুহাতে বিএসএফ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।
মৌলভীবাজার জেলা থেকে ভারতগামী বাংলাদেশি যাত্রী সুমন আহমেদ বলেন, আমি ইমিগ্রেশনের পরিবেশ দেখে হতবাক হয়ে গেছি। এখানে লাইনের কোনো শৃঙ্খলা নেই। কোনো ধরনের আধুনিকায়ন নেই। অথচ আগরতলা ইমিগ্রেশনের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফারহানা মিলি নামে এক নারী চিকিৎসক তার বাবার চিকিৎসা জন্য ভারতে যাওয়া সময় আক্ষেপ করে বলেন, আগরতলা ইমিগ্রেশন ও আখাউড়া ইমিগ্রেশনের মধ্যে অনেক পার্থক্য। আমাদের এখানে ভালো ব্যবস্থা নেই। মালপত্র রাখার জায়গা পাই না। আরেকজনের কাছে পাহারা দিয়ে রাখতে হয়। বছরের কয়েকবার যেতে হয়। তবে এর উন্নতি দেখছি না। এখানে দ্রুত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগুক সেই কামনা করি।
মুক্তি খান নামে এক যাত্রী বলেন, বর্তমানে আখাউড়া ইমিগ্রেশন ভবন নামেমাত্র টিকে আছে। জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে কোনোমতে ঝুঁকি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হচ্ছে। স্থায়ী ভবন তৈরির পর এক ছাদের নিচে সব পরিষেবা পাওয়া গেলে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশিদের আসা যাওয়া আরও বেড়ে যাবে। যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগও লাঘব হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি যাত্রী পারাপার হচ্ছেন। তবে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালানোর জন্য যে ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে, তা খুবই অপ্রতুল। নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে সেবার মান বাড়বে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, এ ইমিগ্রেশন দিয়ে দুই দেশের বিপুল সংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করলেও ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের পর্যাপ্ত সুবিধার কমতি রয়েছে। আমাদের নতুন একটি ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ কাজ চলছিল, তা বিএসএফের বাধায় বন্ধ রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কথা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলে আমরা ভবনটির কাজ আবার শুরু করতে পারব। এছাড়া বলে রাখি, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখানে একটি আধুনিক বন্দর নিমার্ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ৩.৫৭ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ হাতে নিয়েছি। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। তখন স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম আরও বেগবান হবে। যাত্রীসেবার মানও উন্নত হবে।
তিনি আরো বলেন, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চারলেন সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে এবং আধুনিক স্থলবন্দরটি তৈরি হলে আখাউড়াই হবে বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য স্থলবন্দর।
চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় চাপাইনবাবগঞ্জের জনি পাশা (৩৩) নামে এক যুবক আটক হয়েছে। গত রোববার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার জয়নগর এলাকা থেকে তাকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার তাকে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
বিজিবি সুলতানপুর ৬০ ব্যাটালিয়ন সূত্র জানায়, চাপাইনবাবগঞ্জ উপজেলা সদরের সোনাপুটি গ্রামের মঞ্জিল মিয়ার ছেলে জনি ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে।
স্থানীয় মো. মামুন মিয়া নামে একজনের সহায়তায় কাজের সন্ধানে তিনি ভারত যাচ্ছিলেন। এ সময় আখাউড়া বিওপি’র টহল দল তাকে আটক করে।
মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, আখাউড়া থেকে :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলায় স্থাপন করা হচ্ছে একটি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ। গত বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত তিনটি জায়গা পরিদর্শন করেছেন মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অতিরিক্তি সচিবসহ শিক্ষা প্রকৌশলী বিভাগের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। এই পরিদর্শন টিমের সাথে ছিলেন আখাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: ফয়সল উদ্দিন, মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ডা: এ এইচ মামুন।
আখাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অতিরিক্তি সচিব ড. মো: আয়েতুল ইসলামসহ শিক্ষা প্রকৌশলীর প্রতিনিধি দলটি প্রাথমিক ভাবে প্রস্তাবিত তিনটি স্থান পরিদর্শন করেছেন। এর মধ্যে আখাউড়া পৌরসভার নারায়নপুর গ্রামে একটি ও দক্ষিণ ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে দুইটি জায়গা ঘুরে দেখেন তারা। টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ নির্মাণে সুবিধাজনক হওয়ায় এই তিনটি স্থানকে হাতে নেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত করতে কয়েক দিনের মধ্যেই প্রস্তাব পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, তিন একর জায়গা জুড়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। চলতি বছর জানুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহে জমি অধিগ্রহন করতে ভুমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা ইকরামুল হক নাহিদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেয়া হয়। সে অনুযায়ী সুবিধাজনক এই তিনটি স্থানকে বাছাই করা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত সাধারন শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত থাকবে। এসএসসি (ভোক) ও এইচ এস সি (ভোক) কোর্স চালুর মাধ্যমে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ করা হবে। থাকবে ৪টি ট্রেড ও ৪টি স্বল্প মেয়াদী প্যারাট্রেড কোর্স। এই শিক্ষা গ্রহন করে যুবকরা দেশে বিদেশে চাকুরীর বাজারে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
চলারপথে রিপোর্ট :
জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে আহত ও শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে আখাউড়া উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা সম্মেলন কক্ষে স্মরণসভায় রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজলা পারভীন রুহির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাদাতবরনকারী শিশু জাবিরের বাবা কবির হোসেন ভূইয়া, চোখে গুলিবিদ্ধ আহত ছাত্র সামি, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ সজিব মিয়া, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো: হিমেল খান, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মো. জয়নাল আবেদীন আব্দু, পৌর বিএনপির আহবায়ক মো. সেলিম ভূঁইয়া, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো: ইকবাল হোসেন, সেক্রেটারী মো: বোরহান উদ্দিন হান্নান খাদেম, আলহাজ্ব মো: বিল্লাল হোসেন প্রমূখ।
সভায় বক্তারা গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, শহিদ ও আহতদের আত্মত্যাগ এবং তাদের পরিবারের কষ্টের কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন আসলে ‘ছাত্র-জনতার এই আত্মত্যাগ জাতির জন্য হলো একটি অনুপ্রেরণা। তাদের স্মরণে আমাদের প্রত্যেককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির জাতীর কল্যাণে সমাজের জন্য কাজ করতে হবে।
শহীদদের স্মরণ করতে হবে। তাদেরই যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শহীদ জাবেরের বাবা তুলাই শিমুল গ্রামের কবির হোসেন ভূইয়া তার ছেলের স্মরণে আখাউড়া থেকে তুলাই শিমুল পর্যন্ত শহীদ জাবিরের নামে সড়কের নাম করণ করার দাবি জানান।
পরে জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুথানে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ও আহদদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করে মাওঃ কেফায়েত উল্লাহ।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় এক শিক্ষকের আকষ্মিক মৃত্যুতে লাশ কাঁধে নিয়ে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা।
১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিতার বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উত্তেজিত ছাত্র-জনতা লাশবাহী খাটিয়া নিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আখাউড়া উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে সেখানে অবস্থান পালন করেন। বিক্ষোভ মিছিল থেকে ওই শিক্ষকের মৃত্যুতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিযুক্ত করে বিচার দাবি করা হয়। নিহত ওই শিক্ষক হলেন উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক (ইংরেজি) এরফানুল ইসলাম শরীফ। সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত লাশ উপজেলা পরিষদ চত্বরে ছিল। পরে সেনাবাহিনী এসে ছাত্র ও নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলেন তাদেরকে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বস্ত করেন। পরে স্বজনরা লাশ নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।
নিহত শিক্ষকের ছোট ভাই মোঃ আওলাদ হোসেন অভিযোগ করেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন রুহি’র মানসিক নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। আওলাদ হোসেন বলেন, শহরের রাধানগরে তাদের বাড়ি। বাড়ির পূর্ব সীমানা ঘেঁষে উপজেলা পরিষদের একটি পুকুর আছে। পুকুর পাড়ে একটি ছোট গেইট আছে। এটি দিয়ে তারা মাঝে মধ্যে উপজেলা পরিষদের মসজিদে নামাজ পড়তে যান।
বৃহস্পতিবার সকালে ইউএনও শিক্ষক শরীফের বাসায় গিয়ে তাকে খোঁজ করেন। তাকে না পেয়ে পুকুরের পাড়ে গেট রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। গেট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চলে যান। পরে দুপুরে ইউএনও শরীফের কর্মস্থল হীরাপুর স্কুলে গিয়ে তার ভাই শিক্ষক শরীফের সাথে খারাপ আচরণ করে মানসিক নির্যাতন করেন। ইউএনওর নির্যাতনে তার ভাই মারা গেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি এর সুষ্ঠু তদন্ত করে ইউএনও’র বিচার দাবি করেন।
বিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, বেলা পোনে ১২টার দিকে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেনকে সাথে নিয়ে স্কুলে যান। এক পর্যায়ে ইউএনও গাজালা পারভীন রুহি অফিস কক্ষে এরফানুল ইসলাম শরীফের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। এ সময় অন্য শিক্ষকদেরকে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন। প্রায় ২০ মিনিট কথা বলার পর ইউএনও বিদ্যালয় থেকে চলে যান। ইউএনও চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পর শিক্ষক শরীফ বুকে ব্যাথা অনুভব করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসিজি করে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন ইউএনও মেডাম শিক্ষক শরীফের সাথে একান্তে কথা বলেছেন। আমাদেরকে বের হয়ে যেতে বলেন। তাই দুজনের মধ্যে কি কথা হয়েছে বলতো পারবো না।
জানতে চাইলে ইউএনও গাজালা পারভীন রুহি বলেন, আমি তাকে নির্যাতন করিনি। আমি ওই স্কুলের সভাপতি সেজন্য স্কুলে গিয়ে তার বেতনভাতা সংক্রান্ত বিষয়ে একান্তে কথা বলেছি। উপজেলা পরিষদের পুকুরের পাশে তাদের বাড়ির গেইট থাকায় সেটি দেখার জন্য তার বাড়িতে গিয়েছিলাম।
চলারপথে রিপোর্ট :
ভারত থেকে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে ফেরার পথে আখাউড়া সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক সবুজ দাস (২২) কে আটক করেছে ২৫ বিজিবি সরাইল ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
আজ ১৬ অক্টোবর বুধবার দুপুরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া আব্দুল্লাহপুর নামক স্থান থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটককৃত সবুজ দাস জেলার নাসিরনগর উপজেলা কুন্ডা ইউনিয়নের ইন্দ্রজিত দাসের ছেলে।
বিজিবির প্রেস বিজ্ঞপ্তির জানায়, আখাউড়া ফকিরমোড়া বিওপির টহল দল সীমান্ত পিলার ২০২২/১০-এস হতে আনুমানিক ৩০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আব্দুল্লাহপুর নামক স্থান হতে বাংলাদেশী নাগরিক সবুজ দাসকে আটক করা হয়। আটককৃত বাংলাদেশী নাগরিক সবুজ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, প্রায় ৪ মাস পূর্বে রাজ মিস্ত্রির কাজের সন্ধানে ভারতের আগরতলায় যায়। পরে বুধবার দুপুরে বাংলাদেশী মানব পাচারকারী মোঃ নাঈম চৌধুরীর সহায়তায় আখাউড়া আবদুল্লাহপুর এলাকায় অবৈধভাবে ভারত হতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় বিজিবি কর্তৃক আটক হয়।
আটককৃত বাংলাদেশী নাগরিককে আখাউড়া থানায় হস্তান্তর করা হয় এবং মানব পাচারে সহায়তাকারী মোঃ নাঈম চৌধুরী বিরুদ্ধে আখাউড়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়।