নাসিরনগরে “স্মার্ট লাইভস্টক বাজার” স্কুল ক্যাম্পিং অনুষ্ঠিত

নাসিরনগর, 16 May 2023, 1090 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে মেধা বিকাশে খাঁটি পণ্য সরবরাহে একটি বিশ্বস্থ প্রতিষ্ঠান এই শ্লোগানকে সামনে রেখে “স্মার্ট লাইভস্টক বাজার” স্কুল ক্যাম্পিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ১৬ মে মঙ্গলবার সকালে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের উদ্যোগে নাসিরনগর শিশু কানন চত্বরে অনুষ্ঠিত ক্যাম্পিংয়ে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বি. এম. ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম।

অধ্যক্ষ মোঃ আবদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ক্যাম্পিংয়ে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ডাঃ রাফি উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নূরে আলম, নাসিরনগর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) জামিল ফোরকান, জেলা পরিষদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া হাকিম রাজা, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অসিম কুমার পাল, সাধারণ সম্পাদক লতিফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ লিয়াকত আব্বাস টিপু।

এ সময় উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, স্মার্ট লাইভস্টক বাজারের উদ্যোক্তা আল-মামুন চৌধুরী, সাহেরা বেগম, কোহিনুর আক্তার, শিক্ষক, অভিভাবক,শিক্ষার্থীসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বি. এম. ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম এমপি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এন্টিবায়োটিক মুক্ত ডিম বিতরণ করেন।

বাজারের উদ্যোক্তা আল-মামুন চৌধুরী জানান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নীচ তলায় অবস্থিত “স্মার্ট লাইভস্টক বাজারে” দুধ, দই, ঘি, পনির, মিষ্টি, লাচ্ছি, দুধ চা, এন্টিবায়োটিক মুক্ত ডিম, পোল্ট্রি ও রাজ হাসেঁর মাংসসহ সকল প্রাণিজ পণ্য বিক্রয় করা হয়।

Leave a Reply

আন্দোলনে আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান…

অনলাইন ডেস্ক : ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নিতে রাজধানীর Read more

বাঞ্ছারামপুরে শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচারের…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির সহনশীলতায় বিশ্বাস করে, শান্তিপ্রিয় Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাক্তন স্কাউটদের বিশেষ সাধারণ সভা

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাক্তন স্কাউটস সংগঠনের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও Read more

আখাউড়ায় মাকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে…

চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মাকে দেখামাত্র অসুস্থ Read more

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ইকুয়েডরকে হারাল ব্রাজিল

অনলাইন ডেস্ক : ইকুয়েডরের বিপক্ষে রদ্রিগোর একমাত্র গোলে জয়ের দেখা Read more

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও হতাহতদের…

চলারপথে রিপোর্ট : বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, জেলা ছাত্রদল, যুবদলের Read more

মালয়েশিয়ায় একদিনে অভিযানে ২২২ বাংলাদেশি আটক

অনলাইন ডেস্ক : মালয়েশিয়ার কেদাহ রাজ্যে অভিযান চালিয়ে ২২২ জন Read more

নবীনগরে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী…

চলারপথে রিপোর্ট : উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতের কিংবদন্তি ‘সুরসম্রাট’ খ্যাত Read more

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

চলারপথে রিপোর্ট : আজ ৬ সেপ্টেম্বর ‘সুরসম্রাট’ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর Read more

জাতীয় সঙ্গীতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে উদীচীর…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় সঙ্গীতের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে Read more

সালমান শাহকে হারানোর আজ ২৮ বছর

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের বাঁক ঘোরানো তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা Read more

দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে আহত প্রায়…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের Read more

নাসিরনগরে কৃষকলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

নাসিরনগর, 16 March 2023, 1083 Views,

নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়ন কৃষকলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আজ ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সকালে স্থানীয় আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নাজির মিয়া।

সাবেক ইউপি সদস্য মধু মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলন উদ্বোধন করেন উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি মোঃ অলি মিয়া। প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম নুরে আলম।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রুমা আক্তার, কৃষকলীগ নেতা আলী আশরাফ ও আমির হোসেন ফারুক ।

বক্তব্য রাখেন কৃষকলীগ নেতা এম.এ কাশেম, মোহাম্মদ গোলাম আলী, মো: ইলিয়াছ মিয়া, গৌরদাস ভোমিক, নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।

সম্মেলনে মোঃ গোলাম হোসেনকে সভাপতি ও ইউনুস মিয়া ও সোহরাব হোসেনকে সহ-সভাপতি, মোঃ ইলিয়াছ মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া,শাহেদ মিয়াকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , মোখলেছুর রহমানকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট সদর ইউনিয়ন কৃষকলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

নাসিরনগরে ছদ্মবেশে জমিতে নেমে কাঁধে করে ধরে আনলেন ডাকাত

নাসিরনগর, 23 March 2024, 324 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে ছদ্মবেশে এক জীবন মিয়া (৫০) নামে এক ডাকাতকে ধরে কাঁধে করে তুলে নিয়ে আসেন পুলিশ। পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ডাকাত জীবন পুলিশকে কামরালেও হাল ছাড়েনি পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের একটি জমি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত জীবন মিয়া হরিপুর গ্রামের হুরন আলীর ছেলে। তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে থানায় একাধিক ডাকাতি মামলা আছে। সম্প্রতি সে মাধবপুর-হরিপুর সড়কে ডাকাতি করতে শুরু করে।

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জীবনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ। ডাকাত জীবনকে গ্রেপ্তারের দায়িত্বে থাকা নাসিরনগর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস.আই) রুপন নাথ আরো একজন কর্মকর্তা ও তিন পুলিশ কনস্টেবলকে নিয়ে হরিপুরে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন জীবন তার সঙ্গীদের দিয়ে একটি জমিতে বসে ইয়াবা সেবন করছিলো। তখন পুলিশ সদস্যরা সেখানে সাদা পোশাকে অবস্থান নেয়।

এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা গিয়ে জীবন ও তার সঙ্গীদের কাছে ইফতার করার জন্য পানি চায়। তখন এক পর্যায়ে জীবনকে আটক করে পড়ানো হয় হাতকড়া।

এ সময় জীবন মিয়া পুলিশ কনস্টেবল রানার হাতে কামড় দিয়ে ও ধস্তাধস্তি করে হাতকড়া নিয়েই দৌঁড়ে পালায়। পুলিশ সদস্যও ছুটে গিয়ে আবার তাকে আটক করে।

এক পর্যায়ে এএসআই মোঃ কামরুল হাতে কাঁধে তুলে নেন। কিছুদূর আনার পর তাকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কড়া পুলিশ পাহারায় থানায় নিয়ে আসা হয়।

এ ব্যাপারে এস.আই রূপন নাথ জানান, পাঁচজন মিলে এ অভিযান চালানো হয়। জীবন খুবই ধুর্ত। সে পালানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তাকে বাধ্য হয়ে কাঁধে তুলে নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় রানা নামে পুলিশ কনস্টেবল আহত হওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সোহাগ রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জীবন ডাকাত খুবই ধুর্ত প্রকৃতির। তাকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছিলো না। গোপন সংবাদে এ অভিযান চালানো হয়। শনিবার দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

নাসিরনগরে মাদকাসক্ত ছেলেকে পুলিশে দিলেন বাবা

নাসিরনগর, 25 May 2024, 258 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে বিকাশ সূত্রধর (৩৬) নামে এক মাদকাসক্ত সন্তানকে পুলিশে দিয়েছেন বাবা। বিকাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের দক্ষিণদিয়া গ্রামের তারাপদ সূত্রধরের ছেলে।

২৪ মে শুক্রবার নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরানুল হক ভূঁইয়া মাদকাসক্ত ওই যুবককে এক বছরের কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা জরিমানা করেন।

বিকাশের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকাশ নেশা করে এলাকায় হাঙ্গামা করেন, বাড়ির লোকজনকে মারধর করেন। তার অত্যাচারে তাকে ছেড়ে চলে গেছেন স্ত্রী। বিকাশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ পরিবারসহ আশপাশের লোকজন।

শুক্রবার বাবাসহ এলাকার লোকজন বিকাশকে আটক করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গেলে তাকে এ সাজা দেওয়া হয়।

বাবা তারাপদ সূত্রধর বলেন, ছেলের অত্যাচার আর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এলাকার লোকজন নিয়ে আটক করে এখানে নিয়ে আসছি। বিকাশের অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ। তাই বাবা হয়ে পুলিশে দিলাম সন্তানকে।

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরানুল হক ভূঁইয়া জানান, ছেলেটি মাদকাসক্ত। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। মাদক বন্ধে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

নাসিরনগরে তীব্র গরমে গাছতলায় ক্লাস নেন শিক্ষক

নাসিরনগর, 5 June 2023, 812 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
তীব্র গরম আর লোডশেডিং এর কারণে ক্লাসে যখন বসাই যায় না তখন শিক্ষার্থীদের নিয়মিত গাছতলায় ক্লাস নিচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজের একজন প্রভাষক। পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের ওই শিক্ষকের নাম মো. মানিরুল হোসাইন। একাডেমিক ভবনের সামনে গাছতলায় সোমবার বেলা ১টায় দেখা যায় ক্লাস নিচ্ছেন তিনি।

জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কি.মি. দূরে অবস্থিত চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজ হাওরের উচ্চ শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। বর্তমান সময়ে লোডশেডিং আর তীব্র গরমে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে যেতে চায় না। উপজেলা সদরের তুলনায় আশেপাশের ইউনিয়ন গুলোতে লোডশেডিং এর মাত্রাও ব্যাপক। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত গাছতলায় ক্লাস নিবেন ওই শিক্ষক।

২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মান্নান মিয়া জানান, সকালে কিছুটা তাপমাত্রা কম থাকলেও বেলা ১১টার পর আর ক্লাসে বসা যায় না। কারেন্ট তো থাকেই না। দুপুর বেলায় তো ক্লাস করার কথা ভাবাই যায় না। স্যার গাছ তলায় ক্লাস নেওয়ায় আমাদের গরম কম লাগে আর ক্লাসও মিস হয় না।

আরেক শিক্ষার্থী জোনাকী বেগম জানান, আমরা গরমের কারণে ক্লাসে বসতে পারি না। বিদ্যুৎ তো থাকেই না। অনেকে গরম সহ্য করতে না পেরে কলেজে আসে না আবার আসলেও চলে যায়। গাছ তলায় ক্লাস করলে এতটা গরম লাগে না।

শিক্ষক মো. মানিরুল হোসাইন বলেন, গরমের কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসে বসতে পারে না। অনেকে আবার কলেজে আসতেও চায় না। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা হাতে সময় তেমন নেই। তাই গাছতলাই পড়াই, তবু পড়ুক।

চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওমর আলী বলেন, তীব্র গরমে আমার ওই শিক্ষক গাছ তলায় ক্লাস নেয়। আমি তার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

আখাউড়া, কসবা, জাতীয়, নাসিরনগর, বিজয়নগর, রাজনীতি, সরাইল, 9 January 2023, 5473 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু। দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি হিসেবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’
এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছেন। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবেই লিখা হয়- ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।’
জনগণ নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছো, তোমরা রক্ত দিয়েছো, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘একটা কথা-আজ থেকে বাংলায় যেন আর চুরি-ডাকাতি না হয়। বাংলায় যেন আর লুটতরাজ না হয়। বাংলায় যারা অন্য লোক আছে অন্য দেশের লোক, পশ্চিম পাকিস্তানের লোক বাংলায় কথা বলে না, তাদের বলছি তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। আর আমি আমার ভাইদের বলছি তাদের উপর হাত তুলো না আমরা মানুষ, মানুষ ভালোবাসি। ‘তবে যারা দালালি করেছে যারা আমার লোকদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হবে এবং শাস্তি হবে’ উল্লেখ করে জাতির পিতা বলেন, ‘তাদের বাংলার স্বাধীন সরকারের হাতে ছেড়ে দেন, একজনকেও ক্ষমা করা হবে না। তবে আমি চাই স্বাধীন দেশে স্বাধীন আদালতে বিচার হয়ে এদের শাস্তি হবে। আমি দেখিয়ে দিতে চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালি রক্ত দিতে জানে, শান্তিপূর্ণ বাঙালি শান্তি বজায় রাখতেও জানে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমায় আপনারা পেয়েছেন। আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে। আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোড়া হয়েছিলো। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু আসে যদি আমি হাসতে হাসতে যাবো। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাবো না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না। এবং যাবার সময় বলে যাবো জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকার তাঁর নির্দেশিত যুদ্ধ পরিচালনা করে। নয় মাসের যুদ্ধের এক পর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানী বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে সরকার পরিচালনা করে অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারিকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশ বলে গণপরিষদ গঠন করে নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশের জন্য একটি সংবিধান উপহার দেয়া হয় এবং যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। বাসস।