চলারপথে রিপোর্ট :
একই বিদ্যালয়ে পাশাপাশি দুটি ভবন। একটি নির্মাণের চার বছর পর আরেকটি নির্মাণ করা হয়। পুরাতন ভবনটির সব ঠিক থাকলেও পরবর্তীতে নির্মাণ করা ভবনটি মাত্র ১৭ বছরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের পিলারে পলেস্তারা খসে পড়ে দেখা দিয়েছে ফাটল এবং বের হয়ে এসেছে রড। বিদ্যালয়ের ছাদ থেকেও খসে পড়ছে পলেস্তারা। ছাদের বেশ কয়েকটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হলেও মেলেনি কোনো সাড়া। ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান।
এমন চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের খড়িয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের খড়িয়ালা পূর্বপাড়ায় ১৯৬৮ সালে খড়িয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ে ২৪৭ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এর মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী ১০৮ ও মেয়ে শিক্ষার্থী ১৩৯ জন আছে। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও একজন সংযুক্তি শিক্ষকসহ পাঁচজন আছেন।
২০০১-২০০২ অর্থ বছরে বিদ্যালয় চত্বরের পূর্বদিকে একটি পাকা ভবন এবং ২০০৫-০৬ অর্থবছরে পশ্চিমদিকে আরেকটি পাকাভবন নির্মাণ করা হয়। দুটি ভবনই পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ২০০৫-২০০৬ সালে নির্মাণ করা বিদ্যালয়ের পশ্চিমদিকের ভবনের নিচের পিলার, বিমের পলেস্তরা খসে পড়েছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় রড বের হয়ে গেছে। পশ্চিমদের ভবনে শ্রেণিকক্ষ, বারান্দা, দপ্তরের ছাদের ওপর একাধিক জায়গায় ফাটল আছে। খসে পড়ছে পলেস্তরা। এর মধ্যেই প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগমসহ অন্য শিক্ষকরা ঝুঁকি নিয়েই সেখানে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। পশ্চিমদিকের জরাজীর্ণ ভবনে দুটি শ্রেণিকক্ষ, একটি দাপ্তরিক কাজ ও শিক্ষকদের বসার জন্য একটি কক্ষ এবং শৌচাগার আছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমদিকের ভবনে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত প্রাক প্রাথমিকের এবং সাড়ে ১২টা থেকে সোয়া ৪টা পর্যন্ত পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলে। পাশের ভবনে দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির পাঠদান চলে। প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগম গত বছরের শেষ দিকে বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনের কথা উল্লেখ করে নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি লিখেন। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভবনটির দুরবস্থার কথা জানালেও কোনো কাজ হয়নি। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই সেখানে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল হাই, রোমান মিয়া, জোনাকি আক্তার জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করতে তাদের ভয় লাগে। ছাদের রড বের হয়ে গেছে। স্কুলের ছাদ থেকে সিমেন্ট খসে খসে পড়ে। সিঁড়ির দেওয়ালও ভেঙে গেছে। সিঁড়ির দিকের ফাটল দেখলে ভয় লাগে। ভয় নিয়ে আমরা ক্লাস করি।
স্থানীয় হানিফ মিয়া বলেন, চার বছর আগে নির্মাণ করা ভবন ভালো আছে। পরে নির্মাণ করা ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ ভবনে আতঙ্ক নিয়ে চলে শিক্ষা কার্যক্রম।
খড়িয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগম বলেন, সর্বশেষ ২০২২ সালের শেষের দিকে বিদ্যালয়ের একটি ভবনের জরাজীর্ণের অবস্থা উল্লেখ করে নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। আগেও বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাঠদান চালানোর জন্য বিকল্প কোনো ভবন নেই। তাই বাধ্য হয়েই জরাজীর্ণ ভবনে শ্রেণির কার্যক্রম এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাতে হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, জেলা ও সব উপজেলার জরাজীর্ণ ভবনের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের তালিকায় এ বিদ্যালয়ের নামও আছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে মহাসড়কের পাশে পার্কিং করা একটি যাত্রীবাহি অটোরিক্সাকে একটি কাভার্ডভ্যান চাপা দিলে শিশুসহ ৪ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হন। আজ ২১ আগস্ট সোমবার দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর বাসস্ট্যান্ডে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বড়ইবাড়ি গ্রামের মোঃ সোহেল মিয়া (২৭), একই গ্রামের নাজমুল মিয়ার ছেলে মোঃ জিলানী (৮), একই ইউনিয়নের শাখাইতি গ্রামের জাফর আলীর ছেলে মোঃ আসকর মিয়া (৬০) ও কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের আবদুর রশীদের ছেলে মোঃ উজ্জ্বল মিয়া (৩৭)।
আহতরা হলেন, নিহত জিলানীর বাবা নাজমুল মিয়া, মা শাহানা বেগম ও ছোট বোন তাইরিন (দেড় বছর)। আহতদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, দুপুরে ঢাকাগামী একটি কাভার্ডভ্যান আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর বাসস্ট্যান্ড পৌছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোহাগপুর বাসস্ট্যান্ডে পার্কিং করা একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিক্সাযাত্রী সোহেল মিয়া ও জিলানী নিহত এবং আসকর মিয়া, উজ্জ্বল মিয়া, নাজমুল মিয়া, শাহানা বেগম ও শিশু তাইরিন আহত হন।
খবর পেয়ে হাইওয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে হতাহতের উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রেরণ করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আসকর মিয়া ও উজ্জ্বল মারা যায়।
এ ব্যাপারে খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আশুগঞ্জে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় শিশুসহ ৪জন নিহত এবং ৩জন আহত হয়েছে। আমরা নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে প্রেরণ করেছি। এ ঘটনায় যাথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ঘটনার পর পরই কাভার্ড ভ্যানের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। যেসব আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন সেগুলোর একটি। এখানে জাপা তথা জোটের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া (লাঙ্গল প্রতীক)। তবে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁরা জাপার প্রার্থীর পক্ষে থাকবেন না। তাঁরা এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিনের (কলার ছড়ি প্রতীক) পক্ষে থাকবেন।
গত সোমবার রাতে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ের একটি হোটেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাশেদের নেতৃত্বে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আশুগঞ্জের একটি হোটেলে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ঠাকুর সভা করে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাঁরাও জাপার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন না। তবে তাঁরা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নয়, এ নির্বাচনে কাজ করবেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জাপার বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধার (ঈগল প্রতীক) পক্ষে। ওই সভায় উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়া। জিয়াউল হক মৃধা রওশনপন্থী হিসেবে পরিচিত। তিনি জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা করে দল থেকে বহিষ্কৃত হন।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউল হক মৃধা এ আসনে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের মনোনীত (লাঙ্গল) হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ এ আসনে দলীয় প্রার্থী না দিয়ে মহাজোটের প্রধান শরিক জাপাকে ছেড়ে দেয়। ওই নির্বাচনে জিয়াউল হক মৃধার জামাতা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে দেওয়া হয়েছিল লাঙ্গল প্রতীক। তবে সুবিধা করতে না পেরে নির্বাচনের দুই দিন আগে রেজাউল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিএনপির প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার কাছে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন মঈন উদ্দিন। তিনি এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এবারের সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য শাহজাহান আলম। তিনি মাত্র ২ মাস আগে গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মাধ্যমে ৫০ বছর পর এ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী জয় পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক দুই বারের সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা পান ৩৭ হাজার ৭৫৮ ভোট।
জাপার সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে শাহজাহান আলমকে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রত্যাহার করে নিলে লাঙ্গলের প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া হন জোটের প্রার্থী। তবে শুরু থেকেই তাঁকে মেনে নিচ্ছেন না স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং জাপার একটি অংশ।
সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, সাবেক সদস্য জয়নাল উদ্দিন, অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব, পাকশিমুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, চুন্টা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ হাবিবুর রহমান, পানিশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হাসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হোসেন মিয়া, বাবুল হাসেন প্রমুখ।
আবু তালেব বলেন, ‘১৭ ডিসেম্বর জোটের প্রার্থীর (লাঙ্গল) জন্য আমাদের নৌকার প্রার্থীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু এখানে লাঙ্গল প্রতীক প্রার্থীর শ্বশুরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের দ্বন্দ্ব শেষ হচ্ছে না। তাঁদের বিরোধের কারণে আমরা জামাই-শ্বশুর কারও পক্ষেই থাকতে পারছি না। এ ছাড়া আমরা ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কেন্দ্র বা জেলা থেকে কোনো নির্দেশনা আসে কি না। এমনকি উপজেলা থেকেও কোনো নির্দেশনা পাচ্ছিলাম না। ২৬ ডিসেম্বর থেকে আমরা কলার ছড়ির পক্ষে কাজ শুরু করি। এরপর ২৮ ডিসেম্বর উপজেলার তিন নেতা আমাদের বলেন ঈগলের নির্বাচন করার জন্য। তাঁরা আমাদের ওপরের নির্দেশ আছে বলে জানান। আমরা তখন তাঁদের লিখিত নির্দেশনা দেখাতে বলেছি। তাঁরা তখন মৌখিক নির্দেশনার কথা বলেন। আমরা বলেছি, চারটি ইউনিয়নের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যে কলার ছড়ির পক্ষে নেমে গেছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে। আমাদের এখন ঘোষণা হচ্ছে, আমরা কলার ছড়ির নির্বাচন চালিয়ে যাব।’
আবদুর রাশেদ বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিনের পক্ষে আছি। দলের নেতা-কর্মী এবং এলাকার লোকজন তাঁকে নিয়েই আছেন।’
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলায় দিদার হোসেন (১৪) নামের এক কিশোরের এক পা গাছে ঝুলিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধরের ঘটনার মূল হোতা মো. জামিরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
১ মার্চ শুক্রবার দিবাগত রাতে আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জামির গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে গাছের ডালে এক পা বেঁধে ঝুলিয়ে রেখে দিদার হোসেনকে মারধর করে এবং তার পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। অভিযুক্ত জামির উপজেলার চরচালতলা এলাকার বোমা কুদ্দুস মিয়ার ছেলে।
আশুগঞ্জ থানায় তার নামে মোট ৮টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে একই এলাকার চরচারতলা গ্রামের ল্যাংটার ব্রয়লারের সামনে তোফাজ্জলের কাছে নৌকার কাজের পাওনা টাকা চাইতে গেলে দিদারের সঙ্গে তোফাজ্জলের বাকবিতন্ডা হয়। পরে দুপুরে দিদার বাড়ি থেকে রাস্তায় বের হলে একই এলাকার কুদ্দুছ ওরফে বোমা কুদ্দুস মিয়ার ছেলে জামির (৪০), ইসলাম মিয়ার ছেলে তোফাজ্জল (২৮), ইউনুছ মিয়ার ছেলে মাসুদ (৩৮), শাহজাহান মিয়ার ছেলে শাকিল (৩০), হামদু মিয়ার ছেলে আকাশ (৩০) ও হারুন মিয়ার ছেলে নাসির (৪০) দিদারকে ধরে নিয়ে যায়। পরে দিদারকে মিডল্যান্ড পাওয়ার প্লান্টের পাশে নিউ এশিয়া প্রজেক্টের খালি জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর সেখানে একটি কড়ই গাছের ডালে দিদারের ডান পায়ে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে জামিরসহ অন্যরা মোটা রশি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। এরপর দিদারের মাকে মাসুদের মোবাইল দিয়ে কল করে তার ছেলেকে ২ লাখ টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে বলা হয়। এসময় দিদারের মা আশপাশের প্রতিবেশী নিয়ে দৌড়ে ছেলেকে উদ্ধার করতে যায়। সেখানে গিয়ে সে তার ছেলেকে গাছ থেকে নামিয়ে আনার জন্য সবার পায়ে ধরে অনুরোধ করে। টাকা না দিলে দিদারকে নামানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় তারা। পরে দিদারের মা টাকা দিতে রাজি হলে দিদারকে গাছ থেকে নামিয়ে আনা হয়। দিদারের মা বাসায় এসে আশপাশের লোকের কাছ থেকে ধার দেনা করে ৩০ হাজার টাকা জামির ও তোফাজ্জলের কাছে দেয়। জামির, তোফাজ্জল, মাসুদ, শাকিল, আকাশ ও নাসিরসহ সবাই এই বিষয়ে কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দেয়। এই ঘটনায় দিদারের বাবা বাদি হয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে আশুগঞ্জ থানায় জামিরসহ আরো কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাহিদ আহমেদ বলেন, দিদারের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা পেয়ে আমরা আসামিদের ধরতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাই। পরবর্তীতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে অভিযান চালাই। সেখান থেকে মূল হোতা জামিরকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরো জানান, শনিবার সকালে জামিরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। জামিরের বিরুদ্ধে আশুগঞ্জ থানায় মোট ৮টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
স্টাফ রিপোর্টার : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া এই আসনের ৫ বারের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া (কলারছড়ি প্রতীক) বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৮১৭ ভোট।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ভাসানী (লাঙ্গল প্রতীক) পেয়েছেন ৯ হাজার ৫৮৩। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ (মোটর গাড়ি প্রতীক) পেয়েছেন ৩ হাজার ২৩৮ ভোট। আবু আসিফ আহমেদ গত শুক্রবার রাত থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
তবে, পুলিশের দাবি আবু আসিফ নিজেই আত্মগোপন করেছেন। ভোট গণনা শেষে জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন একটি সূত্র এই ফলাফল নিশ্চিত করেছেন।
মো: রবিন মিয়া:
আশুগঞ্জে আল-আমিন (২৫) ও জরিনা বেগম (২০) নামে এক দম্পতি একসাথে আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে ২৫ মে রবিবার রাতে আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের কুড়ের পাড় এলাকায়।
আল-আমিন ওই এলাকার নান্নু মিয়ার ছেলে এবং জরিনা একই ইউনিয়নের নোয়াপাড়ার ইদ্রিস মিয়ার মেয়ে। আল আমিন পেশায় ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চালক ছিলেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
জরিনার ভাই আনোয়ার হোসেন জানান, অভাব-অনটন ও সংসারের টানাপড়েন তাদের প্রতিনিয়ত বিপাকে ফেলছিল। কিস্তিতে কেনা অটোরিক্সাটি কয়েকদিন আগে আল-আমিন বিক্রি করে দেন। এরপর শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। পরে অভাব-অনটন দেখা দিলে তারা একসাথে আত্মহননের পথ বেছে নেন। রবিবার রাতে তারা কেরির ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। রাত ১০টার দিকে দুজনকে উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে গেলে জরিনা জরুরি বিভাগেই মারা যান। কিছুটা সময় লড়লেও রাত ১টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আল-আমিন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহা. বিল্লাল হোসেন বলেন, অভাব-অনটন ও মানসিক কষ্ট থেকেই এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তাদের মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।