চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ২৫ মে সাম্যের কবি, বিরহ ও বেদনার কবি, বিদ্রোহের কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ছিলেন একাধারে প্রেমিক ও বিদ্রোহী।
উপন্যাস, নাটক, সঙ্গীত আর দর্শনেও নজরুলের অনবদ্য উপস্থিতি বর্ণাঢ্য করেছে বাংলা সাহিত্যকে। কণ্ঠশিল্পী, অভিনেতা, সম্পাদক পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অভিমানী এই মানুষ হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলেন নিপীড়িত-অসহায়ের আর্তি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার কবিতা কোটি তরুণের রক্তে জ্বালায় স্ফুলিঙ্গ।
অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (ইংরেজি সাল অনুযায়ী ২৪ মে ১৮৯৯ সাল) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের জীবনের পরতে পরতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়। ১৯১৭ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও।
এরই মাঝে তৎকালীন প্রভাবশালী কবি-সাহিত্যিকদের সংস্পর্শে আসেন তিনি। ১৯২২ সালে প্রকাশ করেন ধূমকেতু পত্রিকা। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য নজরুলকে দেওয়া হয় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। মাত্র ২২ বছর ব্যাপ্তির লেখক জীবনে তিনি রচনা করেছেন প্রায় ৩ হাজার গান, লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস।
সাহিত্যের পাশাপাশি সংগীত ও চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন নজরুল। নিজের পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ধ্রুব’তে অভিনয়ও করেছিলেন। তাই শুধু কবি পরিচয়েই আবদ্ধ নন নজরুল। আসানসোলের রুটি বানানো ছেলেটা এখনও বিশাল এক প্রতিষ্ঠান। না থেকেও যার উপস্থিতি প্রতিদিন।
১৯৭২ সালে কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই মহাবিদ্রোহী ও প্রেমিক পুরুষ। কবির ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
জায়েদুল কবির ভাঙ্গি, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, গাজীপুর :
গাজীপুর সদরের চান্দনা মৌজায় শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার সাথে সম্পর্ক যুক্ত একটি ১০তলা আবাসিক ভবনের খোঁজ পাওয়া গেছে। নথিপত্রে শেখ রেহানার নাম নেই। ভবনটির মালিকানায় তাঁর স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক, দেবর তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও সাবেক এমপি নাজমুল হাসান পাপনের নাম রয়েছে। এলাকাবাসীর কাছে উক্ত ভবনটি রেহানার ভবন হিসেবে পরিচিত। ৬৭ শতাংশ জমির ওপর বিশাল আকৃতির ভবনটির দাম দলিলে দেখানো হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আস্তে আস্তে ভাড়াটিয়ারা ভবন ছেড়ে চলে যান। ভবনটি এখন একেবারে ফাঁকা।
সম্প্রতি চান্দনা মৌজার ৪৪ নম্বর প্লটে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির কলাপসিবল গেটে এখন তালা ঝুলছে। পুরো ভবনের কোথাও আলো নেই। সামনে বসে আছেন নিরাপত্তাকর্মী। নিরাপত্তাকর্মী জানালেন, ভবনটিতে কাউকে ঢুকতে দিতে মানা আছে। অনুরোধের পরও তাই ভবনে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ভবনটির পাশে এ এস টি নিটওয়্যার নামের একটি পোশাক কারখানা রয়েছে। ওই কারখানার মালিক ভবনটি কেনার জন্য বায়না দলিল করেছিলেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানের খবর পেয়ে কেনার প্রক্রিয়া থেকে তিনি সরে আসেন। এ বিষয়ে জানার জন্য চেষ্টা করা হলেও কারখানার মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে রাজবাড়ী যাওয়ার রাস্তা ধরে কিছুদূর এগোনোর পর দেখা মেলে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের। গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিপরীতে উত্তর পাশে ওই ১০তলা ভবনের অবস্থান। ওই এলাকার মানুষের সাথে কথা হলে তারা জানান, বাড়িটির মালিক শেখ রেহানা বলে জানেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, বাড়িটির প্রকৃত মালিক শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক। তাঁর সাথে শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মালিকানাও আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শফিক আহমেদ সিদ্দিক গাজীপুরের সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ২০০১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮ শতাংশ জমির দলিল করেন, দলিল নম্বর ৩৫৫৯। একই তারিখে তিনি আরও ১৫.৫ শতাংশ জমির দলিল করেন, যার দলিল নম্বর ৩৫৬০। শফিক আহমেদ সিদ্দিকের ছোট ভাই তারিক আহমেদ সিদ্দিক একই চৌহদ্দিতে ২০০৪ সালের ২১ মার্চ ১৬.৫০ শতাংশ জমি কেনেন। গাজীপুরের সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল নম্বর ৫৭৮৪।
দুদক সূত্রের ভাষ্য, শফিক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। এই অবস্থায় ১০তলা ভবনের ওই স্থাবর সম্পদটি অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন বলে গোপন সূত্রে জানতে পেরেছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। অনুসন্ধান নিষ্পত্তির আগে ওই সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে অনুসন্ধানে ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ওই সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে দুদক ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর স্পেশাল জজের কাছে আবেদন করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সাত সদস্যের বিশেষ টিম ওই ১০তলা ভবনটির সব বিষয় অনুসন্ধান করছে। ভবনটির দলিলসহ অন্যান্য নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। জমি কেনা ও ভবনটি নির্মাণে অর্থের উৎস কী– সেটা জানার চেষ্টা চলছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
মেহেরপুরে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রয়ের অপরাধে বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স মাসুদ আল নুরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
আজ ১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে মেহেরপুর সদর উপজেলার নতুন মদনাডাঙ্গা বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন মেহেরপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সজল আহমেদ।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সজল আহমেদ জানান, সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা কেজির টিএসপি সার ৩৯ টাকা, ২১ টাকা কেজির ডিএপি সার ৩০ টাকা, ২০ টাকা কেজির এমওপি সার ৩০ টাকা কেজি এবং ২৭ টাকা কেজির ইউরিয়া সার অধিক দামে বিক্রয়, সার ক্রয়-বিক্রয়ের ভাউচার প্রদান ও সংরক্ষণ না করা, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য রাখার অপরাধে বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স মাসুদ আল নুরকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪০ ও ৪৫ ধারায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এসময় জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা রিয়াজ মাহমুদ এবং মেহেরপুর পুলিশ লাইনের একটি টিম উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন ডেস্ক :
জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সিএনজি ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টার দিকে সদর উপজেলার দিগপাইত এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর একজনের মৃত্যু হয়।
নিহতেরা হলেন- সিএনজিচালক আব্দুর রাজ্জাক, যাত্রী এনাম ফকির, আরিফুল ইসলাম, আব্দুল করিম আলাল ও আলম মিয়া মিলিটারি।
স্থানীয়রা জানান, টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি সিএনজির সাথে ঢাকাগামী একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সিএনজি চালকসহ চারজন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে বাকি দুইজনকে হাসপাতালে পাঠালে সেখানে একজনের মৃত্যু হয়। ঘাতক ট্রাক চালককে আটক করতে পারেনি কেউ। সংঘর্ষের পর পরই ট্রাক চলে যায়।
জামালপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ট্রাক ও সিএনজি সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
জামালপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলে পাঁচজনের মরদেহ রয়েছে। এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মরদেহের তথ্য রয়েছে। সিএনজি ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চলারপথে রিপোর্ট :
খাগড়াছড়িতে অবৈধ পথে আসা ৬ লাখ টাকার ভারতীয় সিগারেটসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
আজ ১৩ অক্টোবর শুক্রবার চলা পুলিশের বিশেষ অভিযানে তাদের আটক করা হয়।
এ সময় চোলাই মদ, চুরি হওয়া বিভিন্ন জিনিস জব্দ করা হয়।
খাগড়াছড়ি সদর থানার বিশেষ অভিযানে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ছয় লাখ টাকার ভারতীয় সিগারেট, চোলাই মদ, চুরিকৃত ব্যাটারি উদ্ধারসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গভীর রাতে শহরের শান্তি নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৯০ কার্টুন সিগারেট উদ্ধার জব্দ করা হয়। যার বাজার মূল্য ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এসময় দুটি ইজিবাইকসহ দুইজনকে আটক করা হয়।
আটকরা হলেন- হলেন জেলা সদরের পেরাছড়া এলাকার অরুণ জ্যোতি চাকমা (২৫), দীঘিনালার ধনগোলা চাকমা (৩৪)।
অন্য আটক আসামিরা হলেন- চোলাই মদসহ সদরের ভাইবোনছড়া এলাকার বাসিন্দা প্রভাব চাকমা (২০)। শহরের গঞ্জপাড়া এলাকা থেকে ইজিবাইকের ব্যাটারিসহ মো. সুজন (২৬)। এছাড়া পরোয়ানাভুক্ত আসামি মো. আনোয়ার হোসেন, কামরুল ইসলাম (৪১), মোহাম্মদ আকবর আলী সিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন অপরাধী চক্র সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা নিরাপত্তা জোরদার করেছি। আমাদের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অনলাইন ডেস্ক :
সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া পরিমাণের চেয়ে বেশি খাদ্যদ্রব্য মজুত করলে যাবজ্জীবন বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। আর এই অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য। কাল্পনিক নামে খাদ্যদ্রব্য বিপণনও অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
আজ ৫ জুলাই বুধবার এসব বিধান রেখে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) বিল, ২০২৩’ উত্থাপণ করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর বিরোধী সদস্যদের দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। ১৯৫৬ সালের ফুড (স্পেশাল কোর্ট) অ্যাক্ট এবং ১৯৭৯ সালের ফুডগ্রেইনস সাপ্লাই (প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাকটিভিটি) অর্ডিন্যান্স বাতিল করে নতুন এ আইন করা হচ্ছে।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, এই বিলের মাধ্যমে চালের পোলিশিং বন্ধ করতে পারলে চার লাখ মেট্রিক টন চালের অপচয় রোধ করা যাবে। তিনি বলেন, বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হলেও এই জাতের কোনো ধান বা চালের অস্তিত্ব নেই।
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, কাঁচা মরিচের কেজি ১০০০ টাকা হওয়ার পর ভারত থেকে তড়িঘড়ি করে তা আমদানি করা হয়েছে। তাহলে আমরা কিভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলাম। এই থেকেই বোঝা যায়, দেশে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। যদিও বিষয়টি ভাল বলতে পারবেন মন্ত্রী। কারণ, তিনি নিজেই একজন বড় মাপের গুদাম ব্যবসায়ী। মোকাব্বির খান বলেন, খাদ্যে উদ্বৃত্ত নিয়ে আমরা গর্ববোধ করলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পারিনি। ফলে যে কারণে দেশের প্রায় সকল মানুষ কোনো না কোনো ব্যধিতে আক্রান্ত। এজন্য তিনি রাষ্ট্রের নীতিতে বড় ধরণের পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বিলের সাজাসংক্রান্ত ধারার সমালোচনা করে বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি আর্থিক বা অন্য কোনো প্রকার লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া মজুত করেছিলেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই ধরণের আইন কোথাও শোনা যায়নি। অপরাধ না করলেও তাকে সাজা ভোগ করতে হবে।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এটা একটা ভয়াবহ আইন। এই আইনের আওতায় যে কাউকে যে কোনো সময়ে ধরা যাবে। ঘুষের একটা মহোৎসব শুরু হবে দেশে। যে কাউকে ধরে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়ে দেওয়া যাবে। এই আইনের ফলে দেশের কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে। কৃষকরা ভাল দাম পাওয়ার আশায় অনেক সময় মজুত করেন। তারাও এই আইনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তিনি আইনের সাজা কমানোর জন্য মন্ত্রীকে পরামর্শ দেন।
এসব সমালোচনার জবাবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকার কৃষকবান্ধব। কৃষকদের নানা প্রণোদনা এই সরকার দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রকৃত মজুতদারদের চিহ্নিত করা সহজ বিষয়। কৃষকদের ওপরে এই আইন প্রয়োগের কোনো আশঙ্কা নেই। এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালায় এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার করা হবে। মন্ত্রী বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন এখনো বিদ্যমান রয়েছে। তাতে মজুতদারদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি দেওয়ার সুযোগ থাকলেও সরকার সেই পথে হাটেনি। বোরো মওসুমের ভালো ফলনের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী এবার চাল আমদানির প্রয়োজন হবে না বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এসময় মন্ত্রী বলেন, একজন সদস্য আমাকে গুদাম ব্যবসায়ী বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে তার কোনো গুদাম নেই-এমন দাবি করে মন্ত্রী বলেন, কেউ যদি আমার গুদাম থাকার প্রমাণ করতে পারেন, তাকে ওই গুদাম নিবন্ধ করে দেওয়া হবে।
বিলে খাদ্যদ্রব্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, চাল, ধান, গম, আটা, ভুট্টাসহ যেকোনো প্রকার দানাদার খাদ্যদ্রব্য। বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সরকার নির্ধারিত পরিমাণের বেশি পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য মজুত করলে বা মজুতসংক্রান্ত সরকারের কোনো নির্দেশনা অমান্য করলে, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। তবে এ ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি আর্থিক বা অন্য কোনো প্রকার লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া মজুত করেছিলেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য।
বিলে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বিপণনসংক্রান্ত কিছু অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে ওই রূপ জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করলে তা হবে অপরাধ। খাদ্যদ্রব্যের মধ্য থেকে স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিক অপসারণ বা পরিবর্তন করে উৎপাদন বা বিপণন করলে সেটিও অপরাধ হবে। এ ছাড়া খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশ্রণ করে উৎপাদন ও বিপণন করলে সেটিও হবে অপরাধ। লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা চললেও তা অপরাধ হবে। আর এসব অপরাধের জন্য দুই বছর কারাদণ্ড অথবা অন্যূন ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
বিলে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন–সম্পর্কিত কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ করলে তা হবে একটি অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত থাকবে। এই আদালত ‘খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালত’ নামে অভিহিত হবেন। এই আইনের অধীন কিছু অপরাধের বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালতেও করা যাবে।