শশুর হত্যার যাবত জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী গ্রেফতার

বিজয়নগর, 1 June 2023, 929 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে ২০১৪ সালে শশুর হত্যা মামলার প্রধান আসামী দীর্ঘ ৮ বছর পরে বিজয়নগর থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আসামী হলো উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন এর স্ত্রী মোছাঃ শিপু বেগম (৪৫)। তাঁকে আজ ১ জুন বৃহস্পতিবার ভোর সকালে তার বাবার বাড়ি উপজেলার খাদুরাইল গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়।

তার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত দায়রা জজ এর প্রথম আদালতে শশুর হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং দায়রা ১৩০/১৫। উক্ত মামলার ২০/১১/২০১৯ তারিখে আদালতে মোছাঃ শিপু বেগম এর যাবত জীবন সাজার রায় ঘোষণা করা হয়।

পারিবারিক কলহের জেরে পাইকপাড়া গ্রামের মোঃ জসিম উদ্দিন এর পিতা ও যাবত জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী মোছাঃ শিপু বেগম এর শশুর কাঁছা মালাকে গত ২৫/৯/২০১৪ সালে শ্বাসরুদ্ধ করে শশুরকে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা হলে সে গোপনে বিদেশে চলে যায়। দীর্ঘ ৮ বছর বিদেশে কাটিয়ে গোপনে গত সপ্তাহে দেশে আসলে বিজয়নগর থানা পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেন।

বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রাজু আহমেদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পলাতক আসামী প্রবাস থেকে দেশে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিলে বিজয়নগর থানার একটি চৌকস ঠিম তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আসামীকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

আশুগঞ্জে ইয়াবা ও প্রাইভেটকারসহ ৩জন গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জ উপজেলা পুলিশের বিশেষ অভিযানে ২ হাজার Read more

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সফর

চলারপথে রিপোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সফর করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. Read more

গাঁজা ও পিকআপসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট: আশুগঞ্জে সাড়ে ১২ কেজি গাঁজা ও একটি পিকআপসহ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ক বিশেষ…

চলারপথে রিপোর্ট : কোন রাজনৈতিক সংগঠনে পদ-পদবী রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস Read more

কিশোর-কিশোরী ও নারী উন্নয়নে উঠান বৈঠক…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে তথ্য ও Read more

আখাউড়া স্থলবন্দরে স্ত্রীসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা…

চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় স্ত্রীসহ Read more

নবীনগরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ চার ডাকাত…

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে চার ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে Read more

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের মতবিনিময় সভা

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) উদ্যোগে মতবিনিময় Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির…

উৎসবমূখর পরিবেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা Read more

ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

কসবায় ১৫২ বোতল ফেনসিডিলসহ রাজু আহমেদ (২৬) নামে একজনকে গ্রেফতার Read more

নবীনগর প্রেসক্লাবের ৩৯ তম বর্ষে পদার্পণ…

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগর প্রেসক্লাবের ৩৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও Read more

লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেস মিনিস্টার হিসেবে…

অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেস উইংয়ে মিনিস্টার Read more

প্রেমের বিয়ের ২ মাস পর সিলিংফ্যানে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলো গৃহবধূ

বিজয়নগর, 22 April 2024, 377 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে শয়ন কক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। পরিবারটিতে শাশুড়ি ছাড়া ঘরে তেমন কেউ নেই। ফলে আত্মহত্যার মতো এমন ঘটনায় প্রতিবেশী ও পরিচিত বন্ধুবান্ধবরা হতবাক হয়ে গেছেন।

গতকাল ২১ এপ্রিল রবিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের বুধন্তী গ্রামের পূর্বপাড়া নিহতের জাপান প্রবাসীর স্বামীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত তরুণী উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়ন কেনা গ্রামের অলি আহমেদের মেয়ে ও বুধন্তী পূর্বপাড়ার জাপান প্রবাসী মো. তানভীর আহমেদের স্ত্রী মোসা. মুন্নী আক্তার (২৫)।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দুই মাস আগে একে অপরকে পছন্দ করে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের কিছু দিন পর স্বামী জাপানে চলে যায়। ইসলামপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রঞ্জন কুমার ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, কিছু দিন আগে কেনা গ্রামের মুন্নীর সঙ্গে জাপান প্রবাসী তানভীরের বিয়ে হয়। সন্ধ্যায় সে স্বামীর ঘরের সিলিংফ্যানে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর আসল রহস্য জানা যাবে।

বিজয়নগরে পুকুরে ভেসে উঠল সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি

বিজয়নগর, 20 January 2024, 566 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগরে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি উদ্ধার করেছে বিজয়নগর থানা পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ ২০ জানুয়ারি শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকার ইয়াকুব আলী চৌধুরী সড়ক সংলগ্ন দক্ষিণ পার্শ্বের পুকুরে মুখ বাধা অবস্থায় একটি বস্তা ভেসে উঠে। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিজয়নগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বস্তাটি পুকুর থেকে উদ্ধার করে।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম জানান, বস্তার মুখ খুলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত ৫টি টুপি, ১টি ব্যাগ, ২টি হেলমেট, ২টি বেল্ট, ১টি ক্যাপ, ৫টি রেংক ব্যাজ, ৫টি নেইম প্লেট।

যাহাতে মহসিন নামটি লেখা, ১টি প্রসেস যাহাতে ক্যাপ্টেন মহসিন নামটি লেখা, ৩টি কেমোফ্লাগ ক্রিম, ১টি ব্যাজ, ২ জোড়া পিটি সু, ১টি টেপ সাদৃশ সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়। এসব জিনিস পাওয়ায় আমার নিকটতম আর্মি ক্যান্টনমেন্টগুলোতে খবর পাঠিয়েছি। তবে আমাদের প্রাথমিক ধারনায় হয়তো কোন ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে এসব ব্যবহার করত।

ইউএনওর বিরুদ্ধে করা ছিনতাই মামলা খারিজ, বাদী-আইনজীবীকে তিরস্কার

বিজয়নগর, 31 May 2023, 931 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। গত ২৯ মে সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (তৃতীয়) আদালতের বিচারক আসমা জাহান নিপা মামলাটি খারিজ করে দেন। পাশাপাশি মামলার বাদী এবং বাদীপক্ষের আইনজীবীকে মামলাটির জন্য তিরস্কার করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর গ্রামের মো. দলিলুর রহমানের ছেলে মো. আশিকুর রহমান ( ৪১) তার মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন। পরবর্তীতে বিচারক অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি পক্ষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করে- যা বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চক্রটি প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এবং সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চক্রান্তের আশ্রয় নিয়েছে। উক্ত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

উল্লেখ্য, গত ২১ ডিসেম্বর ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে মোবাইল ফোন হারান আশিকুর রহমান। এ বিষয়ে তিনি আশুগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে ওই মোবাইল ফোনটিতে ইউএনওর নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম ব্যবহৃত হচ্ছে।

ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম-সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ

বিজয়নগর, 27 April 2023, 1167 Views,
ফাইল ছবি

মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত

চলারপথে রিপোর্ট :
দাড়িয়াপুর এলাকায় ঢাকাগামী মালবাহী ট্রেনের ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে ঢাকার সঙ্গে আপ লাইনে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

আজ ২৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সহকারী স্টেশন মাস্টার জসিম মিয়া।

জানা গেছে, অতিরিক্ত গরমে রেললাইন বেঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দাড়িয়াপুরে মালবাহী কন্টেইনারের একটি ওয়াগনের ১২টি চাকা লাইনচ্যুত হয়েছে।

আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

আখাউড়া, কসবা, জাতীয়, নাসিরনগর, বিজয়নগর, রাজনীতি, সরাইল, 9 January 2023, 6068 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু। দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি হিসেবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’
এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছেন। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবেই লিখা হয়- ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।’
জনগণ নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছো, তোমরা রক্ত দিয়েছো, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘একটা কথা-আজ থেকে বাংলায় যেন আর চুরি-ডাকাতি না হয়। বাংলায় যেন আর লুটতরাজ না হয়। বাংলায় যারা অন্য লোক আছে অন্য দেশের লোক, পশ্চিম পাকিস্তানের লোক বাংলায় কথা বলে না, তাদের বলছি তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। আর আমি আমার ভাইদের বলছি তাদের উপর হাত তুলো না আমরা মানুষ, মানুষ ভালোবাসি। ‘তবে যারা দালালি করেছে যারা আমার লোকদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হবে এবং শাস্তি হবে’ উল্লেখ করে জাতির পিতা বলেন, ‘তাদের বাংলার স্বাধীন সরকারের হাতে ছেড়ে দেন, একজনকেও ক্ষমা করা হবে না। তবে আমি চাই স্বাধীন দেশে স্বাধীন আদালতে বিচার হয়ে এদের শাস্তি হবে। আমি দেখিয়ে দিতে চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালি রক্ত দিতে জানে, শান্তিপূর্ণ বাঙালি শান্তি বজায় রাখতেও জানে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমায় আপনারা পেয়েছেন। আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে। আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোড়া হয়েছিলো। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু আসে যদি আমি হাসতে হাসতে যাবো। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাবো না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না। এবং যাবার সময় বলে যাবো জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকার তাঁর নির্দেশিত যুদ্ধ পরিচালনা করে। নয় মাসের যুদ্ধের এক পর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানী বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে সরকার পরিচালনা করে অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারিকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশ বলে গণপরিষদ গঠন করে নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশের জন্য একটি সংবিধান উপহার দেয়া হয় এবং যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। বাসস।