অনলাইন ডেস্ক :
বাংলা পঞ্জিকা মতে পয়লা আষাঢ় আজ। ১৪৩০ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসের প্রথম দিন আজ। আষাঢ়ের প্রথমদিনেও আকাশে নেই মেঘের ঘনঘটা। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি নেই। অথচ বর্ষার বৃষ্টিতে পুরাতন জঞ্জাল ধুয়েমুছে জেগে ওঠে প্রাণচাঞ্চল্যে। আষাঢ় নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। এ মাসের মধ্য দিয়েই বাংলার প্রকৃতিতে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় প্রিয় ঋতু বর্ষার। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাল তমাল, ঝুঁই, শাল পিয়াল আর মরাল কপোতের বন বীথিকায় চোখে পড়ে বকুল, কদম, জারুল, পারুল, কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়াসহ অসংখ্য ফুল।
সবুজের সমারোহে নতুন প্রাণের বার্তা নিয়ে এসেছে আষাঢ়। আকাশ ছেয়েছে মেঘের ঘনঘটায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে আঘাঢ়ে প্রথম দিনে বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে এবং এবার বর্ষায় বেশি বৃষ্টি হতে পারে।
মেঘদূতের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে আষাঢ়। গাছের পাতা, টিনের চাল কিংবা ছাদের রেলিং ছুঁয়ে এবং খোলা আকাশের প্রান্তর জুড়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ার দিন। সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকলার অঙ্গন আষাঢ় বন্দনায় নিবেদিত, উচ্ছ্বসিত। কবির কবিতায়, শিল্পীর সুরে-গানে, চারুশিল্পীর তুলির আঁচড়ে, চলচ্চিত্রে, নকশিকাঁথার ফোঁড়ে ফোঁড়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ ভাণ্ডারে বর্ষার বৃষ্টির রূপবর্ণনা রয়েছে।
যদিও কয়েক দিন আগে থেকে কালবৈশাখীকে সঙ্গী করে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেশে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। গ্রীষ্মের রুদ্র প্রকৃতির গ্লানি আর জরাকে ধুয়ে মুছে প্রশান্ত স্নিগ্ধতা ও সবুজে ভরে তোলে আষাঢ়। বাংলা সনের তৃতীয় মাস। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে জুন-জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আষাঢ় মাস। এ মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। গ্রীষ্মের দাবদাহ শেষে আষাঢ়ে বৃষ্টির ছোঁয়ায় বাংলার প্রকৃতি যেন ফিরে পায় প্রাণ। নতুন আনন্দে জেগে উঠে প্রকৃতি।
আষাঢ় মানেই মেঘ, বৃষ্টি, প্রেম, নতুন প্রাণ, জেগে ওঠার গান। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামল বাঙলার কৃষি নবজন্ম পায় বর্ষার বৃষ্টিতে। আষাঢ়ের প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। কদম ফুলের মতো তুলতুলে নরম, রঙিন স্বপ্ন দুই চোখের কোণে ভেসে ওঠে, ঠিক যেমন করে আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়।
ঋতু পরিবর্তিত চিরায়ত ধারায় আষাঢ়-শ্রাবণ এ দুই মাসকে ঘিরে আসে বর্ষাকাল। কদম, কেয়া আর কেতকীর নয়নাভিরাম রূপের পসরা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছল নৃত্যের আবাহন নিয়ে আসে বৃষ্টি। বাঙালি মননে সবচেয়ে বেশি রোমান্টিকতা-আধ্যাত্মিকতার সুর বাজে এই বর্ষায়।
পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। বর্ষায় আবেগ ও অনুভূতির জোয়ারে ভাসেননি এমন কবি, সাহিত্যিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। শুধু যে কবি-সাহিত্যিক, তা নয়-সাধারণ মানুষও। কালীদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ বা নির্মলেন্দু গুণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে হুমায়ূন আহমেদ- কেউ বর্ষাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি।
অপরূপ রূপবতী মেঘবতীকে সঙ্গী করে বাংলায় আসে বর্ষা। বহুকাল আগে মহাকবি কালীদাস তার ‘মেঘদূত’ কাব্যে আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে বিরহ কাতর যক্ষ মেঘকে দূত করে কৈলাশে পাঠিয়েছিলেন তার প্রিয়ার কাছে। এর আগে বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতি লিখেছিলেন: ‘এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর, এ ভরা ভাদর, মাহ ভাদর; শূন্য মন্দির মোর।’
‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ দিয়ে প্রণয় নিবেদন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার ‘বর্ষা-মঙ্গল’ কাব্যে লাবণ্যস্নিগ্ধ রূপবতী বর্ষাকালকে নিয়ে লিখেছেন, ‘ওগো সন্ন্যাসী, কী গান ঘনাল মনে। গুরু গুরু গুরু নাচের ডমরু, বাজিল ক্ষণে ক্ষণে। তোমার ললাটে জটিল জটার ভার, নেমে নেমে আজি পড়িছে বারম্বার, বাদল আঁধার মাতাল তোমার হিয়া, বাঁকা বিদ্যুৎ চোখে উঠে চমকিয়া।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাছে বর্ষাকে মনে হয়েছে ‘বাদলের পরী’। তিনি লিখেছেন:রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে, কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরর্ষে।’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মা নদীর মাঝি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে, হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিন- এ বর্ষা এক বিপুল বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত। কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘গ্রীষ্ম চলিল, বর্ষা আসিল, আষাঢ়ে নামিল ঢল;/বুনো পাখি সব ডাকে অবিরল: ‘বাওয়া ক্ষেত কর তল, এই তো কখন নেমেছে বৃষ্টি, অবিরাম তবু ঝরছে; না পেয়ে উপায় রাখালের দল ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরছে।’
আষাঢ়ের বৃষ্টিতে খাল বিল পানিতে ভরে ওঠে। বর্ষায় প্রধানত পদ্ম ও শাপলা ফুলের সমারোহ দেখা যায়। এগুলো নদী-নালা, খাল-বিলে ফুটতে শুরু করেছে। কদম, চালতা, নিশিপদ্ম, সুলতানচাঁপা, কেয়া, চাঁদমালা, কামিনী, চামেলি, ঝুমকো লতা, মালতি, লিলি ইত্যাদি ফোটে এ সময়। কয়েক প্রজাতির বিদেশি ফুলও ফোটে এই বর্ষায়। শুধু ফুল নয়, বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিডও ফোটে এই সময়। এগুলোকে বর্ষার ফুলও বলা যায়। এ বর্ষায় মেলে মুখরোচক ফল কাউফল, ডেউয়া, লটকন, বিলেতি গাব, বাতাবি লেবু বা জাম্বুরা। এ ছাড়া আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, চালতা, তাল ইত্যাদি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলও পাওয়া যায় এ ঋতুতে।
বর্ষা আমাদের জন্য অপরিহার্য এক ঋতু। বৃষ্টি না হলে শস্যাদি জন্মাবে না, বেড়ে উঠবে না প্রাণ। বৃষ্টির অভাবে মাটি যখন অনুর্বর হয়ে যায়, তখন বর্ষা এসে তা উর্বর করে। আমাদের নদী, মাঠ, ঘাটের দেশ বর্ষায় ভরে ওঠে সবুজে শ্যামলে। একঘেয়ে যান্ত্রিক জীবনে বর্ষা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। শহরে বায়ু দূষণ বন্ধ করে বৃষ্টি। অন্যদিকে বাংলার কৃষি ও অর্থনীতি বৃষ্টিনির্ভরশীল। যথাযথ বৃষ্টিপাত ফসল ফলাতে সহায়তা করে।
প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর বর্ষাকে স্বাগত জানাতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগর সংসদ বর্ষাবন্দনা অনুষ্ঠান করছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সূত্রধর অর্জন সেতার বাজানোর মাধ্যমে আয়োজন এগিয়ে দেন। এ সময় তবলা বাজান হরিপদ সূত্রধর। বর্ষা উৎসবে নৃত্য, সঙ্গীত, বর্ষাকথন ও আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হবে।
এবার অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সারাদেশে ৫৫ হাজার তালগাছ রোপণ করা আলোচিত ব্যক্তি চিত্তরঞ্জন দাস। প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করেছে বর্ষা বরণের। সরকারি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও নানা আয়োজনের দেখা মিলবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
দাউদকান্দিতে মো. মহিউদ্দিন নামের একজনকে হত্যা করে কাটা হাত নিয়ে হেঁটে চলা সেই যুবককে তার সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
আজ ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শহীদুল্লাহ্ প্রধান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গ্রেফতার আনিস (২৪) চান্দিনার শালিখা এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে। তিনি দাউদকান্দির গৌরিপুর এলাকায় নানা বাড়িতে থাকতেন। অপরজন শাকিল মিয়া (২৪) গৌরিপুর এলাকার মতি মিয়ার ছেলে।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শহীদুল্লাহ বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ডের পর গা ঢাকা দেন ঘাতক আনিস, শাকিলসহ অন্যান্যরা। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত শনিবার রাতে আনিস ও শাকিলের অবস্থান শনাক্ত করা হলে ওইদিন রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক আনিস ও শাকিল জানান, মাদকের টাকা নিয়ে মহিউদ্দিনের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব চলছিল। সেই দ্বন্দ্বের জেরেই তাকে হত্যা করা হয়। এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় আরও কয়েকজন।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারের পর ২৯ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেলে আনিস ও শাকিলকে আদালতে তোলা হলে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এ ঘটনায় জড়িত বাকিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার দাউদকান্দির ওলানাপাড়া এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জেরে মহিউদ্দিন নামের এক যুবককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যার পর মহিউদ্দিনের ডান হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে এক হাতে চাপাতি অন্য হাতে কাটা হাত নিয়ে হেঁটে যাওয়ার একটি সিসিটিভি ফুটেজের ক্লিপ ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নিহত মহিউদ্দিন ওলানপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে।
অনলাইন ডেস্ক :
গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি) নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। আজ ৩০ নভেম্বর শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার চাপাইল এলাকায় মধুমতী পার্কে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ দলের ঘোষণা দেন নবগঠিত দলের আহ্বায়ক মো. সাইফুর রশিদ চৌধুরী।
এ সময় দলের তিন যুগ্ম আহবায়ক জুলিয়াছ খান ঠাকুর, শেখ ফরিদ আহমেদ ও মো. ইয়ার আলী উপস্থিত ছিলেন।
আহ্বায়ক মো. সাইফুর রশিদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তাদের কিংস পার্টির অংশ হিসেবে বিবেচনা না করে দেশের একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ মানে শেখ হাসিনা, বিএনপি মানে খালেদা জিয়া।
তারা এই ধারণা থেকে বের হয়ে জনগণের ভোটে নেতা নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাষ্ট্র সংস্কার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণে নতুন ঘোষিত বিজিপি দল ৩২টি প্রস্তাবনাও বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। সূত্র : কালেরকণ্ঠ
অনলাইন ডেস্ক :
চট্টগ্রামে শিশুকে অপহরণ করে বিক্রির অভিযোগে মামা-মামিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার নগরের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে নরসিংদী থেকে ওই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেফতার তিনজন হলেন–ভোলার মনপুরা উপজেলার ভাসানখালী গ্রামের মুজিবুর রহমান মজিদ, তাঁর স্ত্রী আরজু বেগম এবং নরসিংদী সদর উপজেলার বগারগোত এলাকার আবুল কালাম।
পুলিশ জানায়, গত শনিবার দুপুরে কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোড থেকে আপন বোনের শিশুপুত্রকে অপহরণ করেন মজিদ। সন্তান না পেয়ে সোমবার কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন মা নূপুর আক্তার। পুলিশ ওই দিন রাতেই কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকা থেকে মজিদ ও আরজুকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবুল কালামকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁর তথ্য অনুযায়ী নরসিংদী সদর উপজেলার বগারগোত এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির জানান, শিশুটিকে অপহরণের পর আবুল কালামের মাধ্যমে এক লাখ টাকায় নরসিংদীর এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। মজিদ দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শিশুটিকে মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি ॥ সংশ্লিষ্টদেরকে নোটিশ
স্টাফ রিপোর্টার:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ব্রোকেন স্টোন বা চূর্ণ পাথরের ঘোষণা দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ২৭০০ টন পাথরের ধুলা (ডাস্ট)। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির অভিযোগে ছাড়পত্র মিলছে না কাস্টমসের। যে কারণে প্রায় এক মাস ধরে আখাউড়া স্থলবন্দরে এই ডাস্ট বা ধুলাগুলো পড়ে আছে। কাস্টমসের গঠিত তদন্ত কমিটিও ডাস্ট উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা দাবি করেছেন, এতে প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদেরকে। এ জন্য তারা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন। রপ্তানিমুখী আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো চূর্ণপাথর আমদানি হয় গত ১৩ নভেম্বর। এরপর কয়েক দফায় মোট ২৭০০ টন আমদানি করে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানটি আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজের জন্য পাথর আমদানি করেছে। আমদানিকৃত চূর্ণপাথরগুলো প্রতি টন আমদানি হয়েছে ১৩ মার্কিন ডলারে। এগুলো বন্দর থেকে ছাড়ানোর কাজ পায় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট খলিফা এন্টারপ্রাইজ। তবে কাস্টমস থেকে ছাড়পত্র নিতেই বাঁধে বিপত্তি। প্রথমবারের মতো আমদানি হওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ছাড়পত্র দেওয়ার কথা জানায় কাস্টমস। পরবর্তীতে এগুলো পরীক্ষা করে পাথরের বদলে ডাস্ট আনা হয়েছে জানিয়ে আটকে দেয়া হয়। ফলে প্রতিদিনই বন্দর কর্তৃপক্ষকে মাশুল বাবদ প্রায় ৩৬ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে।
অভিযোগ উঠেছে- আমদারিকারক প্রতিষ্ঠান ভাঙা পাথরের ঘোষণা দিয়ে ডাস্ট এনেছে। এজন্য কাস্টমসের তরফ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে রিপোর্ট দেওয়া হয় ডাস্ট হিসেবে। তবে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানান কাস্টমসের কর্মকর্তারা।
এদিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে চূর্ণ পাথর বা ডাস্ট আমদানির অনুমতি না থাকায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তাদেরকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট খলিফা এন্টারপ্রাইজকেও কার্যার্থে একই চিঠি দেওয়া হয়। সিএন্ডএফ এর মালিক হলেন আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো.তাকজিল খলিফা কাজল।
খলিফা এন্টার প্রাইজের প্রতিদিন নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম দফা আনার পর বলা হয় সব আনার পর অনুমতি দেওয়া হবে। এখন বলা হচ্ছে এ ধরণের পাথরের অনুমতি নেই। এখন পাথর আটকে থাকায় আমরা লোকসানের মুখে পড়েছি।’
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত করে আমদানি করা পণ্য ডাস্ট হিসেবে পাওয়া গেছে। এ ধরণের পণ্য আমদানির অনুমতি নেই। এখন এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।’
চলারপথে রিপোর্ট :
ইউএনওর বোন পরিচয়ে হতদরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ, চাকরিসহ নানান সরকারি অনুদান পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না নামে এক নারী।
এ ঘটনায় প্রতারক স্বপ্নাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ঘেরাও করে স্মারকলিপি দেন ভুক্তভোগী হতদরিদ্র নারীরা।
অভিযুক্ত প্রতারক নাসিমা আক্তার স্বপ্না আদিতমারী টিএনটি পাড়ার নুর ইসলামের মেয়ে।
ভুক্তভোগীরা জানান, গ্রামীণ হতদরিদ্র বেকার নারীদের স্বাবলম্বী করার প্রতিশ্রুতিতে সেলাইসহ নানান প্রশিক্ষণ ও মাসিক ১০ হাজার করে সম্মানী দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি দুই/তিন হাজার করে কয়েকশ নারীর কাছ থেকে টাকা নেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না। একই সঙ্গে তাদের মহিলা বিষয়ক, সমাজসেবা, সমবায় ও যুব উন্নয়ন দফতরের বিভিন্ন সরকারি ভাতাসহ নানান সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে চার/পাঁচ হাজার করে টাকা আদায় করেন তিনি। নাসিমা আক্তার স্বপ্না নিজেকে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বোন পরিচয় দিয়ে গ্রামীণ নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেন।
প্রথমদিকে নিজেকে ইউএনওর বোন পরিচয় দিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে আদিতমারী মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ব্যানার ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ চালু করেন। যা দেখে গ্রামীণ নারীরা সত্য বলে মেনে নিয়ে তার প্রতারণার ফাঁদে পা বাড়ান। এভাবে পুরো উপজেলায় জাল বিস্তার করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না।
চার/পাঁচ মাস আগে স্থানীয়রা বিষয়টি ইউএনওকে মৌখিকভাবে জানালে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স থেকে স্বপ্নার প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেন। পরে প্রতারক স্বপ্না কৌশলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিজ বাড়ি আদিতমারী হ্যালিপ্যাড এলাকায় স্থানান্তরিত করেন। এরই মাঝে প্রথম দফায় প্রশিক্ষণ নেওয়া নারীদের প্রশিক্ষণের তিন মাস মেয়াদ শেষ হলেও সম্মানী পাননি। ফলে সম্মানী নিয়ে নারীদের সঙ্গে কয়েক দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে স্বপ্নার। প্রতিবাদকারী নারীদের শায়েস্তা করতে স্বপ্নার রয়েছে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী।
এতেই শেষ নয়, অনেক বেকার নারীকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে চার/পাঁচ লাখ করে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন স্বপ্না। চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে স্বপ্না সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নিকট আত্মীয় পরিচয় দিতেন বলেও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।
চাকরি, সরকারি অনুদান বা প্রশিক্ষণের ভাতা না পেয়ে একপর্যায়ে ভুক্তভোগীরা তার প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও প্রতারক স্বপ্নার প্রতারণা বন্ধ না হওয়ায় ফুঁসে ওঠেন নারীরা।
প্রতারিত ও ভুক্তভোগী শত শত হতদরিদ্র নারী ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে প্রথমে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে থানার গেটে মানববন্ধন করে প্রতারক স্বপ্নার গ্রেপ্তার দাবি করেন। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে নারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদিতমারী ইউএনও অফিস ঘেরাও করে দ্রুত প্রতারক স্বপ্নার গ্রেপ্তার দাবি করেন। এ সময় একই দাবিতে ইউএনওকে স্মারকলিপি দেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী সাথী বেগম বলেন, প্রশিক্ষণে সম্মানী ও সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা বলে স্বপ্না ইউএনওর বোন ও মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আমাদের কাছে টাকা নেন। ইউএনওর বোন জন্যই স্বপ্না মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে অফিস করেছিলেন। এটাই আমাদের বলে প্রতারণা করেছিলেন। ইউএনওর বোন ছাড়া সরকারি অফিসে তার প্রশিক্ষণ হত না। এটা ভেবে আমি টাকা দিয়েছি। এছাড়া অভিযোগ দিয়েও যখন তার প্রতারণা বন্ধ হয়নি। তখন আমরা ভেবেছি, হয়ত স্বপ্না ইউএনও এবং মন্ত্রীর আত্মীয় হবে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নাসিমা আক্তার স্বপ্নাকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রশিদা বেগম বলেন, আদিতমারী মহিলা উন্নয়ন সমিতি স্বপ্নার মায়ের। চার মাস আগে প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে তার মাকে এ ব্যানার ব্যবহারে নিষেধ করা হয়। পরে তারা ব্যানার ছাড়াই এসব প্রতারণা করছে। তাদের কোনো ফান্ড বা প্রজেক্টও নেই। এটা তাদের প্রতারণা বলে মনে হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিআর সারোয়ার বলেন, স্বপ্না প্রতারণা করতে আমার বোন বলে পরিচয় দিতে পারে, কিন্তু বোন তো দূরের কথা তাকে আমি চিনিও না। প্রতারণা একটি ফৌজদারি অপরাধ। তাই ভুক্তভোগীদের মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্মারকলিপির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।