অনলাইন ডেস্ক :
বাংলা পঞ্জিকা মতে পয়লা আষাঢ় আজ। ১৪৩০ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসের প্রথম দিন আজ। আষাঢ়ের প্রথমদিনেও আকাশে নেই মেঘের ঘনঘটা। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি নেই। অথচ বর্ষার বৃষ্টিতে পুরাতন জঞ্জাল ধুয়েমুছে জেগে ওঠে প্রাণচাঞ্চল্যে। আষাঢ় নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। এ মাসের মধ্য দিয়েই বাংলার প্রকৃতিতে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় প্রিয় ঋতু বর্ষার। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাল তমাল, ঝুঁই, শাল পিয়াল আর মরাল কপোতের বন বীথিকায় চোখে পড়ে বকুল, কদম, জারুল, পারুল, কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়াসহ অসংখ্য ফুল।
সবুজের সমারোহে নতুন প্রাণের বার্তা নিয়ে এসেছে আষাঢ়। আকাশ ছেয়েছে মেঘের ঘনঘটায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে আঘাঢ়ে প্রথম দিনে বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে এবং এবার বর্ষায় বেশি বৃষ্টি হতে পারে।
মেঘদূতের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে আষাঢ়। গাছের পাতা, টিনের চাল কিংবা ছাদের রেলিং ছুঁয়ে এবং খোলা আকাশের প্রান্তর জুড়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ার দিন। সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকলার অঙ্গন আষাঢ় বন্দনায় নিবেদিত, উচ্ছ্বসিত। কবির কবিতায়, শিল্পীর সুরে-গানে, চারুশিল্পীর তুলির আঁচড়ে, চলচ্চিত্রে, নকশিকাঁথার ফোঁড়ে ফোঁড়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ ভাণ্ডারে বর্ষার বৃষ্টির রূপবর্ণনা রয়েছে।
যদিও কয়েক দিন আগে থেকে কালবৈশাখীকে সঙ্গী করে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেশে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। গ্রীষ্মের রুদ্র প্রকৃতির গ্লানি আর জরাকে ধুয়ে মুছে প্রশান্ত স্নিগ্ধতা ও সবুজে ভরে তোলে আষাঢ়। বাংলা সনের তৃতীয় মাস। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে জুন-জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আষাঢ় মাস। এ মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। গ্রীষ্মের দাবদাহ শেষে আষাঢ়ে বৃষ্টির ছোঁয়ায় বাংলার প্রকৃতি যেন ফিরে পায় প্রাণ। নতুন আনন্দে জেগে উঠে প্রকৃতি।
আষাঢ় মানেই মেঘ, বৃষ্টি, প্রেম, নতুন প্রাণ, জেগে ওঠার গান। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামল বাঙলার কৃষি নবজন্ম পায় বর্ষার বৃষ্টিতে। আষাঢ়ের প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। কদম ফুলের মতো তুলতুলে নরম, রঙিন স্বপ্ন দুই চোখের কোণে ভেসে ওঠে, ঠিক যেমন করে আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়।
ঋতু পরিবর্তিত চিরায়ত ধারায় আষাঢ়-শ্রাবণ এ দুই মাসকে ঘিরে আসে বর্ষাকাল। কদম, কেয়া আর কেতকীর নয়নাভিরাম রূপের পসরা ও পেখম খোলা ময়ূরের উচ্ছল নৃত্যের আবাহন নিয়ে আসে বৃষ্টি। বাঙালি মননে সবচেয়ে বেশি রোমান্টিকতা-আধ্যাত্মিকতার সুর বাজে এই বর্ষায়।
পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। বর্ষায় আবেগ ও অনুভূতির জোয়ারে ভাসেননি এমন কবি, সাহিত্যিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। শুধু যে কবি-সাহিত্যিক, তা নয়-সাধারণ মানুষও। কালীদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ বা নির্মলেন্দু গুণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে হুমায়ূন আহমেদ- কেউ বর্ষাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি।
অপরূপ রূপবতী মেঘবতীকে সঙ্গী করে বাংলায় আসে বর্ষা। বহুকাল আগে মহাকবি কালীদাস তার ‘মেঘদূত’ কাব্যে আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে বিরহ কাতর যক্ষ মেঘকে দূত করে কৈলাশে পাঠিয়েছিলেন তার প্রিয়ার কাছে। এর আগে বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতি লিখেছিলেন: ‘এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর, এ ভরা ভাদর, মাহ ভাদর; শূন্য মন্দির মোর।’
‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ দিয়ে প্রণয় নিবেদন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার ‘বর্ষা-মঙ্গল’ কাব্যে লাবণ্যস্নিগ্ধ রূপবতী বর্ষাকালকে নিয়ে লিখেছেন, ‘ওগো সন্ন্যাসী, কী গান ঘনাল মনে। গুরু গুরু গুরু নাচের ডমরু, বাজিল ক্ষণে ক্ষণে। তোমার ললাটে জটিল জটার ভার, নেমে নেমে আজি পড়িছে বারম্বার, বাদল আঁধার মাতাল তোমার হিয়া, বাঁকা বিদ্যুৎ চোখে উঠে চমকিয়া।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাছে বর্ষাকে মনে হয়েছে ‘বাদলের পরী’। তিনি লিখেছেন:রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে, কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরর্ষে।’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মা নদীর মাঝি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে, হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিন- এ বর্ষা এক বিপুল বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত। কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘গ্রীষ্ম চলিল, বর্ষা আসিল, আষাঢ়ে নামিল ঢল;/বুনো পাখি সব ডাকে অবিরল: ‘বাওয়া ক্ষেত কর তল, এই তো কখন নেমেছে বৃষ্টি, অবিরাম তবু ঝরছে; না পেয়ে উপায় রাখালের দল ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরছে।’
আষাঢ়ের বৃষ্টিতে খাল বিল পানিতে ভরে ওঠে। বর্ষায় প্রধানত পদ্ম ও শাপলা ফুলের সমারোহ দেখা যায়। এগুলো নদী-নালা, খাল-বিলে ফুটতে শুরু করেছে। কদম, চালতা, নিশিপদ্ম, সুলতানচাঁপা, কেয়া, চাঁদমালা, কামিনী, চামেলি, ঝুমকো লতা, মালতি, লিলি ইত্যাদি ফোটে এ সময়। কয়েক প্রজাতির বিদেশি ফুলও ফোটে এই বর্ষায়। শুধু ফুল নয়, বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিডও ফোটে এই সময়। এগুলোকে বর্ষার ফুলও বলা যায়। এ বর্ষায় মেলে মুখরোচক ফল কাউফল, ডেউয়া, লটকন, বিলেতি গাব, বাতাবি লেবু বা জাম্বুরা। এ ছাড়া আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, চালতা, তাল ইত্যাদি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলও পাওয়া যায় এ ঋতুতে।
বর্ষা আমাদের জন্য অপরিহার্য এক ঋতু। বৃষ্টি না হলে শস্যাদি জন্মাবে না, বেড়ে উঠবে না প্রাণ। বৃষ্টির অভাবে মাটি যখন অনুর্বর হয়ে যায়, তখন বর্ষা এসে তা উর্বর করে। আমাদের নদী, মাঠ, ঘাটের দেশ বর্ষায় ভরে ওঠে সবুজে শ্যামলে। একঘেয়ে যান্ত্রিক জীবনে বর্ষা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। শহরে বায়ু দূষণ বন্ধ করে বৃষ্টি। অন্যদিকে বাংলার কৃষি ও অর্থনীতি বৃষ্টিনির্ভরশীল। যথাযথ বৃষ্টিপাত ফসল ফলাতে সহায়তা করে।
প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর বর্ষাকে স্বাগত জানাতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগর সংসদ বর্ষাবন্দনা অনুষ্ঠান করছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সূত্রধর অর্জন সেতার বাজানোর মাধ্যমে আয়োজন এগিয়ে দেন। এ সময় তবলা বাজান হরিপদ সূত্রধর। বর্ষা উৎসবে নৃত্য, সঙ্গীত, বর্ষাকথন ও আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হবে।
এবার অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সারাদেশে ৫৫ হাজার তালগাছ রোপণ করা আলোচিত ব্যক্তি চিত্তরঞ্জন দাস। প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করেছে বর্ষা বরণের। সরকারি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও নানা আয়োজনের দেখা মিলবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে চালকের সহকারী মো. মামুন (৩৫) মারা গেছেন। এ সময় ওই বাসে থাকা অন্তত ১৫ যাত্রী আহত হয়। এদের মধ্যে ৬ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বরিশাল পাঠানো হয়েছে।
আজ ১০ জুলাই সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কুয়াকাটা মহাসড়কের নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মোহাম্মাদপুরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মামুন পটুয়াখালী জেলার লেবুখালীর মো.দেলোয়ার মিয়ার ছেলে।
স্থানীয় ও আহত যাত্রীদের সূত্রে জানা যায়, আল্লাহর রহমত (বরিশাল মেট্রো- ব ১১-০০৯৩) নামের বাসটি কুয়াকাটা থেকে যাত্রী নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। পথিমধ্যে সড়কে বেপরোয়া গতিতে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটর সাইকেল ও যাত্রীবাহী অটো রিক্সাকে ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খাদে উল্টে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই হেলপার মামুনের মৃত্যু হয়।
কলাপাড়া থানার এসআই জহিরুল ইসলাম জানান, তারা দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত একজনের মরদেহ উদ্ধার করেন। আহতদের উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে দুর্ঘটনার পরই চালক পালিয়ে গেছে।
কলাপাড়া থানার ওসি আলী আহম্মেদ বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত এক জনের মৃত্যু হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।
চলারপথে রিপোর্ট :
মানসিক স্বাস্থ্য একটি সর্বজীনন মানবাধিকার এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পাবনায় নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা: শাফকাত ওয়াহিদ এর নেতৃত্বে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি হাসপাতাল চত্ত্বর প্রদক্ষিণ করে হাসপাতাল গেটে এসে শেষ হয়। পরে হাসপাতাল হল রুমে একটি সাইন্টিফিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা: শাফকাত ওয়াহিদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পাবনা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা: মো. উবাইদুল্লাহ ইবনে আলী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পাবনা মেডিকেল কলেজের ইএনটি বিভাগের অধ্যাপক ডা: আহম্মেদ তাউস, পাবনা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা: এ এম. শফিকুল হাসান, পাবনা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা: এম ডি. রায়হানুর রহমান, পাবনা মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ আলী, পাবনা জেলা হিউম্যান রাইটস কমিটির ইউনিট কো-অর্ডিনেটর ব্লাস্ট মেম্বার এম ডি. আলমগীর হোসেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাবনা মানসিক হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা: মো. এহিয়া কামাল, পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: এম ডি. রাজিবুর রহমান, পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা: এ কে এম. শফিউল আযম, পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: আহসান আজিজ সরকার, ডা: আঞ্জুমান-ই- ফেরদৌস, ডা: আফরিন জান্নাতুল ফেরদৌস, ডা: আসমা খাতুন, ডা: মো. রুহিদ হোসেন, ডা: মো. মুশফিকুর রহমান, ডা: মো. মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।
অনলাইন ডেস্ক :
আজ জাতীয় চা দিবস। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশের সংকল্প, রপ্তানিমুখী চা শিল্প’। দিবসটি উদযাপনে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আলোচনা অনুষ্ঠান এবং মেলা আয়োজন করা হয়েছে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
চা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে চা শিল্পের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে দেশের চা শিল্প এখন টেকসই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। গত দুই দশকে উত্তরাঞ্চলে সমতল ভূমিতে চা আবাদে বিপ্লব ঘটে গেছে।
চা দিবস উদযাপনের বিস্তারিত তুলে ধরতে ব্রিফিং করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর আগমনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। চায়ের ওপর তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে চা শিল্পে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৮টি ক্যাটেগরিতে বিভিন্ন চা কোম্পানি ও ব্যক্তির হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, দেশে বর্তমানে ১৬৮টি বৃহৎ চা বাগান এবং প্রায় ৮ হাজার ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে। চা শিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী সব উদ্যোগের ধারাবাহিকতা ও সরকারের নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দেশের চা শিল্প টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
আরো উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব সেলিম উদ্দিন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ প্রমুখ।
চলারপথে ডেস্ক :
সব প্রকার বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমতা ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ ও সংঘাত চাই না, নর-নারী-শিশু হত্যা আমাদের তীব্রভাবে ব্যথিত করে। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। টেকসই শান্তি বিরাজমান থাকলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শান্তির নীতি অনুসরণ করি।’
তিনি সব প্রকার বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমতা ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে শুক্রবার দেওয়া এক বাণীতে এ আহ্বান জানান।
২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে বিশ্বের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে। অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি স্মরণ করেন একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতে আত্মোৎসর্গকারী সব শহিদদের, যাদের তাজা রক্তের শপথ বীর বাঙালিদের অস্ত্রধারণ করে স্বাধীনতা অর্জন না করা পর্যন্ত জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছর ধরে শৃঙ্খলিত বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার প্রয়াসে সারা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ প্রথম গ্রেফতার হন এবং কারাবরণ করেন। সেই থেকে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর একুশ দফা, ’৬২-এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানসহ সব আন্দোলন সংগ্রামে অত্যন্ত দূরদর্শীতার সঙ্গে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন।
তিনি ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আজ হতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় এদেশটির নাম হবে পূর্ব-পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশ’। তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করেছিলেন এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য পুরো জাতিকে প্রস্তুত করেছিলেন। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ’৭০-এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাক-সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা টালবাহানা শুরু করে। বৈঠকের মাধ্যমে সময় ক্ষেপণ করে তারা নিরস্ত্র বাঙালি নিধনের উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন; ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করেন এবং ১৫ মার্চ থেকে ৩৫ দফা নির্দেশনা পালনের আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশ সারা পূর্ব-বাংলায় অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সব প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তার আদিষ্ট পথেই পরিচালিত হতে থাকে। বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার শাসন সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়। ইয়াহিয়া-ভুট্টো বারবার সমঝোতার প্রস্তাব দিতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে এদেশের মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে অটল থাকেন। ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সারা দেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়।
তিনি বলেন, ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেই ইয়াহিয়া গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা সাঁজোয়া ট্যাংক নিয়ে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ পরিচালনা করে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা করতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা এবং রাজারবাগে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষক, বাঙালি পুলিশ ও সামরিক সদস্যদের হত্যা করতে থাকে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। এর অব্যবহিত পূর্বেই জাতির পিতা স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা বার্তা লিখে যান- ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন-চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও’। যা প্রথমে ইপিআর’র ওয়্যারলেসের মাধ্যমে প্রচারিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানিরা বন্দি নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়; এমনকি তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। ১৩ জুন সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস যুক্তরাজ্যের একটি পত্রিকার প্রথম পাতায় বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের নির্মম বর্বরতার বাস্তব চিত্র নির্ভর একটি বিস্তারিত নিবন্ধ প্রকাশ করলে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টি ত্বরান্বিত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হয়, ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারায় এবং গোটা দেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জনগণের বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর আমরা জাতিসংঘের গণহত্যা বিরোধী কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করি। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শান্তির সংস্কৃতির ওপর রেজুলুশন গ্রহণের প্রস্তাব করি, যা ১৯৯৯ সালে গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী জাতিসংঘ ২০০০ সালকে ‘আন্তর্জাতিক শান্তির সংস্কৃতির বর্ষ’ এবং ২০০১-২০১০ সময়কে ‘শান্তির সংস্কৃতি এবং অহিংস দশক’ ঘোষণা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সাল থেকে সব নির্বাচনে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে গত ১৪ বছরের বেশি সময় একটানা তাদের ভাগ্যোন্ননের জন্য কাজ করছি। এরই মধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।’
তিনি বলেন, আমরা ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছি। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে গণহত্যা এড়াতে ভীত-সন্ত্রস্ত ১১ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছি। আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। আমরা ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছি: ভবিষ্যত প্রজন্ম এই পরিকল্পনাকে সময়োপযোগী করে বাস্তবায়ন করতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সব কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।
সূত্র : বাসস
অনলাইন ডেস্ক :
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে ৪ দিনের সরকারি সফরে ২০ জানুয়ারি সোমবার সুইজারল্যান্ডের ডাভোসের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিউল আলম জানান, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট (আজ) রাত ১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
এ সফরে প্রধান উপদেষ্টা জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ এবং থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েংটার্ন শিনাওয়াত্রার সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের কন্যা শেখা লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড, মেটাতে গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট স্যার নিক ক্লেগ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল ড. অ্যাগনেস ক্যালামার্ড এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক ড. এনগোজি ওকোনজো-আইওয়ালার সাথেও বৈঠকে মিলিত হবেন।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বাংলাদেশ নিয়ে একটি পৃথক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে যেখানে বৈশ্বিক ব্যবসায়ী নেতা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান নির্বাহীরা যোগ দেবেন। আগামী ২৫ জানুয়ারি দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের।