চলারপথে রিপোর্ট :
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে মাদ্রাসা পড়ুয়া দুই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আজ ১৫ জুন বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার ঘোঁষগাও ইউনিয়নের পূর্ব জরিপাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো একই এলাকার জ্যুতি মিয়ার মেয়ে লাবীবা (৮) এবং ওমেদ আলীর মেয়ে মুর্শিদা আক্তার (১২)। উভয়েই স্থানীয় ঘোঁষগাও বকুলতলা মহিলা মাদরাসার ছাত্রী ছিল। ঘটনার সততা নিশ্চিত করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকালে মাদরাসা ছুটি হওয়ার পর বাড়ি ফেরার পথে রহিম উদ্দিনের বাড়ি সংলগ্ন স্থানে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে আহতবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে ধোবাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করে। দুই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
অনলাইন ডেস্ক :
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এন ছিদ্দিক বলেছেন, যাত্রীদের চাহিদার বিবেচনায় মেট্রোরেলের যাতায়াতের সময় ১০ মিনিট থেকে কমিয়ে ৮ মিনিটে নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে তা কার্যকর হবে।
আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে ‘সিগন্যাল সিস্টেমে’ ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। সকালে ট্রেন চলাচল শুরুর পর চারটি ট্রিপ শেষে এই সমস্যা দেখা দেয়। তবে এ সমস্যার কারণে ট্রেন চলাচল স্থগিত করা হয়নি, যাত্রা বিলম্ব হয়।
এম এন ছিদ্দিক বলেন, আর কিছুদিন পরেই রমজান শুরু হবে। তখন আমরা কিছু কর্মসূচি দেব। কারণ তখন অফিস টাইম চেঞ্জ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের এখন ১৫২ বার ট্রেন যাতায়াত করছে। যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় আমরা আরো ২৬ বার যাতায়াত বৃদ্ধি করে দিচ্ছি। যে সময়টায় পিক আওয়ার হয়, তখন হেডওয়ের সময়টা ১০ মিনিট থেকে ৮ মিনিটে নিয়ে এসেছি, যা আগামী শনিবার থেকে কার্যকর হবে।
বর্তমানে মেট্রোরেলে গড়ে ২ লাখ ৭০ হাজার যাত্রী চলাচল করছে জানিয়ে জনাব সিদ্দিক বলেন, সবার ভেতরে একটা কনফিউশন থাকে যে, কোন ট্রেন কখন উত্তরা বা মতিঝিল থেকে ছাড়ে? আমরা এ ব্যাপারটা পৃথক করে দিয়েছি। উত্তরা থেকে মতিঝিলের দিকে যে ট্রেন যাওয়া আসা করে, সেখানে আগে ১০ মিনিট পরপর ২টি ট্রেন যাতায়াত করত। এখন তিনটি ট্রেন যাতায়াত করবে। আর মতিঝিল থেকে উত্তরার দিকে সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে ৮টা পর্যন্ত ১০ মিনিট পরপর ট্রেন পাওয়া যাবে। এটা স্পেশাল অফ পিক। তারপর সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৮ মিনিট পরপর ট্রেন চলবে।
অনলাইন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সবসময় দেশে ও বিদেশে মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
আজ ৫ জুলাই বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের সদর দপ্তরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। খবর বাসসের
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সবসময় জনগণের পাশে দাঁড়ায়।’
তিনি বলেন, বাহিনীর সদস্যরা পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি শুধু দেশেই জনগণের পাশে দাঁড়ায় না, অধিকন্তু বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনেও কাজ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের মানবিক সদিচ্ছার কারণে, তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সম্মান পায়। আমি খুব গর্ব বোধ করি, যখন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা তাদের দেশে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করেন।’
প্রধানমন্ত্রী রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গার্ডগুলোর সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি পিজিআরকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের কাজ, দায়িত্ব ও নিষ্ঠা দেখে তিনি মুগ্ধ।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তিনি জানেন যে রেজিমেন্টের সদস্যরা সর্বদা পেশাদারিত্ব, আনুগত্য, শৃঙ্খলা ও আন্তরিকতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে।
তিনি আরো বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টিসহ সকল প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবিলা করে দায়িত্ব পালনে আপনাদের আন্তরিকতা অত্যন্ত প্রশংসিত। এই সুনাম ধরে রাখতে আপনারা সততা ও দেশপ্রেমের সাথে কাজ করবেন‒ এটাই আমার প্রত্যাশা।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ঝুঁকিপূর্ণ রক্ষীদের ঝুঁকি বিবেচনা করে প্রথমে পিজিআর-এর জন্য ঝুঁকি ভাতা চালু করে। ইতোমধ্যেই সরকার গণভবন সংলগ্ন ব্যারাক তৈরি এবং গার্ডদের পরিবারের জন্য ১৪ তলা ভবন নির্মাণের মাধ্যমে আবাসন সমস্যার সমাধান করেছে।
প্রসঙ্গত, জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ৫ জুলাই পিজিআর গঠন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজস্ব উদ্যোগে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের জন্য উপযুক্ত সমর শক্তি গড়ে তুলেছিলেন।
সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করেছি।
তিনি আরো বলেন, বাহিনীগুলোকে সক্ষম করা হয়েছে, যাতে করে তারা বৈশ্বিক বাহিনীগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে, যেখানে তারা অন্যান্য বিশ্ব বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতি-১৯৭৪-এর সাথে সঙ্গতি রেখে ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়ন করছে।
বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলছি, যাতে কখনো অন্যের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যেতে না হয়। আগামী দিনেও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এই কামনা করি।’
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পর উন্নয়ন সহযোগীরা এখন আর আগের বছরগুলোর মতো অনেক শর্ত দেয় না।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ কামাল প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলের চারপাশে হেঁটে সকল অফিসার এবং জুনিয়র কমিশনড অফিসারদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী পিজিআরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটেন।
তিনি ভিভিআইপি দায়িত্ব পালনের সময় গুরুতর আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং পিজিআর সদস্যদের মধ্যে উপহার বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সংশ্লিষ্ট সচিব এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
কুমিল্লায় রেল ব্রিজের ওপর টিকটক ভিডিও করার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মাহবুব আলম সিয়াম (১৬) নামের এক স্কুলছাত্রের মৃত্য হয়েছে। আজ ১৪ জুলাই শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে লালমাই উপজেলার বাগমারা উত্তর বাজার রেল ব্রিজে ওই ঘটনা ঘটে।
নিহত মাহবুব উপজেলার দক্ষিণ হাজাতিয়া গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে। তিনি এ বছর স্থানীয় রহমত আলী মিয়াজী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল প্রত্যাশী ছিলো।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে সিয়াম বাগমারা উত্তর বাজার রেল ব্রিজের ওপর টিকটক ভিডিও তৈরি করছিলো। এ সময় হঠাৎ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেন ব্রিজে উঠে যায়। এতে ট্রেনের ধাক্কায় ওই তরুণের মাথা ফেটে মগজ বেরিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেরে স্বজনরা এসে মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়।
লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ আলম বলেন, রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই নিহতের পরিবার দেহ উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে গেছে। কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
চলারপথে ডেস্ক :
দেশের শিক্ষাবোর্ডগুলোর পরিকল্পনা ছিল আগামী জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ২০২৩ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু করার। তবে বেশিরভাগ কলেজ ও মাদ্রাসায় সিলেবাস শেষ না হওয়ায় এ পরীক্ষা এক মাস পিছিয়ে যাচ্ছে। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আগামী আগস্টে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি। শীগ্রই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে টানা প্রায় দেড় বছর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সশরীরে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া বন্ধ ছিল। সে কারণে এলোমেলো হয়ে যায় শিক্ষাপঞ্জি, যা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। স্বাভাবিক সময়ে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হতো ফেব্রুয়ারিতে। আর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতো এপ্রিলে। গত বছর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হয় গত বছরের মার্চ থেকে। তারাই এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় বসবেন।
এবার পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচিতে পরীক্ষা হলেও প্রশ্নপত্রের ধরন হবে আগের মতোই। করোনার সময় যেমন বেশি প্রশ্নপত্র থেকে কম প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল, এবার সেই সুবিধা নেই। মূলত এসব কারণেই জুলাইয়ে এ বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে এল শিক্ষা বোর্ডগুলো।
অনলাইন ডেস্ক :
সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া পরিমাণের চেয়ে বেশি খাদ্যদ্রব্য মজুত করলে যাবজ্জীবন বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। আর এই অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য। কাল্পনিক নামে খাদ্যদ্রব্য বিপণনও অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
আজ ৫ জুলাই বুধবার এসব বিধান রেখে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) বিল, ২০২৩’ উত্থাপণ করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর বিরোধী সদস্যদের দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। ১৯৫৬ সালের ফুড (স্পেশাল কোর্ট) অ্যাক্ট এবং ১৯৭৯ সালের ফুডগ্রেইনস সাপ্লাই (প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাকটিভিটি) অর্ডিন্যান্স বাতিল করে নতুন এ আইন করা হচ্ছে।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, এই বিলের মাধ্যমে চালের পোলিশিং বন্ধ করতে পারলে চার লাখ মেট্রিক টন চালের অপচয় রোধ করা যাবে। তিনি বলেন, বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হলেও এই জাতের কোনো ধান বা চালের অস্তিত্ব নেই।
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, কাঁচা মরিচের কেজি ১০০০ টাকা হওয়ার পর ভারত থেকে তড়িঘড়ি করে তা আমদানি করা হয়েছে। তাহলে আমরা কিভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলাম। এই থেকেই বোঝা যায়, দেশে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। যদিও বিষয়টি ভাল বলতে পারবেন মন্ত্রী। কারণ, তিনি নিজেই একজন বড় মাপের গুদাম ব্যবসায়ী। মোকাব্বির খান বলেন, খাদ্যে উদ্বৃত্ত নিয়ে আমরা গর্ববোধ করলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পারিনি। ফলে যে কারণে দেশের প্রায় সকল মানুষ কোনো না কোনো ব্যধিতে আক্রান্ত। এজন্য তিনি রাষ্ট্রের নীতিতে বড় ধরণের পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বিলের সাজাসংক্রান্ত ধারার সমালোচনা করে বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি আর্থিক বা অন্য কোনো প্রকার লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া মজুত করেছিলেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই ধরণের আইন কোথাও শোনা যায়নি। অপরাধ না করলেও তাকে সাজা ভোগ করতে হবে।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এটা একটা ভয়াবহ আইন। এই আইনের আওতায় যে কাউকে যে কোনো সময়ে ধরা যাবে। ঘুষের একটা মহোৎসব শুরু হবে দেশে। যে কাউকে ধরে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়ে দেওয়া যাবে। এই আইনের ফলে দেশের কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে। কৃষকরা ভাল দাম পাওয়ার আশায় অনেক সময় মজুত করেন। তারাও এই আইনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তিনি আইনের সাজা কমানোর জন্য মন্ত্রীকে পরামর্শ দেন।
এসব সমালোচনার জবাবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকার কৃষকবান্ধব। কৃষকদের নানা প্রণোদনা এই সরকার দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রকৃত মজুতদারদের চিহ্নিত করা সহজ বিষয়। কৃষকদের ওপরে এই আইন প্রয়োগের কোনো আশঙ্কা নেই। এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালায় এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার করা হবে। মন্ত্রী বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন এখনো বিদ্যমান রয়েছে। তাতে মজুতদারদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি দেওয়ার সুযোগ থাকলেও সরকার সেই পথে হাটেনি। বোরো মওসুমের ভালো ফলনের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী এবার চাল আমদানির প্রয়োজন হবে না বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এসময় মন্ত্রী বলেন, একজন সদস্য আমাকে গুদাম ব্যবসায়ী বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে তার কোনো গুদাম নেই-এমন দাবি করে মন্ত্রী বলেন, কেউ যদি আমার গুদাম থাকার প্রমাণ করতে পারেন, তাকে ওই গুদাম নিবন্ধ করে দেওয়া হবে।
বিলে খাদ্যদ্রব্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, চাল, ধান, গম, আটা, ভুট্টাসহ যেকোনো প্রকার দানাদার খাদ্যদ্রব্য। বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সরকার নির্ধারিত পরিমাণের বেশি পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য মজুত করলে বা মজুতসংক্রান্ত সরকারের কোনো নির্দেশনা অমান্য করলে, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। তবে এ ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি আর্থিক বা অন্য কোনো প্রকার লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া মজুত করেছিলেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য।
বিলে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও বিপণনসংক্রান্ত কিছু অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে ওই রূপ জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করলে তা হবে অপরাধ। খাদ্যদ্রব্যের মধ্য থেকে স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিক অপসারণ বা পরিবর্তন করে উৎপাদন বা বিপণন করলে সেটিও অপরাধ হবে। এ ছাড়া খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশ্রণ করে উৎপাদন ও বিপণন করলে সেটিও হবে অপরাধ। লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা চললেও তা অপরাধ হবে। আর এসব অপরাধের জন্য দুই বছর কারাদণ্ড অথবা অন্যূন ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
বিলে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন–সম্পর্কিত কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ করলে তা হবে একটি অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত থাকবে। এই আদালত ‘খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালত’ নামে অভিহিত হবেন। এই আইনের অধীন কিছু অপরাধের বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালতেও করা যাবে।