অনলাইন ডেস্ক :
সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়া সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু একসময় মুদি দোকান চালাতেন নিজ গ্রাম কামালের বার্তিতে। মুদি দোকান চালিয়েই পরিবার নিয়ে কোনো রকমে দিনাতিপাত করতেন তিনি।
তারপর ঠিকাদারি লাইসেন্স প্রাপ্ত চাচাতো ভাই ইঞ্জিনিয়ার হারুনের সহযোগিতায় বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার নির্মাণ করে অর্থ উপার্জন শুরু করলে দিন পাল্টে যায় বাবুর।
ছাত্রজীবনে জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের রাজনীতি করলেও পরবর্তীতে ভোল পাল্টে রাজনীতি ছেড়ে নিরপেক্ষতার ভান ধরেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে জাতীয় ছাত্র সমাজের প্রথম সারির কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন বাবু। ঠিকাদারি করে টাকা-পয়সা কামিয়ে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ভেড়েন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে যেভাবে সারাদেশের অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন, ঠিক সেভাবেই।
২০১১ সালে আওয়ামী লীগে ভিড়েই ইউপি নির্বাচনে অংশ নেন বাবু। তবে সেবার জয়ী হতে না পারলেও ২০১৪ সালে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন তিনি।
তারপর থেকে বকশীগঞ্জ উপজেলা তথা জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নেন মাহমুদুল আলম বাবু।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকায় খুব সহজেই ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পান। পরে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দ্রুত নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হন বাবু।
জানা যায়, নারী লোভী বাবু টাকা আর ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে চলতেন।
পুলিশের সাবেক এক ডিআইজির চাচাতো ভাই হিসেবে সর্বস্তরে শক্তি প্রদর্শনের দুঃসাহস দেখাতে থাকেন। আরও বেপরোয়া বাবু হয়ে ওঠেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের অঘোষিত সম্রাট!
২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয় তার জীবনে যেন চিরস্থায়ী আশীর্বাদ হয়ে ফিরে আসে। কারণ, ২০১৪ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর আর কোনো সম্মেলন হয়নি। তাই পদে থেকে ২০২১ সালে ফের নৌকার মাঝি হয়ে
ফিরে আসেন মাহমুদুল আলম বাবু।
একদিকে নৌকা প্রতীকের দুইবারের চেয়ারম্যান, অন্যদিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৯ বছরের সাধারণ সম্পাদক। কে ঠেকায় বাবুকে? ক্ষমতার দম্ভে বাবার মতোই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন ছেলে ফয়সালও।
নারী লোভী বাবুর চরিত্র ফাঁস হয়ে যায়, যখন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা আক্তার দৃশ্যপটে আসেন। জানা যায়, সাবিনাকে দুইবার বিয়ে করেন বাবু। দ্বিতীয়বার বিয়ের পর সাবিনার কোলে বাচ্চা আসে। তবে পুনরায় সাবিনাকে অস্বীকার করেন বাবু।
সাবিনা যখন তার অধিকার ফিরে পেতে চান, তখন দুঃসাহসিক সংবাদকর্মী গোলাম রাব্বানী নাদিম একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করতে থাকেন। এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন নারী লোভী দাপুটে ক্ষমতাশালী চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু।
তার বিরুদ্ধে একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করায় নাদিম ও অন্যদের নামে সাইবার ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেন বাবু। কিন্তু মামলার মেরিট না থাকায় তা খারিজ করে দেন ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইবুনালের বিচারক।
আর এই মামলা খারিজের চার ঘণ্টার মধ্যেই হামলার শিকার হন সাংবাদিক নাদিম।
সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিকদের ধারণা, বাবু হয়তো জানতেন নাদিমকে কোনোভাবেই আটকানো যাবে না। তাই আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে থাকেন, নাদিমকে কীভাবে শায়েস্তা করা যায় তা নিয়ে!
মামলা দিয়েও ব্যর্থ হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক নাদিমকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন বাবু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
এরই অংশ হিসেবে বাবু সশরীরে উপস্থিত থেকে হামলার নেতৃত্ব দেন বলে জানিয়েছেন নাদিমের সহকর্মী এবং সহযোগী মুজাহিদ বাবু।
বুধবার (১৪ জুন) রাত ১০টার দিকে অদূরে অন্ধকার গলিতে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলে ফয়সাল ও অন্য সহযোগীদের দিয়ে হামলা করান নাদিমের ওপর। হামলার এক পর্যায়ে ইট দিয়ে থেঁতলে নাদিমকে অচেতন করে পালিয়ে যায় তারা।
পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর রাত ১২টায় সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বিকেল ৩টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিক নাদিমের মৃত্যু হয়।
এদিকে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু মাস্টারমাইন্ড বলে মন্তব্য করেছেন জামালপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) নাসির উদ্দীন আহমেদ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এসপি নাসির বলেন, এই ঘটনার পেছনে যেসব মাস্টারমাইন্ড রয়েছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।
হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘসময় পরও মূল হোতা কেনো আটক হয়নি এবং ওসি বলেছেন, সিসিটিভি ফুটেজে তাকে দেখা যায়নি- এ সম্পর্কে এসপি নাসির বলেন, ওসি সত্যিকার অর্থে ভুল বলেছে। এলআইসি টিম আমার আন্ডারে থাকে। টিম এখন মাঠে আছে। লাইভে বলেছি, লোকেশন দেখেছি, কোনদিকে আছে তারা। পেছন পেছন যাচ্ছে। মাহমুদুল আলম বাবু কিলিং মিশনের নায়ক। সেটা প্রথম থেকেই জানি।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চেয়ারম্যান বাবুর পরিবারের আত্মীয়- এমন অভিযোগের বিষয়ে এসপি নাসির উদ্দীন বলেন, প্রথম থেকে বাবুর নাম আমি বলেছি। সে-ই প্ল্যান মেকার। প্রত্যেকটা জায়গায় বলেছি। আমাদের ব্যাকআপ আছে। আরও মাস্টারমাইন্ড আছে, তারাও বের হয়ে আসবে।
হামলার পেছনে শাহীনা বেগম রয়েছেন- পরিবারের এমন দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের অপরাধ বিজ্ঞান বা আইন বলে ঢাকা থেকে হামলার অংশ হতে পারবে না- এটা সত্য না। যদি নাম আসে আটক করবো, আসামির খাতায় নাম আসলে অবশ্যই আটক করবো। জড়িত থাকলে বা মামলা হলে সবাইকে আটক করা হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ৩০ অক্টোবর সোমবার সকালে এগুলোর উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সৌদি আরবের মদিনার পবিত্র মসজিদ-ই-নববীর ইমাম শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-বুয়াইজান।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে ‘৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন এবং জাতীয় ইমাম সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণ-২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানস্থলে প্রধান একটিসহ তিনটি প্যান্ডেল তৈরি করে সারা দেশ থেকে আসা ইমামগণের সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী প্রথমে মদিনার পবিত্র মসজিদ-ই-নববীর ইমামের সঙ্গে অন্য দুটি প্যান্ডেল পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী এবং পবিত্র মসজিদ-ই-নববীর ইমাম উভয়ই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনুষ্ঠানস্থলে সমবেত ইমামদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ইমাম কাউন্সিলে যোগ দেওয়ার জন্য ইমামদের ধন্যবাদ জানান এবং দেশ ও জনগণের মঙ্গল কামনা করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন যে সরকারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে।
প্রধানমন্ত্রী দুই পবিত্র মসজিদের হেফাজতকারি সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদকেও ধন্যবাদ জানান।
পরে মূল অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ ইমাম এবং আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
আজ নতুন ৫০টি মসজিদ উদ্বোধনের পর এ পর্যন্ত সারা দেশে ৫৬৪টির মধ্যে ৩০০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র চালু হবে। ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম পর্যায়, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি, দ্বিতীয় পর্যায়, ১৬ মার্চ তৃতীয় পর্যায়, ১৭ এপ্রিল চতুর্থ পর্যায় এবং ৩০ জুলাই পঞ্চম পর্যায়ে ৫০টি করে মোট ২৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ২০১৪ সালে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির পর সরকার ২০১৭ সালে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পটি গ্রহণ করেছিল।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো ৪৩ শতাংশ জমির ওপর তিন ক্যাটাগরিতে নির্মিত হচ্ছে। এরমধ্যে জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে চারতলা, উপজেলা পর্যায়ে তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রতিটি মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ওজুর জন্য আলাদা জায়গা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় নামাজ আদায়ের সুবিধা রয়েছে।
এছাড়াও হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র এবং ইসলামি গ্রন্থাগার, অটিজম কর্নার, দাফন কার্যক্রমের ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজাখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্মেলন কক্ষ এবং ইসলামিক দাওয়া, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র এবং দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধা রাখা হয়েছে।
মসজিদ-ই-নববীর ইমাম শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-বুয়াইজান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তরিকত ফাউন্ডেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, মাওলানা ড. মোহাম্মদ কফিলউদ্দিন সরকার সালেহী ও মাওলানা এহসানুল হক আল মোজাদ্দেদী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ধর্ম বিষয়ক সচিব মো. এ হামিদ জমাদ্দার।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলা মডেল মসজিদ এবং কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম-মুসল্লি ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
নওগাঁর মহাদেবপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তিন মুদি দোকানীর ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আজ ১১ মে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা সদরের বাজারে এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ মালামাল বিক্রির দায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর আওতায় মুদি দোকানী বিলাস কুমার ঘোষের ৪ হাজার টাকা, সুজিত কুমার মন্ডলের ৪ হাজার টাকা ও রঞ্জন চন্দ্রের ২ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
মহাদেবপুর থানার এসআই জয় দাস তার সঙ্গে ছিলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক জানান, জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অনলাইন ডেস্ক :
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। আজ ৩১ আগস্ট শনিবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব দাবি উপস্থাপন করে দলটি। সভা শেষে সাংবাদিকদের এমনটা জানান বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে নিহতসহ সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতার ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছি। ৫ মে ও পরবর্তী সময়ে হেফাজতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলোর নেতাদের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলাগুলো এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার দাবি জানিয়েছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তার সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন উল্লেখ করে মামুনুল বলেন, আমরা সহযোগিতা করার প্রত্যয় জানিয়েছি। নির্বাচন ও প্রশাসনসহ প্রতিটি খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছি।
সভায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে লিখিত আকারে যে দাবিগুলো প্রস্তাব করা হয়েছে, তা হলো :
১. প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করাক. নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার: জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগকারীদের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। সে জন্য আসনভিত্তিক বিজয়ী সংসদ সদস্যদের বাইরে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে সংসদে প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা।
খ. নির্বাচনবিধি সংক্রান্ত সংস্কার: প্রার্থীদের নিজস্ব প্রচারণার পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার ও প্রকাশনার ব্যবস্থা করা। যোগ্য, সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা।
২. সাংবিধানিক সংস্কার
ক. বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া একচ্ছত্র ক্ষমতা স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেয়। তাই এ ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ভারসাম্য সৃষ্টি করা।
খ. দুই মেয়াদের বেশি একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা বন্ধ করা।
গ. প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দলীয় পদ থেকে পদত্যাগের বিধান করা।
ঘ. সংসদ সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা।
৩. বিচারব্যবস্থা
ক. বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করা। বিচার বিভাগে সরকারের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখার স্বার্থে বিচারপতি নিয়োগ ও বিয়োগের জন্য জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা।
৪. শিক্ষাব্যবস্থা
শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিতর্কিত বিষয়গুলো বাদ দিয়ে ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষা সংযোজন করা।
৫. পুলিশ ও প্রশাসন
পুলিশ ও প্রশাসনকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের ব্যবহারের পথ বন্ধ করা।
৬. ধর্মীয় আইন
কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী আইন ও নীতি প্রণয়ন না করা।
অনলাইন ডেস্ক :
একজন ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে না পারবেন না, সেই বিধান তৈরিসহ রাষ্ট্র সংস্কারে সেক্টর অনুযায়ী আলাদা আলাদা ১০টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
আজ ৯ অক্টোবর বুধবার দুপুর সোয়া ১২টায় রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
এসময় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, এই ১০ খাতের প্রস্তাব শুধুমাত্র অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য। নির্বাচিত কোনো সরকারের জন্য নয়। এই সরকারের কাছে আসলে আমাদের মোট ৪১টি প্রস্তাব। তার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব আজ গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
খাতগুলো হলো- আইন ও বিচার বিষয়ক সংস্কার, সংসদ বিষয়ক সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা সংস্কার (পুলিশ বাহিনীর সংস্কার, র্যাব বিষয়ক সংস্কার), জনপ্রশাসন সংস্কার, দুর্নীতি, সংবিধান সংস্কার, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্কার (বিরাজমান সমস্যার আলোকে শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাব, সংস্কৃতি সংস্কার), পররাষ্ট্র বিষয়ক সংস্কার ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সংস্কার।
চলারপথে রিপোর্ট :
কনটেইনার ট্রেনের বগি লাইনচ্যুতের ঘটনায় ১৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকার সঙ্গে আপলাইনে চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালীর রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু হয়েছে।
১৯ নভেম্বর রবিবার রাত সাড়ে ১০টায় দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনার ট্রেনটি ঢাকা অভিমুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে কনটেইনার ট্রেনটিকে ২০ কিলোমিটার গতিতে ঢাকায় যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের আউটারে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী কনটেইনার ট্রেনের একটি বগির চারটি চাকা লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় আপলাইনে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালীর ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুর্ঘটনায় অন্তত ৩০০ মিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শতাধিক স্লিপার ভেঙে যায়। পরে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামত এবং স্লিপার পরিবর্তন শেষে দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনার ট্রেনের বগিটি উদ্ধারে কাজ শুরু করে উদ্ধারকারী ট্রেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. জসিম উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনাকবলিত কনটেইনার ট্রেনের বগিটি উদ্ধার কাজ প্রায় ১১ ঘণ্টা পর রাত ৭টা ৫ মিনিটে সম্পন্ন হয়। তবে, আপলাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় সাড়ে ১০টায়।