চলারপথে রিপোর্ট :
সরাইলে নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই বহিষ্কার হলেন উপজেলার সূর্যকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ শাহগীর মৃধা।
গত ১৩ জুন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভায় তাকে বহিষ্কার করা হয় এবং ওই দিনই তাকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে বহিষ্কারের বিষয়টি দেয়া হয়।
তার বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের লিখিত বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে শিক্ষা কমিটি তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, মোঃ শাহগীর মৃধা সরাইলের কালিকচ্ছ পাঠশালা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। তিনি ২০২২ সনের ৭ ডিসেম্বর ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এদিকে তার বহিষ্কারের বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক, সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে ।
সূত্র মতে, মোঃ শাহগীর মৃধার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার পর থেকেই তার মধ্যে স্বৈরাচারী মনোভাবের সৃষ্টি হওয়ায় বিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্যই তা ক্ষতিকারক। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের আদরের ছলে তাদের সাথে অনভিপ্রেত ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল বিভিন্ন পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তার সুপারিশের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভার গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সভাপতি মোঃ শাহগীর মৃধার সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে সূর্যকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামিরা ঝর্ণার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সভাপতিকে বহিষ্কারের চিঠি পেয়েছেন বলে জানান। তিনি আরো জানান, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাকি নতুন সভাপতি নিয়োগ করা হবে তা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ নৌসাদ মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সভাপতি মোঃ শাহগীর মৃধাকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ১৩ জুন থেকেই বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
পবিত্র রমজানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে শতাধিক নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে ১০ টাকার বিনিময়ে সকল ইফতার সামগ্রী দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তারুণ্যের সরাইল।
আজ ১৬ মার্চ শনিবার সকালে উপজেলা সদরের সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক ব্যতিক্রমী ইফতার বাজারের আয়োজন করেছে সংগঠনটি। এই অস্থায়ী বাজার থেকে ১০০টি পরিবার ১০ টাকায় এক কেজি তেল, ছোলা, ছানা, আলু, মুড়ি, খেজুরসহ ৬টি ইফতারের পণ্য কিনতে পেরেছেন।
বাজারে এসময় উপস্থিত ছিলেন, সরাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ আলী মাষ্টার, পুবের আলো’র নির্বাহী সম্পাদক আব্দুল হানিফ, সমাজকর্মী রফিক মিয়াসহ, তারুণ্যের সরাইল সংগঠনের সকল সদস্যবৃন্দ।
১০ টাকায় প্রয়োজনীয় ইফতারসামগ্রী কিনতে পেরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, বাজারে যেখানে ১ লিটার তেলের দাম ১৯০ টাকা সেখানে ৬টি পণ্য মাত্র ১০ টাকায় পেয়েছি। রোজার বাকি দিনগুলো ভালোভাবে কাটবে।
তারুণ্যের সরাইলের সিনিয়র এডমিন রায়হান চৌধুরী অভি বলেন, আমরা এবার এক ব্যতিক্রম আয়োজন করার চেষ্টা করেছি। যেহেতু আমরা ১০ টাকা মূল্য রেখে বিতরণ করেছি তাই আমাদের এ ইফতার সামগ্রী স্বাচ্ছন্দ্যে সকলেই গ্রহণ করতে পেরেছে। দেশ ও প্রবাসের অনেকেই আমাদের সহযোগিতা করেছেন, সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
সরাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ আলী মাষ্টার বলেন, তারুণ্যের সরাইলের কার্যক্রম আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই তারুণ্যের সরাইল একদিন অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) সংসদীয় আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. রেজাউল ইসলাম ভূইয়াকে ওই এলাকার বহিরাগত ও মুসাফির বলা হচ্ছে অন্য প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। এর জবাব দিয়েছেন রেজাউল ইসলাম।
৪ জানুয়ারি বুধবার বিকেলে সরাইলে অনুষ্ঠিত এক নির্বাচনী জনসভায় তিনি জানান, সরাইলে তাঁর বাড়ি আছে, জমি আছে। যেহেতু কথা উঠেছে সেহেতু জয়ী হতে পারলে সরাইলে একটি মুসাফিরখানা করা হবে। ওই মুসাফিরখানায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
উল্লেখ্য, রেজাউল ইসলামের শ্বশুরবাড়ি সরাইল উপজেলায়। তাঁর পৈতৃক বাড়ি জেলার সরাইল উপজেলার কোড্ডা গ্রামে। তবে এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন রেজাউল ইসলামের শ্বশুর, জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা।
রেজাউল ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে প্রথমে দলের নেতা আব্দুল হামিদ ভাসানীকে মনোনয়ন দেয় জাতীয় পার্টি। পরে দলটির প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয় অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলামকে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সমঝোতায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান আলম সাজুকে।
এ অবস্থায় শ্বশুর-জামাইয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন জাতীয় পার্টির নেতারা।
এদিকে জনসভায় রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগে সরাইলে একজনের বাসায় লাঞ্চ করেছিলাম। আমাকে বলা হলো মুসাফির। আল্লাহর দুনিয়ায় সবাই মুসাফির। সেই হিসেবে এটা মেনে নিলাম।
তবে আমি বহিরাগত না। আমার জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কিন্তু সরাইলে আমার বাড়ি আছে, জমি আছে। হলফনামায়ও এটা উল্লেখ করছি আমি। আর যেহেতু আমাকে মুসাফির বলা হয়েছে সেহেতু আমার জায়গায় একটি মুসাফিরখানা করব। তিনতলা ভবন করে এক ও দুই তলা মুসাফিরদের জন্য রাখব। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। শুধু এলাকার মানুষ না, বাইরের মানুষও এ সেবা পাবে।’
চলারপথে রিপোর্ট :
দাঙ্গা ভুলে গ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে ব্যানার হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে শিশু শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া একদল শিশু শিক্ষার্থী এই কর্মসূচি পালন করে। জানা যায়, উপজেলার পল্লী এলাকা পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। একাধিকবার হামলা সংঘর্ষ ভাঙচুর ও মামলার ঘটনাও ঘটেছে। রাত দিন ২৪ ঘণ্টাই একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতো গ্রামবাসী। গত ১৮ই এপ্রিল একটি খাস জমির দখলকে কেন্দ্র দু’দল গ্রামবাসী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। উভয় পক্ষে সহস্রাধিক নারী-পুরুষ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে যোগ দেয়। আহত হয় শতাধিক নারী-পুরুষ। পুলিশ গ্রেপ্তার করে ২০ জনকে। পরে কয়েকশত লোককে আসামি করে পুলিশ মামলা করে।
গ্রেপ্তার এড়াতে নারী-পুরুষ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। গ্রামে বৃদ্ধ, অসুস্থ ও শিশু ছাড়া আর কাউকে খুব একটা চোখে পড়ে না। মাঝে মধ্যে পুলিশ হানা দেয়। ২-৪ জনকে ধরে আনে। এতে করে আতঙ্কে গোটা গ্রামেই এখন বিরাজ করছে ভুতুড়ে অবস্থা। একটি মাধ্যমিক ও দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পূর্বের তুলনায় অনেক কমে গেছে। বিষয়টি ওই গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীদের মনে দাগ কেটেছে। তারা অনেক ভেবে-চিন্তে গতকাল সাদা কাগজে লেখা ব্যানার নিয়ে গ্রামীণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে। এসময় তদের হাতে লেখা ছিল, ‘দাঙ্গা নয়, শান্তি চাই’, ‘ডু নট কোয়ারেল’, ‘দল বেঁধে স্কুলে যেতে চাই’। শিশু শিক্ষার্থীরা জানায়, ঘরে বাবা নেই, ভাই নেই। মাও লুকিয়ে থাকেন। স্কুলে শিক্ষার্থী নেই। বিকালে ইচ্ছামতো খেলতে পারছি না। এভাবে আর ভালো লাগছে না। আমরা ঝগড়া চাই না। সকলে মিলে গ্রামে শান্তি এনে দেন। সকল মানুষকে গ্রামে এনে দেন।
কলেজের প্রভাষক মো. এলাই মিয়া বলেন, ওই শিশুদের আকুতি ও মনের চাওয়া আমাদের বুঝতে হবে। তাদের চাওয়াটাকে পাওয়ায় পরিণত করতে কাজ করতে হবে। শিশুরা শান্তি চায়। গ্রামের সকল সরদার মাতব্বরকে মন খুলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। প্রয়োজনে পাশের গ্রামের লোকজনকে কাজে লাগিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ১৩ মে সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে এক মা তাঁর মাদকাসক্ত ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই ছেলেকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। ওই নারীর ছেলের নাম আজমল শাহ (৩৭)।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বুড্ডা গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে কয়েক বছর আগে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। বছরখানেক ধরে তিনি উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করে আসছেন। নেশার টাকার জন্য আজমল নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি নেশার টাকার জন্য আজমল আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তাঁকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে আজমলের মা-বাবা সব চেষ্টাই করেছেন। কয়েক মাস ধরে আজমলের অত্যাচারে মা-বাবা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তিন বছর আগে স্ত্রীও আজমলকে ফেলে চলে যান।
বাধ্য হয়ে মা এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে কয়েক দিন আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আজমল। এর জের ধরে গতকাল সকালেও আজমল ঘরের আসবাব ভাঙচুর করতে থাকেন। ছেলের অত্যাচার-নির্যাতন সইতে না পেরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় অসহায় মা মনেজা বেগম দুপুর ১২টার দিকে আজমলকে আটক করেন। পরে পুলিশে সোপর্দ করেন।
সোমবার বেলা দুইটার দিকে ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেসবা উল আলম ভূঁইয়া ছুটে যান বুড্ডা গ্রামে। সেখানে ঘটনার সত্যতা পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আজমল শাহকে ১২ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন। মনেজা বেগম ইউএনওর কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ছেলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। তার অপকর্মে আমরা অতিষ্ঠ হইয়া পড়ছি, আমরার জীবন শেষ কইরা ফালাইছে। তার কাছ থেকে আমারে বাঁচান।’
খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে ইউএনও মেসবা উল অলম ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাদকাসক্ত ওই যুবকের অত্যাচারে মা-বাবা ও স্ত্রী অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন। তিনি নিয়মিত মা-বাবাকে মারধরও করতেন। তাঁকে আমরা হাতেনাতে মাদকাসক্ত অবস্থায় পেয়েছি। তিনি দোষ স্বীকার করেছে। তাঁকে এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’