চলারপথে রিপোর্ট :
বিএনপির কর্মকাণ্ডে সমালোচনা করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ হোসেন বলেছেন, বিএনপি মানে বগুড়া-নোয়াখালী পার্টি। এটি কোনো রাজনৈতিক দল নয়।
এটি স্বাধীনতাবিরোধীদের আশ্রয়স্থল। বড় আশা করে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগাযোগ করেছিল। তারা এসে ঘুরেও গেছে। তাদের একটিই প্রশ্ন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরাও চাইছি সেটা। এখন তারা বিপদে পড়ে গেছে। ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াও থেকে তাদের বের হয়ে আসতেই হবে।
আজ ১৪ জুলাই শুক্রবার বিকেলে নবীনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্থানীয় রাজনৈতিক-সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম বলেন, বিএনপি নির্বাচনকে বানচাল করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে যদি নির্বাচন করতে ব্যর্থ হই তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সুতরাং নির্বাচন সময়মতো হবে। সেই নির্বাচনে জনমত কাজে লাগিয়ে কীভাবে আমরা আবারও সরকার গঠন করতে পারি- সেই চেষ্টা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
নবীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন- উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সুজিত কুমার দেব, জেলা পরিষদের সদস্য নাসির উদ্দিন ও সংস্কৃতিকর্মী শুকলা রানী ভট্টাচার্য প্রমুখ। মতবিনিময় সভা শেষে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগরে এক আওয়ামী লীগের নেতাকে গ্রেফতারের দাবিতে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে গ্রামবাসী।
আজ ১১ সেপ্টেম্বর বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার উত্তর কাইতলা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণহাতা গ্রামের হাজারো মানুষ ১নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি অলি মুন্সির বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তারা।
এ সময় ব্রাহ্মণহাতা গ্রামের সজিব নামের এক যুবক অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এলাকার খুনী, হত্যাকারী, দাঙ্গা-ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী, উচ্ছৃঙ্খল ও চিহ্নিত মাদক কারবারি অলি মুন্সি। আওয়ামী লীগের সভাপতি অলি মুন্সির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি হত্যা মামলা রয়েছে। অথচ তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তাকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাই।
আবু হানিফ নামের একজন বলেন, সে আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার সুবাদে তার সহযোগীদের নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অন্যায়-অপকর্মসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কিছু বললে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে নাজেহাল করা হতো। এখন সময় এসেছে তার বিচারের।
তাজুল ইসলাম নামে আরেকজন অভিযোগ করে বলেন, অলি মুন্সি আশপাশের গ্রামে মাদকের স্বর্গরাজ্য কায়েম করেছে। এলাকায় প্রতিদিন নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি বিক্রি করার কারণে যুব সমাজ দিন দিন ধ্বংসের পথে রয়েছে। এছাড়াও অলি মুন্সি ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কাইতলা উত্তর ইউনিয়নের বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি করার মূল হোতা। তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সংলাপে নির্বাচনের রোডম্যাপসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
আজ ৫ অক্টোবর শনিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে সংলাপ শুরু হয়ে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হয়।
এতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানায় বিএনপি।
সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আমরা একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি।
তিনি বলেন, বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন সংস্কার কমিশনে না যায়, সেকথা আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। আমরা বলেছি যে, ফ্যাসিস্ট সরকারের ভুয়া ভোটে নির্বাচিত সকল ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে বলেছি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যেসব প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনার ছিল, তাদের ভুয়া ও ব্যর্থ নির্বাচন, পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন করার অভিযোগে আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান ওনাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার।
বিএনপির দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব বলেন, বিষয়গুলো অত্যন্ত সহযোগিতার সঙ্গে তারা দেখছেন। তারা মনে করেন, আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি, আমাদের দাবিগুলো তাদেরও দাবি।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে সংবিধান ধ্বংস ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের ‘মূল হোতা’ অভিহিত করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
প্রশাসনের ফ্যাসিবাদের অনেক দোসর কর্মরত আছেন জানিয়ে তাদের অপসারণ, জেলা প্রশাসক নিয়োগে নতুন তালিকা এবং যেসব জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিযোগ বাতিল, ফ্যাসিবাদের সময়ের চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের কথা বলেছেন বলে জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তবর্তী সরকারের মধ্যে দুই-একজন আছেন, যারা বিপ্লব-গণঅভ্যুত্থানের যে মূল স্পিরিট তাকে ব্যাহত করছেন, তাদের সরানোর কথা বলেছি। আমরা গত ১৫ বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিতদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য বলে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, আামরা বলেছি যে, বিচার বিভাগের হাইকোর্ট বিভাগে এখন পর্যন্ত পরিবর্তন হয়নি। হাইকোর্ট বিভাগে বেশির ভাগ নিয়োগই ছিল দলীয় ভিত্তিতে এবং প্রায় ৩০ জন বিচারক বহাল তৈবিয়তে কাজ করছেন এখনো। এদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওিয়ার জন্য বলেছি। দলকানা কিছু বিচারক আছেন, তাদের অপসারণের কথা বলেছি। একই সঙ্গে অতিদ্রুত পিপি ও জিপি নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা লক্ষ করেছি, যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে… দুর্নীতি অথবা হত্যার সুনির্দিষ্ট মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে। এটা খুব উদ্বেগজনক। এই বিষয়টা আমরা দেখার জন্য বলেছি।
তিনি বলেন, ২০০৭ সাল থেকে শেখ হাসিনার শাসনামল পর্যন্ত সকল মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা ও প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, শুনতে পাই, কিছু জায়গায় সাবেক মন্ত্রীরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। কীভাবে পালিয়ে যাচ্ছে, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছে এই বিষয়গুলো দেখার জন্য বলেছি।
তিনি বলেন, আজকে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। ভারতে থেকে তাকে কেন্দ্র করে, তার মাধ্যমে যে সমস্ত ক্যাম্পেইন চলছে, যে সমস্ত অপপ্রচার চলছে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে ভারতের সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য এবং তাকে ওই অবস্থা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি, তারা যেন ভারত সরকারের সাথে আলোচনা করে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে কারা আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের একটি দল এসেছে বাংলাদেশে। যারা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে জড়িত আছেন তারা জাতিসংঘের টিমকে সেভাবে সহযোগিতা করছেন না। এ বিষয়ে আমরা বলেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, সনাতনী কিছু মানুষ সবাই না, তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগণকে উস্কে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। হিন্দু কমিউনিটির ওপর নির্যাতন হচ্ছে ইত্যাদি কথা বলছে, যা সর্বৈব মিথ্যা। এটা তাদের সুদূর পরিকল্পনা। এই কথাগুলো গুরুত্বের সাথে বলেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
সংলাপে অংশ নেওয়া বিএনপির অন্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল মঈন খান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এতে সরকারের দিক থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগরে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে নবীনগরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতির সামনে সশস্ত্র সালাম প্রদর্শনের মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন করেন।
সম্মান প্রদর্শন শেষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে জাতীয় সংসদ সদস্যের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
পর্যায়ক্রমে, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, থানাস্ত্রশাসন, পৌরসভা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সহযোগী সংগঠন, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সকাল ১০ ঘটিকায় পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে আলোচনা সভা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল সিদ্দিকের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিউলি রহমান, সহকারী কমিশনার ভূমি মাহমুদা জাহান, ওসি তদন্ত মো. সোহেল, বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম শাহন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকাররম হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল সরকার, সমাজসেবা কর্মকর্তা পারভেজ আহমেদ, মাদকমুক্ত নবীনাগর চাই সংগঠনের সভাপতি মো. আবু কাওসার, প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া মিনাজ, যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন পান্না সহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগণ, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী ও সামাজিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা বঙ্গবন্ধুর ৭ মাচের্র এর তাৎপর্য তুলে ধরে সকল বক্তাগণ বক্তব্য রাখেন এবং আগামী প্রজন্মের নিকট বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ৭ই মাচের্র ভাষণ, স্বাধীনতা যুদ্ধ সকল কিছু সঠিক ভাবে স্কুল কলেজে ছাত্র ছাত্রীসহ আগামী প্রজন্মের নিকট তুলে ধরার জন্য সকলকে অনুরোধ করা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
নবীনগর উপজেলার নাটঘর গ্রামে আগুন লেগে এক কৃষকের দুই গরুসহ গোয়ালঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে ওই কৃ কের প্রায় ৮ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আজ ১৮ আগস্ট রোববার (১৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার নাটঘরের আব্দুর রশিদ ডিলার বাড়ির কৃষক আব্দুর রহমানের গোয়ালঘরে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. হুমায়ূন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বরাতে আব্দুর রহমানের চাচাতো ভাই মো. খোরশেদ আলম জানান, আজ সকালে গোবর পরিষ্কার করার জন্য রান্নাঘর থেকে বাঁশের পাত্র দিয়ে ছাই এনে গোয়ালঘরে রাখা হয়।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সেই ছাই থেকে গোয়ালঘরে রাখা পাটে আগুন ধরে যায়। পরে মুহূর্তেই সেই আগুন পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। গোয়ালঘরে পাট ছাড়াও অনেক পাটখড়ি, লাকড়ি, চাল, চালের পাত্রে নগদ টাকা রাখা ছিল। স্থানীয়রা এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হলেও ততক্ষণে দুটি গরুসহ পুরো গোয়ালঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুনে প্রায় ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে কৃষক পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভির ফরহাদ শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, বিষয়টি জানলাম। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছে গুঞ্জন পাঠাগার। মাত্র ৩টি বই নিয়ে যাত্রা করা গুঞ্জন পাঠাগারে এখন বইয়ের সংখ্যা ১০ হাজার। গ্রামের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা এই পাঠাগারের বই দিয়ে পড়াশুনা করে। ২০০৪ সালের ৩০ মার্চ ছোট একটি টিনের একচালা ঘরে যাত্রা শুরু করা পাঠাগারটি এখন ১ তলা বিশিষ্ট ভবন।
গুঞ্জন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা স্বপন মিয়া (৩২)। তিনি নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের মরহুম স্বপন মিয়ার ছেলে। বর্তমানে স্বপন মিয়া জেলার কসবা উপজেলার একটি বেসরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক।
স্থানীয়রা জানান, ছোট বেলা থেকেই বইয়ের প্রতি আগ্রহ ছিলো স্বপন মিয়ার। ২০০৪ সালে স্বপন মিয়া যখন ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র তখনই তিনি তার বাড়ির একটি টিনের ঘরে মাত্র তিনটি বই দিয়ে পাঠাগারটি চালু করেন। পাঠাগারের নামকরন করেন “গুঞ্জন পাঠাগার”। প্রায় ১৯ বছরে পাঠাগারটি এখন ১০ হাজার বইয়ে সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার। পাঠাগারে গ্রামের ছেলে মেয়েরা এক সাথে স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন লেখকের বই পড়তে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র দেড় বছর বয়সে পিতাকে হারান স্বপন মিয়া। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন মা রাজিয়া খাতুন। তিনি মাটি কাটার কাজ করে সন্তানদের খুবই কষ্টে লালন-পালন করেন। স্বপনের দুই ভাই রিকশা চালক।
স্বপন মিয়া যখন গ্রামের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র তখনই একটি পাঠাগার গড়ার চিন্তা মাথায় আসে তার। তখন তিনি পরিবারের সদস্যদের অমতে একটি এনজিও থেকে ৮ হাজার টাকা ঋন নিয়ে বাড়ির জায়গায় একটি ছোট একচালা টিনের ঘর তৈরী করে মাত্র তিনটি বই দিয়ে গুঞ্জন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন।
পাঠাগারটি নিয়ে স্বপনের পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। বড় দুই ভাই তাকে শর্ত দেন, পরিবারে থাকতে হলে পাঠাগার ছাড়তে হবে। কিন্তু স্বপন পরিবারকে ছেড়ে পাঠাগারকে আকড়ে ধরে রাখেন। পরবর্তীতে স্বপনের মা রাজিয়া খাতুন স্বপনকে সম্মতি দেন।
এক পর্যায়ে নিজের পড়াশুনা, সংসার আর পাঠাগার দেখাশুনা করতে স্বপন মিয়া দিন-মজুরি শুরু করেন। পথে ঘাটে ফেরি করে পান-সিগারেটসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন তিনি। তবুও পাঠাগারটি বন্ধ করেননি।
উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।
পরে তিনি মায়ের কাছ থেকে পাওয়া সোয়া ২ শতাংশ জায়গা পাঠাগারের নামে দান করে সেখানে ঋণের টাকায় একতলা বিশিষ্ট পাকা ভবন করেন। পাঠাগারেই রাত্রিযাপন করেন তিনি। কলেজ থেকে যে টাকা বেতন পান, তার বেশির ভাগই ব্যয় করেন এই পাঠাগারে।
বর্তমানে প্রতি শুক্রবারে পাঠচক্র বসে পাঠাগারে। সেখানে শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজন করা হয় সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগীতার।
নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের রমজান জানান, তার পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় অষ্টম শ্রেনীতে পড়ার সময় তার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বাধ্য হয়ে তিনি বাবার সাথে কৃষি কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে স্বপন তাকে গুঞ্জন পাঠাগারে নিয়ে আসেন। এই পাঠাগারে থাকা বই দিয়েই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যান। অনার্স শেষ করে বর্তমানে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাস্টার্স করছেন।
নবীনগর উপজেলার ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাওহীদ জাহান চৌধুরী জানায়, সে নিয়মিত গুঞ্জন পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ে সে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সবধরনের বই আছে এখানে। এছাড়া তার কয়েকজন সহপাঠীও পাঠাগারে এসে বই পড়ে।
উপজেলার কৃষ্ণনগর আবদুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক রোকসানা জেবিন মলি জানান, গুঞ্জন পাঠাগারের মনোরম পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। পাঠাগারটি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে।
পাঠাগারে নিয়মিত আসা পাঠক ও কসবা উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা তুহিন কান্তি দাস বলেন, নবীনগর তথা পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্য আলোর দিশারী হয়ে দাঁড়িয়েছে গুঞ্জন পাঠাগারটি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি ও বঞ্চিত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছে পাঠাগারটি।
পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা স্বপন মিয়া বলেন, পাঠাগারটি সমৃদ্ধ করতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও অনেক ব্যক্তি তাকে সহায়তা করেছেন। যার জন্য তিনি পাঠাগারটিকে একচালা টিনের ঘর থেকে পাকা ভবন তৈরি করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, ‘সমাজে আমার মতো অনেকেই আছে- যারা বই কিনে পড়তে পারে না। অর্থের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের কথা চিন্তা করেই পাঠাগারটি করা হয়েছে। এই পাঠাগারের জন্য আমাকে পরিবার থেকে আলাদা হতে হয়েছিল। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আমি রাস্তায় ফেরী করে পান-সিগারেট বিক্রি করেছি। তবুও পাঠাগারটি বন্ধ হতে দেইনি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই পাঠাগারের বই পড়ে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। সুহাতা গ্রাম আলোকিত হয়েছে গুঞ্জন পাঠাগারের আলোতে। আমি চাই জ্ঞানের এই আলো ছড়িয়ে পড়–ক সবখানে।
এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, পাঠাগারের জন্য স্বপন তার নিজের ব্যক্তি জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছে। গুঞ্জন পাঠাগার শুধু জ্ঞানের আলোই ছড়াচ্ছে না, ছেলে-মেয়েদের মাদক থেকেও দূরে রাখতে সহায়তা করছে। বই পড়ার কারণে মেধার বিকাশ হচ্ছে, জ্ঞানের পরিধি বাড়ছে।