চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়া উপজেলায় শ্বশুরবাড়িতে রাসেল মিয়া নামে এক যুবকের আত্মহত্যার ঘটনায় স্ত্রী, শাশুড়ি, স্ত্রীর ভাই-বোনসহ ৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আখাউড়া) আদালতে নিহতের মা আরজু বেগম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। রাসেল আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ধলেশ্বর গ্রামের মো. আবুল খায়ের মিয়ার ছেলে।
মামলার আসামিরা হলেন রাসেলের স্ত্রী শামীমা আক্তার (২৬), শামীমার মা হালিমা (৬০), বড় ভাই বেদন ভূঁইয়া (৪৫), সুমন ভূঁইয়া (৪০), রাজন ভূঁইয়া (৩৫), বড় বোন দিপালী (৩০) ও বড় কুড়িপাইকা গ্রামের সুরুজ ভূঁইয়ার ছেলে সাকিন ভূঁইয়া (৩৫)।
৯ জুলাই রবিবার বিকেলে উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের হিরাপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে আত্মহত্যা করেন রাসেল মিয়া।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, ৭ বছর আগে শামীমাকে বিয়ে করেন রাসেল মিয়া। তাদের ৬ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। কিন্তু শামীমা নানান জায়গায় বিচরণ করতেন। এছাড়াও একাধিক পর পুরুষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রেমালাপ ও ব্যভিচারসহ ইত্যাদি অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকতেন। স্বামী রাসেলের আদেশ-নিষেধ না মেনে তার খেয়াল-খুশিমত উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন শুরু করে। শামীমাকে বুঝিয়ে ভালোভাবে ঘর-সংসার করতে অনুরোধ জানালে সে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি প্রদান করতো। বহু চেষ্টা করেও শামীমাকে ভালো পথে ব্যর্থ হয় রাসেল।
রাসেল তাকে বুঝালেও উল্টো শামীমা তার মা, ভাই ও বোনের কু-প্ররোচনায় বিনা অনুমতিতে বাবার বাড়িতে চলে যায়। বাবার বাড়িতে থেকে রাসেলকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কটূকথা ও অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া উত্থাপন করে মানসিক যন্ত্রণা দিতে থাকে। রাসেল মিয়া নিজ সন্তানের ভবিষ্যৎ ও পরিবারের মান সম্মানের কথা চিন্তা করে শামীমার সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখে আসছিল। তারপরও রাসেলকে কারণে-অকারণে মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে আত্মহত্যা করতে মানসিক অত্যাচার নির্যাতন করে আসছিল। অবশেষে শামীমা, তার মা, ভাই ও বোনের মানসিক নির্যাতনে রাসেল আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদি পক্ষের আইনজীবী ড. আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া বাদল জানান, রাসেলের মা বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলাটি করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আখাউড়া) আদালতে বিচারক ফরহাদ হোসেন মামলাটি আমলে নিয়েছেন। পাশাপাশি আখাউড়া থানায় এ সংক্রান্ত আর কোন মামলা আছে কি না, তা জানাতে বলা হয়েছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
দীর্ঘ ১৫ বছর পর আখাউড়া উপজেলায় প্রকাশ্যে মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা।
জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে আজ ১৪ অক্টোবর সোমবার সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী একটি মিছিল বের করে।
মিছিলটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া পৌরশহরের সড়ক বাজার, স্টেশন রোড ঘুরে মুক্ত মঞ্চের সামনে সমাবেশ করে।
আগামীকাল ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া, সেক্রেটারি মাওলানা মো. বোরহান উদ্দিন খান।
বক্তারা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের ইসলামীর নেতাকর্মীদেরকে অনেক জুলুম নির্যাতন করেছে। ১৫ বছর পর প্রকাশ্যে মিছিল করতে পেরে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শাহাদাতবরণকারী আবু সাঈদসহ সকল শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
এ সময় পৌর জামায়াতের আমীর মো. মোরশেদ আলম, উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি সিফাত উল্লাহ, সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ, শিক্ষক আব্দুর রহমান কাশগরি উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় রক্ত দেওয়ার নাম করে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে মো. মান্না নামে এক প্রতারক স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হয়। পরে তাকে স্থানীয়রা এক ব্যক্তির জিম্মায় ছেড়ে দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মান্না পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি ৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকালে আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামের মো. ইব্রাহিমের দোকানে আসেন বিকাশ থেকে টাকা তুলতে। ওই ব্যক্তি প্রায় সময়ই টাকা তুলেন বলে সন্দেহ হয় ইব্রাহিমের।
কিসের টাকা ও কার কাছ থেকে টাকা আনা হচ্ছে জানতে চাইলে মান্না জানান, তার ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নেন তিনি।
বিষয়টি সন্দেহ হলে ইব্রাহিম টাকা পাঠানো ব্যক্তিকে ফোন করলে তিনি জানান, রক্তের প্রয়োজন পড়ায় ভাড়া হিসেবে তিনি টাকা পাঠিয়েছেন। টাকা নেওয়া ব্যক্তি তাকে জানিয়েছেন তিনি ঢাকায় আছেন।
দোকানি ইব্রাহিম বিষয়টি স্থানীয় লোকজনকে অবহিত করে মান্নাকে আটক করেন।
পরে মান্না প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেন। লাল বাজার নামে একটি এলাকার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাথলজি বিভাগে চাকরি করেন দাবি করা ওই ব্যক্তি নিজেকে আখাউড়া পৌর এলাকার দুর্গাপুরের বাসিন্দা বলে জানান।
মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘মান্না নামের ওই ব্যক্তি প্রায় সময়ই আমার দোকান থেকে টাকা তুলতেন। দোকানে এলেই তার ফোনে অনেক কল আসতে দেখতাম।
এসবসহ নানা কারণে তার প্রতি সন্দেহ জাগে। সন্দেহবশত টাকা পাঠানো ব্যক্তিকে ফোন করলে তার প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে। তিনি একটি রক্তদান সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন।’
চলারপথে রিপোর্ট :
আসন্ন পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে আখাউড়ায় দরিদ্রদের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
আজ ২১ মার্চ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে মরহুম হাজী শাহাদাত হোসেন ফুল মিয়ার স্মরণে এ.এম.ডি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৬ শতাধিক পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এসব খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে পিয়াজ, আলু, ছোলা, ডাল ও মুড়ি।
ইফতার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুজিবুর রহমান নান্নুর সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউপি সদস্য কাজী ইউছুফ, মোঃ ফিরোজ মিয়া, ব্যবসায়ী শাহীন খান, ডাঃ ইকবাল হোসেন, নাজমুল হোসেন সুমন, নাসির চৌধুরী, আলী আকবর, বাছির মিয়া ও দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
মরহুম হাজী ফুল মিয়ার ছেলে নাজমুল হোসেন সুমন বলেন, গরীব-দুখী মানুষ সারাদিন রোজা রাখার পর সুন্দভাবে যেন ইফতার করতে পারে সেজন্য খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। এএমডি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিগত ৫/৬ বছর যাবত আমরা ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে আসছি। গরীব-দুখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় আমাদের উদ্দেশ্য।
চলারপথে রিপোর্ট :
নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বেগকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই কারণ দর্শানোর নোটিশে আগামী ৫ মে বিকেল চারটায় স্বাক্ষরকারির কার্যালয়ে গিয়ে কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবেনা সেই মর্মে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়।
শাহাব উদ্দিন বেগ আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে তিনি ধর্মীয় উপসানালয়ে গিয়ে প্রচারণা ও প্রচার কাজে যানবাহন ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ উঠে। এরই প্রেক্ষিতে তাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়।
রিটার্নিং অফিসার স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সোশ্যাল মিডিয়া ও মিডিয়া সেল ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে শাহাব উদ্দিন বেগ নির্বাচনী বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করেছেন। এটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০১৬ বিধিমালা এর ১৩ ও ২০ পরিপন্থী। ১ মে স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আগামী ৫ মে শাহাব উদ্দিনকে স্বশরীরে হাজির হয়ে বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়ে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিলেন বায়ান্নর ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া আব্দুল মতিন ভূঁইয়া। আজ ২১ অক্টোবর শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মিয়া আব্দুল মতিনের বাড়ি আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী টনকী গ্রামে। তার বাবার নাম মুত হাসিম ভূঁইয়া। তারা চার ভাই ও এক বোন ছিলেন। আর তার মধ্যে মিয়া আব্দুল মতিন ছিলেন সবার বড়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও ৫ মেয়ে রেখে গেছেন।
আব্দুল মতিন ভূঁইয়া তখন আখাউড়া উপজেলার মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তখন ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য আটজনের মিছিলে আব্দুল মতিন নেতৃত্ব দেন। সেই মিছিলটি আখাউড়া উপজেলার মোগড়া বাজার ও গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। ‘উর্দু ভাষায় লাথি মার, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চালু কর’, ‘রাষ্ট্রভাষা চাই’, ‘আমাদের ভাষা বাংলা ভাষা’ এমন প্লেকার্ড হাতে নিয়ে মিছিলটি এগিয়ে যেতে থাকে। সে সময় ওই মিছিলে বিদ্যালয়ের ৮০০-এর মতো শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছিল।
ভাষা আন্দোলনের জন্য মিয়া আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে শুরু করা আন্দোলনটি গণবিক্ষোভে রূপ নেয়। আর সেই বিষয়টি জেনে যায় তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকার। নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আব্দুল মতিন ভূঁইয়াকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। টানা দুই মাস কারাভোগ শেষে জেল থেকে তিনি ছাড়া পান।
১৯৫৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা সৈনিক মিয়া মতিনসহ আরো কয়েকজনকে ঢাকায় ডেকে পাঠান এবং সাহসিকতার জন্য তাদের উপহার দেন।