দু’দেশের অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ মহাসড়ক : প্রণয় কুমার ভার্মা

আখাউড়া, আশুগঞ্জ, জাতীয়, 24 July 2023, 2240 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আজ ২৪ জুলাই সোমবার দুপুরে আশুগঞ্জ নৌবন্দর উন্নয়ন ও সরাইল-ধরখার-আখাউড়া বন্দর পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী নেতৃত্তে ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

banner

এসময় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনের দিন গুলোতে আমাদের দু’দেশের সম্পর্ক যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সে বিবেচনায় আমরা চেষ্টা করছি প্রকল্পের কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে। যাতে করে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারি। তিনি বলেন, আমি খুবই খুশি যে এখানকার সাধারণ মানুষজন খুবই আন্তরিকতার সহিত আমাদের সহযোগিতা করেছেন যেন আমরা প্রকল্পের কাজ সুন্দরভাবে শেষ করতে পারি।

তিনি আরো বলেন, আমি আজ এখানে এসেছি ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের মাধ্যমে চার লেনের জাতীয় মহাসড়ক যে প্রকল্পের কাজ হচ্ছে সে কাজের গতিবিধি কেমন চলছে এবং প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করতে আমাদের আরও কি করনীয় আছে তাই দেখলাম। কানেক্টিভিটির এই প্রকল্পটি আমাদের দু’দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ করবে এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও অনেক গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এর আগে দুপুরে ভারতীয় হাইকমিশনার আশুগঞ্জ নৌবন্দর হয়ে সড়ক পথে আখাউড়া স্থলবন্দরে এসে পৌছালে তাকে স্বাগত জানান আখাউড়া উপজেলা নির্বাহি অফিসার অংগ্যজাই মারমা ও স্থলবন্দরের সহকারি পরিচালক মো. আতিকুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

এ সময় ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের পরিচালক শোয়েব আহমেদ, অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক খালেদ সাহিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. রুহুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ইকবাল হোছাইন এবং আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা প্রমুখ।

উল্লেখ্য, আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৫১ কিলোমিটার সড়ক চার লেনের জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করার প্রকল্পটি ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন পায়। তবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পের কাজ কিছুটা দেরিতে শুরু হয়। করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় তিন দফায় বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ, যা শেষ হবে ২০২৫ সালের জুন মাসে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। ভারতের ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।

Leave a Reply

গাজা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা জাতিগত নিধনের…

অনলাইন ডেস্ক : ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীদের স্থানান্তর এবং ওই উপত্যকার Read more

ফিলিস্তিন ইস্যুতে ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করলো…

অনলাইন ডেস্ক : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ইস্যুতে সৌদি আরবের অবস্থান নিয়ে Read more

ঐশ্বরিয়া-কন্যা আরাধ্যা কোন কারণে আদালতের দ্বারস্থ…

অনলাইন ডেস্ক : বলিউড তারকা অভিষেক বচ্চন ও ঐশ্বরিয়ার কন্যা Read more

গাজা উপত্যকা দখল করবে যুক্তরাষ্ট্র: ডোনাল্ড…

হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড Read more

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রিমান্ডে

অনলাইন ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা আশিক মিয়া Read more

সহজেই হোয়াটসঅ্যাপে কল রেকর্ড করা যাবে

অনলাইন ডেস্ক : বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ। Read more

পুলিশের থেকে ছিনিয়ে নেয়া আওয়ামী লীগ…

অনলাইন ডেস্ক : পাবনার সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও Read more

জয়ে ফাইনাল পর্ব শুরু আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের

অনলাইন ডেস্ক : জয় দিয়ে লাতিন আমেরিকা অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল Read more

সুইডেনে স্কুলে বন্দুক হামলায় ১০জন নিহত

অনলাইন ডেস্ক : সুইডেনের কেন্দ্রীয় একটি স্কুলে বন্দুক হামলায় সন্দেহভাজন Read more

বাঞ্ছারামপুরে ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুরে মেয়াদোত্তীর্ণ ও স্যাম্পলের ওষুধ বিক্রি এবং Read more

ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মিনি কনফারেন্স রুমে Read more

দেড় কোটি টাকার মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত থেকে ভারতীয় উন্নতমানের মোবাইল ফোনের Read more

পাবনায় মৌমাছির কামড়ে ভ্যানচালকের মৃত্যু

জাতীয়, 4 April 2023, 1282 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
যাত্রী নিয়ে ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছিলেন চালক কালু প্রামানিক (৬০)। পথিমধ্যে মৌমাছির ঝাঁক এসে কামড়ে দেয়া চালকসহ যাত্রীদের। এতে মারা যান ভ্যানচালক কালু প্রামানিক।

banner

আজ ০৪ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে পাবনার চাটমোহর উপজেলার রতনপুর ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মৃত কালু উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের বরুরিয়া গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে।

এ ঘটনায় আহতরা হলেন, উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের লাউতিয়া গ্রামের গোলাম হোসেনের ছেলে জুয়েল রানা (২৪), ধরইল গ্রামের মৃত খোদাবক্স প্রামানিকের ছেলে আমজাদ হোসেন (৬৫), ধুলাউরি গ্রামের ফকির উদ্দিনের ছেলে হযরত আলী (৫০)।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ভ্যানচালক কালু প্রামানিক চাটমোহর থেকে তিনজন যাত্রী ভাড়া নিয়ে উপজেলার রেল বজারের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে মূলগ্রাম ইউনিয়নের রতনপুর এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ একদল মৌমাছি উড়ে এসে তাদের কামড়ানো শুরু করে।

চিৎকারে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কালু প্রামানিককে মৃত ঘোষণা করেন। আহত ৩ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আলমাস আহমেদ আবির বলেন, মৌমাছি কামড়ানোর পর তাদেের হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয় লোকজন। তাদের মধ্যে কালু প্রামানিক মৃত পাওয়া যায়। তাকে হাসপাতালে আনার পথে মারা গেছেন। বাকিদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

মুলগ্রাম ইউনিয়নের এক নাম্বার ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, ঘটনার সময় আমি সেখান দিয়ে যাচ্ছিলাম। চারজনকে মৌমাছি কামড়িয়েছিল। পরে শুনি হাসপাতালে নেয়ার পর ভ্যানচালক মারা গেছেন।

ইমতিয়াজ আর হাসবেন না

জাতীয়, 8 February 2024, 633 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
নিজের পায়ে ভর করে হাঁটতে পারতেন না। কখনো মা-বাবা ও বন্ধুদের কোলে চড়ে, কখনো হুইলচেয়ার বা স্টিলের লাঠিতে ভর করে পড়াশোনা শেষ করেন মো. ইমতিয়াজ কবির (২৪)। এরপর একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ইমতিয়াজ আর অফিসে যাবেন না। কখনো মায়ের কোলে চড়ে বসবেন না। প্রাণ খুলে হাসবেন না। আজ ৮ ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটায় চট্টগ্রাম নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

banner

মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন ইমতিয়াজ কবিরের ফুফাতো ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ইমতিয়াজ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সর্বশেষ ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। এসব রোগ নিয়ে তাঁকে ৫ ফেব্রুয়ারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আর আজ মৃত্যু হয়েছে। মাহমুদুর রহমান জানান, ইমতিয়াজের মৃত্যুর পর তাঁর মা–বাবার আহাজারি থামছেই না। একমাত্র বোন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ভাইকে হারিয়ে বোনটিও দিশাহারা। এখন ইমতিয়াজের ঘরজুড়ে কেবলই স্মৃতি। পড়ে আছে জামা, জুতা ও বইপত্র।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছিলেন ইমতিয়াজ। গত জুন মাসে প্রতিবন্ধকতা জয়ী ইমতিয়াজ তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক জাপানি তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কোডল্যাব এফজেডসির ঢাকা অফিসে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছিলেন ইমতিয়াজ। গত বছরের ১ আগস্ট জাতীয় দৈনিকে ‘বাবা ও বন্ধুদের কোলে চড়ে পড়াশোনা করা ইমতিয়াজ এখন পেশাদার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার’ শিরোনামে ইমতিয়াজকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

ইমতিয়াজদের বাড়ি নড়াইলে। তবে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে বসবাস করে আসছেন। ইমতিয়াজের ঢাকায় চাকরি হওয়ার পর তাঁর সবকিছু গুছিয়ে দিতেই মা চট্টগ্রাম থেকে রাজধানীতে গিয়েছিলেন। তাঁর বাবার নাম ইনামুল কবীর। ইমতিয়াজের ফুফাতো ভাই মাহমুদুর রহমান জানান, দুই মাস ধরে ইমতিয়াজ চট্টগ্রামে থাকছিলেন। অসুস্থতার কারণে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে এসেছিলেন তিনি। এখন ইমতিয়াজের মরদেহ নড়াইলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগামীকাল শুক্রবার সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

ইয়াসমিন নাহার ২০১৩ সাল থেকে চট্টগ্রামের কৃষ্ণকুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তবে তাঁর চাকরি এখনো স্থায়ী হয়নি। তাঁর স্বামী ইনামুল একসময় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৮ সালের পর তাঁর পক্ষে পূর্ণকালীন এই চাকরি আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনি খণ্ডকালীন একটি কাজ করছেন। ছেলে ইমতিয়াজ চাকরি পাওয়ায় পরিবারটি নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তব হলো না।
জন্মগতভাবেই ইমতিয়াজের ডান পা বাঁকা ছিল। পরে দেশে-বিদেশে তাঁর চিকিৎসা করানো হয়। পায়ে দেওয়া হয় প্লাস্টার। প্লাস্টার খোলার সময় তাঁর পা ভেঙে যায়। পরে তাঁর দুই পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। মেরুদণ্ডের হাড়েও সমস্যা দেখা দেয়। এইচএসসি পরীক্ষার আগে একবার তাঁর শরীরের পুরো বাঁ পাশ অবশ হয়ে গিয়েছিল। ইমতিয়াজ সোজা হয়ে বসতে পারেন না। হাতেও পুরোপুরি শক্তি পান না।

মা ইয়াসমিন বলেছিলেন, একপর্যায়ে ছেলের শারীরিক সীমাবদ্ধতার বিষয়টি মেনে নেন। মনস্থির করেন, প্রতিবন্ধকতার কারণে ছেলে যাতে কোথাও পিছিয়ে না পড়ে। ছেলেকে ভালো স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। নিজের শারীরিক কষ্ট ভুলে পড়াশোনার জন্য ছেলেকে কোলে নিয়ে পাঁচতলা পর্যন্ত উঠেছেন। আর ছেলের মধ্যেও জীবনে ভালো কিছু করার প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি সব সময় কাজ করছিল।

আখাউড়ায় এক হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার ১

আখাউড়া, 13 October 2024, 197 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আখাউড়ায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে এক হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ নাসিমা বেগম নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

banner

আজ ১৩ অক্টোবর রোববার দুপুরে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত নাসিমা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের মিনারকোট গ্রামের আনিস খাঁর স্ত্রী।

পুলিশ জানায়, জেলা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে গোপন সংবাদের মাধ্যমে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ভোররাতে মিনারকোট এলাকায় তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। পুলিশ আসার খবর পেয়ে গ্রেফতার এড়াতে নাসিমা কৌশলে বসতঘরের শয়নকক্ষে ইয়াবাগুলো লুকিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে পুলিশ তার শয়নকক্ষের নিচ থেকে এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারসহ তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে।

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবুল হাসিম বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে এক হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ নাসিমাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নিয়মিত মামলা দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে সোপর্দ করা হয়। আমাদের মাদকবিরোধী অভিযান নিয়মিত চলছে। যেকোনো মূল্যে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

তিস্তায় নৌকা ডুবে তিন শ্রমিক নিখোঁজ

জাতীয়, 9 July 2023, 905 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় তিস্তা নদী পারাপারের সময় নৌকা ডুবে তিনজন নিখোঁজ হয়েছেন।

banner

আজ ৯ জুলাই রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনি গ্রামের তিস্তা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।

নিখোঁজদের উদ্ধারের জন্য হাতীবান্ধা ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম কাজ করছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি।

নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন, হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারি ইউনিয়নের দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের মৃত দমেজ উদ্দিনের ছেলে ফজলুল হক (৫৯), মৃত জুলাই শেখের ছেলে আহিদুল (৫০) ও দক্ষিণ গড্ডিমরাী এলাকার মৃত খাদু শেখের ছেলে শফিকুল (৪৫)।

স্থানীয়রা জানান, সকালের দিকে ধুবনী এলাকার ১৩ জন কৃষক নদী পার হয়ে চরে যাওয়ার সময় মাঝ নদীতে নৌকা উল্টে যায়। এসময় ১০ তীরে আসতে পারলেও ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

হাতীবান্ধা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মোঃ মনির হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি, ডুবুরি না থাকায় রংপুরে খবর পাঠানো হয়েছে। ডুবুরীদল এলেই উদ্ধার তৎপরতা চালু করা হবে।

প্রত্যক্ষদর্শী মিলন বলেন, নদী পার হয়ে আমন ধানের চারা লাগাতে গিয়ে নৌকা ডুবে যায়। বয়স্ক তিনজন ডুবে যায়। এখোন তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

সিঙ্গিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু বলেন, নৌকাডুবির খবর শুনে ছুটে এসেছি।

হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস এর ডুবুরি দল উদ্ধার কাজ চালিয়েছেন।

ভয়াল কালরাত আজ

জাতীয়, 24 March 2024, 444 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
আজ সেই ভয়াল ২৫ মার্চের কালরাত। ১৯৭১ সালের এ রাতেই বাংলার বুকে নেমে এসেছিল মৃত্যুর ঘনতমসা। পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের একটি ঘটেছিল আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমিতে।

banner

রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হিংস্র হায়েনার মতো বর্বর শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরীহ-নিরস্ত্র স্বাধীনতাকামী বাঙালি জনগণের ওপর। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ণ সামরিক সম্ভার নিয়ে রাত ১০টার পর সারা দেশে পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা শুরু করে তারা।

সামরিক ভাষায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত ছিল পাক-হানাদারদের এ হত্যা-অভিযান। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালি হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের পথেই এগিয়েছিল। অত্যাচার, উৎপীড়ন, পাশবিকতা, নৃশংসতা আর হিংস্রতার কালো থাবায় বিভীষিকা ছড়িয়ে দিয়েছিল পুরো ঢাকা শহরে।

বর্বর হত্যাযজ্ঞের এ দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে। কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বর্বরোচিত হামলার সেই নৃশংস ঘটনার স্মরণে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। দিনটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বর্বরোচিত হামলায় বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে দেখেছিল উন্মত্ত পাক বাহিনীর গণহত্যাকাণ্ড। মধ্যযুগীয় কায়দায় হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ, করে অগ্নিসংযোগ। এই রাতেই গ্রেফতার করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। ২৫ মার্চের কালরাতের বেদনাদায়ক ঘটনা সমগ্র জাতিকে শিহরিত করে। নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে পাখির মতো গুলি চালিয়ে হত্যা করে সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ভয়াবহ সেই কালরাতের হত্যাযজ্ঞ বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জোগায়।

প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের এই দিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি এয়ারপোর্ট চলে যান। রাত পৌনে ৮টায় তিনি গোপনে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করেন নিরপরাধ বাঙালির ওপর কাপুরুষোচিত সশস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে। পাক হানাদার বাহিনী জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে জল্লাদের মতো বাংলার নিরপরাধ জনগণের ওপর মেশিনগান, মর্টার আর ট্যাংক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে।

রাত ১টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টারে আক্রমণ চালায়। কেন্দ্রীয় কোয়ার্টারে ১৮ জন বাঙালি গার্ড থাকলেও তারা পালটা আক্রমণের সুযোগ পাননি। পিলখানা আক্রমণের পাশাপাশি রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারী বাজারসহ ঢাকাজুড়েই শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। বিভিন্ন এলাকাতে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ করে চলে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী।

মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে ট্যাংক, সঙ্গে সেনা বোঝাই লরি। ইকবাল হল (বর্তমানে জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হলে মধ্যযুগীয় কায়দায় চলে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা। শহিদ হন কয়েকশ ছাত্রছাত্রী। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের নয়জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।

হানাদাররা চলার পথে রাস্তার দুই পাশে গুলি ছুড়ে মেরে ফেলে অসংখ্য নিরীহ, গরিব মানুষকে। মেডিকেল কলেজ ও ছাত্রাবাসে গোলার পর গোলা ছুড়ে হত্যা করা হয় অজস্র মানুষকে। রাজারবাগে পুলিশের বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তাদের সামান্য অস্ত্রশস্ত্র দিয়েই। ট্যাংক আর ভারী মেশিনগানের মুখে এ প্রতিরোধ বেশিক্ষক্ষণ টেকেনি। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুরো সদর দপ্তর।

২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। গোপন ওয়্যারলেস বার্তায় তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্র-জনতা-পুলিশ-ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘোষণা করছি আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন, যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করুন। এই হয়তো আপনাদের প্রতি আমার শেষ বাণী হতে পারে। আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান।’

এর আগে সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে ভুট্টো-ইয়াহিয়া এবং ইয়াহিয়া ও পিপলস পার্টির উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছে ছিল। রাত ৯টার পর বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট অখণ্ড পাকিস্তানের সমাপ্তি টানতে চলেছেন।

পিলখানায় ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত বাণী ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারা দেশে মেসেজ আকারে পাঠানো হয়। এ বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দপ্তরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙর করা একটি বিদেশি জাহাজও এ বার্তা গ্রহণ করে। চট্টগামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী সাইক্লোস্টাইল করে রাতেই শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। রাত ১টায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের অদূরে শুক্রাবাদে ব্যারিকেডের মুখোমুখি হয়। এখানে প্রতিরোধ ব্যুহ ভেঙে হানাদাররা রাত দেড়টায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে আসে। হানাদার বাহিনী এলাপাতাড়ি গুলি চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধুকে রাত দেড়টায় তার বাসভবন থেকে বন্দি করে শেরেবাংলা নগরের সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুকে সেনানিবাসে স্থানান্তর করা হয়। সকাল পর্যন্ত আদমজী কলেজের একটি কক্ষে বঙ্গবন্ধুকে আটক রাখা হয়।

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের রাতে ১ মিনিট ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাত ১১টা থেকে ১১টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। অন্ধকারে থাকবে দেশ।