২০ হাজার মিটার চায়না জাল ধ্বংস, ৫ গোডাউন সিলগালা

নাসিরনগর, 26 July 2023, 891 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অফিসের উদ্যোগে নিষিদ্ধ চায়না জালের বিরুদ্ধে সপ্তাহব্যাপী অভিযান শুরু হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে আজ ২৬ জুলাই বুধবার পর্যন্ত এক সপ্তাহের অভিযানে প্রায় ২০ হাজার মিটার নিষিদ্ধ চায়না জাল আগুনে পুড়ানো হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।

নাসিরনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ দিন হলো বর্ষার পানি নাসিরনগরের বিভিন্ন হাওর ও বিলে ঢুকতে শুরু করেছে। ফলে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মা মাছ নুতন পানি পেয়ে প্রজনন শুরু করেছে। এতে ডিম থেকে শুরু করে সব ধরণের মা মাছ সহজেই চায়না জালে ধরা পড়ছে। আর হুমকিতে পড়েছে হাওরের দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন।

মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার বলেন, হাওরের দেশীয় মাছের প্রজনন ধরে রাখতে মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে গত সাত দিন উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালানো হয় বিভিন্ন হাওর-বিল ও স্থানীয় অসাধু ব্যবসায়ীর গোডাউনে। সবশেষ আজ চাতলপাড় ইউনিয়নের বড় বাজারে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি গোডাউন থেকে ১০ হাজার মিটার চায়না জাল ও দুই হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে আগুনে পোড়ানো হয়। এরপর গুডোউনগুলো সিলগালা করে দুই ব্যক্তিকে পাঁচ হাজার করে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

নাসিরনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোনাব্বর হোসেন বলেন, হাওরের মাছকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। যারা নিষিদ্ধ চায়না জাল ব্যবহার করে মাছের প্রজননে বাধা প্রদান করবে তাদেরই মৎস্য আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

ঈদুল ফিতরে ৫ দিন, ঈদুল আযহায়…

অনলাইন ডেস্ক : আগামী বছরের (২০২৫ সাল) সরকারি ছুটির তালিকা Read more

৩০ লাখ টাকা করে পাবে ছাত্র…

অনলাইন ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য Read more
ফাইল ছবি

২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক : ২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন করেছে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভূমিকম্প ও অগ্নিকান্ড বিষয়ক মহড়া…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দূর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেশীয় অস্ত্র-নগদ টাকা উদ্ধারসহ দুই…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৪ ঘন্টায় গ্রেফতারী পরোয়ানার আসামীসহ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অনির্দিষ্টকালের জন্য…

চলারপথে রিপোর্ট : পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের বরখাস্তের প্রতিবাদে ও Read more

আন্দোলনে নিহত তানজিল মাহমুদ সুজয় এইচএসসি…

চলারপথে রিপোর্ট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর Read more

পল্লীবিদ্যুতের ১০ জেলা কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুৎ, বিদ্যুৎ…

চলারপথে রিপোর্ট : বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কয়েকটি জেলার ১০ Read more
ফাইল ছবি

শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারে ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানা

অনলাইন ডেস্ক : পদত্যাগের পর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী Read more

ভারত ৪৬ রানে অলআউট

অনলাইন ডেস্ক : ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে দাপট দেখিয়েছিল ভারত। Read more

কসবায় ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদ্যুৎ…

চলারপথে রিপোর্ট : অস্ত্র মামলায় ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত মো. মোস্তাফিজুর Read more
ফাইল ছবি

৮ জাতীয় দিবস বাতিল করে আদেশ…

অনলাইন ডেস্ক : আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করে আদেশ জারি Read more

নাসিরনগরে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

নাসিরনগর, 5 October 2024, 32 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর আধুনিক হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের নতুন সংযোজন অত্যাধুনিক রোগ নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান “আধুনিক মাল্টিকেয়ার ডায়াগনষ্টিক এ- কনসালটেশন লিমিটেড” এর উদ্বোধন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে দিনব্যাপী বিশেষায়িত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। আজ ৫ অক্টোবর শনিবার সকালে আধুনিক হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ ইসরার কামালের সভাপতিত্বে “আধুনিক মাল্টিকেয়ার ডায়াগনষ্টিক এ- কনসালটেশন লিমিটেড”এর উদ্বোধন করেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: ইমরানুল হক ভূঁইয়া।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আধুনিক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নাক,কান গলা বিশেষঞ্জ সার্জন সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোকন উদ্দিন ভুইয়া, ডায়াগনষ্টিক এ- কনসালটেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন ভূইয়া,পরিচালক ডা: মুকবুল হোসেন,পরিচালক ডাঃ পান্না বনিক,হাজ্বী রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, মো: শাহেদুল ইসলাম,মো: ফরহাজদুক ভুইয়া, স্বপন দেবনাথ, মো: মনিরুজ্জামান,আশরাফুল ইসলাম বাবুল,বীরেন্দ্র বিশ্বাসসহ পরিচালকবৃন্দ, সাংবাদিক, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সুশীল সমাজ উপস্থিত ছিলেন। পরে এক দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে“আধুনিক মাল্টিকেয়ার ডায়াগনষ্টিক এ- কনসালটেশন লিমিটেড” এর উদ্বোধন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা দিনব্যাপী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করে।

অন্যদিকে আধুনিক হাসপাতাল কনফারেন্স কক্ষে উন্নত চিকিৎসা’ প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয় শীর্ষক সাংবাদিক, চিকিৎসক, সুশীল সমাজ ও আধুনিক হাসপাতালের পরিচালকগণের অংশগ্রহণ এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময়কালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত অত্যাধুনিক “আধুনিক মাল্টিকেয়ার ডায়াগনষ্টিক এ- কনসালটেশনে সকল পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। যা রোগী একই স্থানে সকল পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা পাবেন।

নাসিরনগরে খাল থেকে প্রতিবন্ধীর লাশ উদ্ধার

নাসিরনগর, 2 October 2023, 654 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে খালের পানি থেকে হাদিস মিয়া(১৯) নামে এক শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধীর লাশ উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। আজ ২ অক্টোবর সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে উপজেলার গোকর্ণ-কুন্ডা বেড়িবাঁধে কুকুরিয়া ব্রীজের দক্ষিণ পাশে পানি থেকে ওই প্রতিবন্ধীর লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রতিবন্ধি হাদিস গোকর্ণ পশ্চিম পাড়ার উজ্জল মিয়ার ছেলে।

নিহত হাদিসের পিতা উজ্জল মিয়া ও স্থানীয়রা জানান, হাদিস মিয়া জম্মের পর থেকেই শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধি ছিল। ঘটনার সময় পরিবারের অজান্তে বাড়ির পার্শ্ববতী কুকুরিয়া ব্রীজের খালে মাছ ধরতে যায়। এসময় খালের পানিতে স্রোত থাকায় পানিতে তলিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে নাসিরনগর থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছার সাথে সাথেই স্থানীয় লোকজন খোজাঁখুজি করে প্রতিবন্ধি হাদিস মিয়ার লাশ উদ্ধার করে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ শাহিন জানান, হাদিস মিয়া জন্মের পর থেকেই শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী ছিল। মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে তলিয়ে গিয়ে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: সোহাগ রানা জানান, এঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

দুই মাদকসেবীর কারাদণ্ড

নাসিরনগর, 25 July 2024, 128 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে আরিফ মিয়া (২৭) ও ছাত্তার মিয়া ওরফে ছত্তর মিয়া (২৮) নামে দুই মাদকসেবীকে ১ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইমরানুল হক ভূইয়া এই কারাদণ্ড প্রদান করেন। দন্ডপ্রাপ্ত আরিফ মিয়া উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের চান্দ আলীর ছেলে আরিফ মিয়া ও ছাত্তার মিয়া ওরফে ছত্তর মিয়া একই গ্রামের আরাজ মিয়ার ছেলে।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, আরিফ মিয়া ও ছাত্তার মিয়া ওরফে ছত্তর মিয়া দীর্ঘদিন ধরে বুড়িশ্বর ইউনিয়নের লক্ষীপুর আশ্রয়ণ কেন্দ্রে গিয়ে মাদক সেবন করে আসছে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নাসিরনগর থানার এস.আই বাবুল মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশ দুপুরে লক্ষীপুর আশ্রয়ণ কেন্দ্র থেকে মাদক সেবনকারী আরিফ মিয়া ও ছত্তর মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ ইমরানুল হক ভূঁইয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদেরকে ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড ও একই সাথে দুইজনকেই ১০০ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করে।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইমরানুল হক ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

উপজেলা প্রশাসনের মাদক বিরোধী মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে।

নাসিরনগরে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন

নাসিরনগর, 24 July 2023, 754 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হাওর অঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন হয়েছে।

আজ ২৪ জুলাই রবিবার নাসিরনগর কেন্দ্রীয় শহীদমিনার সংলগ্ন রাস্তায় সাধারণ ভুক্তভোগী ও খামারীবৃন্দের ব্যানারে এই মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাওর অঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নারীদের প্রশিক্ষণের পর ১৫টি করে হাঁস, একটি ছোট্ট ঘর ও ৫০ কেজি হাঁসের খাবার দেওয়ার কথা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রায় দুই বছর আগে তালিকায় নাম উঠিয়ে এবং পরবর্তী সময়ে প্রশিক্ষণে অংশ নিলেও তাঁদের বাদ দিয়ে বিশেষ বিবেচনায় অন্যদের নামে হাঁসের খামার করে দেওয়া হয়েছে।

নাসিরনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নূরে আলম বলেন, ‘প্রাথমিক তালিকা করার পর কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাম বাদ পড়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের যে বিধি আছে, সেটা লঙ্ঘন করা হয়নি।’

ইউএনও মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

আখাউড়া, কসবা, জাতীয়, নাসিরনগর, বিজয়নগর, রাজনীতি, সরাইল, 9 January 2023, 5741 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু। দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি হিসেবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’
এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে তিনি ঢাকা এসে পৌঁছেন। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবেই লিখা হয়- ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।’
জনগণ নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের যুবক যারা আছে তারা চাকরি না পায়। মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ তোমাদের মোবারকবাদ জানাই তোমরা গেরিলা হয়েছো, তোমরা রক্ত দিয়েছো, রক্ত বৃথা যাবে না, রক্ত বৃথা যায় নাই।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘একটা কথা-আজ থেকে বাংলায় যেন আর চুরি-ডাকাতি না হয়। বাংলায় যেন আর লুটতরাজ না হয়। বাংলায় যারা অন্য লোক আছে অন্য দেশের লোক, পশ্চিম পাকিস্তানের লোক বাংলায় কথা বলে না, তাদের বলছি তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। আর আমি আমার ভাইদের বলছি তাদের উপর হাত তুলো না আমরা মানুষ, মানুষ ভালোবাসি। ‘তবে যারা দালালি করেছে যারা আমার লোকদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হবে এবং শাস্তি হবে’ উল্লেখ করে জাতির পিতা বলেন, ‘তাদের বাংলার স্বাধীন সরকারের হাতে ছেড়ে দেন, একজনকেও ক্ষমা করা হবে না। তবে আমি চাই স্বাধীন দেশে স্বাধীন আদালতে বিচার হয়ে এদের শাস্তি হবে। আমি দেখিয়ে দিতে চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালি রক্ত দিতে জানে, শান্তিপূর্ণ বাঙালি শান্তি বজায় রাখতেও জানে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমায় আপনারা পেয়েছেন। আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে। আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোড়া হয়েছিলো। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু আসে যদি আমি হাসতে হাসতে যাবো। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাবো না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না। এবং যাবার সময় বলে যাবো জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকার তাঁর নির্দেশিত যুদ্ধ পরিচালনা করে। নয় মাসের যুদ্ধের এক পর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানী বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে সরকার পরিচালনা করে অস্থায়ী প্রবাসী সরকার। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারিকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশ বলে গণপরিষদ গঠন করে নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশের জন্য একটি সংবিধান উপহার দেয়া হয় এবং যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। বাসস।