২০ হাজার মিটার চায়না জাল ধ্বংস, ৫ গোডাউন সিলগালা

নাসিরনগর, 26 July 2023, 948 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অফিসের উদ্যোগে নিষিদ্ধ চায়না জালের বিরুদ্ধে সপ্তাহব্যাপী অভিযান শুরু হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে আজ ২৬ জুলাই বুধবার পর্যন্ত এক সপ্তাহের অভিযানে প্রায় ২০ হাজার মিটার নিষিদ্ধ চায়না জাল আগুনে পুড়ানো হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।

নাসিরনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ দিন হলো বর্ষার পানি নাসিরনগরের বিভিন্ন হাওর ও বিলে ঢুকতে শুরু করেছে। ফলে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মা মাছ নুতন পানি পেয়ে প্রজনন শুরু করেছে। এতে ডিম থেকে শুরু করে সব ধরণের মা মাছ সহজেই চায়না জালে ধরা পড়ছে। আর হুমকিতে পড়েছে হাওরের দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন।

মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার বলেন, হাওরের দেশীয় মাছের প্রজনন ধরে রাখতে মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে গত সাত দিন উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালানো হয় বিভিন্ন হাওর-বিল ও স্থানীয় অসাধু ব্যবসায়ীর গোডাউনে। সবশেষ আজ চাতলপাড় ইউনিয়নের বড় বাজারে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি গোডাউন থেকে ১০ হাজার মিটার চায়না জাল ও দুই হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে আগুনে পোড়ানো হয়। এরপর গুডোউনগুলো সিলগালা করে দুই ব্যক্তিকে পাঁচ হাজার করে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

নাসিরনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোনাব্বর হোসেন বলেন, হাওরের মাছকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। যারা নিষিদ্ধ চায়না জাল ব্যবহার করে মাছের প্রজননে বাধা প্রদান করবে তাদেরই মৎস্য আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

নবীনগরে অগ্নিকান্ডে ১২ দোকান ভস্মিভূত

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগরে একটি বিপণীবিতানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে Read more

মদসহ ভারতীয় নাগরিক আটক

চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অভিযান চালিয়ে বিদেশি Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮৩…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সঠিক প্রক্রিয়ায় ৮৩জন Read more

জননিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত…

চলারপথে রিপোর্ট : জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত একান্ত Read more

বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : বিজয়নগর উপজেলা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ১ Read more

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঞ্ছারামপুরে ১৪৪ ধারা…

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও Read more

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় “বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীজন ও Read more
ফাইল ছবি

আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

চলারপথে রিপোর্ট : আশুগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞাতনামা Read more

আখাউড়ায় বিনামূল্যে ধান বীজ বিতরণ চলারপথে রিপোর্ট : আখাউড়া উপজেলায় Read more

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবু বাক্কার নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : কুয়েতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় শেখ আবু বাক্কার (৩৪) Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাস উল্টে যাত্রী নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : সরাইল উপজেলায় বাস উল্টে গোপী কান্ত ঘোষ Read more

ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ একজন নিহত

চলারপথে রিপোর্ট : ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার Read more

দুর্গাপূজা উপলক্ষে নাসিরনগরে উপজেলা প্রশাসনের মতবিনিময়

নাসিরনগর, 5 October 2023, 743 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
অনলাইন ডেস্ক :
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে ব্রাহ্মণ ও পুরোহিতগণের সাথে উপজেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা হয়।

উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা ব্রাহ্মণ কল্যাণ সমিতির সভাপতি সুজিত কুমার চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.মোনাববর হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লতিফ হোসেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহাগ রানা, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনাথবন্ধু দাস, সাধারণ সম্পাদক নির্মল চন্দ্র চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বরুণ কান্তি সরকার, সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, থানা কমিউনিটি পুলিশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অরুণজ‍্যোতি ভট্টাচার্য, সদর ইউপি চেয়ারম্যান পুতুল রানী দাস ও উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ ও পুরোহিতগণসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

সভায় বক্তারা আসন্ন দুর্গাপূজা অবাধ, সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে করার জন্য উপজেলার প্রত্যেক পূজা মন্দিরে ডিজে গান বন্ধ ও মদ্য পান বর্জনসহ পূজার সময় শান্তি বিঘ্নিত হয় এসব কার্যাবলী থেকে বিরত থাকার আহ্বান করেন।

নাসিরনগরের ঐতিহ্যবাহী “শুঁটকি মেলা ও বিনিময় প্রথা”

নাসিরনগর, 16 April 2024, 347 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
চিরাচরিত বাংলা পঞ্জিকার নিয়ম অনুযায়ী যুগ যুগ ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে চলে আসছে ঐতিহ্যবাহী “শুঁটকি মেলা ও বিনিময় প্রথা”। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো কুলিকুন্ডা গ্রামে জমে উঠে এ শুটকি মেলা। মেলার নির্ধারিত দিন নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় এবার রবিবার ও সোমবার দুই দিনব্যাপী বসে এ শুটকি মেলা।

স্থানীয় জনগণের ভাষ্য অনুযায়ী প্রায় দুইশ বছরেরও অধিক সময় ধরে এ মেলা বসছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুঁটকি ব্যবসায়ী ছাড়াও বাহারি শুঁটকির আকর্ষণে দূর-দূরান্ত থেকে ভোজন রসিকরা মেলায় আসেন শুটকি কিনতে। পছন্দের শুঁটকি ক্রয় করে তারা তৃপ্ত হন। প্রায় দুই শতাধিক নানান জাতের শুঁটকির পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। এসব পসরায় ছিল বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, ছুড়ি, লইট্টা, পুটি ও টেংরাসহ নানান জাতের দেশীয় মাছের শুঁটকি। এমন কোন জাতের শুঁটকি নেই যা পাওয়া যায় না।তবে দেশী মাছের শুঁটকির প্রাধান্যই বেশী। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও আমদানি করা বিভিন্ন প্রজাতির শুটকি উঠে। মেলায় নাসিরনগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ীরা শুঁটকি নিয়ে আসেন। সামুদ্রিক অনেক বিরল জাতের মাছের শুঁটকি ছাড়াও ইলিশ ও কার্প জাতীয় বিভিন্ন মাছের ডিমের শুটকি উঠেছে এই মেলায়। শুঁটকি ছাড়াও এ মেলায় আরেকটি বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে “বিনিময় প্রথা” অথ্যাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য। ভোরে এ মেলা বসার পর সকাল ১০টা পর্যন্ত বিনিময়ের মাধ্যমে বিক্রি চলে। আর এ কারণেই ধারণা করা হয় এই মেলার ইতিহাস অনেক পুরনো। কুলিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা ও বর্তমান ইউপি সদস্য মো: মুখলেছুর রহমান জানান, দুইশ বছরের বেশী সময় ধরে নিয়মিত ভাবে এই মেলা বসছে। এখনো বহু পুরনো প্রথা প্রচলন থাকায় আমরা ধারণা করছি, এ মেলা আদিম কালের। এই মেলা আমাদের কুলিকুন্ডা গ্রামের ঐতিহ্যবহন করে। মেলা আয়োজনের কোন কমিটি নেই। তারপরও মেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, মেলায় দুইদিনে লাখ লাখ টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়েছে। শুঁটকি বিক্রির লাখ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে যায়। এছাড়াও মেলায় গৃহস্থালী পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা বিক্রি হয়। এবারের মেলায় প্রায় দুইশতাধিক নানা জাতের শুঁটকির পসরা সাজিয়ে বসে দোকানীরা। তবে এবার শুটকীর আমদানি বেশী হলেও দাম ছিল চড়া। স্থানীয়দের মতে ব্যতিক্রম ধর্মী শুটকি মেলার পাশাপাশি পণ্যের বিনিময়ে পণ্য যুগ যুগ ধরে চালু রয়েছে। এই মেলা নাসিরনগরের ঐতিহ্যকে প্রদর্শন করে। এদিকে উপজেলা সদরের লঙ্গণ নদীর তীরেও একই দিনে বসে “বিনিময় প্রথা” অর্থাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য। ভোরে এ মেলা বসার পর সকাল ১০টা পর্যন্ত বিনিময়ের মাধ্যমে বিক্রি চলে। আলু, ডাল, সরিষা, পেয়াজ, রসুন, মরিচসহ এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত নানা পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি ক্রয় করেন। তবে রীতি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এখানে বিক্রি হয় মৃৎশিল্পীদের হাতের তৈরি মাটির হাঁড়ি ও তৈজসপত্র। স্থানীয় কুমারদের হাতের তৈরি হাড়িঁ, পাতিল, কলস, ঝাঁঝর, থালা, ঘটি, বদনা, বাটি, পুতুল ও প্রদীপ মেলায় মানুষের নজরকাড়ে। গ্রাম্য মেয়েদের সামান্য পয়সা সংগ্রহের জন্য নানা ডিজাইনের মাটির ব্যাংকও বিক্রি হয় এ মেলায়।

লাইব্রেরিতে বই পড়ে পুরস্কার পেলেন ১৫ শিক্ষার্থী

নাসিরনগর, 14 June 2024, 293 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে মে মাসে সর্বাধিক দিন লাইব্রেরিতে উপস্থিত থেকে বই পড়ায় ১৫ শিক্ষার্থীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।

১৩ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর ইউএনও মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া শিক্ষার্থীদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন বালিকা বিভাগে ২৭ দিন উপস্থিত থেকে প্রথম হয়েছেন সাদিয়া বুশরা, হাফছা বেগম, নুসরাত সাকুরা ও সুমাইয়া আফরিন। ২৬ দিন উপস্থিত থেকে দ্বিতীয় হয়েছে ইসরাত জাহান, সৃষ্টি রায়, সানিয়া আক্তার ও মহিমা রায়। ২১ দিন উপস্থিত থেকে তৃতীয় হয়েছে লামিয়া আক্তার।

বালক বিভাগে ২৭ দিন উপস্থিত থেকে প্রথম হয়েছেন পৃথিবী দাস সূর্য্য, গগনদীপ কুন্ডু, সৌমিক রায় ও স্নেহাল গোপ পান্না। ২৬ দিন উপস্থিত থেকে দ্বিতীয় হয়েছেন তন্ময় সরকার। ২৫ দিন উপস্থিত থেকে তৃতীয় হয়েছেন শয়ন গোপ।

ইউএনও মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া বলেন, ভালো কিছু করার জন্যই এই উদ্যোগ। স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা বই পড়ুক, সেই উৎসাহ দানের জন্যই এই পুরস্কার। নাসিরনগরবাসীর সৌভাগ্য যে উপজেলায় একটি পাবলিক লাইব্রেরি রয়েছে। আমি নাসিরনগর উপজেলায় যোগদানের পর উপজেলা প্রশাসন পরিচালিত পাবলিক লাইব্রেরি ভিজিট করতে গিয়ে দেখি প্রতিদিন দুই থেকে তিনজন পাঠক লাইব্রেরিতে আসেন।

তিনি আরো বলেন, পরে সেখান থেকে চিন্তা করি লাইব্রেরিতে কেমন করে পাঠক বাড়ানো যায়। তখনি ঘোষণা দেই লাইব্রেরিতে বেশি দিন উপস্থিত থেকে যে বই পড়বে তাদেন পুরস্কার দেওয়া হবে। এখন প্রতিদিন লাইব্রেরিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন পাঠক আসে।

তিনি আরো বলেন, গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসে সর্বাধিক দিন উপস্থিত থেকে সর্বোচ্চ বই পড়েছিলেন তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিলো। মে মাসে সর্বাধিক দিন উপস্থিত থেকে সর্বোচ্চ বই পড়ার জন্য আজ ১২ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, পাবলিক লাইব্রেরিতে অনেক কিছু সংস্কার করা হয়েছে। আরো কিছু সংস্কার করা হবে। ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক গুলো বইয়ের নাম বলেছেন, যেগুলো তারা পড়তে চাই। আমি সেই বই গুলো তাদের পড়ার ব্যবস্থা করে দেব।

স্টাফ রিপোর্টার:
দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধী টিকার বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ৬ কোটি ৪২ লাখ ৬১ হাজার ৯১৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৬৫৮ জন। রোববার (১১ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন শাখার (এমআইএস) পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ১৫ হাজার ৮৪৮ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২১ হাজার ৭৮১ জন। তাদেরকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম, ফাইজার, মডার্না এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ১৪ কোটি ৮৮ লাখ ৫৬ হাজার ৪৯২ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১২ কোটি ৬৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৮ জন। এ সময়ে টিকার বুস্টার (তৃতীয়) ডোজ পেয়েছেন ছয় কোটি ৪২ লাখ ৬১ হাজার ৯১৪ জন।
২০২১ সালের ১ নভেম্বর ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত এক কোটি ৭৩ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৯ শিক্ষার্থী টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ২৪২ শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন ৬৮৯ শিক্ষার্থী। তবে এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়নি।
এদিকে, এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮০০টি। এছাড়া দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ ৩৩ হাজার ৪২১ শিশুকে। অন্যদিকে, এখন পর্যন্ত ভাসমান জনগোষ্ঠীর ৫ লাখ ৭৭ হাজার ১৮০ জনকে জনসন অ্যান্ড জনসনের সিঙ্গেল ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৭৭০ জন।

নাসিরনগরে ঐতিহ্যবাহি শুঁটকি মেলা অনুষ্ঠিত

নাসিরনগর, 17 April 2023, 1178 Views,

চলারপথে রিপোর্ট  :
নাসিরনগরে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাংলা পঞ্জিকার নিয়ম অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ ঐতিহ্যবাহি শুঁটকি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মেলার বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে “বিনিময় প্রথা”। অর্থাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য।

উপজেলা সদরের কুলিকুন্ডা গ্রামের উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয় মাঠে বসে এই মেলা। মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা শুঁটকি নিয়ে আসেন মেলায়। জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশপাশ জেলা থেকে ভোজন রসিকরা আসেন এই মেলায় শুঁটকি কিনতে। পছন্দের শুঁটকি কিনে ক্রেতারা তৃপ্ত হন। শুঁটকি মেলায় প্রায় দুই শতাধিক জাতের শুঁটকির পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। এসব শুঁটকির মধ্যে ছিলো বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, ছুড়ি, লইট্টা, পুটি ও টেংরাসহ নানা জাতের দেশীয় মাছের শুঁটকি। এছাড়াও মেলায় ভারত থেকে আমদানি করা বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকিও উঠে।

মেলায় জেলার বিভিন্ন এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ীরা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জ থেকে শুঁটকি নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। মেলায় সামুদ্রিক অনেক বিরল জাতের মাছের শুঁটকি ছাড়াও ইলিশ ও কার্প জাতীয় মাছের ডিমের শুটকি উঠে।

স্থানীয়রা জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাংলা পঞ্জিকার নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামে এই শুঁটকি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তারা বলেন, প্রায় দুইশ বছরেরও অধিক সময় ধরে পহেলা বৈশাখে এখানে শুটকি মেলা বসে। প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের শুঁটকি নিয়ে আসেন মেলায়। এই শুঁটকি মেলার বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে “বিনিময় প্রথা”। অর্থাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য। ভোরে মেলা বসার পর সকাল ১০টা পর্যন্ত বিনিময়ের মাধ্যমে চলে বেচা কেনা। এ কারণেই ধারণা করা হয় এই মেলার ইতিহাস অনেক পুরনো।

মেলায় শুঁটকি কিনতে আসা উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রুবেল মিয়া ও উপজেলার নুরপুর গ্রামের মতি মিয়া বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন বাপ-দাদার সাথে এই মেলা এসেছি। এবারো শুঁটকি কেনার জন্য মেলায় আসছি।

উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান সর্দার বলেন, এখানে শত বছরের বেশী সময় ধরে নিয়মিত ভাবে এই মেলা বসছে। এই মেলায় এখনো বিনিময় প্রথা চালু থাকায় আমরা ধারণা করছি, এ মেলা আদিম কালের। এই মেলা আমাদের কুলিকুন্ডা গ্রামের ঐতিহ্য বহন করে।

মেলায় শুঁটকি কিনতে আসা উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামের মহব্বত আলী বলেন, প্রাচীনকালে যখন কাগজের মুদ্রা প্রচলন হয়নি তখন থেকেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের বিনিময়ে এখান থেকে শুঁটকি কিনতেন। কালের বির্বতনে এই মেলার জৌলুস অনেকটা কমেছে। হ্রাস পেয়েছে বিনিময় প্রথাও। তিনি বলেন, ঐতিহ্য হিসেবে এই মেলায় শুঁটকি কেনার জন্যে এসেছি। ছোট বেলায় বাবার সাথে এই মেলায় আসতাম।

মেলায় শুঁটকি নিয়ে আসা ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারনে হ্রাস পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী পণ্য বিনিময় প্রথা। এখন নামে মাত্র এই প্রথা চালু আছে। তিনি বলেন, আমি প্রতি বছরই শুঁটকি নিয়ে মেলায় আসি।

স্থানীয়রা জানান, একদিনের মেলায় লাখ লাখ টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা শুঁটকি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা নিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে যায়। এছাড়াও মেলায় গৃহস্থালী পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা বিক্রি হয়। তবে এবার শুঁটকির আমদানি বেশী হলেও দাম ছিল চড়া।

মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওহাব আলী জানান, বিনিময় প্রথার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্যে আজো অল্প পরিসরে সূর্যোদয়ের সাথে-সাথে কিছুক্ষনের জন্যে পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে শুঁটকি বেচা-কেনা শুরু হয়। পরে চলে টাকা দিয়ে বেচা-কেনা।

তিনি জানান, “বাংলা পুঞ্জিকা অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ সহ আশপাশের জমিতে বসে ঐহিত্যবাহী শুটকি মেলা। তিনি বলেন, পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি, মোগল আমল থেকেই এখানে শুঁটকি মেলা হয়ে আসছে।