সংস্কার হচ্ছে হরিপুর জমিদার বাড়ি

নাসিরনগর, 30 July 2023, 1161 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
সঠিক তদারকির অভাবে এবং অযত্ন ও অবহেলায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছিল কালের সাক্ষী হয়ে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর জমিদার বাড়ি। ৭৫ বছর ধরে বেদখলে ছিল বিশালাকার বাড়িটি।

banner

সম্প্রতি হরিপুর বড় বাড়ি সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। অবৈধ দখল উচ্ছেদের পর এবার শীঘ্রই সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

১৮শ শতাব্দীতে জেলার নাসিরনগর উপজেলায় তিতাস নদীর পাড়ে প্রায় ৪৮০ শতাংশ জমিতে জমিদার কৃষ্ণপ্রদাস রায় চৌধুরী ও গৌরীপ্রসাদ রায় চৌধুরী দৃষ্টিনন্দন এ বাড়িটি নির্মাণ করেন।

জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর জমিদার পরিবারের লোকজন বাড়িটিতে কয়েকজন পুরোহিতদের রেখে কলকাতায় চলে যান। এরপর পুরোহিতদের বংশধরদের পাশাপাশি স্থানীয় কিছু মুসলিম পরিবার দখল নিয়ে বসবাস শুরু করেন সেখানে। সেই থেকে প্রায় ৭৫ বছর ধরে বাড়িটি ছিল বেদখলে। এতে বাড়িটি দিনের পর দিন বিলুপ্তির পথে যেতে থাকে। তবে সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাড়িটির দখলে থাকা পরিবারগুলোকে অন্যত্র পুনর্বাসিত করা হয়। এরপরই নেওয়া হয় বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তিতাসের পূর্বপ্রান্তে এত বড় বাড়ি আর কোথাও নেই। কারুকাজ খচিত ৬০টি কক্ষ বিশিষ্ট বাড়িটিতে রং মহল, দরবার হল, নাচ ঘর, পুকুর, খেলার মাঠ, মন্দির ও সীমানা প্রাচীর রয়েছে। তবে এর অনেক অংশ ভেঙে ফাটলও ধরেছে। লাল ইট সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি ভবনের দু’পাশে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী ও গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরীর দুটি সমাধি সুউচ্চ মঠ রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এখানে এসে ঘুরে ঘুরে পুরো রাজবাড়ির সৌন্দর্য দেখছেন। অনেকে আবার মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. গোলাপ মিয়া বলেন, হরিপুর রাজবাড়ি এটি আমার জন্মের আগে নির্মিত। এই বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ছিল। বাড়িটিতে বহিরাগত লোকেরা থাকতেন। তবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দখলে থাকা বহিরাগতদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে জায়গা দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। আমাদের দাবি, এই বাড়ি যেন পুনঃসংস্কার করে দেয়। তাহলে আমাদের তিতাসের পূর্ব পাড়ে অতীতের একটি স্মৃতি থাকবে।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল জব্বার বলেন, দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বাড়িটি পরিত্যক্ত। এই বাড়িটি চুনকাঠ ও বীমের উপর দাঁড়িয়ে আছে। যেকোনো সময় একটি বড়ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি চাই, সরকার যেন দ্রুত এই বাড়িটি সংস্কার করে দেয়। বাড়িটি সংস্কার করে দিলে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরো বাড়বে। আমাদের এলাকার উন্নয়ন হবে।

ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটক বলেন, আমরা হরিপুর জমিদার বাড়ি দেখতে এসেছি। দেখলাম এখানে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। রাজমহল, রঙমহল, দরমহলসহ প্রতিটি দেওয়ালে বিভিন্ন প্রকার কারুকাজ করানো রয়েছে। বাড়িটি অনেক পুরোনো হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। তবে বাড়িটির ফটকের সামনে যদি এর ইতিহাস লিখে রাখা হয় তাহলে পর্যটকরা এসে এর সঠিক তথ্য জানতে পারবে। বাড়িটি যদি দ্রুত সংস্কার করা যায় তাহলে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেখতে পারবে।

জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, হরিপুর জমিদার একটি দর্শনীয় স্থান। এটা প্রত্নতত্ত্বের একটা গুরুত্ব আছে। জমিদার বাড়িতে যেসব বহিরাগত পরিবার ছিল তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে জায়গা দিয়ে ওখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবার ছিল তারা নিজেরাই চলে গেছেন।

বাড়িটি সংস্কারের বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মহাপরিচালক চন্দন কুমার দে বলেন, আমাদের যে সরকারি রাজস্ব ফান্ড আছে তা থেকে এই বছরই আমরা বাড়িটির সংস্কার কাজ শুরু করব। আমরা প্রকল্প তৈরির চেষ্টা করছি। খুব দ্রুত প্রকল্পটা আমাদের মন্ত্রণালয়ে আমরা পাঠিয়ে দেব। আসা করছি প্রকল্পটা অনুমোদন হলে একটা বড় আকারের কাজ করতে পারব। বাড়িটি যেভাবে আছে আমরা ঠিক সেই ভাবে রেখেই সংস্কার কাজ করব।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদ বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষার একটি আইন বা ব্যবস্থা আছে যা সারা বিশ্বে একই নিয়ম। সেভাবেই আমরা এটি সংস্কার করব।

Leave a Reply

জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির…

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান Read more

বাঞ্ছারামপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

চলারপথে রিপোর্ট : ৬ দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য Read more

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্ক : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল Read more

রাইস কুকারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা-মেয়ের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক : মাগুরার সদর উপজেলার টিলা গ্রামে রাইস কুকারে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

চলারপথে রিপোর্ট : সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় Read more

নাসিরনগরে মৎস্য আড়তে অভিযান, নিষিদ্ধ পিরানহা…

চলারপথে রিপোর্ট : বিক্রির জন্য রাখা নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ জব্দ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন চাঁদাবাজ গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাটিহাতা (বিশ্বরোড) গোলচত্বর নামক এলাকায় চাঁদাবাজির Read more

সড়ক মেরামতের সপ্তাহ না পেরোতেই উঠে…

চলারপথে রিপোর্ট : সড়ক মেরামতের এক সপ্তাহ না পেরোতেই ইতিমধ্যে Read more

কসবায় গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : আজ ২৪ জুন মঙ্গলবার সকালে এস আই Read more

শাস্তি পেলেন ঋষভ পন্ত

অনলাইন ডেস্ক : আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট Read more

বাংলাদেশে গুগল পে এর উদ্বোধনী

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আহসান এইচ মনসুর Read more

যে কাজে নেক আমল নষ্ট হয়

ইসলাম ডেস্ক : মানুষের জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক দিক হলো Read more

১০ বছরের শিকলবন্দি জীবন রবিউলের

নাসিরনগর, 26 December 2022, 1633 Views,

চিকিৎসায় থালাবাসনও বিক্রি করে দিয়েছেন পিতা খলিল

স্টাফ রিপোর্টার:
পেশায় একজন রিকশাচালক খলিল মিয়া। নিজের সহায়-সম্পত্তি বলতে কিছু নেই। পরিবার নিয়ে থাকেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। ছেলের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনা তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। ১০টি বছর সন্তানকে শিকলবন্দি করে রাখতে হচ্ছে খলিল মিয়াকে। ছেলেকে এ থেকে পরিত্রাণ দিতে তার প্রয়োজন প্রায় ১২ লাখ টাকার। অর্থাভাবে থেমে আছে ছেলের চিকিৎসা। খলিল মিয়ার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের ভলাকুট গ্রামে। বর্তমানে বসবাস করেন সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরে। স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তান নিয়ে বসবাস করেন তিনি।
সম্প্রতি একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন গ্রামবাসী থেকে চাঁদা তুলে। ছোট ছেলে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। বড় ছেলে রবিউলকে (১৮) শিকলবন্দি করে ঘরে বেঁধে রাখতে হয়। পাশাপাশি নিয়মিত চিকিৎসাও করাতে হয়। তবে রিকশা চালিয়ে আয় করা সামান্য অর্থে পরিবারের খরচ ও বড় ছেলে রবিউলের চিকিৎসা ব্যয় চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন খলিল মিয়া।
খলিল মিয়া জানান, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সুখেই দিন কাটছিল। গ্রামে বাড়িতে সামান্য জমিও ছিল। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় রিকশা চালিয়ে বসবাস করতেন। বড় ছেলে রবিউল সেখানে স্কুলে পড়াশোনা করতো। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সে একদিন স্কুল থেকে সহপাঠীদের সঙ্গে বাসায় ফিরছিল। পথে একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিচে খেলছিল তারা। খেলার একপর্যায়ে দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে রবিউলের মাথার পেছনের দিকে রডের অংশ ঢুকে যায়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।

চিকিৎসার পর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে থাকে রবিউল। কিন্তু এই ঘটনার পাঁচ মাস পর সে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে, যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। রবিউলকে আরও উন্নত চিকিৎসা করানো হয়। তবে ছেলের চিকিৎসা খরচ মেটাতে গিয়ে বাড়িঘর ও শেষ সম্বল সামান্য জায়গাটুকুও বিক্রি করে দিতে হয়েছে খলিল মিয়াকে। এমনকী আর কিছু না থাকায় ঘরের থালাবাসনও বিক্রি করে দিতে হয়েছে।
খলিল মিয়া বলেন, ‘চিকিৎসকরা বলেছেন ভারতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালে ভালো হয়ে যাবে রবিউল। এজন্য প্রয়োজন প্রায় ১২ লাখ টাকা। যেখানে রিকশা চালিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে কোথায় পাবো এত টাকা!’
ভলাকুট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুবেল মিয়া বলেন, ‘খলিল মিয়া ঢাকা থেকে নিজ গ্রামে ফিরে আসবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার কোনো সহায়-সম্পদ বা মাথাগোঁজার মতো জায়গা ছিল না। বিষয়টি আমাকে জানালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিতে সহায়তা করি। কিন্তু খলিল মিয়া ছিলেন সিলেটের ভোটার। আমি নিজ উদ্যোগে তাকে ভলাকুট ইউনিয়নের ভোটার করি। তারপর আশ্রয়ণ প্রকল্পে তাকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সে জানায়, তার ছেলে প্রতিবন্ধী। আমি বলেছি, তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা পেতে সহায়তা করা হবে।’
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা রাকেশ পাল বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ছেলে দীর্ঘদিন ধরে শিকলবন্দি। বিষয়টি কয়েকদিন আগে আমি জেনেছি। ছেলেটি যেন প্রতিবন্ধী ভাতা পায়, সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নাসিরনগরে ডিলারের বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

নাসিরনগর, 28 February 2023, 1581 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নাসিরনগরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির এক ডিলারের বিরুদ্ধে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল দেওয়ার কথা। তবে দেওয়া হচ্ছে ২৭-২৮ কেজি। বিতরণের সময় সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে ট্যাগ অফিসার থাকার কথা থাকলেও সে নিয়ম মানা হচ্ছে না। এতে ঠকছেন হতদরিদ্ররা। বিষয়টি ডিলার স্বীকার করলেও একে অন্যকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

banner

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন সঠিক ওজনে চাল দিচ্ছেন না ডিলার। উপজেলার ফান্দাউক গ্রামে এ অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত ডিলারের নাম মো. বদর আলম। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিন গিয়ে সুবিধাভোগীদের চাল মেপে পাওয়া গেছে ২৮ কেজি।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১৩টি ইউনিয়নে ২৬ ডিলার ও ৮ হাজার ৭০৫ উপকারভোগীর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফান্দাউক ইউনিয়নের ডিলার বদর আলমের মাধ্যমে ৩০৪ জন চাল পাচ্ছেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে চাল বিতরণের কাজ। শেষ হওয়ার কথা ৭ মার্চ।

গত সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে সরেজমিন দেখা গেছে, ডিলার বদরের দোকানের সামনে কয়েকশ লোক জড়ো হয়েছেন। তাঁরা কার্ড দেখিয়ে সারিবদ্ধভাবে চাল নিচ্ছেন। কয়েকজন ওজনে কম দেওয়ায় চাল না নিয়ে বাড়িতে চলে যান। প্রতিবাদ করলে নাম কেটে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের।

সেখানে কথা হয় শিউলি বেগম ও মুর্শিদা বেগমের সঙ্গে। তাঁরা জানান, অশিক্ষিত হওয়ায় মিটারের মাপ বোঝেন না। বাড়িতে চাল নিয়ে দেখেন তিন কেজি কম। বেশি কথা বললে নাম কেটে দেবে। এ জন্য কিছু বলার সাহস পান না।

আলাল মিয়া, নজরুল মিয়া ও পৈলন খাঁ অভিযোগ করেন, চাল নিতে এলে ডিলার বলেছে, দুই কেজি কম নিতে হবে। এ জন্য তাঁরা চাল নেবেন না। দুই বছর ধরেই কম দেওয়া হচ্ছে। চাল দেওয়ার সময় সরকারি লোক থাকার কথা। কিন্তু তারা ৫-১০ মিনিট থেকে চলে যায়। এ দিন সরকারি লোক আসেনি বলে জানান তাঁরা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ডিলার মো. বদর আলম বলেন, ‘আমার কী করার আছে। সরকারি গুদাম থেকে বস্তায় দু-তিন কেজি চাল কম থাকে। এরপরও আমি বলেছি ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার জন্য। হয়তো শ্রমিকরা ভুল করেছে।’ ট্যাগ অফিসার ছাড়া চাল দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে ট্যাগ অফিসার আসেনি।’

সরকারি ট্যাগ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী মো. মোজাম্মেল হকের। তিনি সেখানে ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করি। আমার দায়িত্ব হাসপাতালে। চাল বিতরণে অনিয়ম হলে সেটা আমার দেখার কথা না। সেটি দেখবেন খাদ্য কর্মকর্তা।’

ডিলার ও ট্যাগ অফিসারের এমন দাবির বিরোধিতা করে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার আচার্য বলেন, ‘চাল বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসার উপস্থিত থাকবেন। গুদাম থেকে চাল কম দেওয়ার সুযোগ নেই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফকরুল ইসলাম বলেন, হতদরিদ্রদের চাল বিতরণে ওজনে কম দেওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ সত্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাসিরনগর উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার

নাসিরনগর, 19 September 2024, 442 Views,

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. লতিফ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

banner

১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা গ্রামের নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে লতিফ হোসেন কুন্ডা গ্রামের মৃত অহিদ হোসেনের ছেলে।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক তৌহিদুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে লতিফ হোসেনকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি।

নাসিরনগরে অগ্নিকান্ডে ৫ঘর ভস্মীভূত

নাসিরনগর, 10 February 2023, 1312 Views,

নাসিরনগর প্রতিনিধি :
নাসিরনগরে ভয়াহব অগ্নিকান্ডে ৫টি ঘর ভস্মীভ‚ত হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাত রাতে ৯টার দিকে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের ভোলাউক গ্রামের হাজী বাড়িতে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে নাসিরনগর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে।স্থানীয়রা বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভোলাউক গ্রামের হাজী বাড়িতে আগুন লাগে। আগুনে বাড়ির ২টি রান্নাঘর এবং ৩টি বসতঘর সম্পূর্ন পুড়ে যায়।

banner

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, হাজী বাড়ির ইমান উদ্দিনের ঘরের বৈদ্যুতিক লাইট বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়।

অগ্নিকান্ডে বসির আহমেদের ঘরে থাকা নগদ ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ডেকোরেটার্স ব্যবসায়ী মিনহাজ মিয়ার ঘরে থাকা নগদ ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও ইমান উদ্দিনের ঘরে থাকা নগদ ৩৫ হাজার টাকাসহ স্বর্ণালংকার ও ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে ভস্মীভ‚ত হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানায়, ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসকের বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে।

নাসিরনগরে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাত দলের হামলা

নাসিরনগর, সারাদেশ, 23 May 2025, 209 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে সড়কে গাছ ফেলে লাশবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্সে হামলা ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নারীসহ ৯ যাত্রী আহত হয়েছেন। এ সময় ডাকাতরা লাশের শরীরে আঘাত করেছে বলে জানা যায়।

banner

আজ ২৩ মে শুক্রবার রাত ১টার দিকে নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের তিলপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ডাকাতের হামলায় আহতরা হলেন- গাড়ির চালক মো. ফিরুজ মিয়া, গাড়ির মালিক মো. খলিল মিয়া, নিহতের স্বজন রাসেল মিয়া, ছালেক মিয়া, নাহিদ মিয়া, মো. আলমগীর মিয়া, মো. সালাউদ্দিন, আলেয়া বেগম ও আলী নেওয়াজ মিয়া। স্বজনদের চোখের সামনে মৃত ব্যক্তির ওপর আঘাতের এই দৃশ্য এলাকাজুড়ে সৃষ্টি করেছে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক।

স্থানীয়দের দাবি, এমন জঘন্য ও ঘৃণিত কাজ আগে কখনো দেখেননি তারা। ভুক্তভোগীদের স্বজনদের ভাষ্যমতে, পূর্বভাগ ইউনিয়নের মুকবুলপুর গ্রামের ছবদর আলী নামে এক ব্যক্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার মিরপুর আহসানিয়া হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মারা যান তিনি। এর কিছুক্ষণ পরই ঢাকা থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে ফেরার পথে বুড়িশ্বর ইউনিয়নের তিলপাড়া এলাকায় আসলে সশস্ত্র ডাকাতরা সড়কে গাছ ফেলে পথ রোধ করে গাড়ি আটক করেন। এরপর গাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়। মরদেহের সঙ্গে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে ৯টি মুঠোফোন ও নগদ অর্ধলাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ডাকাত দল।

ডাকাতদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ ও মালামাল না পাওয়ায় মরদেহের ওপরও হামলা করা হয় বলে দাবি করেন নিহতের ছেলে পূর্বভাগ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলমগীর মিয়া। তিনি বলেন, ‘ডাকাতরা টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে বলে দুঃখ নাই। কিন্তু আমার মৃত বাবার লাশের ওপর হামলা করেছে ডাকাতরা। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’

নাসিরনগর থানার ওসি মো. খায়রুল আলম জানান, ডাকাতরা কী কী নিয়েছে তা এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। ওই এলাকাটিতে আগেও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।