চলারপথে রিপোর্ট :
মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর ট্রেনে কাটা পড়ে জনি তম্পা নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। আজ ৩১ জুলাই সোমবার ভোরে লাউয়াছড়া বন সংলগ্ন ভাড়াউড়া চা বাগানের ৯ নম্বর সেকশন এলাকায় রেল লাইনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত জনি তম্পা লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মৃত মেজরলি সু:ঙ-এর ছেলে। খবর পেয়ে জিআরপি পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের ধারণা সিলেটগামী পারাবত ট্রেনে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ জানায়, নিহত যুবকের এক হাত ও এক পা ট্রেনে কাটা ছিল। মাথায় আঘাত ছিল।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর সাব্বির আলী বলেন, আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছি।
চলারপথে রিপোর্ট :
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২১টি ভারতীয় মহিষ জব্দ করেছেন হালুয়াঘাট থানা পুলিশ। শনিবার অপরাহ্নে ভুবনকুড়া ইউনিয়নের কুমারগাতী গ্রামের জবেদ আলীর পুত্র বাবুল মিয়ার বাড়ী থেকে মহিষগুলো আটক করা হয়।
জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত সীমান্ত এলাকার একদল চোরাকারবারী ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে গরু ও মহিষসহ অন্যান্য পণ্য সামগ্রী পাচার করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় দিবাগত রাতে একদল মহিষের পাল ভারত থেকে কোচপাড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন চোরাকারবারিরা। স্থানীয়রা চোরাকারবারিদের গতিবিধি লক্ষ্য রেখে থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে।
এ ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র রায় এর নেতৃত্বে টহলরত পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় শনিবার মহিষগুলো মালিক বিহীন জব্দ করে থানায় নিয়ে আসেন। জব্দকৃত মহিষের আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৪ লাখ টাকা।
এ ঘটনায় আজ ৩ সেপ্টেম্বর রবিবার থানা পুলিশের পক্ষ থেকে এজাহার নামীয় ৩ জন ও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, উপজেলার কুমারগাতী এলাকার গ্রামের জবেদ আলীর পুত্র বাবুল মিয়া, সিদ্দিকের পুত্র হিরা ও মৃত ইয়াসিন আলীর পুত্র শহীদুল্লাহসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে এই পাচার কাজের সাথে যুক্ত হয়ে সীমান্ত থেকে চোরাকারবারী করে যাচ্ছে। দাবি করেন এরা সীমান্ত এলাকার চিহ্নিত ও পেশাদার চোরাকারবারি। এদের সঙ্গে ভারতীয় পাচারকারীদের সাথে নিয়মিত যোগসাজশ রয়েছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু ও মহিষ অবৈধভাবে এনে নিজেদের সঠিক দাবি করে বিভিন্ন হাটবাজারের ইজারার কাগজ সংগ্রহ করেন পাচারকারীরা।
মহিষ জব্দের সত্যতা নিশ্চিত করে হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন চন্দ্র রায় জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে অভিযান পরিচালনা করে ২১টি মহিষ জব্দ করা হয়। বর্তমানে মহিষগুলো থানা হেফাজতে রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে মাঠে কাজ করছে থানা পুলিশ।
চলারপথে রিপোর্ট :
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিপুল পরিমাণ চেতনানাশক ওষুধ ও হালুয়াসহ আন্তঃজেলা অজ্ঞান ও মলমপার্টি দলের এক দম্পতিসহ ৪ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। আজ ১ জুন বৃহস্পতিবার তাদেরকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহসাড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড়ে ফ্লাইওভার ব্রীজের নীচ থেকে আটক করা হয়। বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন।
আটককৃতরা হলো- জামালপুরের ইসলামপুর থানার চিনারচর নামাপাড়া এলাকার মৃত জাবেদ আলীর ছেলে শহর আলী (৪৩), শহর আলীর স্ত্রী ও নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও থানার বাইটেঙ্গী বরাব বাজার এলাকার মৃত সুরুজ মিয়ার মেয়ে মানছুরা আক্তার জিমি (৩০), নোয়াখালীর সেনবাগ থানার জামালপুর এলাকার মৃত ছায়েদ আলীর ছেলে নূর ইসলাম (৪৫) ও জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি থানার গোপালগঞ্জহাটের সোনামিয়ার ছেলে মুকুল মিয়া (৪২)। তারা সবাই কালিয়াকৈরের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতো।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, বৃহষ্পতিবার ভোরে আন্ত:জেলা অজ্ঞান পার্টি ও মলমপার্টি দলের কয়েক সদস্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ফ্লাইওভার ব্রীজের নীচে অবস্থান নিয়ে চেতনানাশক বিভিন্ন দ্রব্য ব্যবহারের মাধ্যমে পথচারী ও বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। এ গোপন সংবাদ পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে এক দম্পতিসহ চারজনকে আটক করে। এসময় তাদের কাছ থেকে কথিত চেতনানাশক হালুয়ার ১৮টি পোটলা এবং রিভোট্রিল, মাইলাম, ইপিক্লোন ও ডাইজোপান সহ চেতনানাশক ঘুমের বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় নানা অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, বংশ পরম্পরায় এ পেশাটি চালিয়ে আসছিল গ্রেফতারকৃত শহর আলীও তার পূর্ব পুরুষেরা। তার দাদা, বাবা ও চাচারাসহ পূর্ব পুরুষেরাও এ পেশায় নিয়োজিত ছিল। বংশ পরম্পরার ঐতিহ্য এ পেশাটিকে টিকিয়ে রাখতে পূর্ব পুরুষদের পর উত্তরসূরী হিসেবে শহর আলী তার স্ত্রীকে নিয়ে ধরে রেখেছিল। শহর আলী এ পর্যন্ত অর্ধ সহস্রাধিক লুটের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে। এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যেখানে অনিয়ম চোখে পড়বে, সেখানেই অ্যাকশনে যাবেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।
আজ ৩ জানুয়ারি বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসি ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
রাশেদা সুলতানা বলেন, নির্বাচন চলাকালে যেকোনো অনিয়ম দেখলেই অ্যাকশনে যাওয়া হবে। প্রয়োজনে ভোট বাতিল করা হবে। কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবে না।
দলীয় সরকারের অধীনে ভোট সুষ্ঠু হবে কি-না – এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেটা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
ভোটের পরিবেশ কেমন হবে– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোট এখন যেটা হচ্ছে সেটা উৎসবমুখর ও সুন্দর হবে, এটা আমি বলতে পারি। ১৯৯৬ সালে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হওয়ার কারণে সেই নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তাই আমরা এবারের নির্বাচনে কোনো বিতর্ক তৈরি করতে চাই না। আমরা আমাদের জনগণ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই। ভালো নির্বাচন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মিডিয়া, পত্রিকা দেখে আমার মনে হচ্ছে সরকার চাইছে একটা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন হোক।
ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার বিষয়টি। সেজন্য বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা প্রচার করে যাচ্ছি। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রের প্রাণ, ভোটাররা না থাকলে নির্বাচন নিষ্প্রাণ হয়ে যাবে। তবে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে যেসব তথ্য পাচ্ছি তাতে আমরা আশাবাদী ভোটকেন্দ্রে অনেক ভোটার আসবে।
একটি বড় দলের (বিএনপি) নির্বাচনে না আসার বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলগুলোর জন্য ভোটে আসা না আসা তাদের স্বাধীন ইচ্ছা। কিন্তু সেজন্য তো ভোট থেমে থাকবে না। আর ভোটকে কোনোভাবে প্রতিহত করা যাবে না এবং কোনো নাশকতামূলক কাজ করা যাবে না। এগুলো যদি তারা করে, তাহলে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। তবে সব দল নির্বাচনে এলে একটা স্বস্তির বিষয় হতো, একটা উৎসবের বিষয় থাকত। এখন সেটা অতটা নেই সেটা তো আর অস্বীকার করার কিছু নেই।
চলারপথে রিপোর্ট :
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে না গিয়েই ঘরে বসে গাজীপুর জেলার নাগরিকগণ মাইগভ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ছয়টি সেবার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সরকারের এটুআই প্রকল্পের পরিচালক অতিরিক্ত সচিব ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবির আজ ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মামুনুল করিম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানব সম্পদ) ওয়াহিদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোসাম্মৎ হাসিনা আক্তার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবির, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোরাদ আলী প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা জানান, মাইগভ প্ল্যাটফর্মে ইতোমধ্যে ৩২টি মন্ত্রণালয় এবং ১৭৮ টি দপ্তর সংস্থার মোট ১৭৫৫টি সেবা নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত আছে। প্রথম পর্যায়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ছয়টি সেবা বৃহস্পতিবার নাগরিকগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। পর্যায়ক্রমে অপর সেবাসমূহ মাইগভ প্ল্যাটফর্মে নাগরিকগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে আলোচনা সভায় এটুআই পরিচালক নিশ্চিত করেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ এর প্রধান চারটি স্তম্ভ স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট সরকার। এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের মাইগভ টিমের সহযোগিতায় স্মার্ট সরকারের আওতায় স্মার্ট অফিস বিনির্মাণের লক্ষ্যে পাইলট ভিত্তিতে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাগরিক সেবাসমূহের মধ্য হতে ১৬৮টি সেবাকে ইতোমধ্যে ডিজিটাইজড করার জন্য এ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটুআই এর মাইগভ টিম এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয় যৌথভাবে বিগত ৫ মাস নিরবিচ্ছিন্নভাবে ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম পরিচালনা করে। মাইগভ এক ঠিকানায় সরকারি সেবার প্ল্যাটফর্ম এ নাগরিকদের জন্য ডিজিটাইজড সেবাসমূহ পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ডিজিটাইজড সেবাসমূহ উন্মুক্তকরণের ফলে নাগরিকগণকে আবেদন করার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসার প্রয়োজন হবে না। ঘরে বসেই আবেদন করে নাগরিকগণ ঘরে বসেই সেবা পাবে। ফলে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সরকার এর সেবা গ্রহণে নাগরিকদের সময়, ব্যয় এবং যাতায়াত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাবে এবং সেবামানের উন্নতি সাধিত হবে।
জনগণ যে ছয়টি সেবা পাবে সে গুলো হচ্ছে – ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সনদ প্রাপ্তির আবেদন, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের সন্তান/নাতি/নাতনীদের প্রত্যয়ন, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের বিবিধ আবেদন, প্যারোলে মুক্তির আবেদন, ছাপাখানার নাম ও ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন এবং ওয়াজ বা জিকির মাহফিল/মহাযজ্ঞ ও লীলা কীর্তন/ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাইক ব্যবহারের জন্য অনুমতি প্রাপ্তির আবেদন।
চলারপথে ডেস্ক :
আসন্ন রমজানে প্রায় এক কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন ও ‘বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তিকেন্দ্র’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রমজানের সময় আমরা প্রায় এক কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেবো, সেই সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। যাতে দেশের মানুষের কখনো খাদ্যে কষ্ট না পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ’
দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনারা জানেন আমাদের দেশে যারা হতদরিদ্র তাদেরকে আমরা প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল দিচ্ছি। এই চালের সঙ্গে আমরা পুষ্টি চালও মিশিয়ে দিচ্ছি যাতে তাদের পুষ্টিহীনতা না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সময়ে আমরা নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশনের ফলে বিশ্বব্যাপী যখন মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে আমরা আমাদের দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রায় এক কোটি মানুষকে ৩০ টাকা কেজিতে চাল দিতে টিসিবি কার্ড বিতরণ করেছি। তার থেকেও যারা নিম্নবিত্ত, তারা ১৫ টাকায করে কেজিতে চাল নিতে পারবে আমরা সেই ব্যবস্থা প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জন্য করেছি। ’
নিজে ফসল ফলানো গর্বের
স্কুল জীবন থেকে শিক্ষার্থীদের কৃষি কাজে সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিতে আমাদের যুব সমাজকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করা দরকার। আমার মনে হয় স্কুলজীবন থেকেই সম্পৃক্ত করা দরকার। মাঠে কাজ করা, ফসল ফলানো এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জার বিষয় না। কাজেই সেভাবেই আমাদের দেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে। ’
কৃষি নিয়ে শিক্ষিত যুবকদের মানসিকতা বদলেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমি সত্যি খুব আনন্দিত। অনেক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে মাঠে যেতে চায় না, এমনও ছিল যে, বাবা কৃষক সেটা বলতেও লজ্জা পেতো। আজকে কিন্তু সেই লজ্জাটা আর নাই, সেই লজ্জাটা আমরা ভেঙে দিয়েছি। ’
তিনি বলেন, ‘যেটা খেয়ে আমাদের জীবন বাঁচে, সেই কাজ করাটা লজ্জার না। সেই কাজ করাটা গর্বের। কাজেই মানসিকতার পরিবর্তন করা একান্ত প্রয়োজন। সেটাও আজকে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। ’
(প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বিভিন্ন প্রজাতির ধান, সরিষা, মধু, প্রায় সব ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল, হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু, মাছ চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। )
আরও গবেষণা বাড়াতে হবে
কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব সময় মনে করি গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষ সাধন করা যায় না। আর যেহেতু কৃষিনির্ভর দেশ, আমরা গবেষণার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি আমরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান সেগুলো গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। ’
তিনি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সব সময় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আঘাত আমাদের ওপর আসে। সেজন্য গবেষণা সবসময় অব্যাহত রাখতে হবে এবং এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ফসল উৎপাদন করতে হবে। শুধু ধান উৎপাদন নয়, ধানের সঙ্গে আমাদের তরকারি, ফলমূল সবকিছু উৎপাদনে বাংলাদেশ একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ’
কৃষি যান্ত্রিকীকরণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণের কথা স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সব সময় বলে গেছেন এবং ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। আজকে আমরা সে ব্যাপারে যথেষ্ট এগিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা যান্ত্রিকীকরণের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিচ্ছি, ভর্তুকি দিচ্ছি, উপকূল অঞ্চলে প্রায় ৭০ শতাংশ আমরা ভর্তুকি দিই এবং অন্যান্য অঞ্চলে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি। ’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। সেজন্য দক্ষ মানবশক্তি তৈরি করতে আমরা ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশ্বে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হচ্ছে, আমাদেরও সেসঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। ’
এর আগে গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে ‘বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্র’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনের পর তিনি বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষিপ্রযুক্তি কেন্দ্রের বিভিন্ন উদ্ভাবন ঘুরে ঘুরে দেখেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্স ইনস্টিটিউটের (আইআরআরআই) মহাপরিচালক জেইন বালিই, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কানাডার গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির (সিইইউ) নির্বাহী পরিচালক ড. স্টেভিন ওয়েব, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবির।
উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।