চলারপথে রিপোর্ট :
ফুলসজ্জিত গাড়িবহর ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে অবসরে গেলেন কনস্টেবল মো. মিজানুর রহমান। গতকাল রবিবার দীর্ঘ ৪০ বছরের কর্মজীবন শেষ করে অবসরে যান তিনি। বিকালে অন্যরকম এক আয়োজনের মাধ্যমে তাকে বিদায় জানিয়েছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেলসহ থানা পুলিশের কর্মকর্তা-সদস্যরা।
বিদায়ের আগে থানায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা শেষে পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমানের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তার হাতে সম্মাননা স্মারক ও উপহার সামগ্রী তুলে দেন থানা পুলিশের সদস্যরা।
শেষ মুহূর্তে ফুল দিয়ে সজ্জিত থানা পুলিশের গাড়িবহরের মাধ্যমে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। বিদায়বেলায় এমন সম্মাননায় অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন মিজান।
কনস্টেবল মো. মিজানুর রহমানের বাড়ি কুমিল্লা সদর উপজেলার শাসনগাছা এলাকায়। তিনি ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। এর মধ্যে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাকরি করেছেন। দীর্ঘ ৪০ বছরের চাকরি জীবন শেষে ব্রাহ্মণপাড়া থানা থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
কনস্টেবল মিজানুর রহমান বলেন, আমার সর্বস্ব দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে জনসাধারণের সেবা করেছি। অবসরকালে কর্মস্থল ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি স্যার ও সব সহকর্মীরা সুন্দর একটি আয়োজনের মাধ্যমে আমাকে বিদায় দিয়েছেন। এতে গর্ববোধ করছি।
ওসি শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল বলেন, আমরা একসঙ্গে থাকার স্মৃতিকে অন্তরে লালন করে একজন পুলিশ সদস্যকে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে বিদায় দিতে পেরেছি। পুলিশের প্রত্যেক সদস্যকে অবসরকালে এভাবেই বিদায় দেওয়া উচিত।
চলারপথে রিপোর্ট :
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলা বাজারে অভিযান চালিয়ে আশা বেকারী ও হক বেকারী নামের দুই প্রতিষ্ঠানকে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজ ২৮ আগস্ট সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অভিযান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মুন্সীগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুস সালাম।
বিষয়টি নিশ্চত করে সহকারী পরিচালক আবদুস সালাম জানান, নিমতলা বাজারে অভিযান চলাকালিন আশা বেকারী ও হক বেকারীতে মনিটরিং কালে দেখাগেছে অনুমোদন বিহীন এমোনিয়াম সালফেট ব্যবহার করে বেকারী পন্য উৎপাদন করছে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা হচ্ছে। তাছাড়া উৎপাদিত খাবারে উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ করছে না। বিএসটিআই অনুমোদন ব্যতিত বেকারীর পন্য উৎপাদন ও বিপনন করার অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী বেকারী দুটিকে ৯ হাজার টাকা করে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়েছে। অভিযানে সহযোগিতা করেন উপজেলার নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক শাহালম মিয়া ও সিরাজদিখান থানা পুলিশের একটি দল।
চলারপথে রিপোর্ট :
‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত/ ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/ নতুন নিশান উড়িয়ে/ দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/ এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা।’ সত্যিই বাংলায় এসেছে সেই মহার্ঘ্য স্বাধীনতা। আর আজ বাঙালির সেই গৌরবদীপ্ত দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি।
বাঙালি জাতির জীবনে ২৬ মার্চ দিনটি একই সঙ্গে গৌরব ও শোকের। বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসকেরা শোষণ এবং ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর যে আগ্রাসন চালিয়েছিল, এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধিকারের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাঙালিরা। তারা ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে প্রতিটি বাঙালির মনে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের বীজ রোপিত হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মৃত্যুপণ লড়াই ও রক্তসমুদ্র পাড়ি দিয়ে বীর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে আনে জাতীয় ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতা।
প্রতিবছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে দিবসটি উদযাপন করে গোটা জাতি। বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করে স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী দেশের বীর সন্তানদের। শ্রদ্ধা জানায় মহান স্বাধীনতার রূপকার বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতা, নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের প্রতি।
এই মহার্ঘ্য স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালি জাতিকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে এক সাগর রক্ত। বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে পুরো বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালি। ১৯৪৮, বায়ান্ন পেরিয়ে চুয়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টির পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কেঁপে উঠেছিল জেনারেল আইয়ুবের গদি। জনতার সাগরে সৃষ্টি হয়েছিল তাল স্রোতধারা। ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত ছিল গ্রাম-শহর, জনপদ। শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।
কিন্তু বাঙালির হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। পর্দার আড়ালে প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালি হত্যাযজ্ঞের ‘নীলনকশা’।
কিন্তু ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় মুক্তির দিকনির্দেশনা। আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেই প্রবল প্রদীপ্ত আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালির হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল-সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের ছবি।
কিন্তু বাঙালির আবেগ, সংগ্রাম ও মুক্তির আকাক্সক্ষাকে নির্মূল করতে অস্ত্র হাতে নামে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা।
সেই কালরাত্রি থেকেই শুরু হয় মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদ, পৈশাচিক বর্বরতা। কিন্তু ওই ঘোরতর অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। ২৬ মার্চের সূচনালগ্নে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন- মহান স্বাধীনতা।
চলারপথে রিপোর্ট :
আজ মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা দিন। একই সঙ্গে তাদের আন্তর্জাতিক সংহতির দিন। প্রতিবছর ১ মে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়। ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ১৮৮৬ সালের এই দিন রাস্তায় নামেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা। আর এই শ্রমিকদের ওপর গুলি চলে। এতে নিহত হন ১১ জন তরতাজা শ্রমিক। তাদের জীবনদানের মধ্য দিয়ে পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বে ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি মেনে নেওয়া হয়। সেই থেকে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসাবে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
বাংলাদেশেও প্রতিবছর মে দিবস পালিত হয়। নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে দিনটি পালনের আয়োজন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
সমাজ বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমজীবীরা প্রথমে বিচ্ছিন্ন এবং পরে সংঘবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে এসেছে। এ সংগ্রামের মাধ্যমে এক সময় দাস প্রথা বিলুপ্ত হলেও শ্রমিকের কাজের কোনো ধরাবাঁধা সময় ও নিয়ম ছিল না। উনিশ শতকের গোড়ায় কলকারখানায় সপ্তাহে ৬ দিন গড়ে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টার বেশি অমানুষিক পরিশ্রম করতেন শ্রমিকরা। বিনিময়ে মিলত সামান্য মজুরি। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কিংবা সামাজিক নিরাপত্তাও ছিল না তাদের। এর বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লড়াই শুরু হলেও তা বিরাট দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকায়। ১৮৮৬ সালে যা চূড়ান্ত রূপ নেয়। ওই বছরের ১ মে দৈনিক ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে শ্রমিকরা ফুঁসে ওঠেন। হে মার্কেটের কাছে তাদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে ১১ শ্রমিক নিহত হন। উত্তাল সেই আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে দিতে বাধ্য হয় এবং বিশ্বব্যাপী দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সময় চালু করা হয়। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সমাবেশে ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালিত হচ্ছে।
দিনটিতে বরাবরই বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিনটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান ও টকশো সম্প্রচার করবে।
চলারপথে ডেস্ক :
‘বঙ্গবাজার মার্কেটে একবার ১৯৯৫ সালে আগুন লাগে। এরপর আবার ২০১৮ সালে আগুন লাগে। তারপর আমরা এখানে সুপরিকল্পিত মার্কেট করার প্রকল্প গ্রহণ করি। তখন বেশ কিছু লোক বাধা দেয়। শুধু বাধা নয়, একটা রিটও করে। পরে হাইকোর্ট এটাকে স্থগিত করে দেন।’
রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ঈদের আগে এমন একটা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের যে কষ্ট-কান্না, তা সহ্য করা যায় না। এরইমধ্যে আমি বলে দিয়েছি, তাদের যতটুকু পারি সাহায্য করব এবং কার কেমন ক্ষতি হয়েছে, এটা দেখব।
আজ ৫ এপ্রিল বুধবার গণভবনে পদ্মা সেতুর সরকারি ঋণের দুই কিস্তি পরিশোধের চেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সে সময় যদি এটা স্থগিত না করা হতো, তাহলে আমরা এখানে একটা ভালো মার্কেট তৈরি করে দিতে পারতাম। তাহলে আজ এই ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতো না।’
বঙ্গবাজারে আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে হামলাকারীদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বলব দেশের কিছু লোকের আচরণ আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে। যখনই আগুন লেগেছে, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সেখানে চলে গেছে আগুন নেভাতে। এর সঙ্গে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, আনসার বাহিনী, ভলান্টিয়ার প্রত্যেকে সকাল থেকে কাজ করেছে। কথা নেই বার্তা নেই, দুপুরের পর একদল লোক লাঠি নিয়ে ফায়ার সার্ভিস অফিসের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালানো শুরু করে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যারা সেখানে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ৪৯ টাকার চেক দেওয়া হয়।
পদ্মা সেতুর সরকারি ঋণের দুই কিস্তি পরিশোধ
পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থবিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী গৃহীত ঋণের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর সরকারি ঋণ পরিশোধের প্রথম চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্যসহ সরকারের বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ভারী বৃষ্টি এবং ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেয়ায় লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানানা জেলা প্রশাসক রকিব হায়দার। তিনি জানান, বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ১৩ আগস্ট বুধবার ভোর থেকে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রথমে ৭ সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছায়। পরে তা কিছুটা কমে ৪ সেন্টিমিটারে ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
আজ ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় আবারো তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টায় পানি আরো ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলের ৩৫টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবো সূত্র জানায়, আগামী দুই-তিন দিন এই অঞ্চলে ভারীবর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকতে পারে। এতে লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গবাদিপশু, পাখি, বৃদ্ধ শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিস্তাপারের হাজারো মানুষ। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। ঘরের ভেতর মাচাং বানিয়ে সারা দিনের রান্না একবারে করছেন গৃহকর্মীরা। কেউ কেউ পাশের উঁচু রাস্তার বাঁধে চুলা বসিয়ে রান্না করছেন। বাঁধ আর রাস্তার ধারে পলিথিনের তাঁবু সাঁটিয়ে রাখা হচ্ছে গবাদিপশুগুলো। সবচেয়ে বড় বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি পরিবারের নারীরা। ল্যাট্রিন ডুবে যাওয়ায় বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে নারীদের।
তিস্তাপারের গোবর্দ্ধন গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, দুদিন ধরে চরাঞ্চলের প্রায় বাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানির কারণে সাপ, পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। গরু ছাগল রাখার মতো শুকনো জায়গাটুকুও মিলছে না।
আদিতমারী মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন এলাকার কাচুয়া শেখ বলেন, বন্যার পানিতে ৫ দিন ধরে রান্না করতে পারিনি। গরু-ছাগল ও পরিবারের সদস্যদের উঁচু জায়গায় রেখেছি। ত্রাণ নয়, চাই পানি যেন আর ভারত থেকে না আসে।
তিস্তা তীরের উত্তর গড্ডিমারী গ্রামের মোন্তাজ মিয়া, বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে হাঁটু কিংবা কোমরপানি।
পানির শোঁ শোঁ শব্দে রাতে ঘুমাতে পারিনি। আতঙ্কে থাকি শিশু বাচ্চাদের নিয়ে, কখন কে পানিতে পড়ে যায়। নিদারুণ কষ্ট নিয়ে জীবন কাটছে আামাদের।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় কয়েক হাজারের বেশি পরিবার টানা দুদিন পানিবন্দি। তাদের তালিকা করার পাশাপাশি খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, বৃষ্টি ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃহস্পতিবার আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তিস্তাপারের নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা। তাই এসব অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২ টায় ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
তিস্তা ব্যারাজের নিবাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় পানি আরো ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার আর দুপুর ১২ টায় পানি ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপ সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খোলা রাখা হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও রাস্তাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে প্যাকেটজাত শুকনো খাবার ও জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত বিতরণ শুরু করা হয়েছে। আরও কিছু শুকনো খাবারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষগুলোর খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে, যাতে তারা কষ্ট না পায়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।