মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা গ্রেফতার ॥ কারাগারে প্রেরণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 25 August 2023, 1031 Views,

১ হাজার ২২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ

চলারপথে রিপোর্ট :
১ হাজার ২২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ মাহমুদুল হাসান নামে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

banner

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেফতারকৃত মাহমুদুল হাসান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের সহকারী প্রসিকিউটরের দায়িত্বে ছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আদালতে বিচারাধীন মাদকের মামলা নিষ্পত্তি পর আলামত হিসেবে জব্দ করা বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য গত বুধবার বিকেলে চীফ জুডিসিয়াল আদালত চত্বরে ধ্বংস করা হয়।

এ সময় অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনসহ কয়েকজন জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন।

আদালতের মালখানায় থাকা বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য ধ্বংস করার জন্য আদালত প্রাঙ্গনে আনার সময় মাহমুদুল হাসান এক প্যাকেট ইয়াবা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেন। এতে তার প্যান্টের পকেট উঁচু হয়ে যাওয়ায় উপস্থিত ম্যাজিষ্ট্রেটদের সন্দেহ হয়। এ সময় উপস্থিত একজন ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশ সদস্যদের ডেকে মাহমুদুল হাসানের শরীর তল্লাশী করতে বলেন। পরে পুলিশ সদস্যরা তল্লাশী করে তার প্যান্টের পকেট থেকে ১ হাজার ২২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় মালখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জোবায়েদুল হাসান ভূইয়া বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলা দায়ের করেন। বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা হাজতে প্রেরণ করা হয়।

এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারি পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই অবস্থান করছেন। ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। এমনটা হয়ে থাকলে বিষয়টি দুঃখজনক ও লজ্জাজনক।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকন জানান, বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নিজ চোখে বিষয় দেখে ফেলেন। দেখার পরই তাকে প্রথমে তাকে আটক ও পরে পুলিশের মাধ্যমে তার শরীর তল্লাশী করে তার পকেটে ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। পরে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন তিনি। আমি তার যথাযথ শাস্তি দাবি করি।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের পুলিশের পরিদর্শক কাজী দিদারুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে মাহমুদুল হাসান আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

Leave a Reply

জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির…

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান Read more

বাঞ্ছারামপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

চলারপথে রিপোর্ট : ৬ দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য Read more

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্ক : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল Read more

রাইস কুকারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা-মেয়ের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক : মাগুরার সদর উপজেলার টিলা গ্রামে রাইস কুকারে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

চলারপথে রিপোর্ট : সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় Read more

নাসিরনগরে মৎস্য আড়তে অভিযান, নিষিদ্ধ পিরানহা…

চলারপথে রিপোর্ট : বিক্রির জন্য রাখা নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ জব্দ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন চাঁদাবাজ গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাটিহাতা (বিশ্বরোড) গোলচত্বর নামক এলাকায় চাঁদাবাজির Read more

সড়ক মেরামতের সপ্তাহ না পেরোতেই উঠে…

চলারপথে রিপোর্ট : সড়ক মেরামতের এক সপ্তাহ না পেরোতেই ইতিমধ্যে Read more

কসবায় গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : আজ ২৪ জুন মঙ্গলবার সকালে এস আই Read more

শাস্তি পেলেন ঋষভ পন্ত

অনলাইন ডেস্ক : আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট Read more

বাংলাদেশে গুগল পে এর উদ্বোধনী

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আহসান এইচ মনসুর Read more

যে কাজে নেক আমল নষ্ট হয়

ইসলাম ডেস্ক : মানুষের জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক দিক হলো Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত হলো শীতের কবিতা পাঠ ‘হে মাঘনিশীথের পাখি’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 5 February 2024, 729 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবির কণ্ঠে কবিতাপাঠের আয়োজন করেছে প্রকাশনা সংস্থা প্লাটফর্ম-এর বিশেষ প্রকাশনা ‘সাময়িক প্রসঙ্গ’। এতে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন ২০ জন কবি। বিপুল সংখ্যক কবির স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি এবং কথা ও কবিতায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে পুরো অনুষ্ঠান। গতকাল রবিবার বিকেলে ‘হে মাঘনিশীথের পাখি’ শিরোনামে কবিতাপাঠের এই আসর অনুষ্ঠিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে।

banner

কবিতাপাঠের এ আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক অধ্যাপক মানবর্দ্ধন পাল। নান্দনিক এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের খ্যাতিমান কবি দিলীপ দাস।

আমন্ত্রিত কবি হিসেবে অনুষ্ঠানে কবিতা পড়েন জয়দুল হোসেন, মো. আ. কুদদূস, মহিবুর রহিম, অর্ধেন্দু শর্মা, আমির হোসেন, শাদমান শাহিদ, রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস, আমির হামজা, শাহরিয়ার কাসেম।

এছাড়াও হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, শিরীন আখতার, ইউনুস সরকার, গোলাম মোস্তফা, শাহাদত হোসেন সোহেল, আল আমিন তুষার, খাদিজা ইভ অনুষ্ঠানে কবিতা পড়েন। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন উপাধ্যক্ষ এ কে এম শিবলী।
কবিতাপাঠের এই আসর সঞ্চালনা করেন কবি ও সাময়িক প্রসঙ্গ’র সম্পাদক হেলাল উদ্দিন হৃদয়।

কথা কবিতা আড্ডার এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে কবিতারপাঠের পাশাপাশি কথা বলেন অনেকেই। তাদের কথায় ওঠে আসে সমকালীন ফেসবুকীয় লেখালেখি সহ নানান প্রসঙ্গ। তাদের মতে, বেশি বেশি ফেইসবুক ব্যবহার করার ফলে মানুষ বই থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। মানুষ যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। সর্বোপরি মানুষ নিঃসঙ্গ একাকী হয়ে যাচ্ছে। কবিতাচর্চা বিষয়ে নিজের লেখা সম্পাদনা কিংবা কাঁটাছেড়ার প্রয়োজন বা তাগিদ কমে গেছে কবিদের মাঝে। ফলে উত্তম সাহিত্যচর্চা ব্যাহত হচ্ছে। ভালো লেখা ও লেখক তৈরি হচ্ছে না। এটা বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অনেক বেশি কষ্টের বিষয়। বক্তারা আরও বলেন, ফেইসবুক যেনো আমাদের সাহিত্যচর্চায় সহায়ক হয়, অন্তরায় না হয় সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কারণ এটা বেশি চর্চা করলে মানুষ সস্তা হয়ে যেতে পারে, আবার ব্যবহার না করলে সময় থেকে হারিয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ক্রীড়া উৎসবের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত

বিনোদন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 25 November 2023, 1507 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ জিয়াউল হক মীর বলেছেন, প্রতিবন্ধী বলতে কিছু নেই, আমরা প্রতিবন্ধী না বলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বা ব্যক্তি বলতে পারি। তাদেরকে অবহেলা করলে হবে না। আমরা তাদেরকে ভাল আচরণ করে সমাজের মুল শ্রোতে আনতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাদের জন্য রয়েছে আলাদা চিন্তা এবং তাদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার একটি মহা পরিকল্পনা।

banner

আজ ২৫ নভেম্বর শনিবার সকাল ১০টায় টেংকেরপাড় আব্দুল কুদ্দুস মাখন মুক্তমঞ্চে জেলা ক্রীড়া অফিস আয়োজিত বার্ষিক ক্রীড়া কর্মসূচি ২০২৩-২৪ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ক্রীড়া উৎসব এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জেলা ক্রীড়া অফিসার মাহমুদা আক্তারের সভাপতিত্বে তিনি আরো বলেন, প্রধামন্ত্রী সুবর্ণ নাগরিক সন্তাদের নিয়ে একটি ক্রীড়াযজ্ঞ তৈরী করেছে এবং তাদের এ ক্রীড়ার মাধ্যমে উৎসাহিত করছে।

কণ্ঠ শিল্পী আনিসুল হক রিপনের সঞ্চালনায় এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন সমাজ সেবা উপ-পরিচালক আবু আব্দুল্লাহ মোঃ ওয়ালী উল্লাহ, প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা গায়ত্রী দেবনাথ। এসময় আসমনাতুন্নেছা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলসহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ে প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

বিভিন্ন প্রতিবন্ধী, মুক বধির ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ শতাধিক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ক্রীড়া উৎসবে অংশ গ্রহন করেন।

উভেন্টের মধ্যে ছিলো ফুটবল, দড়ি লাফ, ৫০ মিটার দৌড়, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ২০ মিটার হাটা এবং পরে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিগণ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

৫০ ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর

জাতীয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 11 June 2024, 1047 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের চাবি ও দলিল হস্তান্তর করা

banner

এ উপলক্ষে আজ ১১ জুন মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সেলিম শেখের সভাপতিত্বে ঘরের চাবি ও দলিল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন সুলতানা, সদর উপজেলা পরিষদের সদ্য বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লোকমান হোসেন, সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোনাব্বের হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম ভূইয়া, ইউপি চেয়ারম্যান আলামিনুল হক পাভেল প্রমুখ।

সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশে একযোগে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর ঘর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের আমিরপাড়ায় নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০টি ঘরের দলিল ও চাবি উপকারভোগিদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, মুজিব শতবর্ষে “বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না” এই শ্লোগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার আশ্রয়ণ-২-প্রকল্পের আওতায় ‘ক’ শ্রেণির ভূমিহীন (যাদের জমি নেই ঘরও নেই) তাদের পূনর্বাসনের জন্য ৫ম পর্যায়ে (২য় ধাপে) ৫০টি পরিবারের জন্য র্গহ নির্মাণ করা হয়েছে। ২শতাংশ খাস জমিতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। সব গুলো ঘর একই নকশায় নির্মিত হয়েছে। ৫ম পর্যায়ে (২য় ধাপে) সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের আমিরপাড়া এলাকায় ৫০ টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ভূমিহীনদের পুর্ণবাসনের ক্ষেত্রে এটি একটি বিপ্লব।

তিনি উপকারভোগীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ঘরের পাশে যে খালি জায়গা রয়েছে সেখানে সবজি ও গাছ রোপন করতে হবে। ঘরটাকে বাগানে পরিণত করতে হবে।

শত বছরের পুরোনো কাঠবাড়িয়ার পুকুর ভরাটের অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 21 January 2024, 827 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
কয়েক মাস ধরে সরকারি জায়গাসহ ফসলি জমি কেটে ট্রাক্টরে করে মাটি নিয়ে কাঠবাড়িয়ার পুকুর ভরাট করেছে প্রভাবশালী এই চক্র।

banner

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবাসন প্রকল্প করে প্লট আকারে জায়গা বিক্রি করতে শত বছরের পুরোনো পুকুর ভরাট করছেন যুবলীগ নেতা। কয়েক মাস ধরে সরকারি জায়গাসহ ফসলি জমি কেটে ট্রাক্টরে করে মাটি নিয়ে সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের গৌতমপাড়ার কাঠবাড়িয়ার পুকুর ভরাট করেছে প্রভাবশালী এই চক্র। পুকুরের প্রায় ৯০ শতাংশ ভরাট করে ফেললেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মাহিন খন্দকার শত বছরের পুরোনো ওই পুকুর ভরাট করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলার সরকারি দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা পরোক্ষভাবে যুবলীগ নেতাকে মদদ দিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি জায়গা থেকে বালু উত্তোলন এবং সরকারি কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় যুবলীগ নেতা মাহিনকে আসামি করে সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন তালশহর পূর্ব ইউনিয়ন (ভূমি) সহকারী কর্মকর্তা পংকজ কুমার বর্ধন।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা এর শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।

তবে ইউএনও মোহাম্মদ সেলিম শেখ বলেন, ‘পুকুর ভরাট করার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ কোনো প্রয়োজনে পুকুর ভরাট করতে হলে অনুমতি নিতে হবে। সেখানে আগেও একবার অভিযান চালানো হয়েছিল। নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য খোঁজ নেওয়ার সুযোগ হয়নি। আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পুকুর থেকে সম্পূর্ণ মাটি উত্তোলন করে নিলামে বিক্রি করা হবে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার ঘাটুরা গৌতমপাড়ার কাঠবাড়িয়া এলাকায় শত বছরের পুরোনো একটি পুকুর রয়েছে। একসময় পুকুরটির মালিক ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। পরে পুকুরটির মালিক হন শহরের পৈরতলা এলাকার জাহাঙ্গীর কবির। তিনি সম্পর্কে এরশাদ সরকারের সময়ের সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবিরের আপন ভাই। জাহাঙ্গীর কবির থেকে আবাসন প্রকল্প করে প্লট আকারে জায়গা বিক্রি করতে পুকুরটি কেনেন মাহিন খন্দকার ও স্থানীয় কাজী রানু মিয়া। তিন–চার মাস ধরে তাঁরা মাটি দিয়ে পুকুরটির ভরাটকাজ শুরু করেন। প্রথমে তাঁরা খননযন্ত্র দিয়ে পুকুর ভরাট করেন। পরে তাঁরা পুকুর থেকে প্রায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গৌতমপাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের সামনের পশ্চিম দিকের ফসলি জমি খননযন্ত্র দিয়ে কেটে মাটি উত্তোলন শুরু করেন। সেই মাটি ট্রাক্টরে ভরে ফসলি জমির ওপর দিয়ে নিয়ে পুকুরে ফেলে ভরাট করছেন। পাশাপাশি অষ্টগ্রাম মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানের ৩৫ শতক সরকারি নাল জায়গা থেকে অবৈধভাবে খননযন্ত্রের সাহায্যে মাটি কেটে ভরাটের জন্য কাঠবাড়িয়ার পুকুরে ফেলেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে যুবলীগ নেতা মাহিনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা হয়।

সদর উপজেলার অষ্টগ্রাম মৌজার ১ নম্বর বিএস খতিয়ানের ‘ক’ তফসিলভুক্ত একটি ইজারা মামলার বিএস ৭৩৪৯ দাগে ১১ শতক, ৭৩৫০ দাগে ১২ শতক, ৭৩৫১ দাগে ১২ শতক মোট ৩৫ শতক ভূমি থেকে অবৈধভাবে খননযন্ত্রের মাধ্যমে মাটি কেটে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন মাহিন খন্দকার। তিনি সরকারি সম্পত্তি ব্যাপকভাবে আত্মসাৎ করেছেন। ১৫ জানুয়ারি সকাল ১০টায় বাধা দিলে মাহিন ও তাঁর লোকজন অকথ্য গালিগালাজ করেন। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেন মাহিন।

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী, ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বাসিন্দা বলেন, পুকুরটি মাহিন ও রানু মিয়ার কাছে বিক্রি করে দেন জাহাঙ্গীর। আবাসন প্রকল্পের জন্য তাঁরা পুকুরটি মাটি দিয়ে ভরাট করছেন। পরে ভরাটকৃত জায়গা প্লট আকারে বেশি দামে তাঁরা বিক্রি করবেন।

অভিযুক্ত সুহিলপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মাহিন বলেন, ‘আমি এর সঙ্গে জড়িত নই। এটি আমার পুকুর না।’ স্থানীয় বাসিন্দারা সবাই আপনার নাম বলছেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুকুরটি আমার ছিল। এক বছর আগে বিক্রি করে দিয়েছি।’

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকারের মতবিনিময়

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 16 February 2023, 1327 Views,

স্টাফ রিপোর্টার :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার বলেছেন, একটি পক্ষ আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য মন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এখনো কোন প্রকল্প পাস কিংবা অর্থ বরাদ্দ হয়নি। তাহলে অনিয়ম হল কোথায়? তারা রাজনৈতিকভাবে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোতিভাবে এমনটি করছেন।

banner

তিনি আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাহারুল ইসলাম মোল্লাসহ কার্যকরী কমিটির নেতৃবৃন্দকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পক্ষ থেকে দেয়া এক লাখ টাকার আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেওয়া উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে একথা বলেন।

এ সময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকার আরো বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানের কার্যকালে রাজস্ব ও এডিপির বরাদ্দে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসব অভিযোগের মধ্যে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের একটি সরকারি নিবন্ধনবিহীন মাদ্রাসার নামে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ ও জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের শালগাঁও-কালিসীমা গ্রামের শতাধিক প্রকল্পের নামে কয়েক কোটি সরকারি টাকা হরিলুটের অভিযোগ উল্লেখযোগ্য।

তিনি বলেন, অনুসন্ধ্যানে জানতে পেরেছি, ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২-২২ অর্থবছর পর্যন্ত সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের পয়াগ দারুল উলুম মাদ্রাসার নামে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল আলম ১ কোটি ৫৫লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। একই সময়ে জেলা পরিষদের সদস্য সদস্য মোঃ বাবুল মিয়া সদর উপজেলার কালিসীমা-শালগাঁও গ্রামে বিভিন্ন খাতে ১১৮টি প্রকল্প দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

জেলা পরিষদ সদস্য পায়েল হোসেন মৃধা সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনয়নসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূয়া প্রকল্প বরাদ্দ করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। নাসিরনগর উপজেলা থেকে নির্বাচিত সাবেক সদস্য ফারুকুজ্জামান ফারুক উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র একটি গ্রামে এভাবে বরাদ্দ দিতে পারে না। একইভাবে একটি প্রকল্প শেষ হতে না হতেই একই প্রতিষ্ঠানে বার বার বরাদ্দ দেওয়া যায় না। যা সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম দিয়েছেন।

মতবিনিময় সভায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকার আরো বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি জেলা পরিষদের নির্বাচিত ৮জন সদস্য স্থানীয় সরকার উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে (আল-মামুন সরকার) বিধি বহির্ভূতভাবে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ প্রদানসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জেলা পরিষদের প্রথম সভা থেকে নির্বাচিত সদস্যদের পাশ কাটিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার।

তিনি নিজ ক্ষমতাবলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে চার লাখ টাকা, মেয়রকে চার লাখ ও ইউপি চেয়ারম্যানকে তিন লাখ টাকা করে বরাদ্দের বিভাজন করেছেন। যা স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদিত রাজস্ব তহবিল ও এডিপির বরাদ্দের ব্যবহার নীতিমালা ২০২২ এর পরিপন্থী।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল গেজেট বিপ্তপ্তিতে জেলা পরিষদ আইন ২০০০ এর অধিকতর সংশোধনীর প্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদের প্রণীত ২০২২ সালে ১০ নং আইন মোতাবেক প্রত্যেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র এবং ক্ষেত্রমতে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতিনিধি পদাধিকার বলে জেলা পরিষদের সদস্য।

এছাড়া জেলা পরিষদের এডিপি ও রাজস্ব খাতের অর্থে প্রকল্প গ্রহন, বাস্তবায়ন ও বন্টন নীতিমালা ২০০০ এর ৩ ধারা এর ৩ মোতাবেক জেলা পরিষদের প্রকল্প প্রণয়নের সময় জেলাধীন সকল উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে জনসংখ্যার সংখ্যানুপাতে প্রকল্প গ্রহন ও অনুমোদন করতে হবে। সেই অনুসারে তাদের প্রকল্পের প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।

আল মামুন সরকার বলেন, তাদের অভিযোগটি সঠিক নয়। কারণ পরিষদে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রকল্পের প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। প্রকল্পের প্রস্তাব দিলে সেটি পরবর্তী সভায় পাস হবে। পরবর্তী সভা এখানো হয়নি। অনুমোদনের জন্য প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় সেই প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে অর্থ বরাদ্দ দিবেন। পরে দরপত্র আহবান করা হবে। যার কোনো কিছুই এখনো হয়নি।

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি যদি কোন অনিয়ম করি তাহলে আপনারা আমার বিরুদ্ধে লিখবেন। সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) আমিনুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সদস্য আবদুল আজিজ ও রুমানা ফেরদৌসিসহ জেলা পরিষদের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সদস্য (সদর উপজেলা থেকে নির্বাচিত) ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মোঃ বাবুল মিয়া সাংবাদিকদের জানান, গত ৫ বছরে বিভিন্ন খাতে ১১৮টি প্রকল্প দিয়েছি। সকল প্রকল্পই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অবহেলিত ও যাদের প্রয়োজন তাদেরকেই প্রকল্প দিয়েছি। সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সত্য নয়। উল্লেখ্য মোঃ বাবুল মিয়া জেলা পরিষদের বিগত পরিষদেও সদস্য ছিলেন।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল আলমকে কয়েকবার তার মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভি করেননি।