চলারপথে রিপোর্ট :
কলাপাড়া কুয়াকাটায় নদ-নদী ও পরিবেশ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ৩১ আগস্ট বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কুয়াকাটার পর্যটন হলিডে হোমসের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওয়াটার্স কিপার্স বাংলাদেশ, কুয়াকাটা প্রেস ক্লাব, নদী পরিব্রাজক দল, আমরা কলাপাড়াবাসী ও জাতীয় নদী জোট যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো.নাসির উদ্দিন বিপ্লব।
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ওয়াটার্স কিপার্স বাংলাদেশের সভাপতি সুলতানা কামাল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ওয়াটার্স কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, কুয়াকাটা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল বারেক মোল্লা, কুয়াকাটা পৌর মেয়র মো.আনোয়ার হাওলাদার, পর্যটন পুলিশের পরিদর্শক মো.হাসনাইন পারভেজ, মহিপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসলাম খান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কলাপাড়া আঞ্চলিক কমিটির সদস্য সচিব মেজবাহ উদ্দিন মাননু।
বিশেষ প্রতিনিধি :
প্রকৃতিতে শীতের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। সময়ের পালাবদলে শীত শেষে দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঋতুরাজ বসন্ত। আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে কেবলই মৌ মৌ করতে শুরু করেছে চারিদিক। কয়েকদিনের মধ্যেই আমের মুকুলের মিষ্টি গন্ধে সুবাসিত হয়ে উঠবে প্রকৃতি। এ সময়টাতে মুকুলের যত্ন না নিলে আমের ভালো ফলন সম্ভব নয়। আর এ কারণেই আশায় বুক বেঁধে আম চাষিরা শুরু করেছেন পরিচর্যা। মুকুলে যাতে পোকার আক্রমণ না হয় ও ঝড়ে না পড়ে, সেদিকে নজর রাখছেন নওগাঁর চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে ৫২৫ হেক্টর জমিতে বেশি। চলতি মৌসুমে উপজেলাভিত্তিক আম চাষের পরিমাণ হলো-সদর উপজেলায় ৫১০ হেক্টর, রানীনগরে ১৩০, আত্রাইয়ে ১২০ দশমিক ৫, বদলগাছীতে ৫৩০, মহাদেবপুরে ৬৩০, পত্নীতলায় ৫ হাজার ৮১৫, ধামইরহাটে ৬৭৫, সাপাহারে ৯ হাজার ২৫৫, পোরশায় ১০ হাজার ৫৫০, মান্দায় ৪০০ ও নিয়ামতপুরে ১ হাজার ৩৮৪ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে।
শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। এই জেলা এখন সারাদেশে আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। নওগাঁর বিভিন্ন আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানের সারি সারি গাছে সবুজ পাতার মাঝে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। সবচেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গাছে বেশি মুকুল আসছে। গত এক সপ্তাহ আগে থেকেই গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। পুরোদমে মুকুল ফুটতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে বলছেন বাগান মালিকরা। তবে যে সব গাছে মুকুল আসছে কুয়াশা আর শীতের কারণে মুকুলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন আম চাষিরা। তাইতো তারা মুকুল ও গাছের পরিচর্যা শুরু করছেন।
সাপাহার উপজেলা সদরের গোডাউনপাড়ার বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের সফল কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, ৫০ বিঘা জমি বিভিন্ন মেয়াদি লিজ নিয়ে আম বাগান করেছি। তাতে আম রুপালি, বারি ফোর, গৌড়মতি ও আর্শ্বিনা জাতের আম গাছ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু আম গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। পুরোদমে মুকুল আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তাই এ সময় গাছের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। ছোট-বড় আম বাগান পরিচর্যায় সময় ব্যয় করতে হয়। এছাড়াও বাগানের আগাছা পরিষ্কারসহ পোকা দমনে স্প্রে করা হচ্ছে কীটনাশক।
পোরশা উপজেলার নিতপুরের আম চাষি মাসুদ বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে বাগানের আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। যেসব গাছে মুকুল এসছে, কুয়াশা আর শীতের কারণে মুকুলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মুকুল আসার পর থেকেই গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছি। মুকুল রোগ বালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বালাইনাশক স্প্রে করছেন।
পত্নীতলা উপজেলার আরেক আম চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, তার আম বাগানের অধিকাংশ গাছেই মুকুল দেখা দিয়েছে। তবে যেসব গাছে মুকুল আসছে প্রায় নতুন গাছ। নতুন গাছ হওয়ায় আগে ভাগেই মুকুল আসতে শুরু করেছে। মুকুলের মাথাগুলোকে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য স্প্রে করা হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে চলতি মাসের শেষের দিক থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিক পর্যন্ত সব গাছে মুকুল দেখা যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, আবহাওয়াগত ও জাতগত কারণেই কিছু গাছে আগাম আমের এই মুকুল আসতে শুরু করেছে। এসব গাছে ফুল ফোটার আগে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। এতে করে কুয়াশা বা অন্যান্য পোকার আক্রমণ কম হবে। তবে কোনো ক্রমেই গাছে সেচ দেওয়া যাবে না। এতে করে নতুন করে পাতা জন্মাবে। এই জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এখনও সব গাছে মুকুল আসেনি। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে পুরোদমে গাছে মুকুল আসবে। তখন শীত কেটে যাবে। তখন আমের মুকুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
অনলাইন ডেস্ক :
চট্টগ্রামে শিশুকে অপহরণ করে বিক্রির অভিযোগে মামা-মামিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার নগরের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে নরসিংদী থেকে ওই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেফতার তিনজন হলেন–ভোলার মনপুরা উপজেলার ভাসানখালী গ্রামের মুজিবুর রহমান মজিদ, তাঁর স্ত্রী আরজু বেগম এবং নরসিংদী সদর উপজেলার বগারগোত এলাকার আবুল কালাম।
পুলিশ জানায়, গত শনিবার দুপুরে কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোড থেকে আপন বোনের শিশুপুত্রকে অপহরণ করেন মজিদ। সন্তান না পেয়ে সোমবার কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন মা নূপুর আক্তার। পুলিশ ওই দিন রাতেই কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকা থেকে মজিদ ও আরজুকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবুল কালামকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁর তথ্য অনুযায়ী নরসিংদী সদর উপজেলার বগারগোত এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির জানান, শিশুটিকে অপহরণের পর আবুল কালামের মাধ্যমে এক লাখ টাকায় নরসিংদীর এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। মজিদ দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শিশুটিকে মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
রমজান মাসে সারাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ খোলা থাকলেও বন্ধ থাকবে মাদরাসা। রোজার জন্য ৭ মার্চ থেকেই দেশের সব মাদরাসা বন্ধ হয়ে যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ২০২৪ সালের ছুটির তালিকা ও শিক্ষাপঞ্জির প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ১১ ফেব্রুয়ারি রবিবার এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
ছুটির তালিক ও শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী—২০২৪ সালে দেশের তিনটি সরকারি আলিয়া মাদরাসা এবং বেসরকারি সব মাদরাসায় ৭১ দিন ছুটি থাকবে। ৭ মার্চ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত পবিত্র রমজান, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, স্বাধীনতা দিবস, ঈদুল ফিতরসহ কয়েকটি সরকারি ছুটি মিলিয়ে টানা ৩০ দিন (সাপ্তাহিক বন্ধ বাদে) ছুটি থাকবে।
ছুটির তালিকা ও শিক্ষাপঞ্জিতে রমজান মাসজুড়ে মাদরাসা বন্ধ রাখা হলেও তাতে সংশোধনী আসছে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানতে পারিনি। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে।’
এর আগে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে বছরের শুরুতে রমজানে ৩০ দিন ছুটি রেখে বাৎসরিক ছুটির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ছুটির তালিকায় সংশোধনী এনে মাধ্যমিক বিদ্যালয় রমজানেও ১৫ দিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানায়, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন ও শিখন ঘাটতি পূরণে পবিত্র রমজান মাসের ১৫ দিন স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এরপর একই পথে হাঁটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় রোজার প্রথম ১০ দিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে কলেজগুলোও ১০-২৪ মার্চ পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বাৎসরিক ‘টেনিস ও স্কোয়াশ প্রতিযোগিতা-২০২৪’ এর সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
আজ ২৮ ডিসেম্বর শনিবার চট্টগ্রামস্থ বানৌজা ঈসাখানে ‘এরিয়া টেনিস ও স্কোয়াশ কমপ্লেক্সে’ এই প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়। প্রতিযোগিতার সমাপনী দিনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিবার কল্যাণ সংঘের প্রেসিডেন্ট নাদিয়া সুলতানা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান।
নৌ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ও বানৌজা ঈসা খান এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ৭ দিনব্যাপী আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় কমান্ডার ঢাকা নৌ অঞ্চল, কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল, কমান্ডার খুলনা নৌ অঞ্চল, কমান্ডার বিএন ফ্লিট এবং কমডোর সুপারিন্টেডেন্ট ডকইয়ার্ড দলের ৪২ জন পুরুষ ও ১৬ জন মহিলা কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
অনলাইন ডেস্ক :
‘জুলাই-আগস্ট গণহত্যায়’ ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র দেশে শহীদ হয়েছেন ৮৭৫ জন মানুষ। যার মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ ১৫ সেপ্টেম্বর রোববার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথযাত্রায় বিএনপির ভূমিকা, অবদান ও প্রত্যাশা’ বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ফখরুল বলেন, আজ আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের জনগণকে বারবার ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে। এ দেশের স্বাধীনতাকে যখনই গ্রাস করেছে স্বৈরতন্ত্র, প্রতিবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। বাকশালের পর বহুদলীয় গণতন্ত্র ও স্বৈরশাসনের পর সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, দেশের মানুষের অধিকার ও মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।
‘সেই ধারাবাহিকতায়, ১৬ বছরের স্বৈরাচারী দুঃশাসনকে চূর্ণ করে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ আবারও মুক্তির স্বাদ পায়, গণতন্ত্রের পথ সুগম করে। অসংখ্য ব্যক্তি ও পরিবার রয়েছে, যাদের বছরের পর বছর ধরে ত্যাগের মহিমায় আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। ’
ফখরুল বলেন, বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই গণহত্যায় ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে শহীদ হন ৮৭৫ জন মানুষ, যার মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দেশজুড়ে শহীদ সব শ্রেণি-পেশা-রাজনীতির মানুষগুলোর এ বিশাল অংশ যে বিএনপিরই নেতা-কর্মী, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং আমাদের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের অনিবার্য ফল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পোশাক শ্রমিক কিংবা রিকশাচালক, পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র; বাম কিংবা ডান আদর্শের অনুসারী; সব মত ও পথের রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক ব্যক্তি হতাহতের পরিচয় যাই হোক না কেন, প্রতিটি প্রাণের মূল্য ও রক্তের মর্যাদা সমান। আর তাই সমান গুরুত্বের সঙ্গেই প্রণয়ন করতে হবে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তালিকা। নিশ্চিত করতে হবে সুবিচার। শেখ হাসিনার পদত্যাগের জন্য যে জাতীয় ঐক্য আমরা দেখতে পাই, তা কিন্তু হঠাৎ করে গড়ে ওঠেনি। এটি মূলত অবৈধ সরকারের অত্যাচার-অবিচার, দুর্নীতি-দুঃশাসন, বঞ্চনা-অবজ্ঞা এবং শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে গণঅভ্যুত্থানে সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে নেমে আসে বিএনপি এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। যাতে গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল নয়, বিএনপির উদ্দেশ্য ছিল সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থানে সাংগঠনিকভাবে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখে ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। আর তাই বিএনপির যে ৬০ লাখ সদস্যের নামে ফ্যাসিবাদের সময় মিথ্যা মামলা হয়েছে, তার সুবিশাল অংশ সাধারণ মানুষের পাশে থেকে, রাষ্ট্রযন্ত্রের যড়যন্ত্র ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে রুখে দাঁড়ায়। ফলে যার-যার অবস্থান থেকে জনগণের কাতারে নেমে আসে বিএনপি ও সমমনা সব রাজনৈতিক দল, তথা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিসমূহ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে নির্মমভাবে হত্যা করে পুলিশ। একই দিন চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরামকেও হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডগুলোতে সমগ্র বাংলাদেশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, বেগবান হয় আন্দোলন।
বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে ১৬ বছর ধরে আওযামী লীগের বিচারবহির্ভূত হত্যা, গায়েবি মামলা ও নৃশংস নিপীড়ন দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এর ফলস্বরূপ জাতিসংঘসহ স্বীকৃত মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা নীতির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চাপ বাড়ায়। তৃণমূলের স্পন্দন ও গণমানুষের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে, অবিরাম জুলুম-অবিচারের মাঝেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য অবিচল সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে। সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের অবদানে গড়ে ওঠা দীর্ঘদিনের ঐক্যকে ধারণ করে গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তির বলিষ্ঠ ভূমিকায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটে।
‘বাংলাদেশের জনগণের এ বিজয় শুধুই দেশের মালিকানা ফিরে পাওয়ার বিষয় নয়। বরং এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার প্রতিশ্রুতি, যা অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত। ’
তিনি বলেন, বিজয়ের পেছনে রয়েছে অসংখ্য নির্যাতিত মানুষের বেদনার অপ্রকাশিত ইতিহাস, গুম হওয়া ছেলের ফেরার প্রতীক্ষায় ব্যথাতুর মায়ের ডাক, স্বামী হারানো বেদনাবিধূর স্ত্রীর অনন্ত আর্তনাদ, পঙ্গু বাবার জন্য সন্তানের হৃদয়বিদারক হাহাকার, আর কারাগারে বন্দী ভাইয়ের জন্য বোনের নীরব প্রার্থনা। তাদের সবার ১৬ বছরের রক্ত, শ্রম ও অশ্রু দিয়ে প্রতিটি পরিবারের ক্ষোভ, ক্রোধ ও অব্যক্ত বিস্ফোরণ বুকে ধারণ করে চলমান ছিল শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই। বস্তুত ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে শহীদ ৪২২ জন, ২০২৩ সাল পর্যন্ত শহীদ এক হাজার ৫৫১ জন, গুম ৪২৩ জন (সব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ মিলিয়ে প্রায় ৭০০ জন), আসামি ৬০ লাখ, এবং মামলা দেড় লাখ—এসব কেবল বিএনপির ত্যাগের পরিসংখ্যানই নয়, বরং বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের পথে দলটির অবিচল সংগ্রাম ও অবদানের প্রতিফলন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যুক্ত ছিল, গণতান্ত্রিক প্রতিটি ব্যক্তি, দল, সংগঠন ও গোষ্ঠী- তাদের সবার আত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি না দিলে তা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার। সব শ্রেণি-পেশা-মতের মানুষের অংশগ্রহণকে সম্মান জানিয়ে জনগণের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সেই পথযাত্রায় ও রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে গড়ে তুলতে হবে একটি নিরাপদ ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ, যেখানে প্রতিফলন ঘটবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।