চলারপথে রিপোর্ট :
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বাল্যবিবাহ আইন ও তাদের দায়িত্ব নিয়ে বিবাহ নিবন্ধন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জনপ্রতিনিধি, কাজী, ইমাম, পুরোহিতসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড কনসার্ন ইপজিয়া প্রকল্প এর আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. বাবুল মিয়া। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউপি সদস্য মো.ফজলুল হক সুমন, মো. হামিদুর রহমান, ইমাম-কাজী মাওলানা জাহাঙ্গীর, পুরোহিত শৈলেন চক্রবর্তী, ধর্মীয়নেতা এলবার্ট শোভন বিশ্বাস প্রমুখ।
অনলাইন ডেস্ক :
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাশিপুরে একটি বাসায় চার্জার ফ্যান বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়ার দুইদিন পর স্বামী স্ত্রী মারা গেছে। নিহত স্বামী আব্দুস সালাম মন্ডল (৫৫) ও তার স্ত্রী বুলবুলি বেগম (৪০)।
১২ জুন সোমবার রাতে স্বামী ও ১৩ জুন মঙ্গলবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যায়।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক মো. তরিকুল ইসলাম জানান, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে চার্জার ফ্যান বিস্ফোরণ হয়ে একই পরিবারের নারী ও শিশুসহ পাঁচজন এসেছিলেন। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুস সালাম মন্ডল সোমবার রাতে মারা যান। তার শরীরের ৭০ শতাংশ দগ্ধ ছিল। মঙ্গলবার সকালে মারা যান বুলবুলি বেগম। তার শরীরের ২৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল। এ ঘটনায় দগ্ধ আরও তিনজন চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
বাড়ির মালিক সোহাগ জানান, দগ্ধ হওয়া একই পরিবারের ৫ জনের মধ্যে স্বামী স্ত্রী মারা গেছে। বাকি অন্যদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহসীন জানান, সোমবার রাতে এবং মঙ্গলবার সকালে স্বামী স্ত্রীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে এমন সংবাদ পেয়েছি।
উল্লেখ্য, গত ৯ জুন সকাল ৮টায় ফতুল্লা কাশিপুর খিলমার্কেট এলাকায় সেলিনা বেগমের বাড়িতে চার্জার ফ্যান বিস্ফোরণে আগুন ধরে একই পরিবারের পাঁচজন দগ্ধ হয়। দগ্ধরা হলেন, আব্দুস সালাম (৫৫), তার স্ত্রী বুলবুলি বেগম (৪০), ছেলে টুটুল (২০), মেয়ে সোনিয়া (৩০) ও নাতিন মেহজাবীন (৭)।
চলারপথে ডেস্ক :
২০২২ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে মোট পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আজ ৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার দুপুরে প্রকাশিত ফলে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রকাশিত ফলে পাসের হারের দিক থেকে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে প্রথম স্থানে আছে কুমিল্লা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৯০.০৭ শতাংশ।
যশোর বোর্ডে পাসের হার ৮৩.৯৫ শতাংশ। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৮ হাজার ৭০৩ জন। ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৭.৮৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৬২ হাজার ৪১৬ জন শিক্ষার্থী।
রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৮১.৫৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন। ময়মনসিংহ বোর্ডে পাসের হার ৮০.৩২ শতাংশ। এই বোর্ডে ৫০২৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৮৬.৯৫ শতাংশ। জিপিএ-৭ হাজার ৩৮৬ জন। চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৭৮.৭৬। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১২ হাজার ৬৭০ জন।
সিলেট বিভাগে পাসের হার ৮১.৪০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৪ হাজার ৮৭১। দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ০৬ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৮৩০ জন শিক্ষার্থী।
মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৪২৩ জন শিক্ষার্থী। কারিগরি বোর্ডে পাস করেছেন ৯১ দশমিক ০২ শতাংশ শিক্ষার্থী, এ বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৭ হাজার ১০৫ জন শিক্ষার্থী।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
ফল যেভাবে জানা যাবে
মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে HSC লিখে স্পেস দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২২ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে (যেমন HSC Dha 123456 2022 send to16222)। ফিরতি এসএমএসেই ফল পাওয়া যাবে।
মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষার ফল পেতে ALIM লিখে স্পেস দিয়ে Mad লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২২ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে HSC লিখে স্পেস দিয়ে Tec লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২২ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠালে ফিরতি এসএমএসে ফল জানানো হবে।
এছাড়া বোর্ডের অধীন প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ফলাফল বোর্ডের ওয়েবসাইটে (www.dhakaeducationboard.gov.bd) রেজাল্ট কর্নারে ক্লিক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন দিয়ে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করা যাবে।
আর www.educationboardresults.gov.bd ওয়েবসাইটে ক্লিক করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করা যাবে।
করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ার পর গত ৬ নভেম্বর সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ১২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
বজ্রপাতে আজ ৪ মে বৃহস্পতিবার দেশের তিন জেলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নরসিংদীতে তিনজন করে মারা গেছেন। বগুড়ায় মারা গেছেন একজন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা, শাজাহানপুর ও দেবীনগর ইউনিয়নে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের সোনাপট্টি গ্রামের ফরিদ উদ্দিনের ছেলে রফিক উদ্দিন (৩৫), শাহজাহানপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও দেবীনগর ইউনিয়নের মোজাম্মেলের ছেলে ইসারুল (৪২)।
পুলিশ জানায়, চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের সোনাপট্টি গ্রামের রফিক উদ্দিন পাশের একটি জমিতে ধান কাটছিলেন। এসময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ইসারুল ইসলাম পদ্মায় মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সেখানে বজ্রপাত হলে তিনিও ঘটনাস্থলে মারা যান। স্থানীয় চাঁদতারা মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলে মারা যান জাহাঙ্গীর আলম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সন্ধ্যার দিকে জেলায় ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয়। এসময় তিন ইউনিয়নে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। আইনি কার্যক্রম শেষে মরদেহ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
নরসিংদী
নরসিংদীর রায়পুরা ও বেলাবোতে বজ্রপাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন। দুপুরে রায়পুরার অলিপুরা ইউনিয়নের লোচনপুর গ্রামে ও বেলাবো উপজেলার চর লক্ষ্মীপুর গ্রামের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন রায়পুরার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের লোচনপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে আহাদ মিয়া (২১) ও একই গ্রামের বাছেদ মিয়ার ছেলে রানা মিয়া (২০)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন একই গ্রামের নাছির উদ্দিনের ছেলে শিমন মিয়া (২০)। নিহত অপরজন হলেন বেলাবো উপজেলার চর লক্ষ্মীপুর নামাপাড়া গ্রামের তাজু মিয়ার স্ত্রী হেলেনা বেগম (৩৮)।
এলাকাবাসী ও নিহত রানার বড় ভাই রুবেল মিয়া জানান, আহাদ, রানা ও শিমন তিন বন্ধু ঢাকায় একটি শপিং ব্যাগ তৈরির কারখানায় কাজ করেন। ঈদের ছুটিতে তারা বাড়িতে আসেন। দুপুরে তারা তিন বন্ধু ঝালমুড়ি খাওয়ার জন্য স্থানীয় বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। ওই সময় তাদের ওপর বজ্রপাত হয়। এতে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আহাদ ও রানাকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় শিমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে হেলেনা বেগম ঘাস খাওয়ানোর জন্য ছাগল নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাত শুরু হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
বগুড়া
বগুড়ার আদমদীঘিতে ধানক্ষেতে বজ্রপাতে ছোলায়মান আলী (৪৩) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার কুন্দগ্রাম ইউনিয়নের বাগিচা পাড়া গ্রামে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহত ছোলায়মান আলী ওই গ্রামের আয়েজ উদ্দিনের ছেলে।
উপজেলার কুন্দগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামিম-উল ইসলাম বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ছোলায়মান আলীসহ চার কৃষক বাগিচাপাড়া গ্রামের মাঠে ধান কাটছিলেন। এসময় বজ্রপাতে ছোলায়মান আলী ঘটনাস্থলেই মারা যান। তবে সেখানে অন্য কৃষকদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
অনলাইন ডেস্ক :
হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস বা এইচএমপি ভাইরাস ঠেকাতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, শীতকালীন রোগ থেকে রক্ষায় মাস্ক ব্যবহারসহ সাতটি পরামর্শ মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বৃহস্পতিবার দেশে এইচএমপি শনাক্ত হওয়ার পর সংক্রমণ ঠেকাতে ১২ জানুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ১৪ বছরের কম বয়সি শিশু এবং ৬৫ বছর বা এর বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন, হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, গর্ভবতী নারী ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।
এইচএমপি ভাইরাস অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগের মত ফ্লু এর মত উপসর্গ সৃষ্টি করে,যা সাধারণত দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায় বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর। তবে, আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই জানিয়ে অধিদপ্তর বলেছে, সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে।
এছাড়া অন্যান্য সতর্কতার মধ্যে রয়েছে, জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকা, হাঁচি বা কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা, ঘন ঘন সাবান ও পানি অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া (অন্তত ২০ সেকেন্ড) ইত্যাদি।
এইচএমপি ভাইরাস প্রতিরোধে দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিভিল সার্জন, জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা, দেশের সব বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সব বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
চলারপথে ডেস্ক :
পঞ্চাশ বছরের পথ চলায় জাতীয় সংসদ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখে চলেছে। সরকারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মহান জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে।
আজ ৭ এপ্রিল শুক্রবার জাতীয় সংসদ সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৪৭ বিধিতে (সাধারণ প্রস্তাব) আনা প্রস্তাব উত্থাপনকালে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।
এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভাষণ দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব উত্থাপন করলে তার ওপরে সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য ও সরকারি দলের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
প্রধানমন্ত্রীর উত্থাপিত প্রস্তাবে বরা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তির এই মাহেন্দ্রক্ষণে সংসদের অভিমত এই যে, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুরূপে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন এবং আশা আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে এবং এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র হবে সুসংহত, শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, সকলের জন্য সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে, সংবিধানের এ অঙ্গীকারসমূহ পূরণে আমরা সকলে একযোগে কাজ করবো, গড়ে তুলবো আগামীর সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা- এই হোক আমাদের প্রত্যয়।’
প্রস্তাব উত্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে পথ চলি। তাই ধারাবাহিকভাবে ২০০৮ সালের পরে দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত আছে। যার ফলে একটা স্থিতিশীলতা আছে। মাঝে মাঝে আমাদের প্রতিবন্ধকতা, অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়। তারপরও বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, আশা করি ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ এবং জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।’
তিনি বলেন, ৫০ বছরের পথ চলায় জাতীয় সংসদ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখে চলেছে। ৫০ বছরের পথপরিক্রমা অনেক ক্ষেত্রেই মসৃণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বার বার সামরিক ফরমান জারি করে সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। গণতন্ত্র ও জাতীয় সংসদের ওপর আঘাত হেনেছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল সামরিক ও স্বৈরশাসনের পালাবদলের মধ্য দিয়ে সংবিধানের চার মুলনীতিতে আঘাত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে কালো আইনে পরিণত করা ছিল সংসদীয় ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। পরবর্তী সময়ে সপ্তম সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ সুগম করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মহান জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে। সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
?প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে মন্ত্রীর পরিবর্তে সদস্যদের নির্বাচিত করা হচ্ছে। বিরোধী দলের সদস্যদের থেকে স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হচ্ছে। সিপিএ ও আইপিউতে সভাপতিত্ব ছিল বাংলাদেশের সংসদের প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আস্থার প্রতীক।
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের সংসদ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত- একথা উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান সংসদে স্পিকার, সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধী দলের নেতা, একজন হুইপ, চারজন স্থায়ী কমিটির সভাপতির ভূমিকা পালন করছেন নারী। জাতীয় রাজনীতিকে নারীদের উৎসাহিত করতে সংসদে নারী আসন ৫০-এ উন্নীত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত তিন মেয়াদে জাতীয় সংসদের ধারবাহিক অগ্রযাত্রা, সংসদীয় গণতন্ত্রের স্থায়ীত্ব ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের ক্ষেত্র রচনা করেছে। জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময়। দারিদ্র বিমোচন, দুর্যোগ মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল।
শেখ হাসিনা বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের মঞ্চ মহান জাতীয় সংসদ সরকারের সামগ্রিক উন্নয়নে অংশীদার এবং সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অর্জনসমূহ সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতির সামনে উপস্থাপিত হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি বিরল দৃষ্টান্ত জাতির সামনে রেখে গিয়েছিলেন জাতির পিতা যে, ইচ্ছা থাকলে কত দ্রুত একটা দেশকে পুনর্গঠন, পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন করা যায়। আজকে তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠতো।
আলোচনায় অংশ নিয়ে গণপরিষদ এবং প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি লক্ষ্য নিয়েই রাজনীতি করেছিলেন- দেশের স্বাধীনতা এবং মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা আছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতে আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দেওয়া হয়। সে পতাকা হাতে নিয়ে তিনি যত্ন সহকারে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন।
প্রথম জাতীয় সংসদের আরেক সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ষড়যন্ত্র নানা দিকে বিস্তৃত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দেশের উন্নয়ন ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
তিনি সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চান। কিন্তু সেখানে বাধা আছে। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিদেশে চাকরি দিয়েছিল তারা বাধা।
সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে সরকারি দলের এই জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য বলেন, গ্রামের মানুষ এখন একবেলাও অভুক্ত থাকে না। সংসদ সদস্যরা এর সাক্ষী।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আর যাতে কোনো সামরিক জান্তা ক্ষমতায় আসতে না পারে সেইদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
সংসদ সদস্যদের আলোচনা শেষে রোববার এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।