সাপের কামড়ে যুবকের মৃত্যু

জাতীয়, 6 September 2023, 530 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
চাটখিলে মুঠোফোনে কথা বলার সময় বিষাক্ত সাপের কামড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত নূপুর কর্মকার (৩৩) উপজেলার বদলকোট ইউনিয়নের হরিকৃষ্ণপুর এলাকার কর্মকার বাড়ির কুন্তল কর্মকারের ছেলে। সে সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন। এদিকে চাটখিল, হাতিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলা সাপে কামড়ের অ্যান্টিভেনম না থাকায় জরুরি মুহূর্তে চিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। এ নিয়ে চরাঞ্চলসহ ভুক্তভোগীরা স্বাস্থ্য বিভাগের বেহাল দশার ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিজের বাড়ির উঠানে মুঠোফোনে এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিল নূপুর। ওই সময় তাকে একটি বিষাক্ত সাপে পায়ে কামড় দেয়। পরে বিষয়টি তার বড় ভাই তাকে চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। সেখানে সাপের কামড়ের অ্যান্টিভেনম না থাকায় জেলা সদর হাসপাতালে যোগাযোগ করে। কিন্তু সেখানেও সাপের কামড়ের অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের ব্যবস্থা না থাকায় রোগীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খন্দকার মোস্তাক আহমেদ অ্যান্টিভেনম না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, রোগীর অবস্থা দেখে দ্রুততম সময়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমরা তাকে রেফার্ড করা হয়। নোয়াখালী জেলাতে বিষধর সাপের ভ্যাকসিন দেওয়ার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় তাকে কুমিল্লায় পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মাসুম ইফতেখার জানান, চাটখিলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম ছিল না। তবে রোগীকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়নি। এখানে কোন সংকট ছিল না। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চাটখিলসহ বিভিন্ন উপজেলায় অ্যান্টিভেনম পাঠানো হবে।

Leave a Reply

সাংবাদিক হিসেবে কারো বিরুদ্ধে মামলা হোক…

চলারপথে রিপোর্ট : কেন্দ্রীয় বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ Read more

প্রধান উপদেষ্টার ড. ইউনূসের সাথে সংলাপে…

অনলাইন ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের Read more

পলিথিন শপিংব্যাগ উৎপাদন বন্ধে ১ নভেম্বর…

অনলাইন ডেস্ক : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব Read more

নাসিরনগরে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর আধুনিক হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের Read more

প্রধান শিক্ষক ফরিদা নাজমীনের বদলির আদেশ…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা Read more

এক কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ

আখাউড়ায় প্রায় এক কোটি টাকার ভারতীয় পণ্যসামগ্রী ও মদ জব্দ Read more

হত্যা চেষ্টা ও বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার…

চলারপথে রিপোর্ট : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র জনতা Read more

বাঞ্ছারামপুরে মাদকসহ আটক ৩

চলারপথে রিপোর্ট : বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে Read more

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশটাকে খাদেফেলে দিয়ে…

চলারপথে রিপোর্ট : স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশটাকে খাদে ফেলে দিয়ে Read more

নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে…

চলারপথে রিপোর্ট : নবীনগরে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে Read more

সরাইলে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে র‌্যালি…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিশ্ব Read more

আশুগঞ্জে বাদীর অনাপত্তিতে আসামি ছেড়ে দিলো…

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের Read more

সচিবালয়ে আনসারদের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

জাতীয়, 25 August 2024, 58 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় আনসার সদস্যদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। আজ ২৫ আগস্ট রোববার রাত সাড়ে ৯টায় সচিবালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেককে আটক রাখার খবরে সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে। এ সময় কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে আনসার সদস্যরা। পরে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে আনসার সদস্যরাও পিছু হটে।

এর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম তাদের ফেসবুক পোস্টে আটক রাখার বিষয়টি জানালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জমা হতে থাকে। পরে রাত ৯টায় তারা সচিবালয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোতাসিম বিল্লাহ মাহফুজ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, উপদেষ্টা নাহিদ ভাইসহ হাসনাত ও সার্জিস ভাইকে সচিবালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে বিপথগামী কিছু আনসার সদস্য ও ছাত্রলীগের প্রেতাত্মারা। আমরা সবাই মিলে সচিবালয়ে মার্চ করে তাদেরকে মুক্ত করে নিয়ে আসব। সবাই যোগ দিন, বিষয় সবাইকে অবগত করুন, অতীব জরুরি।

লটারিতে ৩ কোটি টাকা জিতলেন বাংলাদেশি প্রবাসী

আন্তর্জাতিক, জাতীয়, 20 September 2023, 1001 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
সৌদি আরব প্রবাসী এক বাংলাদেশি লটারিতে প্রায় তিন কোটি টাকা জিতেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘মাহজুজ ড্র’ জেতা ওই যুবকের নাম মোহাম্মদ শাহিন (৩১)। তিনি দাম্মামের একটি বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে সুপারভাইজার পদে চাকরি করেন।

গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ সাপ্তাহিক মাহজুজ ড্রতে ১ মিলিয়ন দিরহাম (বাংলাদেশি মুদ্রা ২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা) জিতেন বাংলাদেশি প্রবাসী শাহিন।

হঠাৎ করে লটারি জয়ের ই-মেইল পেয়ে হতবাক হয়ে যান শাহিন। ইমেইলে মাহজুজ ড্রয়ের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়, তাদের সাপ্তাহিক র‍্যাফেল পুরস্কারটি পাচ্ছে তিনি। তার টিকিটের আইডি নম্বর ৩৮২২৫৮১৯।

প্রথমে শাহিন লটারি জয়ের বিষয়টি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। পরে তার অ্যাকাউন্টে লগইন করে নিশ্চিত হন এক মিলিয়ন দিরহাম জিতেছেন তিনি।

শাহিন বলেন, আমি হতবাক ও বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মাহজুজ অ্যাকাউন্টে এত টাকা দেখে আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

লটারি জয়ের সুসংবাদটি বাংলাদেশে তার পরিবারকেও জানিয়েছেন শাহিন।

রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ

জাতীয়, 27 May 2024, 225 Views,

ডেস্ক রিপোর্ট :

দেশের উপকূলে আঘাত করা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে দেশের ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান। এছাড়া প্রায় দেড় লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

আজ ২৭ মে সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ জেলায় ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৫ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্যোগ পরবর্তী বা অন্য কোনো সময়ে নয়ছয় হবার সুযোগ নেই। তারপরও খতিয়ে দেখা হবে, যেন ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন অনুদানের টাকা পান। সব মন্ত্রণালয় যার যার জায়গা থেকে কাজ করছে। এখন দুর্যোগ পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি চিত্র তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেমালে। জেলাগুলো হলো: খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর এবং যশোর।

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়নের ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি এবং আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।

তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তার প্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাসমূহে ৯ হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮ লাখের বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছে। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬টি। দুর্গত লোকজনকে চিকিৎসা সেবা দিতে মোট ১ হাজার ৪৭১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যার মধ্যে চালু আছে ১ হাজার ৪০০টি।

দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ কবলিত মানুষের সাহায্যে আমরা এরইমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের অনুকূলে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে পনেরোটি জেলায় জি আর (ক্যাশ) তিন কোটি ৮৫ লাখ নগদ টাকা, ৫ হাজার ৫শত মেট্রিক টন চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ, গো খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২৮ মে মঙ্গলবারের পর থেকে ধীরে ধীরে সিলেট হয়ে বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে যাবে রেমাল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিদর্শন করা হবে।

ইউএনওর বোন পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগ, হাতিয়ে নিলেন কোটি টাকা

জাতীয়, 7 November 2023, 476 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ইউএনওর বোন পরিচয়ে হতদরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ, চাকরিসহ নানান সরকারি অনুদান পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না নামে এক নারী।

এ ঘটনায় প্রতারক স্বপ্নাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ঘেরাও করে স্মারকলিপি দেন ভুক্তভোগী হতদরিদ্র নারীরা।

অভিযুক্ত প্রতারক নাসিমা আক্তার স্বপ্না আদিতমারী টিএনটি পাড়ার নুর ইসলামের মেয়ে।

ভুক্তভোগীরা জানান, গ্রামীণ হতদরিদ্র বেকার নারীদের স্বাবলম্বী করার প্রতিশ্রুতিতে সেলাইসহ নানান প্রশিক্ষণ ও মাসিক ১০ হাজার করে সম্মানী দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি দুই/তিন হাজার করে কয়েকশ নারীর কাছ থেকে টাকা নেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না। একই সঙ্গে তাদের মহিলা বিষয়ক, সমাজসেবা, সমবায় ও যুব উন্নয়ন দফতরের বিভিন্ন সরকারি ভাতাসহ নানান সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে চার/পাঁচ হাজার করে টাকা আদায় করেন তিনি। নাসিমা আক্তার স্বপ্না নিজেকে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বোন পরিচয় দিয়ে গ্রামীণ নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেন।

প্রথমদিকে নিজেকে ইউএনওর বোন পরিচয় দিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে আদিতমারী মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ব্যানার ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ চালু করেন। যা দেখে গ্রামীণ নারীরা সত্য বলে মেনে নিয়ে তার প্রতারণার ফাঁদে পা বাড়ান। এভাবে পুরো উপজেলায় জাল বিস্তার করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না।

চার/পাঁচ মাস আগে স্থানীয়রা বিষয়টি ইউএনওকে মৌখিকভাবে জানালে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স থেকে স্বপ্নার প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেন। পরে প্রতারক স্বপ্না কৌশলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিজ বাড়ি আদিতমারী হ্যালিপ্যাড এলাকায় স্থানান্তরিত করেন। এরই মাঝে প্রথম দফায় প্রশিক্ষণ নেওয়া নারীদের প্রশিক্ষণের তিন মাস মেয়াদ শেষ হলেও সম্মানী পাননি। ফলে সম্মানী নিয়ে নারীদের সঙ্গে কয়েক দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে স্বপ্নার। প্রতিবাদকারী নারীদের শায়েস্তা করতে স্বপ্নার রয়েছে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী।

এতেই শেষ নয়, অনেক বেকার নারীকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে চার/পাঁচ লাখ করে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন স্বপ্না। চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে স্বপ্না সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নিকট আত্মীয় পরিচয় দিতেন বলেও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।
চাকরি, সরকারি অনুদান বা প্রশিক্ষণের ভাতা না পেয়ে একপর্যায়ে ভুক্তভোগীরা তার প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও প্রতারক স্বপ্নার প্রতারণা বন্ধ না হওয়ায় ফুঁসে ওঠেন নারীরা।

প্রতারিত ও ভুক্তভোগী শত শত হতদরিদ্র নারী ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে প্রথমে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে থানার গেটে মানববন্ধন করে প্রতারক স্বপ্নার গ্রেপ্তার দাবি করেন। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে নারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদিতমারী ইউএনও অফিস ঘেরাও করে দ্রুত প্রতারক স্বপ্নার গ্রেপ্তার দাবি করেন। এ সময় একই দাবিতে ইউএনওকে স্মারকলিপি দেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগী সাথী বেগম বলেন, প্রশিক্ষণে সম্মানী ও সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা বলে স্বপ্না ইউএনওর বোন ও মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আমাদের কাছে টাকা নেন। ইউএনওর বোন জন্যই স্বপ্না মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে অফিস করেছিলেন। এটাই আমাদের বলে প্রতারণা করেছিলেন। ইউএনওর বোন ছাড়া সরকারি অফিসে তার প্রশিক্ষণ হত না। এটা ভেবে আমি টাকা দিয়েছি। এছাড়া অভিযোগ দিয়েও যখন তার প্রতারণা বন্ধ হয়নি। তখন আমরা ভেবেছি, হয়ত স্বপ্না ইউএনও এবং মন্ত্রীর আত্মীয় হবে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নাসিমা আক্তার স্বপ্নাকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রশিদা বেগম বলেন, আদিতমারী মহিলা উন্নয়ন সমিতি স্বপ্নার মায়ের। চার মাস আগে প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে তার মাকে এ ব্যানার ব্যবহারে নিষেধ করা হয়। পরে তারা ব্যানার ছাড়াই এসব প্রতারণা করছে। তাদের কোনো ফান্ড বা প্রজেক্টও নেই। এটা তাদের প্রতারণা বলে মনে হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিআর সারোয়ার বলেন, স্বপ্না প্রতারণা করতে আমার বোন বলে পরিচয় দিতে পারে, কিন্তু বোন তো দূরের কথা তাকে আমি চিনিও না। প্রতারণা একটি ফৌজদারি অপরাধ। তাই ভুক্তভোগীদের মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্মারকলিপির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।

ফেসবুকে গ্রুপ খুলে জাল টাকার কারবার, ভিডিও বানিয়ে প্রচারণা

জাতীয়, 4 May 2023, 1060 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
‘আমাদের কাছে পাবেন অরিজিনাল (এ জে এস কাগজের) গ্লেজিং প্রিন্টের সুতা জলছাপসহ নিখুঁত কাজের মাল। আমাদের কাছে ৫০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার জাল নোট আছে, যা ব্যাংকের মেশিন ছাড়া খালি চোখে বোঝা অসম্ভব।’ ফেসবুকের একটি গ্রুপে এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে চলছিল জাল টাকার কারবার। এই চক্রটি জাল টাকা তৈরির টিকটক ভিডিও বানিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে প্রচারণা চালাত। তবে মূলত জাল টাকা সরবরাহের নামে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে আসছিল তারা।

সম্প্রতি এই চক্রের অন্যতম সদস্য সিফাত শেখকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে জাল টাকার কারবার ও এই চক্রের বিস্তারিত।

ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, সিফাত ও তার সহযোগীরা নিখুঁত জাল টাকা সরবরাহের বিজ্ঞাপন দিয়ে আগ্রহীদের আকৃষ্ট করত। এরপর অগ্রিম টাকা নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিত। ক্রেতাদের দেখানোর জন্য কিছু জাল নোট তারা নিজেদের কাছে রাখত। তবে সেগুলো কাউকে সরবরাহ করত না। এই চক্রে ১০ জনের বেশি সদস্য রয়েছে। তারা কেউ জাল নোট বানায়, কেউ ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়, কেউ ক্রেতার কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে।

উপকমিশনার জানান, চক্রের সদস্যরা সবাই সাধারণ পরিবার থেকে আসা তরুণ। তবে তারা ফ্যাশনেবল ও বিলাসী জীবনযাপনের চেষ্টা চালায়। মাঝেমধ্যেই তারা কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যায়। জাল নোট বিক্রির নামে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ তারা মূলত ‘ফূর্তি’র জন্য ব্যয় করে। সিফাতকে গত ২৯ এপ্রিল কক্সবাজার থেকে ফেরার পথেই গ্রেফতার করা হয়।

ডিবি সূত্র জানায়, কেরানীগঞ্জ উপজেলা চত্বরে ফুটপাতে ছয় হাজার টাকা বেতনে পোশাক বিক্রেতা হিসেবে কাজ করে সিফাত। সে ইউটিউবসহ অনলাইনে বিভিন্ন সাইট ঘেঁটে জাল টাকা তৈরি করা শিখেছে। পরে নিজেরা জাল টাকা বানানোর সময় তা ভিডিও করে অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছে। মূলত সহজে অধিক অর্থ উপার্জন করতে চাওয়া লোভী ব্যক্তিরা তাদের টার্গেট। তারা এক হাজার টাকার ১০০টি জাল নোটের জন্য ১০ হাজার টাকা, ৫০০ টাকার ১০০টি নোটের জন্য ১২ হাজার টাকা, ১০০ ও ২০০ টাকার এক লাখ জাল নোটের জন্য ২০ হাজার টাকা দাম নিত। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার পর তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

এই চক্রের একটি ফেসবুক গ্রুপে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে জাল টাকার বান্ডিলের ছবি-ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে, জাল টাকায় আসল টাকার সব নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ফলে হঠাৎ করে কারও পক্ষে সেটাকে জাল হিসেবে ধরা সম্ভব নয়। গত মাসের একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ঈদ উপলক্ষে এ-গ্রেডের নিখুঁত জাল নোট তৈরি করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের যে কোনো এলাকায় হোম ডেলিভারি দেওয়া হবে। সেজন্য ৫০ ভাগ টাকা অগ্রিম দিতে হবে। কুরিয়ার সার্ভিস বা নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে পাঠানো জাল টাকার চালান হাতে পাওয়ার পর বাকি টাকা দিতে হবে। যোগাযোগের জন্য একটি ফোন নম্বরও দেওয়া আছে।

একটি ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ‘মালের (জাল টাকা) স্যাম্পল নিজ হাতে চেক করে তারপর অর্ডার করবেন।’

চারদিন আগে লেখক আফসান চৌধুরী ফেসবুকে জাল টাকা বিক্রির বিজ্ঞাপনের একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন– ‘পুলিশ এত কিছু জানে, এটা জানে না? রেট এত ভালো। এক টাকার বদলে নকল আট টাকা।’ তাঁর শেয়ার করা স্ক্রিনশটে লেখা রয়েছে– ‘এক লাখ মালের দাম ১২ হাজার টাকা। সব রকমের নোট। সর্বনিম্ন অর্ডার ৫০ হাজার টাকা।’

এর আগে গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর দক্ষিণ গোড়ান থেকে ফেসবুকে প্রচার চালিয়ে জাল নোটের কারবারে জড়িত চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।