চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে “সর্বজনীন পেনশন স্কীম” সম্পর্কিত অবহিতকরণ সভা আজ ১০ সেপ্টেম্বর রবিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হেলেনা পারভীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম.এম মাহমুদুর রহমান, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির প্রমুখ।
সভায় বক্তব্য রাখেন কসবা পৌরসভার মেয়র এম.জি হাক্কানী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাহারুল ইসলাম মোল্লা, জেলা জাসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকতার হোসেন সাঈদ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা কমান্ডের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু হোরায়রাহ, শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম।
সভায় বলা হয়, ২০১৫ সালে প্রনীত জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলে সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করা হয় এবং ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুষ্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
এই প্রেক্ষাপটে মহান জাতীয় সংসদ কর্তৃক সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ (২০২৩ সালের ৪ নং আইন) প্রনয়ন করা হয়। সর্বজনীন পেনশন স্কীমে রয়েছে “প্রবাস” “প্রগতি” “সরক্ষা” ও “সমতা” নামের ৪টি ব্যবস্থা।
“প্রবাস” স্কীমে বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী নাগরিক তার অভিপ্রায় অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধের শর্তে নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদান পূর্বক এই স্কীমে অংশ গ্রহন করতে পারবেন। প্রবাস হতে দেশে ফিরে আসার পর সম পরিমান টাকা দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করা সহ প্রয়োজনে স্কীম পরিবর্তন করতে পারবেন। পেনশন স্কীমের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় টাকায় পেনশন পাবেন।
এই আইনের অধীনে চাঁদাদাতাগন অনলাইন প্লাটফরমে রেজিষ্ট্রেশন করে যে কোন একটি পেনশন স্কীমে যুক্ত হতে পারবেন।
“প্রগতি” স্কীমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোন কর্মচারী বা উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক তফসিলে বর্নিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কীমে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তার কর্মচারীগনের জন্য এই স্কীমে অংশ গ্রহনের ক্ষেত্রে স্কীমের চাঁদার ৫০% কর্মী এবং বাকী ৫০% প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে। কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কীমে অংশ গ্রহণ না করলেও উক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোন কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এই স্কীমে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন।
“সুরক্ষা” স্কীমে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমনঃ- কৃষক, শ্রমিক, রিকসা চালক, কামার, কুমার, জেলে তাঁতিসহ সকল অনানুষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিগন নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদান করে এই স্কীমে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন।
“সমতা” স্কীমে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক সময়ে সময়ে প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র সীমার নি¤েœ বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিগন তফসিলে হারে চাঁদা দিয়ে এই স্কীমে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন এবং সমতা স্কীমে কর্তৃপক্ষ বিধি অনুসারে সমপরিমান অর্থ জমা দিবে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কীম বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম কার্যক্রম। এটি সরকারের সর্বোত্তম কাজ। তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কীম একটি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী। যারা সরকারি চাকুরী করেন বা অন্য কোন ভাবে সরকারি ভাতা ভোগ করেন তারা এই সর্বজনীন পেনশন স্কীম করতে পারবেন না। তবে যারা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ভাতাভোগী তারা যদি নিজেদের ভাতা সরকারের কাছে সারেন্ডার করলে তাহলে ওইসব ব্যক্তি পেনশন স্কীমের অর্ন্তভুক্ত হতে পারবেন।
তিনি বলেন ১৮ বছরের অধিক বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সর্বজনীন পেনশন স্কীমের আওতায় আনা সম্ভব হলে তারা একটি সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতাভুক্ত হবেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কার্যকর হলে ধীরে ধীরে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর সুবিধাভোগীর সংখ্যা কমে আসবে।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম আরো বলেন, ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল বাংলাদেশি নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট মূল্যমানের চাঁদাদাতা হিসেবে সর্বজনীন পেনশন স্কীমের অংশ নিতে পারবেন। তবে বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সের নাগরিকগণ স্কীমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হবেন। সকল স্কীমের জন্য চাঁদার কিস্তি প্রদানকারীর পছন্দ মাফিক মাসিক-ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ থাকবে। চাঁদাদাতগণ ইচ্ছে করলে অগ্রীম হিসেবে চাঁদার টাকা পেনশন ফান্ডে জমা দিতে পারবেন। সর্বজনীন পেনশন স্কীমে অংশগ্রহণকারী চাঁদাদাতাগণ নিরবিচ্ছিন্নভাবে চাঁদা প্রদানে শর্তে ৬০ বছর পূর্তিতে আজীবন মাসিক নির্ধারিত হারে পেনশন পাবেন। স্কীমের চাঁদাদাতা স্কীমে জমাকৃত বা জমার বিপরিতে প্রাপ্ত পেনশন বাবদ অর্থ তার মৃত্যুর পর গ্রহণ বা উত্তোলনের নিমিত্ত এক বা একাধিক নমিনি মনোনয়ন করতে পারবেন। তবে চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা প্রদান করার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ নমিনীকে ফেরত দেয়া হবে। ব্যাংকে সরাসরি গিয়ে, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে এবং ডেভিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে চাঁদার টাকা জমা দেয়া যাবে। প্রবাসী স্কীমে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি নাগরিকগণ ক্রেডিটকার্ড বা ডেভিট কার্ডের বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদা জমা দিতে পারবেন।
অবহিতকরণ সভায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগণ, রাজনীতিবিদ, জেলার ৯টি উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যানগণ, ৯টি উপজেলার ইউএনওগণ, বিভিন্ন পৌরসভার মেয়রগণ, সাংবাদিক, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণসহ বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে দুর্নীতির অভিযোগে আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আবু জামালকে পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখের শিক্ষার্থীরা। পরে জেলা প্রশাসনের দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। আজ ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নাঈমা ও ইশরাত জাহান তৃষ্ণাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক আবু জামাল বিভিন্ন জাতীয় দিবসে ভুয়া বিল তৈরি করে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করেছেন। অথচ এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শতাধিক ছাত্রীদের কাছ থেকেও ৬০০ টাকা হারে নেন তিনি। এ ঘটনা জানাজানি ও বিষয়টি প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকের পরিবর্তে এক নৃত্য শিক্ষকের চাকরি চলে যায়। বিদ্যালয়ের তহবিল তছরুপ করতে অফিস সহকারী হরিশঙ্কর চক্রবর্ত্তী অবসর নেওয়ার পরও তাকে বেআইনিভাবে বহাল রেখেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তারা সাংবাদিকদের কাছে আরো অভিযোগ করে বলেন, ঝাড়ুদার মিনা রানী দাসের চাকরি স্থায়ী করতে তার কাছ থেকে দেড়লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক আবু জামাল। সেই টাকা এখনো ফেরত দেননি। ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়। পরে ইউএনওর অফিসে অভিযোগ দিলে প্রধান শিক্ষক ক্ষমা চেয়ে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে এমনটাই জানালেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সকাল ৯টার দিকে প্রধান শিক্ষক আবু জামালকে তার কক্ষে অবস্থান করার সময় শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন। এসময় তারা তার বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্লোগান দেন। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা আসেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে প্রধান শিক্ষককে বের হতে দেননি শিক্ষার্থীরা।
এ অবস্থায় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ইকরামুল হক নাহিদ ও নুশরাত জাবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা প্রধান শিক্ষক আবু জামালের বিষয়ে তদন্ত করে বিচারের আশ্বাস দেন। পরে দুপুর ২টার দিকে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আবু জামাল বলেন, তদন্তে সব প্রমাণ হবে।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির দাতা সদস্য লতিফুর রহমান বলেন, বিভিন্ন দিবসে অংশ নিতে বিদ্যালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিজয় দিবসেও ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আলাদাভাবে ৬০০ টাকা করে নেওয়া হয়। যা প্রমাণ হওয়ার পর সেই টাকা স্কুল ফান্ডে রেখে দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ইকরামুল হক নাহিদ বলেন, ‘প্রধান শিক্ষককে শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের পাঠানো হয়। সেখান থেকে উনাকে (প্রধান শিক্ষক) আমরা নিয়ে আসি।’
চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের আয়োজনে ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে জেলা পর্যায়ে দুর্নীতি বিরোধী রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ১৯ মে রবিবার সকালে শহরের সাবেরা সোবহান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ ইকরামুল নাহিদ।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কবি আবদুল মান্নান সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জুলফিকার হোসেন, সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার জীবন ভট্টাচার্য, অধ্যাপক মানবর্ধন পাল, সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ বদিউজ্জামান, জেলা দুনীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ আরজু।
দুর্নীতি বিরোধী রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগীতায় সরকারি ও বেসরকারী ১২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। বিতর্ক প্রতিযোগীতায় গভর্ণমেন্ট মডেল গার্লস হাই স্কুল চ্যাম্পিয়ন ও অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় রানার আপ হয়।
চলারপথে রিপোর্ট :
সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে ট্রাকের ধাক্কায় দুইজন যাত্রী নিহত হয়েছেন।
আজ ২ মার্চ শনিবার সকাল ৭টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের উত্তর সুহিলপুর নামক এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, জেলা শহরের মেড্ডার নোয়াপাড়া এলাকার নোয়াব আলির ছেলে আব্দুল হাই (৫০) ও সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বিহাইর গ্রামের আবু মিয়ার ছেলে জুনায়েদ (২৭)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেলা শহর থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা চার জন যাত্রী নিয়ে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক হয়ে খাঁটিহাতার দিকে যাচ্ছিল। সিএনজিতে যাত্রী একজন কম থাকায় তা তুলতে পথিমধ্যে উত্তর সুহিলপুর সড়কের পাশে দাঁড়ায়। এসময় একটি ট্রাক সিএনজিটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে আব্দুল হাই মারা যায়। এই ঘটনায় আহত তিনজনকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যাওয়া হলে জুনায়েদ নামে আরো একজন মারা যায়।
খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, নিহতদের মধ্যে একজনের মরদেহ থানায় ও আরেকজনের মরদেহ জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে রাখা আছে। নিহতদের পরিবার অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্টাফ রিপোর্টার :
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বুয়েটে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত সাবেকুন নাহার সনির বাবা হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া।
আজ ১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
হাবিবুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের বিজেশ্বর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ভুইয়ার ছেলে। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
নিহত সনির ফুপাতো ভাই জাহিদুল ইসলাম ইমন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মামা তিনমাস ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। একমাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছিলেন ছয়টি কেমোথেরাপি দিতে। একটি থেরাপি দেওয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। সকালে ঘুমের মধ্যে তিনি মারা যান।’
তিনি আরো বলেন, মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বাদ এশা স্থানীয় বাজারের বড় মসজিদে জানাযা শেষে দাফন করা হবে।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মামা মেয়েকে হারানোর পর ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের’ দাবি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলেন। সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন থেকে ৮ জুন ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন’ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। সেই কর্মসূচিতে তিনি প্রতিবছর উপস্থিত হয়ে তার মেয়ে হত্যার বিচার দাবি করে আসছিলেন। মামা মারা গেছেন কিন্তু আফসোস, দীর্ঘ ২১ বছরেও উনি তার সন্তান সনি হত্যার বিচার কার্যকর হতে দেখে যেতে পারেননি।’
২০০২ সালের ৮ জুন টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকিত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের টগর গ্রুপ। দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে বুয়েটের আহসান উল্লাহ হলের সামনে সাবেকুন নাহার সনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
সাবেকুন নাহার সনি কেমিকৌশল বিভাগের (৯৯ ব্যাচ) লেভেল ২, টার্ম ২ এর ছাত্রী ছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশজুড়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। নিম্ন আদালতে মুকিত, টগর ও সাগরের মৃত্যুদন্ডের রায় হয়।
২০০৬ সালের ১০ মার্চ হাইকোর্ট মুকিত, টগর ও সাগরের মৃত্যুদন্ডাদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত এসএম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে খালাস দেন হাইকোর্ট। পরবর্তী সময়ে মোকাম্মেল হায়াত খান মুকিত পালিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ায়। পলাতক রয়েছেন নুরুল ইসলাম সাগর ওরফে শুটার নুরু। শুধু জেলে রয়েছেন টগর।