অনলাইন ডেস্ক :
ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতাকে থানায় মারধরের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের স্ত্রী পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন। আজ ১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সোস্যাল মিডিয়ায় আমি বুলিংয়ের শিকার। অনেকে নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে। একটি ছবি ছড়িয়ে দিয়ে হারুন স্যারের সঙ্গে আমার বিয়ের কল্পকাহিনী প্রচার করছে। যে কেউ ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবে- ওই ছবির নারী আমি নই। এর আগে অনেক ইস্যুতে অনেকেই বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। এবার আমি এর শিকার।’
সানজিদা আরও বলেন, ‘হাসপাতালে কী ঘটেছে সে ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে পুরো বিষয় বেরিয়ে আসবে। ঘটনার দিন হাসপাতালে আমার স্বামী পৌঁছার পর আমাকে কোনো কিছু নিয়ে প্রশ্ন করেননি। আমার স্বামী প্রথম এডিসি হারুন স্যারের ওপর চড়াও হন।’
এডিসি হারুনের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হারুন স্যারের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। তিনি শুধুমাত্র আমার কলিগ। তবে হারুন স্যারের সহযোগিতা নিয়েছিলাম। তিনি আমাকে ডাক্তারের সিরিয়ালের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আর কিছুই জানি না।’
সানজিদা আরো বলেন, ‘ইনটেনশন (উদ্দেশ্য) দেখে মনে হয়েছে, তারা আমাদের দু’জনকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে একটা ভিডিও করতে চাচ্ছে। পরবর্তীতে তারা সেটি ইউজ (ব্যবহার) করবেন, একটি অসৎ উদ্দেশ্যের জন্য হতে পারে।’
পরিকল্পিতভাবে আপনার স্বামী এই ঘটনা ঘটিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে সানজিদা বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে কি-না বলতে পারব না। তবে তিনি খুব মারমুখী ছিলেন।’
সানজিদা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হিসেবে কর্মরত এবং ৩১তম বিসিএস কর্মকর্তা।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সানজিদা বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আমার কার্ডিয়াক সমস্যা হচ্ছিল। ২০১৯ সাল থেকে আমি হাইপার টেনশনের মেডিসিন খাচ্ছি। চার-পাঁচ মাস ধরে সমস্যাটা বেড়ে যায়। শনিবার ব্যথা বেড়ে যায়। সেদিন ফ্রি সময় থাকায় ডাক্তার দেখাতে চাই। আমি যে ডাক্তারকে দেখাই, তিনি দেশের বাইরে থাকায় ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতালে এডিসি হারুন স্যারকে একটি সিরিয়াল করে দিতে বলি। তিনি ওসির মাধ্যমে সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেন।’
ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সন্ধ্যায় ৬টায় আমি সেখানে যাওয়ার পরে দেখি, যেই ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হয়েছে তিনি একটি কনফারেন্সে আছেন। বিষয়টি হারুন স্যারকে জানালে, তিনি আশপাশে থাকায় হাসপাতালে আসেন। তিনি এসে একজন ডাক্তারকে ম্যানেজ করেন। তাকে দেখানোর পর বেশ কিছু টেস্ট দেন।’
ঘটনার সময় ইটিটি রুমে ছিলেন দাবি করে সানজিদা বলেন, “এ ঘটনার সময় আমি যে রুমে ইটিটি করানো হয় সেই রুমে ছিলাম। ইটিটি করানোর ১৫-২০ মিনিট পর আমি বাইরে একটা হট্টগোলের শব্দ শুনি। প্রথম যে সাউন্ডটা (শব্দটা) কানে আসে যে স্যারই (এডিসি হারুন) চিৎকার করে বলছেন, ‘ভাই, আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না’।”
তিনি আরো বলেন, ‘আমার প্রথমে ধারণা হয়েছিল যে, হয়তো অন্য কারো সঙ্গে ঝামেলা। কিছুক্ষণ পর আমি দেখতে পাই আমার হাজব্যান্ড (আজিজুল হক মামুন), উনি আসলে ওখানে কী করছিলেন, কেন গিয়েছিলেন আমি জানি না। ওনাকে টোটালি আউট অব মাইন্ড লাগছিল (মানসিকভাবে স্থির ছিলেন না) এবং খুবই উত্তেজিত ছিলেন। ওনার সঙ্গে আরো কয়েকজন ছেলে ছিল, আমি আসলে তাদের চিনি না। তারা স্যারকে (এডিসি হারুন) মারতে মারতে ইটিটি রুমে নিয়ে এলেন।’
‘তারা মূলত স্যারকে (এডিসি হারুন) মারতে মারতে, টেনে-হিঁচড়ে এই রুমে নিয়ে আসে। স্যার তাদের হাত থেকে বাঁচতে ইটিটি রুমের এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ান’, যোগ করেন সানজিদা।
সানজিদা বলেন, “এরপর আমার হাজব্যান্ড তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বললেন, ‘এই ভিডিও কর।’ পরে সবাই ফোন বের করে ভিডিও করা শুরু করে। যখন তারা ভিডিও শুরু করে তখন আমি আমার হাজব্যান্ড এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনের সঙ্গে চিল্লাচিল্লি শুরু করি। এরপর আমি যারা ভিডিও করছে তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের হাতের সঙ্গে লেগে আমিও হাতে সামান্য ব্যথা পাই। তার কারণ আমি চাচ্ছিলাম না সেই অবস্থায় কেউ আমার ভিডিও করুক। আর তাছাড়া আমার হাজব্যান্ডের সঙ্গে যেসব ছেলে ছিল আমি তাদের কাউকে চিনতামও না।”
তিনি আরও বলেন, ‘ওই অবস্থায় আমার হাজবেন্ড আমার গায়ে হাত তোলে এবং স্যারকে বের করার চেষ্টা করে। তখন স্যারের কাছে বিষয়টি সেফ মনে হয়নি। এরপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। তখন হাসপাতালের সিকিউরিটির লোকজনও আসেন। এর ১০/১৫ মিনিট পর থানা ফোর্স এলে তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়।’
প্রসঙ্গত, শনিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের ২ কেন্দ্রীয় নেতাকে পুলিশ নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করে বলে অভিযোগ ওঠে। আহত ব্যক্তিরা হলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ।
ভুক্তভোগী ও তাদের সহপাঠীদের অভিযোগ, পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুন অর রশিদ তাদের থানার ভেতিরে নিয়ে বেড়ধক পেটান। এমনকি ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দেওয়ার পরও হারুনের সঙ্গে ১০-১৫ পুলিশ সদস্য মিলে তাদের পিটিয়েছেন।
সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক :
আজ ঐতিহাসিক পলাশী ট্র্যাজেডি দিবস। ১৭৫৭ সালের এই দিনে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে প্রহসনমূলক যুদ্ধ হয়েছিল পলাশীর আমবাগানে। সেদিন ইংরেজদের সঙ্গে তরুণ নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। বেদনাবহ সেই স্মৃতিকে স্মরণ করে প্রতি বছর এ অঞ্চলের মানুষ দিনটিকে পালন করে আসছে ‘পলাশী ট্র্যাজেডি’ দিবস হিসেবে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ষোলো শতকের শেষের দিকে ওলন্দাজ, পর্তুগিজ ও ইংরেজদের প্রাচ্যে ব্যাপক বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। একপর্যায়ে ইংরেজরা হয়ে যায় অগ্রগামী। বাংলার সুবেদার-দেওয়ানরাও ইংরেজদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে।
১৭১৯ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদ কুলি খাঁ বাংলার সুবেদার নিযুক্ত হন। তার মৃত্যুর পর সুজাউদ্দিন খাঁ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার সিংহাসন লাভ করেন। এর ধারাবাহিকতায় আলীবর্দি খাঁর পর ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল সিরাজউদ্দৌলা এই পদে আসীন হন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর।
এ সময় তরুণ নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের বিভিন্ন কারণে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া মসনদের জন্য লালায়িত ছিলেন সিরাজের পিতামহ আলীবর্দি খাঁর বিশ্বস্ত অনুচর মীর জাফর ও খালা ঘসেটি বেগম। ইংরেজদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ স্থাপন করেন। এরপর নবাবের বিরুদ্ধে নীলনকশা পাকাপোক্ত করেন তারা।
১৭৫৭ সালের ২৩ এপ্রিল কলকাতা পরিষদ নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করার পক্ষে প্রস্তাব পাস করে। এই প্রস্তাব কার্যকর করতে ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ রাজদরবারের অভিজাত সদস্য উমিচাঁদকে ‘এজেন্ট’ নিযুক্ত করে। একই বছরের ২৩ জুন ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আমবাগানে সকাল সাড়ে ১০টায় ইংরেজ ও নবাবের বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মীর মদন ও মোহন লালের বীরত্ব সত্ত্বেও প্রধান সেনাপতি মীর জাফরসহ জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, ইয়ার লতিফ প্রমুখ প্রাসাদ ষড়যন্ত্রকারীর বিশ্বাসঘাতকতায় নবাবের পরাজয় ঘটে। সেই সঙ্গে অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য।
মূলত এই ষড়যন্ত্রের অধ্যায় সৃষ্টির পেছনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল বিশ্বাসঘাতক জগৎ শেঠ, মীরজাফর, মাহতাব চাঁদ, উমিচাঁদ বা আমির চন্দ, মহারাজা স্বরূপচাঁদ, ইয়ার লতিফ, রায়দুর্লভ ও ঘসেটি বেগমের ক্ষমতার লোভ। রাজা রাজবল্লভ, মহারাজ নন্দকুমার, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় ও রানী ভবানীর কৌশলী চক্রও এর পেছনে প্রচ্ছন্ন ছিল।
যুদ্ধে পরাজয়ের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা বেদনাদায়ক মৃত্যু হলেও উপমহাদেশের মানুষ তাকে আজও শ্রদ্ধা জানায়। আর নবাবের সঙ্গে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি তাদের।
পলাশী বিপর্যয়ের পর শোষিত বঞ্চিত শ্রেণি একদিনের জন্যও স্বাধীনতা সংগ্রাম বন্ধ রাখেনি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্ম লাভ করে। এরপর ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশে আরো মার্কিন ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তার সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং দেশের ব্যবসায় পরিবেশ উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আজ ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার ঢাকায় একটি মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা সঠিক সময়ে এদেশে এসেছেন।’
এক্সিলারেট এনার্জির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান স্টিভেন কোবোসের নেতৃত্বে মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করায় প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা করে স্টিভেন কোবোস বলেন, এটি বাংলাদেশে ব্যবসায় আস্থা বাড়াবে।
তিনি বলেন, ‘আপনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে আগ্রহ অনেক বেড়েছে।’
কোবোস আরও জানান, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সদস্যসহ শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কোম্পানিগুলো দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে ব্যবসার সম্ভাবনা নিয়ে অনেক আগ্রহী।
এক্সিলারেট এনার্জির সিইও কোবোস বলেন, তার কোম্পানি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে আরও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন, কোম্পানিটি দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বৃদ্ধি করতে চায়। বর্তমানে এক্সিলারেট বাংলাদেশের দু’টি অফশোর ফ্লোটিং স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটে (এফএসআরইউ) বিনিয়োগ করেছে, যা প্রতিদিন ১.১ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। দেশের দৈনিক গ্যাস সরবরাহের প্রায় ৩৪ শতাংশ এখান থেকে আসে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টা ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। সেখানে এ সংগঠনের ৫০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে কিছু শীর্ষস্থানীয় আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানিও ছিল। ড. ইউনূস উপস্থিত মার্কিন ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান।
সাক্ষাৎকালে স্টিভেন কোবোসের সঙ্গে প্রতিনিধিদলে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ এক্সিলারেট এনার্জির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন। পিটার হাস সম্প্রতি এক্সিলারেট এনার্জিতে স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজার হিসেবে যোগদান করেছেন। এছাড়া প্রতিনিধিদলে কোম্পানিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেরেক ওয়ং ও র্যামন ওয়াংডি এবং বাংলাদেশের আবাসিক ব্যবস্থাপক হাবিব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও জ্বালানি সচিব সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : বাসস।
অনলাইন ডেস্ক :
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি)। এবার সারাদেশে তিন হাজার ৭০০টি কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৭৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে।
সূচি অনুযায়ী, প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথমপত্র দিয়ে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে আগামী ১২ মার্চ। ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৩-২০ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি সূত্র জানায়, ১১টি বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯ লাখ ৯২ হাজার ৮৭৮ এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৩১ হাজার ৩১৪ জন। মোট কেন্দ্র ৩ হাজার ৭০০টি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯ হাজার ৭৩৫টি।
বোর্ডভিত্তিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ৪ হাজার ৬৩৭ পরীক্ষার্থী ঢাকা বোর্ডে। এছাড়া রাজশাহীতে ২ লাখ ২৪৫ জন, কুমিল্লায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৫২৭, যশোরে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭১, চট্টগ্রামে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৯০, বরিশালে ৮৮ হাজার ৫৮৬, সিলেটে ১ লাখ ৯ হাজার ৪১২, দিনাজপুরে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৬ এবং ময়মনসিংহে ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৫ জন।
এছাড়া মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২ লাখ ৯০ হাজার ৯৪০ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৯৪ হাজর ৮৪১ জন এবং ছাত্রী ৩১ হাজার ৫৩২ জন। আর কারিগরি বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাাখ ২৬হাজার ৩৭৩ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৯৪ হাজার ৮৪১ জন এবং ছাত্রী ৩১ হাজার ৫৩২ জন।
৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এসএসসি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড দাখিল ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্ব পালন করছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, এসএসসি পরীক্ষার সব প্রস্তুতি শেষ। প্রশ্নফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। কেউ এ নিয়ে গুজব ছড়ালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
পরিদর্শনে যাবেন না শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বিবেচনায় নিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন না শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। কয়েকদিন আগে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ তথ্য জানিয়ে দেন তিনি। মন্ত্রী মনে করেন কেন্দ্র পরিদর্শনের কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর এক ধরনের হয়রানিমূলক পরিস্থিতি, মানসিক যন্ত্রণা ও জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেছেন, পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা এমনিতেই একটা ট্রমার মধ্যে থাকে। কেন্দ্র পরিদর্শনের নামে ব্যাপক জনসমাগম এ মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশে বিঘ্ন ঘটে।
মহিবুল হাসান চৌধুরী আরও বলেন, আইন অনুযায়ী কেন্দ্র পরিদর্শক ছাড়া অন্য কারও কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি নেই। তাই পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ যেন পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ না করেন সে বিষয়ে সবার সচেতন থাকা উচিত।
বন্ধ কোচিং সেন্টার
এদিকে, প্রশ্নফাঁসের গুজব ও নকলমুক্ত পরিবেশে এসএসসি পরীক্ষা আয়োজনে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত একমাস সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নানা উদ্যোগ
প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে কোচিং বন্ধ ছাড়াও নানা উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। পরীক্ষার কেন্দ্রে জেলা পর্যায়ের ট্রেজারি ও উপজেলা বা থানা পর্যায়ে থানা হেফাজতে সংরক্ষণ করা হবে। থানা বা ট্রেজারি থেকে পুলিশ প্রহরায় প্রশ্ন কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রশ্নফাঁস বা এ সংক্রান্ত গুজব ঠেকাতে ফেসবুকসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলবে নজরদারি। এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো নজরদারি চালাবে। প্রশ্নফাঁস বা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষা বোর্ডের যত নির্দেশনা
এসএসসি শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষা বোর্ড থেকেও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে অবশ্যই পরীক্ষার্থীদের কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে। প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত সময় অনুযায়ী পরীক্ষা হবে। প্রথমে বহুনির্বাচনী ও পরে সৃজনশীল বা রচনামূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং দুই পরীক্ষার মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না। এছাড়া পরীক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা শুরুর তিনদিন আগে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে, পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে। কেন্দ্রসচিব ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন আনতে এবং ব্যবহার করতে পারবেন না।
থাকবে কুইক রেসপন্স টিম
এসএসসি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের যে কোনো সমস্যা নিরসনে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) প্রস্তুত থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান।
তিনি জানিয়েছেন, পরীক্ষার্থীদের যে কোনো অসুবিধা মোকাবিলা করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটি জোন কর্তৃক আলাদা আলাদা কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) গঠন করা হবে। এছাড়া যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তার আহ্বান জানানো যাবে। এক্ষেত্রে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইট (বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা) সুন্দরবনে দেশি বিদেশি ইকোট্যুরিস্টদের (প্রতিবেশ পর্যটক) ঢল নেমেছে। শুক্র থেকে রবিবার (৩-৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত তিনদিনেই এই ম্যানগ্রোভ বনের বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণ করেছে ৭৫০০ দেশি-বিদেশি পর্যটক।
একই অবস্থা চলছে সুন্দরবনের দর্শনীয় পর্যটন স্পটগুলোতেও। চলতি পর্যটন মৌসুমে সুন্দরবনে পর্যটকদের ঢল সামাল দিতে হিমশিম থেতে হচ্ছে বন বিভাগকে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বলছে, পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে একটানা ৯ মাস হচ্ছে সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুম। তবে শীত মৌসুমেই সুন্দবনে সব থেকে বেশি পর্যটক এসে থেকে। সুন্দরবনের প্রায় ৯০ ভাগ পর্যটকই পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের কটকা-কচিখালীর টাইগার পয়েন্ট, হরিণের বৃহৎ বিচরণ ক্ষেত্রসহ জামতলা ও কদমতলা সী-বিচ, হারবাড়িয়া, শরণখোলা, আলিবান্দা, ত্রিকোন আইল্যান্ড, দুবলা, পক্ষীরচর, ডিমের চর ও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণ করে থাকে।
গোটা সুন্দরবনের দেশি বিদেশি প্রতিবেশ পর্যটকের মধ্যে ৮০ ভাগ ভ্রমণ করেন বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রে।
গত তিন দিন শুধুমাত্র করমজলেই ৭৫০০ প্রতিবেশ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। মোংলা বন্দর থেকে নৌপথে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে পর্যটন কেন্দ্রে ঝুলন্ত ফুট ব্রিজ, ফুট ট্রেইল, ওয়াচ টাওয়ার, হরিণ, কুমির ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র, ম্যানগ্রেভ আরবোরেটাম ও ডলফিন প্যাভিলিয়ন থাকায় প্রতিবছরই শীত মৌসুমে পর্যটকের ঢল নামে।
মোংলার সাথে রেল সংযোগ ও পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এখন সুন্দরবনের দূরত্ব মাত্র ৩ ঘণ্টায় নেমে এসেছে। এসব কারণে সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের জন্য নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
দিনে এসে দিনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকার পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টায় ৬ বার রূপ বদলানো সুন্দরবনে প্রাণপ্রকৃতি দেখতে এখন প্রতিদিনই খুলনা, মোংলা, শরণখোলা থেকে কয়েকশত বিলাসবহুল লঞ্চ, ট্যুরিষ্ট বোটসহ জলযানে শত শত প্রতিবেশ পর্যটক ভ্রমণ করছে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবনে পর্যটন মৌসুমে গত মৌসুমের চেয়ে এবার সংখ্যা দ্বিগুণের কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় এখন মাত্র ৩ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে সুন্দরবনে আসা যাচ্ছে। হোটেল-মোটেল বুকিংএর বিড়ম্বনা ছাড়াই পর্যটকরা স্বল্প সময়ে কম খরচে দিনের মধ্যেই সুন্দরবন ভ্রমণ করে গন্তব্যে ফিরতে পারবে। এসব কারণে ট্যুর অপারেটর ও পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণ করতে বন বিভাগের কাছ থেকে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে আগাম অনুমতিপত্র নিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের ঢল সামাল দিতে পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ পর্যটন স্পটগুলো প্রস্তুত রয়েছে। বাঘ হরিণসহ বন্যপ্রানীদের নিরাপত্তা ও তাদের র্নিবিঘ্ন বসবাসের উপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
বন বিভাগের জনবল কম থাকায় পর্যটক ও বনজীবীদের সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় পর্যটকদের সহয়তা কামনা করেন এই বন কর্মকর্তা।