ডিবি পরিচয়ে বাসায় তল্লাশির ঘটনায় গ্রেফতার ৪

জাতীয়, 16 September 2023, 895 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
আশুলিয়ায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যক্তিকে মারধর করে তুলে নেয়ার সন্দেহে চারজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। এসময় তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকারও জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী।

banner

মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আজ ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে আসামিদের আশুলিয়া থানা থেকে ঢাকা আদালতে পাঠানো হয়।

এর আগে গতকাল বিকালে আশুলিয়ার ডেন্ডাবর এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকার মৃত আবুল হাশেমের ছেলে শেখ মো. মোজাম্মেল হক (৫৫), ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার আলতাফ আলীর ছেলে সোহেল রানা (৩৮), গাজীপুরের কাপাসিয়ার সাহাবুদ্দীনের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দীক (৪৮) এবং ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানাধীন হাটখোলার চড় এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে মো. সুলতান (৩৩)। তারা সকলেই বর্তমানে গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় বসবাস করছেন।

ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন (৩০) নীলফামারী জেলার ডিমলা থানাধীন ছামিনুর ওরফে আমিনুরের ছেলে।

বর্তমানে আশুলিয়ার ডেন্ডাবর কবরস্থান রোডে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। পেশায় রেন্ট এ কার চালক।

মামলার সূত্রে জানা যায়, ১৫ সেপ্টেম্বর বিকালে ভুক্তভোগীর ভাড়া বাসায় একটি প্রাইভটে কার নিয়ে উপস্থিত হয় আটককৃতরা। তারা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীকে মারধর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে চাইলে পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয়।

এসময় স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ পরিচয় দেয়া চারজনকে আটক করে থানায় খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন জানান, অভিযুক্তরা কেউ-ই তার পূর্বপরিচিত নয়। তার ধারণা, পুলিশ পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করতে চেয়েছিল আসামিরা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক শরীফ আহমেদ জানান, ভুক্তভোগীর বাসা গিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়।

তবে কোনো পরিচয়পত্র দেখাতে পারেনি ভুক্তভোগী পরিবারকে।

তারা বিষয়টি স্থানীয়দের জানালে, তারা আটক করে পুলিশের খবর দেয়। এর ভেতরে অন্য কোনো ঘটনা আছে কিনা? সবগুলো বিষয় মাথা রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।

Leave a Reply

জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির…

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান Read more

বাঞ্ছারামপুরে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

চলারপথে রিপোর্ট : ৬ দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য Read more

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্ক : সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল Read more

রাইস কুকারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মা-মেয়ের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক : মাগুরার সদর উপজেলার টিলা গ্রামে রাইস কুকারে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

চলারপথে রিপোর্ট : সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় Read more

নাসিরনগরে মৎস্য আড়তে অভিযান, নিষিদ্ধ পিরানহা…

চলারপথে রিপোর্ট : বিক্রির জন্য রাখা নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ জব্দ Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন চাঁদাবাজ গ্রেফতার

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাটিহাতা (বিশ্বরোড) গোলচত্বর নামক এলাকায় চাঁদাবাজির Read more

সড়ক মেরামতের সপ্তাহ না পেরোতেই উঠে…

চলারপথে রিপোর্ট : সড়ক মেরামতের এক সপ্তাহ না পেরোতেই ইতিমধ্যে Read more

কসবায় গাঁজাসহ গ্রেফতার ১

চলারপথে রিপোর্ট : আজ ২৪ জুন মঙ্গলবার সকালে এস আই Read more

শাস্তি পেলেন ঋষভ পন্ত

অনলাইন ডেস্ক : আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট Read more

বাংলাদেশে গুগল পে এর উদ্বোধনী

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আহসান এইচ মনসুর Read more

যে কাজে নেক আমল নষ্ট হয়

ইসলাম ডেস্ক : মানুষের জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকারক দিক হলো Read more

গরু চোর চক্রের মূল হোতাসহ ১৩ সদস্যকে গ্রেফতার

জাতীয়, 19 August 2023, 916 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
অভিনব কায়দায় এক জেলায় চুরি করে অন্য জেলায় বিক্রি করতেন এমন আন্ত:জেলা গরু চোর চক্রের মূল হোতাসহ ১৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সিপিসি-২ পাবনা ক্যাম্পের সদস্যরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি চোরাই গরু উদ্ধার করা হয়।

banner

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার তৌহিদুল মবিন খান এতথ্য জানান। এর আগে গত কয়েকদিন ধরে পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলো: ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানার আলগাদিয়া এলাকার চাঁন মোল্লার ছেলে আব্দুর রহিম (৩৪), একই এলাকার হারেস মুন্সীর ছেলে শফিকুল মুন্সী আদিল (২৫), কোতয়ালী থানার বাটিলক্ষীপুর এলাকার মোতালেব মোল্লার ছেলে গাফফার মোল্লা ((২২), রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার ভবানীপুর এলাকার মৃত রফিজ উদ্দিন মন্ডলের ছেলে আব্দুল রাজ্জাক (৩৮), ফরিদপুর জেলার সালথা থানার রামকান্তপুর এলাকার আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে জামাল (২৩), বোয়ালমারি থানার শিরগ্রাম ধোপাপাড়া এলাকার ইয়াসিন মোল্লার ছেলে বাগানে মোল্লা (২০), নাগদি এলাকার আবুল খায়েরের ছেলে মফিজুল ইসলাম (২২), মধুখালী থানার ডুমাইন এলাকার হারুন বিশ্বাসের ছেলে অনিক বিশ্বাস, বোয়ালমারীর সাতুর বাজারের মজিবুর রহমানের ছেলে মো: মিল্টন (২৪), নগরকান্দা থানার সন্তোষী এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে নাহিদ মিয়া (২৬), বোয়ালমারী থানার খামারপাড়া এলাকার আব্দুল বাকের শেখের ছেলে আব্দুল্লাহ শেখ (২৫), রাজবাড়ীর পাংশা থানার ভবানীপুর এলাকার রফিজ উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মো. মুন্না (১৯) এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার কোলদিয়ার ভুরকাপাড়া এলাকার মল্লিক সরদারের ছেলে মো: নুতফার (৪৯)।
তৌহিদুল মবিন খান আরো জানান, তাদের বাড়ি ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলায় কিন্তু তারা ওই এলাকায় চুরি করে না। তারা মাদারীপুর, নড়াইল, মাগুড়া, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলায় গরু চুরি করে। সেইসব গরু আবার অন্য আরেক জেলায় স্থানান্তর করে বিক্রি করতো। আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাবনার ঈশ্বরদীতে একটি ভাড়া করা বাসা থেকে মুলহোতা আব্দুর রহিমসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করি। পরে তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৪টি গরু উদ্ধার করা হয়।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন

জাতীয়, রাজনীতি, 24 October 2024, 534 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল ২৪ অক্টোবর বুধবার রাতে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

banner

গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিল শেখ হাসিনার পতনের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর পরদিনই নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এ সিদ্ধান্তে রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অজ্ঞাত স্থান থেকে গতকাল রাতেই বিবৃতিতে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান নিষিদ্ধকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়েছেন।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজন ছাত্রনেতা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধে সংগঠনটির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।

নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শক্তি ছিল ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠন। তবে স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের অনেকের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর এই ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্ব, মারামারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক বাণিজ্য, বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচিতে হামলা, দমনপীড়ন, অস্ত্রবাজির মতো অপরাধের শত শত অভিযোগ ওঠে।

এই সময়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অন্তত অর্ধশত প্রাণহানি ঘটেছে। ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ দাস এবং ২০১৯ সালে আবরার হত্যায় সংগঠনটি ধিকৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘গেস্ট রুম’ নামে নিপীড়নের কুখ্যাতিও রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ ছিল দমনকারীর ভূমিকায়। গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান শুরুর পর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মারমুখী ছিল। গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের নজিরবিহীন মারধর করে, যা থেকে সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিনেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর অভ্যুত্থান দমনে অস্ত্র হাতে রাজপথে দেখা যায়। অভ্যুত্থানের সময় এবং শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র পাওয়া যায়। মধ্য জুলাই থেকেই অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগকে বের করে দিয়েছে অভ্যুত্থানকারীরা। ৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

প্রজ্ঞাপনেও ছাত্রলীগকে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে হত্যা, নির্যাতন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল ছাত্রলীগ। এসবের প্রমাণ দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীর অপরাধ আদালতেও প্রমাণ হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরো উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও জনগণের ওপর আক্রমণ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী; অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক, উস্কানিমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। সরকারের কাছে এসব কর্মকাণ্ডের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

রাষ্ট্রপতির আদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন নামাঙ্কিত রাজনৈতিক শাখা-২-এর জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৮-এর উপধারা (১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলো।

আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী, নি‌ষিদ্ধের সিদ্ধান্ত পুন‌র্বিবেচনার আবেদনে ৩০ দিন সময় পা‌বে ছাত্রলীগ। আবেদন কর‌লে সরকার তা ৯০ দি‌নের ম‌ধ্যে নিষ্প‌ত্তি কর‌বে। নি‌ষি‌দ্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাক‌লে ৩০ দি‌নের ম‌ধ্যে হাইকোর্টে আ‌পিলের সু‌যোগ পা‌বে।

সন্ত্রাসবি‌রোধী আইনের ২০ ধারায় উল্লেখ করা হ‌য়ে‌ছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সত্তার কার্যালয় বন্ধ করবে সরকার। ব্যাংক হিসাব বা অন্য সম্পদ জব্দ হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা দেশ ত্যাগ করতে পারবে না। সংগঠনের পক্ষে বা সমর্থনে বিবৃতি, বিজ্ঞপ্তি, প্রকাশনা, প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলন বা জনসমক্ষে বক্তৃতা নিষিদ্ধ হবে।

গত ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার একই আইনে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। তাদের আবেদনে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৮ আগস্ট নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধে বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ মিছিলের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নুসরাত তাবাসসুম বলেন, জীবনের অন্যতম আনন্দের দিন আজ। ছাত্রলীগ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ ছিল না। এই ছাত্রলীগ ১৫ জুলাই আমাদের ওপর হামলা করেছে। সারাদেশে তারা অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে শহীদ করেছে। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায়। আর কোনো ছাত্র সংগঠন যেন এমন সন্ত্রাসী না হয়।

সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, যারা কথায় কথায় আন্দোলনে জঙ্গিবাদ খুঁজত, তাদেরকেই জঙ্গি ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের গর্ত থেকে বের করে ধোলাই দিতে হবে।

আশরিফা খাতুন বলেন, আবু সাঈদের মৃত্যুর পর ছাত্রলীগ রাজাকার দমন হয়েছে বলে উল্লাস করেছিল। যখনই কোনো ন্যায্য দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে দাঁড়িয়েছি, ছাত্রলীগ মেরেছে। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য গেলে, সেখানেও মারত। কোনোভাবেই ছাত্রলীগ যেন ফিরতে না পারে।

অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে না বললেও উচ্ছ্বাস দেখায়নি। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, ছাত্রলীগ খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি, গণহত্যাসহ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। সব জঙ্গি সংগঠন মিলে যত মানুষ খুন করেছে; ছাত্রলীগ এককভাবে বেশি করেছে। ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছে এবং শহীদ হয়েছে। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে ছাত্র রাজনীতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। সুস্থ রাজনীতিচর্চার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তবে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধই সমাধান নয়। সংগঠনটির যারা সন্ত্রাস করেছে, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক ডা. সাদেক আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করেছে ছাত্রলীগ। সন্ত্রাস, নিপীড়ন, নির্যাতনের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে চায় না। ছাত্রলীগের অপরাধীদের বিচার চায়।

ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান রিচার্ড বলেন, ছাত্রলীগের নিষিদ্ধকে সাধুবাদ জানাই। নিষিদ্ধ হলেই অপতৎপরতা বন্ধ হবে না। অপরাপর সংগঠনের সঙ্গে আলাপে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল। ছাত্রলীগের তৎপরতা বন্ধে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বোস বলেন, নির্বাহী আদেশে কয়েক দিন আগে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ক্ষমতার পরিবর্তনে তা বদলেও গেছে। একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা কতখানি ফলপ্রসূ হবে, জানি না। নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে কতটুকু নিঃশেষ করা যাবে, জানি না। ছাত্রলীগকে মোকাবিলা করতে হবে আদর্শের জায়গায় এবং মাঠের রাজনীতিতে। রাজনৈতিকভাবে সতর্ক থাকতে হবে।

নির্বাচন হবে সংবিধানমতে, কোনো নড়ন-চড়ন হবে না: সেতুমন্ত্রী

জাতীয়, রাজনীতি, 18 February 2023, 2036 Views,

চলারপথে ডেস্ক :
সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভুলে যান। তত্ত্বাবধায়ক সরকার স্লোগান এনে লাভ নাই। একেবারেই ভুলে যান। ওই অস্বাভাবিক সরকার, অসাংবিধানিক সরকার বাংলাদেশের আসবে না, ইনশাআল্লাহ।

banner

বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, লাফালাফি-বাড়াবাড়ি যতই করেন, জনগণের কাছে এখনো ডাক দিয়ে সাড়া ফেলতে পারেন নাই। সংবিধান থেকে এক চুলও নড়ব না আমরা। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী, কোনো নড়ন-চড়ন হবে না।

আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকারের পদত্যাগের দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মামা বাড়ির আবদার। কোন দোষে সরকার পদত্যাগ করবে। কি কারণে নির্বাচনের আগে সরকার পদত্যাগ করবে। কারণটা কি? হাওয়া ভবনের যুবরাজ তারেককে ক্ষমতায় বসানোর জন্য? ওই খাম্বা সরদার ক্ষমতায় বসবে? বাংলাদেশের মানুষ এই খাম্বা সরদারকে এ দেশের ক্ষমতার মঞ্চে আর বসতে দেবে না। ভুলে যান ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন। কত দুর্নীতি করেছেন ভুলে গেছেন?

বছরব্যাপি কর্মসূচি পালন করা হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনো পাল্টাপাল্টি নয়। প্রতিদিনই প্রোগ্রাম হবে। বাংলাদেশের যে কোনো জায়গায় হবে। কখনো সম্মেলন হবে। কখনো গণসংযোগ হবে, কখনো শান্তির সমাবেশ হবে, কখনো সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে, আওয়ামী লীগ এ কর্মসূচি নিয়ে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবে। জনগণের ঘরে ঘরে যাবে।

তিনি আরো বলেন, কাউকে নামতে দেব না- এ কথা বলবেন না। সবাই নামবে। রাজপথ সবার। রাস্তা সবার। কিন্তু রাস্তায় নামবেন ১৩-১৪ সালের মতো ৫০০ মানুষ পুড়িয়ে মারবেন, অগ্নিসন্ত্রাস করতে রাস্তায় নামবেন। সরকারি অফিস পোড়াবেন। রিক্সা ড্রাইভার, বাস ড্রাইভার পুড়িয়ে মারবেন- তা হতে দেয়া হবে না।

মোটরসাইকেলের জন্য মহাসড়কে পৃথক লেন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন

জাতীয়, 9 May 2023, 1212 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
দেশের প্রত্যেক মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য পৃথক লেন চেয়ে হাইকোর্টে একটি আবেদন দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি ‘বিশেষ’ ব্যক্তির অপরাধের কারণে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ না করারও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ ৯ মে মঙ্গলবার পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটে এ সম্পূরক আবেদন করা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকার, ইয়ারুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মার-ই-য়াম খোন্দকার।

banner

সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, আবু হানিফ হৃদয় নামের যাত্রাবাড়ীর এক বাসিন্দা এ রিট করেন। এর আগেও তিনি এ সংক্রান্ত একটি রিট করেছিলেন। যেটি গত ১৫ জানুয়ারি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেন হাইকোর্ট।

রিটে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়। এরপর নতুন করে তিনি একই বিষয়ে আবার রিট করেন।

ওই রিট বিচারাধীন অবস্থায় গত ২২ এপ্রিল উদযাপিত ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পদ্মা সেতু মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় সরকার যা এখনও কার্যকর রয়েছে। এ পর্যায়ে আগের রিটের সঙ্গে রিটকারী হানিফ হৃদয় হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন দায়ের করেন।

গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়। পরদিন ২৬ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে এদিন ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণে পরে এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ২৭ জুন ভোর ৬টা থেকে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় মোটরসাইকেল চলাচলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়।

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় রাখতে নৌকায় ভোট দিন : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়, 29 December 2023, 787 Views,

অনলাইন ডেস্ক :
দেশের উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বরিশালবাসীকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে নৌকায় ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে আবারও ক্ষমতায় আসতে পারলে বরিশালে ছয় লেনের রাস্তাসহ অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নেরও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

banner

আজ ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। যখন জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল তখন বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়নি। বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ আসলে দেশ এগিয়ে যায়। কাজেই এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি।

এ সময় নতুন ভোটারদের কাছে নৌকায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার আহ্বান, যারা প্রথমবার ভোট দিতে আসবেন, নিশ্চয় চাইবেন না যে, আপনার ভোট ব্যর্থ হোক। কাজেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।’

আওয়ামী লীগ যখন জনগণের জন্য উন্নয়ন করে, তখন বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রেললাইন কেটে বগি ফেলে দিয়ে মানুষ মরার ফাঁদ পাতে। মা আর সন্তানকে একসাথে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। এই দৃশ্য বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। গাড়িতে আগুন দেয়। ২০০১ সালের অগ্নিন্ত্রাস শুরু করেছিল। এরপর ২০১৩, ২০১৪ সালের পর এখন আবার শুরু করেছে।

“আমি ধিক্কার জানাই, ওই বিএনপি-জামায়াতকে। বিএনপি হচ্ছে সন্ত্রাসী দল। এই সন্ত্রাসী দলের রাজনীতি করার কোনো অধিকার বাংলাদেশে নেই। কারণ তারা মানুষ পোড়ায়, মানুষ হত্যা করে। আমাদের রাজনীতি মানুষের কল্যাণে, ওদের রাজনীতি মানুষ পোড়ানোতে। তাদের এদেশের মানুষ চায় না। তাদের দোসর কে? যারা একাত্তরের গণহত্যা করেছে, লুটপাট করেছে, নারী ধর্ষণ করেছে, মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিয়েছে। যাদের বিচার করেছি, সাজা দিয়েছি; সেই যুদ্ধাপরাধীরা হচ্ছে তাদের দোসর।”

তিনি বলেন, একদল হচ্ছে খুনি, সন্ত্রাসী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, মানিলন্ডারিং এবং যত প্রকার অপকর্ম…এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী সেই দল। তার সাথে জুটছে যুদ্ধাপরাধী দল। এরা নির্বাচন চায় না। বানচাল করতে চায়।

নৌকায় ভোট দিলে বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশের রূপান্তরিক হবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘আপনাদের কাছে আহ্বান, আপনারা ৭ তারিখে সকলে সকাল সকাল সবাই ভোট কেন্দ্রে যাবেন। মার্কাটা কি? নৌকা মার্কা। এই নৌকা হচ্ছে নুহ (রা.) নবীর নৌকা। মহাপ্লাবন থেকে মানুষকে রক্ষা করেছিল।

“এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়ে আজকে দারিদ্র বিমোচন হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। নৌকায় ভোট দিলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।”

আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তিখাতে দেশকে এগিয়ে নিতে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে দরে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষ জনশক্তি আমরা গড়ে তুলতে চাই। যাতে বিশ্বের সঙ্গে শিক্ষা-দীক্ষায় সব দিক থেকে আমাদের তরুণ প্রজন্ম চলতে পারে।

“ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের ছেলে মেয়ে সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হবে। আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিখবে। দক্ষ জনশক্তি হবে। আমাদের সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্মার্ট সরকার হবে, আমাদের অর্থনীতি স্মার্ট অর্থনীতি হবে, সমাজ ব্যবস্থা স্মার্ট হবে।”

দেশের শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত বরিশালে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আজকে অবহেলিত বরিশাল আজ কোথায় আছে। বরিশাল কি উন্নত হয়েছে?’ এ সময় উপস্থিত জনতা দু’হাত তুলে বরিশালের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বরিশাল বিভাগে নৌবাহিনীর ঘাটি করেছি, সেনানিবাস করেছি, এলাকার উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি, সেখানে সোলার প্যানলসহ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। ভোলার গ্যাস সিএনজি করে ঢাকায় নিচ্ছি। ভবিষ্যতে বরিশালেও নিয়ে আসব যাতে আরও শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে।’

“তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল কুয়াকাটায় চলে আসবে, সেখানে স্থাপন করা হবে যাতে দক্ষিণাঞ্চলের ইন্টারনেট নির্বিঘ্ন হয়। বরিশাল ছিল অন্ধকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, এখন প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কথা দিয়েছিলাম কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না। কথা রেখেছি। আমরা দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম, এখন দিন বদলে গেছে।”

ভাঙা থেকে বরিশাল-কুয়াকাটা এবং পায়রা পোর্ট পর্যন্ত ছয় লেনের রাস্তা তৈরি করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই আমাদের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই বরিশালে আর কোনো দুর্ভোগ থাকবে না।

এ সময় বরিশাল একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি, মেরিন একাডেমি করে দিয়েছি, প্রতিটি নদীর ওপর সেতু করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, বরিশাল ছিল শষ্য ভাণ্ডার। আবারও সেই সুদিন ফিরিয়ে আনতে চাই। এজন্য খাদ্য সংরক্ষণাগার করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের ফলে দক্ষিণাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, সেটা মাথায় রেখে ডেল্টা প্লান ২১০০ পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়নের পরিকল্পনা আমি করে দিয়েছি। কাজেই এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। কারা পারবে? একমাত্র আওয়ামী লীগ পারবে।

এ সময় তিনি বলেন, দারিদ্রের হার ৪১ থেকে ১৮.৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র ২৫.১ ভাগ ছিল, তা ৫.৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশের হতদরিদ্র থাকবে না। আমরা গৃহহীণদের ঘর করে দিচ্ছি। প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, জমি পাবে। কেউ গৃহহীন থাকবে না।

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে দেশকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির অভয়ারণ্য করেছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময় ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে অন্ধকার যুগ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬ থেকে থেকে ২০০১ সালে দেশ যত এগিয়েছিল, তারপর তার থেমে গেল। চক্রান্ত করে ২০০১ এ আমাদের হারানো হয়। এরপর যে অথ্যাচার শুরু হলো। এই বরিশাল থেকে ২৫ হাজার জনগণ আমার কোটালীপাড়া গোপালগঞ্জে আশ্রয় নিয়েছিল। কেউ ঘরে থাকতে পারত না। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ হাত কাটা, পা কাটা, চোখ তোলা, হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হাড়গুড়ো করে মারা, ঘরবাড়ি দখল করা, মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করা, ফাহিমা-মহিমা কতো মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এইভাবে তাদের অত্যাচার চলেছিল।’

“২০০১ থেকে ২০০৬ ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে অন্ধকার যুগ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন না হলেও ওই বিএনপি ক্ষমতায় থেকে তাদের ভাগ্য গড়েছিল।”

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সময়ে সমস্ত দেশের গ্রেনেড হামলা বোমা হামলা। এমনকি আমার ওপর পর্যন্ত গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাঁচিয়ে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আমাদের মানবঢাল করে সেদিন রক্ষা করেছিল। এই বাংলাদেশকে তারা একটা সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দুর্নীতির অভ্য়ারণ্য করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী তার জনসভার শেষ দিকে বরিশাল বিভাগের নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বরিশালবাসীর কাছে ভোট চান।