চলারপথে রিপোর্ট :
রাজশাহীকে নবনির্মিত কারা প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করা হয়েছে। কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি নির্মাণে ৯৪ কোটি ১২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৬ দশমিক ৬৯ একর জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে।
আজ ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার পৌনে ১১ টার দিকে ফলক উন্মোচন ও বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, সরকার কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তর করছে। রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দৃষ্টিনন্দনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারকে পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে পরিণত করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটি চালু হলে সেখানে আগতরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার আত্মত্যাগ দেখতে পাবে, জানতে পারবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কারা সদস্যদেরকে আধুনিক, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশের কারাগারসমূহে আগত বিপথগামী লোকদের সংশোধন এবং পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, যথাযথ প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দক্ষ জনবল দরকার। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কারা প্রশিক্ষণ অধিদফতর এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নবনির্মিত রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, প্রশাসন ও একাডেমিক ভবন, এম আই ইউনিট ভবন, পুরুষ স্টাফ ও প্রশিক্ষণার্থী ব্যারাক, মহিলা স্টাফ ও প্রশিক্ষণার্থী ব্যারাক, অফিসার্স মেস, কমান্ড্যান্ট, ডেপুটি কমান্ড্যান্টের বাসভবনসহ অফিসার্স কোয়ার্টার, ১০০০ বর্গফুটের অফিসার্স কোয়ার্টার, গার্ড ভবন, মসজিদ, পাওয়ার হাউস, পাম্প হাউস, ট্রেনিং সেড, ক্যাফেটেরিয়া, পোডিয়াম, প্যারেড গ্রাউন্ড ও সুইমিং পুল আছে।
উল্লেখ্য, পদ্মা নদীর উত্তর তীরে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় ১৯৯৫ সালে কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৫ সালের ৯ জুন কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, রাজশাহীর নির্মাণ প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। গণপূর্ত অধিদফতর এ বছরের ৩০ জুন নির্মাণ কাজ শেষ করে।
ডেস্ক রিপোর্ট :
বিচারপ্রার্থীরা যাতে দ্রুত ন্যায় বিচার পায়, সে লক্ষে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, বিচারিক কর্মকাণ্ডে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার মামলা নিষ্পত্তিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। আমি আশা করব, এখন থেকে ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনায়েড’ প্রবাদটি আমাদের বিচার বিভাগে উদাহরণ হিসেবে আর ব্যবহৃত হবে না।
আজ ১৮ ডিসেম্বর সোমবার ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস’ উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি মামলা নিষ্পত্তির পর রায়ের কপির জন্য যেন বিচারালয়ের বারান্দায় ঘুরতে না হয়, সে ব্যাপারেও সবাইকে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন।
রাষ্ট্রপতি আশা করেন, সুপ্রিম কোর্ট ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে ও জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহিদের রক্তে লেখা সংবিধানের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করবেন। অমর শহিদের রক্তে লেখা এই সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনা ও বাঙালির অধিকার আদায়ের যেমন অনন্য দলিল, তেমনি বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায়ও অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে মুক্তির পথ দেখাবে।
আইনজীবীদের বিচার ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক এই আইনজীবী বলেন, আইনজীবীদের সহায়তা ছাড়া বিচারের কাজ কিছুতেই অগ্রসর হতে পারে না। বিচার কাজে বেঞ্চ ও বারের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা খুবই জরুরি। আইন, নির্বাহী ও বিচার- রাষ্ট্রের এই ৩ অঙ্গের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা রাষ্ট্র পরিচালনায় খুবই অপরিহার্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অতীত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের রক্ষক এবং চূড়ান্ত ব্যাখ্যা প্রদানকারী। সুপ্রিম কোর্টের জুডিসিয়াল রিভিউ’র ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এই গুরুদায়িত্ব পালন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টই রায়ের মাধ্যেম অসাংবিধানিক উপায়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল অবৈধ ঘোষণা করেছেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বর্তমানে বিচার বিভাগের গুরুদায়িত্ব হচ্ছে, দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত মামলাজট নিরসন করা। এই জট নিরসন করতে পারলে বিচারপ্রার্থী মানুষকে যেমন দ্রুত ন্যায়বিচার প্রদান করা সম্ভব হবে, তেমনি বঙ্গবন্ধুর সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যও সফল হবে। সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়িত হবে।
তিনি আরও বলেন, বিচারের বাণী এখন আর নিভৃতে কাঁদে না। সে ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার করে দিয়েছে। আইনগত সহায়তা দিয়ে দরিদ্র-অসহায় মানুষদেরও তিনি ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
সভাপতির বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, দুর্নীতি নির্মূল, বিচার ব্যবস্থায় গতিশীলতা আনয়ন, গবেষণামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত মানোন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন নানা পদক্ষেপ জোরদার করেছে।
তিনি বিপুল সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তিতে বিচার বিভাগের সক্ষমতা সংকুচিত হওয়া এবং এ সমস্যা সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি বড় ধরনের আইনি সংস্কারের গুরুত্বের কথা ব্যক্ত করেন। উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতে বিচারক সংকটের কথা তুল ধরে প্রধান বিচারপতি পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট জাজেস কমিটির সভাপতি ও আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এদিকে ‘সুপ্রিম কোর্ট দিবস ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি দিবস’ পালন করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। এ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকিরের সভাপতিত্ত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনয়াতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল।
চলারপথে রিপোর্ট :
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে মাদ্রাসা পড়ুয়া দুই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আজ ১৫ জুন বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার ঘোঁষগাও ইউনিয়নের পূর্ব জরিপাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো একই এলাকার জ্যুতি মিয়ার মেয়ে লাবীবা (৮) এবং ওমেদ আলীর মেয়ে মুর্শিদা আক্তার (১২)। উভয়েই স্থানীয় ঘোঁষগাও বকুলতলা মহিলা মাদরাসার ছাত্রী ছিল। ঘটনার সততা নিশ্চিত করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকালে মাদরাসা ছুটি হওয়ার পর বাড়ি ফেরার পথে রহিম উদ্দিনের বাড়ি সংলগ্ন স্থানে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে আহতবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে ধোবাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করে। দুই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
চলারপথে রিপোর্ট :
২০২৩ সালে ২৫ মে যুবক মোতালেবের পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে ২৩টি কলম বের করা হয়। তখন চিকিৎসকদের কাছে মোতালেব ওয়াদা করেছিল কখনো আর এসব জিনিস খাবেন না। কিন্তু কলমগুলো বের হতে কোনো কষ্ট না হওয়ায় যুবক মোতালেব আবারও লোহার সুচালো যন্ত্র, কলম ও কঞ্চি খেয়ে ফেলে। পরে পেট ব্যথা শুরু হলে পুনরায় সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দফায় চিকিৎসকরা পরীক্ষ-নিরীক্ষার পর এন্ডোসকপি সার্জারির মাধ্যমে মোতালেবের পেট থেকে পুনরায় লোহার তাঁতের সুচালো সরঞ্জাম, কলম ও একটি বাঁশের কঞ্চি বের করেন।
মোতালেব হোসেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলত নতুনপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে।
মোতালেব হোসেন জানান, গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। তখন অনেক কলম বের হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যথা পাওয়া যায়নি। এ কারণে আবারও এগুলো খেয়েছিলাম। তবে ভবিষ্যতে আর খাব না।
হাসপাতালের চিকিৎসক ইরিন আলম বলেন, গত মাসের ১৩ মে মোতালেব হোসেন পেট ব্যথা-বমি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু ব্যথা কমে না। এরপর আমরা পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা পাই তার পেটের ভেতর লোহার মতো সুচালো যন্ত্র, কলম ও কঞ্চি থেকে দেখা যায়। পরবর্তীতে হাসপাতালে সার্জারি চিকিৎসক ডা. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী এন্ডোসকপি সার্জারির মাধ্যমে ৪টি ধারালো লোহার তাঁতের সরঞ্জাম, একটি কলম ও একটি বাঁশের কঞ্চি বের করেন।
তিনি বলেন, এটি এক ধরনের মানসিক রোগ। যখন ভাল থাকে তখন কিছু করেন না। কিন্তু যখন মনে রোগটা একটু বেড়ে যায় সে অখাদ্য নানা জিনিসপত্র খেয়ে ফেলে। তাকে মানসিক চিকিৎসাও প্রদান করা হচ্ছে।
সার্জারি ডা. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গত বছর মোতালেবের পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে ২৩টি কলম বের করা হয়েছিল। এবারও যখন পেট ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয় তখন আগের সিনটম তার মধ্যে দেখা যায়। পরে পরীক্ষা–নিরীক্ষা পর তার পেটের ভিতর থেকে এন্ডোসকপি সার্জারির মাধ্যমে কলম ও সুচোলো জাতীয় ধারালো জিনিসগুলো বের করা হয়। গত বছরও অপারেশন ছাড়া বের করায় সে কষ্ট না পাওয়ায় আবারও সে এগুলো খেয়েছিল। তবে এবার ওয়াদা করেছেন আর খাবেন না।
তিনি আরো জানান, মোতালেব বর্তমানে সুস্থ রয়েছে। খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে। রোগটি পিকাসিন্ডোম নামে বিরল মানসিক রোগ। এ রোগের আক্রান্ত রোগীরা সাধারণ খাবারের জিনিসের পোড়ামাটি খায়। কিন্তু মোতালেব যেগুলো খেয়েছে সেটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। তারপরও আল্লাহর রহমতে আমরা সুস্থভাবে সেগুলো বের করেছি। বর্তমানে সে সুস্থ রয়েছে। দুএকদিনের মধ্যেই তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
অনলাইন ডেস্ক :
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মোটরসাইকেল ভাড়া এনে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে মোটর সাইকেল ছিনতাই ও চালককে ছুরিকাঘাতে আহত করা ছিনতাইকারী সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতার করেছে গৌরীপুর থানার পুলিশ। তবে তার সহযোগী উজ্জ্বল মিয়া পলাতক রয়েছেন।
গ্রেফতারকৃত সাদ্দাম হোসেন শেরপুর জেলার সদর উপজেলার মির্জাপুর কান্দিপাড়া গ্রামের মৃত দুলাল মিয়ার ছেলে। পলাতক উজ্জ্বলের বাড়ি পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়।
গৌরীপুর থানা ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০ জুলাই সন্ধ্যায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক সুজয় সাহাকে দুই হাজার টাকা চুক্তিতে গৌরীপুর নিয়ে আসেন সাদ্দাম ও উজ্জ্বল। রাত সাড়ে ১০টায় তাঁরা উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের বৃ-বড়বাগ গ্রামের মঞ্জু মিয়ার বাড়ির সামনে আসে। এসময় তাঁরা চালক সুজয় সাহাকে ছুরিকাঘাত করে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন।
তাঁর চিৎকারে লোকজন ছুটে আসলে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়। আহত সুজয়কে এলাকাবাসী উদ্ধার করে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজেন্দ্র দেবনাথ তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সুজয় সাহা (২৬) গাজীপুর জেলার বাসন উপজেলার কড্ডা বাজার এলাকার উজ্জ্বল সাহার ছেলে।
এ বিষয়ে সুজয় সাহা বাদী হয়ে শুক্রবার সাদ্দাম ও উজ্জ্বলকে আসামী করে গৌরীপুর থানার একটি মামলা দায়ের করেন।
গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)) মাহমুদুল হাসান হাসান বলেন- পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা থেকে সাদ্দামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোটর সাইকেল ও রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক :
দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের সম্পাদকরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘অন্তত দুই থেকে তিন বছর’ দায়িত্ব পালনের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আজ ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ২০ সম্পাদকের মতবিনিময়ের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, গত শনিবার রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ে বলেছিল, অন্তর্বর্তী সরকার যেন ‘যৌক্তিক সময়’ পর্যন্ত থাকে। এই যৌক্তিক সময় আসলে কতটুকু? এ বিষয়ে ড. ইউনূস দেশের শীর্ষ সম্পাদকদের কাছে জানতে চেয়েছেন। এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কী কী কাজ করতে হবে, ন্যূনতম কতটুকু কাজ করতে হবে- এসব প্রশ্ন রেখেছেন।’ সম্পাদকদের মতামত তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, ‘বিভিন্ন রকম কথা এসেছে, সর্বনিম্ন যে সময়টা এসেছে- ২ বছর যাতে এই অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হয়। অনেকে আবার দুই থেকে তিন বছরের কথা বলেছেন।’ ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তবর্তী সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করায় সংবিধানে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু সরকার পতনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হয়েছে। কিন্তু এ সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, তা এখনও সুনির্দিষ্ট করা হয়। সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তার সরকারের কর্ম-পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।’প্রেস সচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে (সম্পাদকদের) বেশির ভাগই বলেছেন, যেসব এজেন্ডার বাস্তবায়ন বা যে কাজ অন্তর্বর্তী সরকার করবে, সেই কাজটাই আসলে নির্ধারণ করবে এই সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ প্রসঙ্গে সম্পাদকদের বক্তব্যে যেসব পরামর্শ উঠে এসেছে, তাও ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন শফিকুল আলম। ‘অনেক কথা এসেছে, সংবিধান সংশোধন, সংবিধান নতুন করে লেখা, আইন কমিশন, সংবিধান কমিশন, মিডিয়া কমিশন, পুলিশের জন্য কমিশন, পুলিশকে কীভাবে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগানো যায়, নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথা এসেছে। এই নির্বাচন কমিশনকে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ এসেছে।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এটা একটা মস্ত বড় সুযোগ, বাংলাদেশের জন্য, আমাদের সবার জন্য। রাষ্ট্র মেরামত করার জন্য। বাংলাদেশকে নতুন শিখরে নেওয়ার জন্য, যা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান আমাদের দিয়েছে, এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের দোষত্রুটি নিয়ে লেখার অনুরোধ জানিয়ে ড. ইউনূস সম্পাদকদের বলেছেন, ‘আপনারা লিখবেন, প্রচুর লেখেন, আপনারা জানান। আমাদের যদি দোষ-ত্রুটি থাকে এগুলো নিয়েও আপনারা বলেন। আমরা আপনাদের কাছ থেকে শুনতে চাই।’
প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বার বার বলেছেন, তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন এবং ‘ভাইব্রেন্ট’ মিডিয়া দেখতে চান। সম্পাদকগণ বলেছেন, মিডিয়াতে যেসব কালা কানুন আছে সেই কালাকানুনগুলো যাতে বাদ দেওয়া হয়; সংশোধন করা হয়।’ মিডিয়া কমিশন করার প্রস্তাব এসেছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যাতে কোনো সাংবাদিক কোনো অসুবিধায় না পড়ে, সে বিষয়ে একটা মিডিয়া কমিশন করার প্রস্তাব এসেছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনাধীন আছে।’
প্রধান উপদেষ্টার আরেক উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীরও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রেস সচিব জানান, মোট ২২ জন সম্পাদককে মতবিনিময়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজন বিদেশে থাকায় আসতে পারেননি।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির, ইত্তেফাক তাসমিমা হোসেন, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ, কালের কণ্ঠের হাসান হাফিজ, আমাদের সময় সম্পাদক আবুল মোমেন, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, প্রতিদিনের বাংলাদেশের মুস্তাফিজ শফি, দেশ রূপান্তরের মোস্তফা মামুন, কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।
এ ছাড়া দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন, দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদও উপস্থিত ছিলেন।
সব কালাকানুন বাতিলের দাবি: রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা মতবিনিময় শেষে বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তিনি বলেন, বিটিভি, বিএসএস এবং রেডিওর মত যেসব সংবাদমাধ্যম সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার দাবি তিনি মতবিনিময়ে জানিয়েছেন। ‘বলেছি, তারা যেন পেশাগতভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সারাবিশ্ব বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা উৎসুক বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চাই।’
মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আশা করছি। সেই সংস্কারের মধ্যে সংবিধান পরিবর্তন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো, এন্টি করাপশন কমিশন, হিউম্যান রাইটস কমিশন, নির্বাচন কমিশন এগুলোকে সংস্কার করা। ‘সত্যিকার অর্থে গণমুখী সংস্থা আমরা চাই। নির্বাচন কমিশন যাতে ভবিষ্যতে ভোটারদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটান, এরকম একটা সংস্থা চাই। আমরা এমন দুর্নীতি দমন কমিশন চাই, যেন তারা স্বাধীনভাবে দেশের দুর্নীতি দমন করতে পারে।’ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরোধী সব কালাকানুন বাতিলের দাবি করা হয়েছে জানিয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, সাইবার সিকিউরিটি আইনের মধ্যে সাংবাদিক নিপীড়নের যে অধ্যায়গুলো আছে, সেগুলো কার্যকর হবে না- এমনটা যাতে ঘোষণা করা হয়। এটা সংস্কারের জন্য উনারা সময় নিয়ে করতে পারেন।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সূত্র ধরে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘তিনি সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করেন। আমাদেরকে বিশেষ আবেদন করেছেন, আমরা যেন আমাদের লেখনীর মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করি। এ সরকারের ভুল ত্রুটি সোচ্চারভাবে, নির্দ্বিধায় সেটা যেন কাগজে ছাপি। এই সরকারকে সাহায্য করি। ‘প্রধান উপদেষ্টা সত্যিকার অর্থে মিডিয়ার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। মিডিয়াবান্ধব যদি কোনো সরকারপ্রধান আমরা পেয়ে থাকি, তাহলে আমরা এখন পেয়েছি। আমরা এর জন্য অত্যন্ত আনন্দিত।’ ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা যদি মনে করেন যে, একটা গ্রুপ করে দেওয়া বা একটা বিশেষ কমিটি করে দিয়ে সব ধরনের আইনের যে পরিবর্তন, সেটা করা। আমারও সংবিধান সংস্কার চাই। আমরা গণতান্ত্রিক রিফর্ম চাই।’ অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ ধরে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘মেয়াদ কতদিন থাকবে সেটা সম্পাদকদের কাছে জিজ্ঞেস করেছেন ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস। সে বিষয়ে অনেকের মতামত দিয়েছেন। তবে এই সরকারের মূল এজেন্ডা কী? সেটার অনুপাতে সময়। ২, ৩, ৫ বছরৃ উনার নিজস্ব কোনো চিন্তা নেই। জাতি কী চায়? জনতা কী চিন্তা করছেন? সেটা তিনি জানতে চান? তিনি মিডিয়াকে আহ্বান করেছেন। আমরা যেন জনগণের কথা লিখি।’