যুবলীগ নেতার পায়ের রগ কেটে হত্যার প্রধান আসামি গ্রেফতার

আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 1 October 2023, 1208 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে যুবলীগ নেতার পায়ের রগ কেটে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি সাচ্চু মিয়াকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৯ সদস্যরা।

banner

গতকাল ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের পৌরসভা ৫নং ওয়ার্ড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামিকে জেলার আশুগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

গ্রেফতার সাচ্চু মিয়া আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু সামার ছেলে।

আজ ১ অক্টোবর রবিবার দুপুরে র‍্যাব-৯ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৪ আগস্ট রাত সোয়া ৯টার দিকে তালশহর নতুন বাজার জিল্লুর রহমান ব্রিজে যুবলীগ নেতা জনি মিয়ার (৩৫) ওপর হামলা চালায় সাচ্চু মিয়া ও তার সহযোগীরা। এসময় তারা জনি মিয়ার দুই পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে কুপিয়ে আহত করে। এসময় জনির চাচাত ভাই আউয়াল মিয়ার ওপর হামলা চালায় তারা। পরবর্তীতে স্থানীয়রা দুজনকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে ঢাকায় নিতে বলেন। পথে জনি মিয়ার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা মোকসেন মিয়া বাদী হয়ে আশুগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ছেলে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানসহ ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।

মামলার পর র‌্যাব-৯ চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে।

পরবর্তীতে শনিবার বিকেলে প্রধান আসামি সাচ্চু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরআগে এ মামলায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন তালশহর গ্রামের আজহার শেখের ছেলে আজিম শেখ (৩৫) ও একই গ্রামের মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে আব্দুল্লাহ (৩২)।

আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাহিদ আহমেদ বলেন, পায়ের রগ কেটে হত্যার মামলার প্রধান আসামিকে র‍্যাব গ্রেফতার করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আমরা তাকে আদালতে পাঠিয়েছি।

Leave a Reply

ওজন কমানোর ৫টি উপায়

অনলাইন ডেস্ক : ডায়েট ও জিম আরই ওজন কমানোর একমাত্র Read more

রাহাত ফতেহ আলীর কনসার্টে উপস্থাপনা করবেন…

অনলাইন ডেস্ক : আজ ২১ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদ ও Read more

ভারতের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়াই যথেষ্ট : জয়নুল…

অনলাইন ডেস্ক : সংস্কারের নামে নির্বাচন পেছানোর কোনো মানে হয় Read more

উপদেষ্টা হাসান আরিফের ইন্তেকাল

অনলাইন ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি এবং বেসামরিক বিমান চলাচল Read more

নবীনগরে কৃষক দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়ন কৃষকদলের উদ্যোগে Read more

সাদপন্থীদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

চলারপথে রিপোর্ট : ইজতেমা ময়দানে নিরীহ মুসল্লিদের ওপর সাদ পন্থীদের Read more

আখাউড়ায় কিন্ডার গার্টেন মেধা বৃত্তি পরীক্ষা…

চলারপথে রিপোর্ট : আজকের শিশু আগামীদের দিনের ভবিষ্যত’ এই প্রতিপাদ্যে Read more

নবীনগরে সাঈদ ফাউন্ডেশনের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

চলারপথে রিপোর্ট : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর Read more

রেইনবো প্রি-স্কুল এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী…

চলারপথে রিপোর্ট : কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে Read more

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১শত কেজি গাঁজাসহ ২ জন…

চলারপথে রিপোর্ট : র‌্যাবের পৃথক অভিযানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা Read more

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে বাধা দেয়া…

অনলাইন ডেস্ক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ Read more

সেরা অভিনেত্রীর সম্মাননা পেলেন তিশা

গত এক বছরের প্রচারিত সকল কনটেন্টের ওপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত Read more

আশ্রয়ন প্রকল্পে উপজেলা প্রশাসনের কম্বল বিতরণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 16 January 2024, 554 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের আমিরপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের অসহায় মানুষের মধ্যে সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

banner

আজ ১৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সেলিম শেখ আমিরপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের ১২৫টি পরিবারের মধ্যে এই কম্বল বিতরণ করেন।

কম্বল বিতরণের সময় সদর উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লোকমান হোসেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মোশারফ হোসাইন, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ সেলিম শেখ বলেন, হঠাৎ করে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় অসহায় মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়।

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাদের জমি ও ঘর নেই তাদেরকে জমিসহ ঘর দিয়েছেন।

মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার মজলিশপুর আমিরপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের অসহায় ১২৫ টি পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। শীতবস্ত্রহীন মানুষগুলোর শরীরে কম্বল জড়িয়ে দিতে পেরে হৃদয়ে কিছুটা প্রশান্তির ছোঁয়া পেলাম।

এ সময় তিনি সমাজের বিত্তবান মানুষদেরকে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

দেশে প্রথম আল-মামুন সরকার পাচ্ছেন সরকারী সর্বোচ্চ সমাজসেবা পদক ‘জাতীয় মানবকল্যাণ পদক’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 31 December 2022, 1290 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রদত্ত সমাজসেবায় সর্বোচ্চ জাতীয় পদক ‘জাতীয় মানবকল্যাণ পদক-২০২২’ অর্জন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাপরিষদের চেয়ারম্যান, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার। এর আগে ২০১৯ সালে প্রতিবন্ধীতার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা এবং অবদানের জন্য জাতীয়ভাবে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পদক ও সম্মাননা অর্জন করেছিলেন। সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরবোজ্জল ভূমিকার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিবন্ধী ও নিউরো ডেভেলাপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণ, জীবনমান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, ইনক্লুসিভ শিক্ষা বাস্তবায়ন ও সামাজিক সুরক্ষায় ধারাবাহিক অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ, সরকার জাতীয়ভাবে প্রথমবারের মতো তাঁকে এই অসামান্য গৌরবোজ্জল ‘জাতীয় মানবকল্যাণ পদক-২০২২’ এর জন্য মনোনিত করলেন। এই সম্মাননায় ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত একটি পদক, ‘‘জাতীয় মানবকল্যাণ পদক-২০২২” এর একটি রেপ্লিকা, দুইলক্ষ টাকার ক্রসচেক এবং একটি সম্মাননা পত্র থাকবে।
উল্লেখ্য, আল-মামুন সরকার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আপামর মানুষের কাছে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান এবং সাদা মনের মানুষ হিসাবে বহুল পরিচিত।

সমাজসেবায় বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, কল্যাণ ও পূনর্বাসনে তাঁর ভূমিকা ও অবদান সর্বজন স্বীকৃত। পরিচ্ছন্ন ধারার একজন ব্যাতিক্রমধর্মী রাজনৈতিক নেতা হিসাবে তিনি সমাজসেবায় ইতিমধ্যে জাতীয়ভাবে খ্যাতি ও প্রশংসা অর্জন করেছেন। তাঁর এই পদক প্রাপ্তির সংবাদে আলোড়িত হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী এবং উজ্জীবিত হবে সমাজসেবায় সম্পৃক্ত বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান। ‘জাতীয় মানবকল্যাণ পদক-২০২০’ প্রদানের সরকারী অনুমোদন পত্রটি আল-মামুন সরকার এর কাছে হস্তান্তর করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড: শাহআলম, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শাহীন ও উপসচিব (এনডিডি ও অটিজম) শবনম মুস্তারী রিক্তা।

জাতীয় মানবকল্যাণ পদকের প্রেক্ষাপট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দানসহ কয়েককোটি প্রতিবন্ধী, বিধবা এবং দু:স্থ ও অসহায় মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় পূনর্বাসিত করার মানবিক মহান উদ্যোগ বিশ^ব্যাপী আজ ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এ মহান উদ্যোগকে দেশের জনগন ও সমাজসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে সমাজকল্যাণ ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদানের জাতীয় স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে সমাজসেবার সর্বোচ্চ জাতীয় পদক হিসাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারী প্রকাশিত গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক নীতিমালা-২০১৮’ অনুমোদন করেছেন।
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীপরিষদ সভায় এই নামকরণ পরিবর্তন করে ‘জাতীয় মানবকল্যাণ পদক-২০২২’ সংশোধিত নামকরণ অনুমোদন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১৫(খ) অনুচ্ছেদের বর্ণিত ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার’ প্রতিষ্ঠায় জাতীয়ভাবে অবদানের জন্য ব্যাক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে এই পদক প্রদানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারের এই উদ্যোগে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবসহ ১২টি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় কমিটি কর্তৃক গত আগস্ট ২০২১ থেকে দেশব্যাপী জেলা পর্যায়ে ব্যাপক যাচাই-বাছাই ও তথ্যানুসন্ধান শেষে জাতীয় কমিটি কর্তৃক ব্যাক্তি পর্যায়ে আল-মামুন সরকারকে পদকের জন্য চূড়ান্তভাবে বাছাই করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে প্রেরণ করেন। মন্ত্রী পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী সদয় সম্মতি প্রদান করায় আগামীকাল ২ জানুয়ারী জাতীয় সমাজসেবা দিবসে এই পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭২ ঘন্টা আদালত বর্জনের ঘোষণা আইনজীবীদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 6 January 2023, 1190 Views,
স্টাফ রিপোর্টার:
বিভিন্ন দাবিতে আগামী ৭২ ঘন্টা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। গতকাল বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) থেকে এই কর্মসূচি শুরু করেছে আইনজীবীরা। চলবে আগামী ৯ জানুয়ারি সোমবার পর্যন্ত। এর ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের এজলাসে কোন আইনজীবী যাননি। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে বিচার প্রার্থীরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ সংকট উত্তরণের বদলে তিনি উস্কে দিয়েছেন। আইনজীবীদের আলোচনার মাধ্যমে তিন দফা দাবিতে আজ থেকে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি। দাবিগুলো হচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগারের অপসারণ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে অপসারণ এবং জেলা জজ কোর্টের দুর্নীতিবাজ প্রধান নাজির মমিনুল ইসলামকে অপসারণ। এসব দাবি আগামী ৯ জানুয়ারির মধ্যে মেনে না নিলে আইনজীবীরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে জেলার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ থেকে এসেছেন রিয়াদ চৌধুরী। তিনি জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলায় আজকে (গতকাল) তার হাজিরা ছিল। কিন্তু আইনজীবীদের আন্দোলনের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় হাজিরা দিতে পারেননি। এর ফলে মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় কিনা- সে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। দ্রুত আদালতের বিচারিক কার্যক্রম স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আশুগঞ্জ উপজেলার বগইর গ্রাম থেকে আসা বৃদ্ধ মো. তহুরুজ্জামান জানান, গ্রামে খেলাধূলা নিয়ে হওয়া সংঘর্ষের মামলায় হাজিরা দিতে এসেছেন তিনি। তীব্র শীত উপেক্ষা করে আদালত এলেও হাজিরা দিতে পারেননি। তার সঙ্গে আসা একই মামলার অন্য আসামিরাও দুর্ভোগে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
আদালতের একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূলত একটি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির নেতাসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বিতন্ডা হয়। এরই জেরে ক্ষিপ্ত হন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় গত ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতি। এরপর থেকেই মূলত এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
গত কয়েকদিন যাবত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালত পাড়া। বুধবার আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে কর্মবিরতিতে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিচার বিভাগ কর্মচারী এসোসিয়েশন। এরই প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা আইনজীবী সমিতি। বিক্ষোভ মিছিলে জেলা আইনজীবী সমিতি জেলা জজের অপসারণ দাবি করেন। আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিলের পর পরই আইনজীবী সহকারী সমিতি আদালতে বেঞ্চ সহকারী-পেশকারদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করেন। তারা আইনজীবীদের দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসে জামাইয়ের আত্মহত্যা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 4 November 2023, 620 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে জামাই ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

banner

৩ নভেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ১২ টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ছয়বাড়িয়া এলাকায় মোবারক হোসেন (২৫) নামে এ ঘটনা ঘটে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মর্গে রাখা হয়েছে।

মোবারক হোসেন জেলা শহরের পীর বাড়ির আব্দুল আলীমের ছেলে।

মোবারক দুবাই প্রবাসী ছিলেন।

হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোবারক গত ৭-৮ মাস আগে শহরের ছয় বাড়িয়ার সফর আলীর মেয়ে তানিয়া (১৮) কে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাদের সংসারে শান্তি ছিল না। একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করতো না। মোবারক সন্ধ্যা দিকে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যায়। তুচ্ছ একটি বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে মোবারক শোবার ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। মোবারকের বাবা আব্দুল আলীমের অভিযোগ, মোবারককে তার স্ত্রী তানিয়া ও শালা আশরাফুল সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখে। মোবারকের বাম হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানায় তারা। এ ঘটনায় তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

সদর মডেল থানার ওসি মো. আসলাম হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

অজ্ঞাত মরদেহের শেষ ভরসাস্থল ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, 16 May 2023, 1181 Views,

চলারপথে রিপোর্ট :
নদীতে ভেসে উঠেছে পচাগলা মরদেহ৷ পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ময়নাতদন্তের পর মরদেহটি দাফনের জন্য খবর দেওয়া হয় ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’ সংগঠনকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিচয়বিহীন মরদেহ উদ্ধার হলেই দাফন কাফনের জন্য ডাক পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের। সংগঠনটি গত দুই বছরে ১০১টি পরিচয়বিহীন মরদেহ দাফন করেছে। ১১ মে শহরের মেড্ডায় তিতাস নদীর পাড়ে কবরস্থানে ১০১তম পরিচয়বিহীন মরদেহটি সংগঠনের সদস্যরা দাফন করেন।

banner

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আজহার উদ্দিন জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর সংগঠনটি মূলত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ব্লাড ডোনেশনের জন্য৷ এ পর্যন্ত প্রায় ৭০০০ ব্যাগ রক্ত দান করেছেন সংগঠনের সদস্যরা। কিন্তু মহামারি করোনার সময় প্রথম দিকে কেউ আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে মরদেহের কাছে আসতে অনেকেই ভয় পেতেন। সে সময় নিজ সন্তানও মা-বাবার মরদেহের কাছে আসেননি। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা মরদেহ দাফনে অপারগতা জানালে আমরা করোনা আক্রান্ত মরদেহ দাফনের কাজ শুরু করি। ওই সময় ৮টি করোনা আক্রান্ত মরদেহ দাফন করেছি।

আজহার উদ্দিন জানান, একদিন কবরস্থানে দেখলাম অজ্ঞাত পরিচয়বিহীন মরদেহ কোনো প্রকার কাফন এবং জানাজা ছাড়া মাটি খুঁড়ে চাপা দেওয়া হচ্ছে। একটা মরদেহ সম্মানের সঙ্গে দাফন না করায় খারাপ লেগেছিল। এরপর বন্ধু-বান্ধব সহকর্মীদের নিয়ে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলো অজ্ঞাত পরিচয়ের মরদেহ গোসল, কাফন ও ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফনের। কাফন ও দাফনের আনুষঙ্গিক ব্যয় আমাদের সদস্যদের ব্যক্তিগত চাঁদায় হয়ে থাকে।

এছাড়া মাঝে মাঝে বাইরে থেকেও স্বেচ্ছায় কেউ দিয়ে থাকেন। এখন জেলার কোনো জায়গায় অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার হলেই হাসপাতাল মর্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের ডাক পড়ে। ধীরে ধীরে সেই অজ্ঞাত মরদেহের দাফনের সংখ্যা শতাধিকে দাঁড়িয়েছে।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’ যে কাজটি করছি তা খুবই মানবিক। তাদের কাজের অবশ্যই প্রশংসা করতে হয়। অজ্ঞাত মরদেহগুলো দাফনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অভিনন্দন জানাই। সমাজের সবার উচিত তাদের এসব কাজে পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেওয়া।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অজ্ঞাত মরদেহ দাফনের একমাত্র সামাজিক সংগঠন ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর’। পুলিশ যখনই অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করে, তাদের খবর দেওয়া হয় দাফন কাফন করতে। তাদের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি যেকোনো সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।